
বর্তমানে উপমহাদেশে উম্মতের শিশুদের জন্য প্রচলিত জটিল আর অমানবিক পরিবেশের মাদরাসা ধারা থেকে বের হয়ে একটি নতুন ধারার মাদরাসা/মক্তব এর উদ্যোগ অতি জরুরী হয়ে পড়েছে।
প্রচলিত মাদরাসা গুলাতে ৪-৯ বছরের শিশু বাচ্চাকে 'নূরানি/নাজেরা/মকতব/হিফযখানা' নামক একটি কামরাতে সারাদিনে ১২-১৫ ঘণ্টা ক্লাস করতে হয়। কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া(অনাবাসিক) এইসব শিশুদের শিক্ষকের কঠোর শাসনে ২৪ ঘণ্টা থাকতে হয়। মাসে এক-দুই দিন এবং গরীব ছাত্রদের ক্ষেত্রে অনেক সময় বছরে একবার ছুটি দেয়া হয় পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। এখানে সাধারণত সকাল ৬-৯টা, দুপুর ১২-৪টা, রাত ৬-১০ টা (অথবা সকাল ৭-১২, দুপুর ২-৪, রাত ৬-১০) পর্যন্ত বিভিন্ন বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হয়। অথচ এই ধরণের কার্যক্রম শিশু অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
প্রচলিত এই মকতব/মাদরাসাতে একটি ছাত্র নামক শিশুকে "বাংলা, আরবি, ইংরেজি, উর্দু ও ফারসি" সহ প্রায় ৫টি ভাষা শিখানোর অবাস্তব চেষ্টা করা হয়। যা শিশু বিকাশে মারাত্নক ভাবে বাধা তৈরি করে।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, এই শিক্ষা পদ্বতিটি আব্বাসিয় ও তুর্কি শাসকরা তাদের দখলকৃত অঞ্চল সমূহের অমুসলিম বাচ্চাদের জন্য তৈরি করেছিল। যেখানে অমুসলিম বাচ্চাদের তাদের মা-বাবা থেকে পৃথক (অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিরতরে) করে ভবিষ্যৎ মুসলিম-সেনা বানানোর উদ্দেশ্যে উঁচু প্রাচির বেষ্টিত কোন ভবনে রেখে শিক্ষা দেয়া হত যতদিন না তারা অন্ধ-অনুগত কিছু মুসলিম যুবকে পরিণত হয়। যাদেরকে তারা "মাম-লুক/মাওলা" নামে ডাকত। যুদ্ধক্ষেত্রে এদেরকে সামনের দিকে রাখা হত যেন শাসক জনগোষ্ঠীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ব্যতিরেকেই বিজয় সম্ভব হয়। কেননা এরা ছিল রোবট এর মত। মায়া, মহব্বত ও আবেগহীন এক সম্প্রদায়। অথচ এদের মৃত্যুতে শোক জানানোর কেও থাকত না। তাই তাদের ক্ষতিতে প্রতিবাদও কেও করত না। পরবর্তীতে অবশ্য এরাই তাদের মুনিব/মালিক আরবদের হটিয়ে নানা দেশে নিজেরাই ক্ষমতায় আরোহণ করে। যদিও তা খুব একটা স্থায়ী ছিলনা। আব্বাসিয় ও উসমানি খিলাফার পতন এর পর এই ধারা বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু তা নতুন করে শুরু হয় হিন্দুস্তানের নওমুসলিম পরিবেশে। উদ্দেশ্য অবশ্যই মহৎ ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা সম্পূর্ণই অপ্রয়োজনীয়।
এখন এই সময়ে স্বাধীন ও সচ্ছল মুসলিম পরিবারের সন্তানদের জন্য আমাদের উচিত সেই নববী ধারার সুন্নাহ ভিত্তিক ও মসজিদ কেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্বতিকে অনুসরণ করা।প্রচলিত, অবাস্তব ও কিছুটা অমানবিক এই ধারা থেকে বের হওয়ার জন্য অনেকেই চেষ্টা করেছে। যেমন কারী বেলায়েত সাহেব। কিন্তু মূলধারার মাদরাসাগুলো একে তাচ্ছিল্য করে তাদের পুরানো ধারাই বজায় রেখেছে। অবশ্য নাম ও সিলেবাস এর জন্য এরা নূরানি পদ্বতিটি কিছু কিছু ব্যাবহার করে।
এই প্রচলিত ধারা থেকে বের হবে আমাদের সন্তানদের একটি মানবিক, সুন্নাহ-অনুরাগী ও স্বাভাবিক শিশুসুলভ শিক্ষা পদ্বতি উপহার দেয়া জরুরী। আর তাই আমাদের এই উদ্যেগ।
প্রকল্প: নতুন শিক্ষাক্রমের অধীনে একটি মকতব বা বিদ্যালয়।
উদ্দেশ্যঃ
প্রথম-অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এমন একটি নতুন ধারার শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা যা একজন ছাত্রের জন্য দ্বীন-দুনিয়া দুইটিরই প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। এখানে ইসলামের মৌলিক ও বুনিয়াদী শিক্ষার পাশাপাশি বাস্তব সম্মত দুনিয়াবি শিক্ষার এমন একটি পর্যায়ে একজন ছাত্রকে উঠানো হবে যেন পরবর্তী উচ্চ শিক্ষা একজন ছাত্র নিজেই চালিয়ে নিতে পারে।
এই পর্যায়ের শিক্ষা শেষে একজন ছাত্র যেন জেনারেল এডুকেশন এর নবম শ্রেণী বা কোন ডিপ্লোমা প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারে বা দ্বীনি শিক্ষার জালালাইন/মেশকাত শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারে।
প্রকল্প নামঃ মাকতব আল নূর। School of Light। আলোর বিদ্যালয়।
- প্রাথমিক পরিকল্পনা: প্রাথমিক শিক্ষা বা নূরানি।
- সিলেবাস: দরসে নববী (একটি নতুন ধারা)।
- শিক্ষা পদ্বতিঃ নূরানি বোর্ড কে অনুসরণ করা হবে। (আপাতত) ৪র্থ থেকে ৮ম পর্যন্ত মাদানী নিসাব (ভবিষ্যৎ)
- মোট শ্রেণী: ৩ টি। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়।
- শ্রেণী কক্ষ: ৩ টি।
- শিক্ষা মাধ্যম: আরবি, বাংলা।**
- বিষয়: ৫ টি। আরবি, বাংলা, অংক, ইংরেজি, কাইদা-দুয়া।
- প্রতিদিন পড়ানো হবে: আরবি, বাংলা, কাইদা-দুয়া। (ইংরেজি/অংকঃ একদিন পরপর)।
- সর্বাধিক গুরুত্ব: আরবি ভাষা দক্ষতা। কেননা প্রাতিষ্ঠানিক আলেম হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম দরকার আরবী ভাষা জ্ঞান। আর আখিরাতের আলেম হওয়ার জন্য চাই তাকওয়া।
- শিক্ষা ঘন্টাঃ ৪ ঘণ্টা।
- শিক্ষা সময়: সকাল ৭.৩০-১১.৩০। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময়ানুযায়ী। প্রচলিত মাদ্রাসার মত ৩ বেলা নয় বরং ১ বেলা।
- সাপ্তাহিক শিক্ষা দিবস: শনি, রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি(ব্যাবহারিক* ও খেলাধুলা)।
- সাপ্তাহিক ছুটি: জুমা।
- যাতায়াত সুবিধা: আশপাশের কোন বিদ্যালয়ের পরিবহনের সাথে যুক্ত করা(আপাতত)।
- মোট শিক্ষক: ৩ জন (আপাতত)।
- আবাসিক সুবিধা: সম্পূর্ণ অনাবাসিক। ছাত্র কিংবা শিক্ষক কেওই রাতে থাকবে না।
- দান/সদকা: এটি সম্পূর্ণ ভাবে নাপাক মাল তথা সদকা, খয়রাত, যাকাত, ফেতরা, চামড়া, মান্নত ও সুদ মুক্তা। ইনশাল্লাহ।
- হাদিয়া: যে কোন পাক মাল থেকে হাদিয়া গ্রহণ করা হবে। বিশেষ করে শিক্ষকদের বেতন।
- ঐচ্ছিক বিষয়: ইংরেজি/উর্দু/আরবি ভাষা (৪র্থ শ্রেণী থেকে নিয়মিত ক্লাসের বাইরে)।
*ব্যাবহারিকঃ এখানে ছাত্রদের ওযু, গোসল, খাওয়া, শরীর চর্চা, হাঁটা, দৌড়ানো, পরিমাপ, কৃষি, পরিচ্ছন্নতা ও সামাজিকতা সহ যাবতীয় ধর্মীয় ও সামাজিক জীবন সম্পর্কে বাস্তব সম্মত শিক্ষা দেয়া হবে। এর প্রয়োজনে সাপ্তাহিক একদিন Outdoor(আফতাব নগর) এ নিয়ে যাওয়া হবে।
**শিক্ষাক্রম/একাডেমিক ভাষা: আরবি ও বাংলা। প্রায় প্রতিটি দেশই তাদের স্কুল এ দুই এর অধিক ভাষা শিক্ষাদান করেনা। কেননা এর বেশি ভাষা শেখা সাধারণ বাচ্চাদের জন্য প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আমাদের দেশে কওমি মাদরাসা গুলাতে বাচ্চাদের প্রায় পাঁচটি ভাষা শিখানো হয়। এর ফরে তারা কোন ভাষাই সঠিক ভাবে রপ্ত করতে পারেনা। আমাদের এই শিক্ষা পদ্ধতিতে আমরা বাচ্চাদের ইংরেজি শুধু চলনসই করে শেখাবো কেননা তা আরবিতে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করবে। অবশ্য ছাত্ররা বাড়িতে বা অন্যভাবে ইংরেজি/অংক/উর্দুতে দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
আমাদের শিক্ষাক্রমে শিক্ষক আরবি ক্লাসে আরবি ভাষায় কথা বলবে বা চেষ্টা করবে। যদিও প্রথমদিকে ছাত্ররা অনেক কিছু বুঝবে না কিন্তু অচিরেই তারা শিখে ফেলবে। "বল-পড়-লেখ" আমরা এই ক্রমে শেখাব। কেননা এটাই প্রাকৃতিক পদ্ধতি।
বিদ্রঃ আমরা এখানে প্রচলিত মাদ্রাসার বিরোধিতা করছি না। কেননা পরাধীনতার সময় কালে (১৭৫০-১৯৫০ ইং) এই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আমরা অনেক বড় বড় সাধক পেয়েছি। কিন্তু উম্মতের রাহাবার বা নেতা বা আমীর পাইনি। আর এই শূন্যস্থানই পূরণ করেছে বাতিল প্রভাবিত দুনিয়াদার মুসলিম নেতারা। তাই উম্মতের এই সংকটে উম্মতের রাহাবার বানানোর আশায় সর্বসাধারণের জন্য সহজ বোধ্য মসজিদ কেন্দ্রিক সুন্নাহ ভিত্তিক মকতব এর উদ্যোগ নিতে হবে।
1 মন্তব্যসমূহ
Over 160 thousand women and men are hacking their diet with a simple and SECRET "liquids hack" to lose 2lbs each night in their sleep.
It is painless and it works with anybody.
This is how to do it yourself:
1) Hold a drinking glass and fill it half the way
2) Then use this proven HACK
and you'll become 2lbs skinnier the next day!