সহীহ বুখারীসহ একাধিক কিতাব দ্বারা প্রমাণিত
❏ বর্তমানে কথিত আহলে হাদীস এর কতক শায়খ বলে বেড়াচ্ছে যে, মিম্বরের উপর ঈদের খুৎবা দেয়া বেদআত! কারণ সহীহ বুখারীর ৯৫৬নং হাদীস; যা হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত। তাতে ঈদের আলোচনা এসেছে সেখানে রাসূল (সা.) খুৎবা মিম্বারে দিয়েছে এই কথাটি উল্লেখ নেই। তাই এটি বেদআত....
✏ তাদের এই সব দলীল শুনলে আমার খুব দুঃখ লাগে। কেননা যেই হাদীসের প্রথম অংশ দিয়ে তারা মিম্বরে খুৎবাকে বেদআত বলে ঐ হাদীসের শেষ অংশের মাঝেই মিম্বরে খুৎবা দেয়ার আলোচনা রয়েছে। তাহলে দেখুন হাদীসটি-
صحيح البخاري (2/ 17)
بَابُ الخُرُوجِ إِلَى المُصَلَّى بِغَيْرِ مِنْبَرٍ
956 - حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي زَيْدُ بْنُ أَسْلَمَ، عَنْ عِيَاضِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي سَرْحٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ وَالأَضْحَى إِلَى المُصَلَّى، فَأَوَّلُ شَيْءٍ يَبْدَأُ بِهِ الصَّلاَةُ، ثُمَّ يَنْصَرِفُ، فَيَقُومُ مُقَابِلَ النَّاسِ، وَالنَّاسُ جُلُوسٌ عَلَى صُفُوفِهِمْ فَيَعِظُهُمْ، وَيُوصِيهِمْ، وَيَأْمُرُهُمْ، فَإِنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَقْطَعَ بَعْثًا قَطَعَهُ، أَوْ يَأْمُرَ بِشَيْءٍ أَمَرَ بِهِ، ثُمَّ يَنْصَرِفُ» قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: «فَلَمْ يَزَلِ النَّاسُ عَلَى ذَلِكَ حَتَّى خَرَجْتُ مَعَ مَرْوَانَ - وَهُوَ أَمِيرُ المَدِينَةِ - فِي أَضْحًى أَوْ فِطْرٍ، فَلَمَّا أَتَيْنَا المُصَلَّى إِذَا مِنْبَرٌ بَنَاهُ كَثِيرُ بْنُ الصَّلْتِ، فَإِذَا مَرْوَانُ يُرِيدُ أَنْ يَرْتَقِيَهُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ، فَجَبَذْتُ بِثَوْبِهِ، فَجَبَذَنِي، فَارْتَفَعَ، فَخَطَبَ قَبْلَ الصَّلاَةِ»، فَقُلْتُ لَهُ: غَيَّرْتُمْ وَاللَّهِ، فَقَالَ أَبَا سَعِيدٍ: «قَدْ ذَهَبَ مَا تَعْلَمُ»، فَقُلْتُ: مَا أَعْلَمُ وَاللَّهِ خَيْرٌ مِمَّا لاَ أَعْلَمُ، فَقَالَ: «إِنَّ النَّاسَ لَمْ يَكُونُوا يَجْلِسُونَ لَنَا بَعْدَ الصَّلاَةِ، فَجَعَلْتُهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ»
অর্থ : হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমন করে সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হল সালাত। আর সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তারা তাদের কাতারে বসে থাকতেন।........আবূ সাঈদ (রা.) বলেন, লোকেরা বরাবর এ নিয়েমই অনুসরণ করে আসছিল। অবশেষে যখন মারওয়ান মদীনার আমীর হলেন, তখন ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের উদ্দেশ্যে আমি তার সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ঈদগাহে পৌঁছলাম তখন সেখানে একটি মিম্বর দেখতে পেলাম, সেটি কাসীর ইবনে সালত (রা.) তৈরী করে ছিলেন। (তাতে খুৎবা দেয়া হলো).....সহীহ বুখারী-২/১৭, হাদীস-৯৫৬।
❖ উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীসটিকে ইমাম বুখারী (রহ.) بَابُ الخُرُوجِ إِلَى المُصَلَّى بِغَيْرِ مِنْبَرٍ (অর্থাৎ মিম্বার না নিয়ে ঈদগাহে গমণ করা) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন। আর ইমাম বুখারী (রহ.) এর যুক্তি হলো হাদীসের মাঝে এসেছে فَيَقُومُ مُقَابِلَ النَّاسِ، অর্থাৎ রাসূল (সা.) লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। যদি মিম্বর থাকতো তাহলে লোকদের মুখামুখি হওয়া সম্ভব কি করে?
যাই হোক ইমাম বুখারী (রহ.) শুধু মাত্র একটি যুক্তি দিয়ে তার মতামত সাব্যস্ত করতে চেয়েছেন, যা প্রকৃত পক্ষে হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত নয়। আর কি করেই বা প্রমাণিত হবে ঐ হাদীসের মাঝেইতো স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, মারওয়ান এর সময় মিম্বরের উপর খুৎবা দেয়া হতো। তাহলে ইমাম বুখারী (রহ.) এর যুক্তির উপর শ্লোগানদারীগণ এখানে কি জবাব দিবেন???
আর যেই সাহাবী তথা আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) রাসূল (সা.) এর সাথে ছিলেন তিনি মারওয়ান এর সময়েও ছিলেন। যখন মারওয়ান মিম্বরে খুৎবা দিচ্ছিলো। যদি এটি বেদআত হতো তাহলে তিনি বারণ করলেন না কেন?
যার দ্বারাও স্পষ্ট যে, রাসূল (সা.) এর যুগেও এই প্রথা ছিল।
✏ এছাড়াও দেখুন ঈদের খুৎবা সম্ভলিত সহীহ বুখারীর অন্য একটি বর্ণনার মাঝে কি উল্লেখ হয়েছে?-
صحيح البخاري (2/ 18)
961 - وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: سَمِعْتُهُ يَقُولُ: «إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ فَبَدَأَ بِالصَّلاَةِ، ثُمَّ خَطَبَ النَّاسَ بَعْدُ، فَلَمَّا فَرَغَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَزَلَ، فَأَتَى النِّسَاءَ، فَذَكَّرَهُنَّ وَهُوَ يَتَوَكَّأُ عَلَى يَدِ بِلاَلٍ، وَبِلاَلٌ بَاسِطٌ ثَوْبَهُ يُلْقِي فِيهِ النِّسَاءُ صَدَقَةً» قُلْتُ لِعَطَاءٍ: أَتَرَى حَقًّا عَلَى الإِمَامِ الآنَ: أَنْ يَأْتِيَ النِّسَاءَ فَيُذَكِّرَهُنَّ حِينَ يَفْرُغُ؟ قَالَ: «إِنَّ ذَلِكَ لَحَقٌّ عَلَيْهِمْ وَمَا لَهُمْ أَنْ لاَ يَفْعَلُوا»
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে এ-ও বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) দাঁড়িয়ে প্রথমে সালাত আদায় করলেন এবং পরে লোকদের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিলেন। যখন নবী (সা.) খুৎবা শেষ করলেন, তিনি (মিম্বর থেকে) নেমে মহিলাগণের (কাতারে) কাছে আসলেন এবং নসীহত করলেন।......সহীহ বুখারী-২/২৮, হাদীস-৯৬১।
✏ উল্লেখ্য যে, আহলে হাদীস ভাইদের মহামান্য শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিনকে ঈদের খুৎবা মিম্বরে দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন-
مجموع فتاوى ورسائل ابن عثيمين" (16 /350) .
وقد سئل الشيخ ابن عثيمين رحمه الله :
هل يسن للإمام أن يخطب على منبر في صلاة العيد؟
فأجاب : " يرى بعض العلماء أنه سنة ، لأن في حديث جابر رضي الله عنه أن الرسول عليه الصلاة والسلام، خطب الناس فقال: (ثم نزل فأتى النساء) قالوا: والنزول لا يكون إلا من مكان عالٍ ، وهذا هو الذي عليه العمل.
وذهب بعض العلماء إلى أن الخطبة بدون منبر أولى .
والأمر في هذا واسع إن شاء الله " .
انتهى من "
অনেক আলেমগণই ঈদের খুৎবা মিম্বরে দেয়াকে সুন্নাত বলেছেন। কেননা হযরত জাবের (রা.) এর (উল্লেখিত হাদীসে) এসেছে যে, خطب الناس فقال: (ثم نزل فأتى النساء) ‘‘রাসূল (সা.) মানুষের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিয়ে অবতরণ করলেন এবং মহিলাদের নিকট আসলেন’’
আর অবতরণতো কোন উচু স্থানে (যেমন মিম্বার ইত্যদিতে) গ্রমণ ব্যতীত হয় না। তাই বর্তমানে এটির উপরই আমল করা হয়.....। মাজমুউ ফাতওয়া ওয়া রাসায়েলু ইবনে উসাইমিন-১৬/৩৫০।
❖ উক্ত হাদীস এর ব্যাখ্যায় সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ব্যাখ্যাবিত আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন-
فتح الباري لابن حجر (2/ 467)
فَلَمَّا فَرَغَ نَزَلَ فِيهِ إِشْعَارٌ بِأَنَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَخْطُبُ عَلَى مَكَانٍ مُرْتَفِعٍ
হযরত জাবের (রা.) এর হাদীসে এসেছে- فَلَمَّا فَرَغَ نَزَلَ ‘‘তিনি খুৎবা শেষ করে অবতরণ করতেন’’ যার দ্বারা স্পষ্ট যে, রাসূল (সা.) কোন উঁচু স্থানে ঈদের খুৎবা দিতেন। ফাতহুল বারী-২/৪৬৭।
✏ এখন দেখুন এ বিষয়ে সুনানে তিরমিযী এর একটি সহীহ বর্ণনা-
سنن الترمذي ت بشار (3/ 152)
1521 - حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَمْرِو بْنِ أَبِي عَمْرٍو، عَنِ الْمُطَّلِبِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ: شَهِدْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الأَضْحَى بِالمُصَلَّى، فَلَمَّا قَضَى خُطْبَتَهُ نَزَلَ عَنْ مِنْبَرِهِ، فَأُتِيَ بِكَبْشٍ، فَذَبَحَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ، وَقَالَ: بِسْمِ اللهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، هَذَا عَنِّي وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي.
__________
[حكم الألباني] : صحيح]
অর্থ : হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি ঈদুল আযহাতে রাসূল (সা.) এর সাথে ঈদগাহে উপস্থিত ছিলাম। তিনি যখন খুৎবা শেষ করলেন তখন نَزَلَ عَنْ مِنْبَرِهِ মিম্বর থেকে অবতরণ করেন।.....তিরমিযী-৩/১৫২, হাদীস-১৫২১। শায়খ আলবানী নিজেও উক্ত হাদীসকে সহীহ বলেছেন। অতএব ফেৎনা করার সুযোগ কোথায়?
❖ আহলে হাদীসদের অন্য একজন মহামান্য সুনানে তিরমিযী এর বিখ্যাত ব্যাখ্যাবিদ আব্দুর রহমান মুবারকপুরী বলেন-
تحفة الأحوذي (5/ 94)
(نَزَلَ عَنْ مِنْبَرِهِ) فِيهِ ثُبُوتُ وُجُودِ الْمِنْبَرِ فِي الْمُصَلَّى وَأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَخْطُبُ عَلَيْهِ
হাদীসের শব্দ (نَزَلَ عَنْ مِنْبَرِهِ) ‘‘রাসূল (সা.) মিম্বর থেকে অবতরণ করতেন’’ দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূল (সা.) এর যুগেও ঈদগাহে মিম্বর ছিল এবং নবী (সা.) তাতেই ঈদের খুৎবা দিতেন। তোহফাতুল আহওয়াযী-৫/৯৪।
❖ আহলে হাদীস ভাইদের আরো একজন্য মহামান্য সুনানে আবূ দাউদের ব্যাখ্যাবিদ আযীমাবাদী উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন-
عون المعبود وحاشية ابن القيم (8/ 3)
(نَزَلَ مِنْ مِنْبَرِهِ) فِيهِ ثُبُوتُ وُجُودِ الْمِنْبَرِ في المصلي وأن النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَخْطُبُ عَلَيْهِ
হাদীসের শব্দ (نَزَلَ عَنْ مِنْبَرِهِ) ‘‘রাসূল (সা.) মিম্বর থেকে অবতরণ করতেন’’ দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূল (সা.) এর যুগেও ঈদগাহে মিম্বর ছিল এবং নবী (সা.) তাতেই ঈদের খুৎবা দিতেন। আওনুল মাবুদ-৮/০৩।
❖ সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাবিদ আল্লাম ইবনু বাত্তাল (রহ.) বলেন-
شرح صحيح البخارى لابن بطال (2/ 554)
قال المؤلف: قال أشهب فى المجموعة: خروج المنبر إلى العيدين واسع إن شاء أخرج وإن شاء ترك
অর্থ : আল্লামা আশহাব তার ‘‘মাজমুয়া’’ এর মাঝে বলেন, ঈদের খুৎবা মিম্বরে দেয়ার বিষয়টির মাঝে ব্যাপকতা রয়েছে, কেউ চাইলে দিতে পারে আর না চাইলে না। শারহু সহীহিল বুখারী লি ইবনে বাত্তাল-২/৫৫৪
❁ উল্লেখ্য যে, মাহে রমজান অনেক কাজের ব্যস্ততা তার মাঝে কিছু সময় ব্যয় করে সংক্ষিপ্ত তাহকীক করেছি, আর বিস্তারিত লিখলে একটি বড় পুস্তিকায় রুপান্তরীত হবে। কিন্তু বুঝবান মানুষের জন্য এতটুকু তাহকীকই যথেষ্ট।
✔ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দলীলসহ সঠিক দ্বীন বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ
❏ বর্তমানে কথিত আহলে হাদীস এর কতক শায়খ বলে বেড়াচ্ছে যে, মিম্বরের উপর ঈদের খুৎবা দেয়া বেদআত! কারণ সহীহ বুখারীর ৯৫৬নং হাদীস; যা হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত। তাতে ঈদের আলোচনা এসেছে সেখানে রাসূল (সা.) খুৎবা মিম্বারে দিয়েছে এই কথাটি উল্লেখ নেই। তাই এটি বেদআত....
✏ তাদের এই সব দলীল শুনলে আমার খুব দুঃখ লাগে। কেননা যেই হাদীসের প্রথম অংশ দিয়ে তারা মিম্বরে খুৎবাকে বেদআত বলে ঐ হাদীসের শেষ অংশের মাঝেই মিম্বরে খুৎবা দেয়ার আলোচনা রয়েছে। তাহলে দেখুন হাদীসটি-
صحيح البخاري (2/ 17)
بَابُ الخُرُوجِ إِلَى المُصَلَّى بِغَيْرِ مِنْبَرٍ
956 - حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي زَيْدُ بْنُ أَسْلَمَ، عَنْ عِيَاضِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي سَرْحٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ وَالأَضْحَى إِلَى المُصَلَّى، فَأَوَّلُ شَيْءٍ يَبْدَأُ بِهِ الصَّلاَةُ، ثُمَّ يَنْصَرِفُ، فَيَقُومُ مُقَابِلَ النَّاسِ، وَالنَّاسُ جُلُوسٌ عَلَى صُفُوفِهِمْ فَيَعِظُهُمْ، وَيُوصِيهِمْ، وَيَأْمُرُهُمْ، فَإِنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَقْطَعَ بَعْثًا قَطَعَهُ، أَوْ يَأْمُرَ بِشَيْءٍ أَمَرَ بِهِ، ثُمَّ يَنْصَرِفُ» قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: «فَلَمْ يَزَلِ النَّاسُ عَلَى ذَلِكَ حَتَّى خَرَجْتُ مَعَ مَرْوَانَ - وَهُوَ أَمِيرُ المَدِينَةِ - فِي أَضْحًى أَوْ فِطْرٍ، فَلَمَّا أَتَيْنَا المُصَلَّى إِذَا مِنْبَرٌ بَنَاهُ كَثِيرُ بْنُ الصَّلْتِ، فَإِذَا مَرْوَانُ يُرِيدُ أَنْ يَرْتَقِيَهُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ، فَجَبَذْتُ بِثَوْبِهِ، فَجَبَذَنِي، فَارْتَفَعَ، فَخَطَبَ قَبْلَ الصَّلاَةِ»، فَقُلْتُ لَهُ: غَيَّرْتُمْ وَاللَّهِ، فَقَالَ أَبَا سَعِيدٍ: «قَدْ ذَهَبَ مَا تَعْلَمُ»، فَقُلْتُ: مَا أَعْلَمُ وَاللَّهِ خَيْرٌ مِمَّا لاَ أَعْلَمُ، فَقَالَ: «إِنَّ النَّاسَ لَمْ يَكُونُوا يَجْلِسُونَ لَنَا بَعْدَ الصَّلاَةِ، فَجَعَلْتُهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ»
অর্থ : হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমন করে সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হল সালাত। আর সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তারা তাদের কাতারে বসে থাকতেন।........আবূ সাঈদ (রা.) বলেন, লোকেরা বরাবর এ নিয়েমই অনুসরণ করে আসছিল। অবশেষে যখন মারওয়ান মদীনার আমীর হলেন, তখন ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের উদ্দেশ্যে আমি তার সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ঈদগাহে পৌঁছলাম তখন সেখানে একটি মিম্বর দেখতে পেলাম, সেটি কাসীর ইবনে সালত (রা.) তৈরী করে ছিলেন। (তাতে খুৎবা দেয়া হলো).....সহীহ বুখারী-২/১৭, হাদীস-৯৫৬।
❖ উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীসটিকে ইমাম বুখারী (রহ.) بَابُ الخُرُوجِ إِلَى المُصَلَّى بِغَيْرِ مِنْبَرٍ (অর্থাৎ মিম্বার না নিয়ে ঈদগাহে গমণ করা) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন। আর ইমাম বুখারী (রহ.) এর যুক্তি হলো হাদীসের মাঝে এসেছে فَيَقُومُ مُقَابِلَ النَّاسِ، অর্থাৎ রাসূল (সা.) লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। যদি মিম্বর থাকতো তাহলে লোকদের মুখামুখি হওয়া সম্ভব কি করে?
যাই হোক ইমাম বুখারী (রহ.) শুধু মাত্র একটি যুক্তি দিয়ে তার মতামত সাব্যস্ত করতে চেয়েছেন, যা প্রকৃত পক্ষে হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত নয়। আর কি করেই বা প্রমাণিত হবে ঐ হাদীসের মাঝেইতো স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, মারওয়ান এর সময় মিম্বরের উপর খুৎবা দেয়া হতো। তাহলে ইমাম বুখারী (রহ.) এর যুক্তির উপর শ্লোগানদারীগণ এখানে কি জবাব দিবেন???
আর যেই সাহাবী তথা আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) রাসূল (সা.) এর সাথে ছিলেন তিনি মারওয়ান এর সময়েও ছিলেন। যখন মারওয়ান মিম্বরে খুৎবা দিচ্ছিলো। যদি এটি বেদআত হতো তাহলে তিনি বারণ করলেন না কেন?
যার দ্বারাও স্পষ্ট যে, রাসূল (সা.) এর যুগেও এই প্রথা ছিল।
✏ এছাড়াও দেখুন ঈদের খুৎবা সম্ভলিত সহীহ বুখারীর অন্য একটি বর্ণনার মাঝে কি উল্লেখ হয়েছে?-
صحيح البخاري (2/ 18)
961 - وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: سَمِعْتُهُ يَقُولُ: «إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ فَبَدَأَ بِالصَّلاَةِ، ثُمَّ خَطَبَ النَّاسَ بَعْدُ، فَلَمَّا فَرَغَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَزَلَ، فَأَتَى النِّسَاءَ، فَذَكَّرَهُنَّ وَهُوَ يَتَوَكَّأُ عَلَى يَدِ بِلاَلٍ، وَبِلاَلٌ بَاسِطٌ ثَوْبَهُ يُلْقِي فِيهِ النِّسَاءُ صَدَقَةً» قُلْتُ لِعَطَاءٍ: أَتَرَى حَقًّا عَلَى الإِمَامِ الآنَ: أَنْ يَأْتِيَ النِّسَاءَ فَيُذَكِّرَهُنَّ حِينَ يَفْرُغُ؟ قَالَ: «إِنَّ ذَلِكَ لَحَقٌّ عَلَيْهِمْ وَمَا لَهُمْ أَنْ لاَ يَفْعَلُوا»
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে এ-ও বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) দাঁড়িয়ে প্রথমে সালাত আদায় করলেন এবং পরে লোকদের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিলেন। যখন নবী (সা.) খুৎবা শেষ করলেন, তিনি (মিম্বর থেকে) নেমে মহিলাগণের (কাতারে) কাছে আসলেন এবং নসীহত করলেন।......সহীহ বুখারী-২/২৮, হাদীস-৯৬১।
✏ উল্লেখ্য যে, আহলে হাদীস ভাইদের মহামান্য শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিনকে ঈদের খুৎবা মিম্বরে দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন-
مجموع فتاوى ورسائل ابن عثيمين" (16 /350) .
وقد سئل الشيخ ابن عثيمين رحمه الله :
هل يسن للإمام أن يخطب على منبر في صلاة العيد؟
فأجاب : " يرى بعض العلماء أنه سنة ، لأن في حديث جابر رضي الله عنه أن الرسول عليه الصلاة والسلام، خطب الناس فقال: (ثم نزل فأتى النساء) قالوا: والنزول لا يكون إلا من مكان عالٍ ، وهذا هو الذي عليه العمل.
وذهب بعض العلماء إلى أن الخطبة بدون منبر أولى .
والأمر في هذا واسع إن شاء الله " .
انتهى من "
অনেক আলেমগণই ঈদের খুৎবা মিম্বরে দেয়াকে সুন্নাত বলেছেন। কেননা হযরত জাবের (রা.) এর (উল্লেখিত হাদীসে) এসেছে যে, خطب الناس فقال: (ثم نزل فأتى النساء) ‘‘রাসূল (সা.) মানুষের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিয়ে অবতরণ করলেন এবং মহিলাদের নিকট আসলেন’’
আর অবতরণতো কোন উচু স্থানে (যেমন মিম্বার ইত্যদিতে) গ্রমণ ব্যতীত হয় না। তাই বর্তমানে এটির উপরই আমল করা হয়.....। মাজমুউ ফাতওয়া ওয়া রাসায়েলু ইবনে উসাইমিন-১৬/৩৫০।
❖ উক্ত হাদীস এর ব্যাখ্যায় সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ব্যাখ্যাবিত আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন-
فتح الباري لابن حجر (2/ 467)
فَلَمَّا فَرَغَ نَزَلَ فِيهِ إِشْعَارٌ بِأَنَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَخْطُبُ عَلَى مَكَانٍ مُرْتَفِعٍ
হযরত জাবের (রা.) এর হাদীসে এসেছে- فَلَمَّا فَرَغَ نَزَلَ ‘‘তিনি খুৎবা শেষ করে অবতরণ করতেন’’ যার দ্বারা স্পষ্ট যে, রাসূল (সা.) কোন উঁচু স্থানে ঈদের খুৎবা দিতেন। ফাতহুল বারী-২/৪৬৭।
✏ এখন দেখুন এ বিষয়ে সুনানে তিরমিযী এর একটি সহীহ বর্ণনা-
سنن الترمذي ت بشار (3/ 152)
1521 - حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَمْرِو بْنِ أَبِي عَمْرٍو، عَنِ الْمُطَّلِبِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ: شَهِدْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الأَضْحَى بِالمُصَلَّى، فَلَمَّا قَضَى خُطْبَتَهُ نَزَلَ عَنْ مِنْبَرِهِ، فَأُتِيَ بِكَبْشٍ، فَذَبَحَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ، وَقَالَ: بِسْمِ اللهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، هَذَا عَنِّي وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي.
__________
[حكم الألباني] : صحيح]
অর্থ : হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি ঈদুল আযহাতে রাসূল (সা.) এর সাথে ঈদগাহে উপস্থিত ছিলাম। তিনি যখন খুৎবা শেষ করলেন তখন نَزَلَ عَنْ مِنْبَرِهِ মিম্বর থেকে অবতরণ করেন।.....তিরমিযী-৩/১৫২, হাদীস-১৫২১। শায়খ আলবানী নিজেও উক্ত হাদীসকে সহীহ বলেছেন। অতএব ফেৎনা করার সুযোগ কোথায়?
❖ আহলে হাদীসদের অন্য একজন মহামান্য সুনানে তিরমিযী এর বিখ্যাত ব্যাখ্যাবিদ আব্দুর রহমান মুবারকপুরী বলেন-
تحفة الأحوذي (5/ 94)
(نَزَلَ عَنْ مِنْبَرِهِ) فِيهِ ثُبُوتُ وُجُودِ الْمِنْبَرِ فِي الْمُصَلَّى وَأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَخْطُبُ عَلَيْهِ
হাদীসের শব্দ (نَزَلَ عَنْ مِنْبَرِهِ) ‘‘রাসূল (সা.) মিম্বর থেকে অবতরণ করতেন’’ দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূল (সা.) এর যুগেও ঈদগাহে মিম্বর ছিল এবং নবী (সা.) তাতেই ঈদের খুৎবা দিতেন। তোহফাতুল আহওয়াযী-৫/৯৪।
❖ আহলে হাদীস ভাইদের আরো একজন্য মহামান্য সুনানে আবূ দাউদের ব্যাখ্যাবিদ আযীমাবাদী উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন-
عون المعبود وحاشية ابن القيم (8/ 3)
(نَزَلَ مِنْ مِنْبَرِهِ) فِيهِ ثُبُوتُ وُجُودِ الْمِنْبَرِ في المصلي وأن النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَخْطُبُ عَلَيْهِ
হাদীসের শব্দ (نَزَلَ عَنْ مِنْبَرِهِ) ‘‘রাসূল (সা.) মিম্বর থেকে অবতরণ করতেন’’ দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূল (সা.) এর যুগেও ঈদগাহে মিম্বর ছিল এবং নবী (সা.) তাতেই ঈদের খুৎবা দিতেন। আওনুল মাবুদ-৮/০৩।
❖ সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাবিদ আল্লাম ইবনু বাত্তাল (রহ.) বলেন-
شرح صحيح البخارى لابن بطال (2/ 554)
قال المؤلف: قال أشهب فى المجموعة: خروج المنبر إلى العيدين واسع إن شاء أخرج وإن شاء ترك
অর্থ : আল্লামা আশহাব তার ‘‘মাজমুয়া’’ এর মাঝে বলেন, ঈদের খুৎবা মিম্বরে দেয়ার বিষয়টির মাঝে ব্যাপকতা রয়েছে, কেউ চাইলে দিতে পারে আর না চাইলে না। শারহু সহীহিল বুখারী লি ইবনে বাত্তাল-২/৫৫৪
❁ উল্লেখ্য যে, মাহে রমজান অনেক কাজের ব্যস্ততা তার মাঝে কিছু সময় ব্যয় করে সংক্ষিপ্ত তাহকীক করেছি, আর বিস্তারিত লিখলে একটি বড় পুস্তিকায় রুপান্তরীত হবে। কিন্তু বুঝবান মানুষের জন্য এতটুকু তাহকীকই যথেষ্ট।
✔ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দলীলসহ সঠিক দ্বীন বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ