দাজ্জাল কে? দাজ্জালের ফেতনা কেমন? বাঁচার উপায়? | Dajjal | Fitna

 

🕋 দাজ্জাল কে? 🔍

দুনিয়াতে আল্লাহর রসুল এর জমানার পর থেকে কেয়ামত পর্যন্ত ৩০ এর মত দাজ্জাল বা ভন্ড নবী আসবে। শুধু রসুলের যুগেই সাহাবারা দুইজন দাজ্জালকে দেখেছে। তবে আসল দাজ্জাল হল মসীহ দাজ্জাল। যিনি কেয়ামতের আগে আসবে। সম্ভবত উনার আসার সময় খুব নিকটে। আসুন দেখি দাজ্জাল চেনার উপায় ও বাঁচার উপায়। 

১️) মসীহ দাজ্জাল একজন মানুষ। সে জ্বিন বা ফেরেসতা বা নবী নন। তবে আল্লাহ তাকে অনেক আলৌকিক ক্ষমতা দিবেন। যেসব ক্ষমতা শুধু আল্লাহরই হয় এমন ক্ষমতাও সে পাবে।

২) সে ইরানের ইস্পাহানে জন্মাবে কোন এক ইহুদী পরিবারে। তার অনুসারীর বেশীর ভাগই হবে ইরানী বা ইহুদী। 

২) "দাজ্জাল" শব্দটির অর্থ মিথ্যাবাদী, প্রতারক, এবং একচোখা। এ নামটি তাকে দেওয়া হয়েছে কারণ সে মানুষকে মিথ্যা কথা বলে, প্রতারণা করে, এবং বিভ্রান্ত করে। সে তার কুফরঅবিশ্বাস গোপন রাখবে চতুরভাবে। দাজ্জাল এক ভয়ংকর ফিতনার নাম, যে সত্যকে ঢেকে মিথ্যার রূপে তুলে ধরবে। 😈

৩) দাজ্জাল (আল-মাসীহ আদ-দাজ্জাল) হলো সেই মিথ্যা মসীহ, যে মানুষকে বিপথগামী করবে। সে নিজেকে এক মহাশক্তিধর রূপে উপস্থাপন করবে, যেন সে সত্যিই আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে! তার হাতে থাকবে কিছু অলৌকিক নিদর্শন—
🌧️ বৃষ্টি বর্ষণের ক্ষমতা,
🌱 পৃথিবীকে পুনরুজ্জীবিত করে গাছপালা জন্মানো,
⚡ এবং অন্যান্য এমনসব বিষয়, যা মানুষকে প্রলুব্ধবিভ্রান্ত করবে।

⚠️ দাজ্জালের ফিতনা হবে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর ফিতনাগুলোর একটি! তাই, আমাদের উচিত সচেতন থাকা, সত্য ও হক পথে অটল থাকা। 🤲

📖 আরও জানতে বিস্তারিত আলোচনা পড়ুন...


🌟 মসীহ ও দাজ্জাল: সত্য ও ভ্রান্তির মুখোমুখি

🧠 "মসীহ" শব্দের অর্থ

"মসীহ" শব্দটি নিয়ে পঞ্চাশেরও বেশি আলেম এর ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তারা বলেন, এই শব্দটি সত্যবাদী মসীহ (যিনি ঈসা ইবনে মারিয়াম আলাইহিস সালাম) এবং মিথ্যাবাদী মসীহ (আল-মাসীহ আদ-দাজ্জাল) — উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।


🕊️ সত্যের মসীহ: ঈসা (আ.)

ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) হলেন সত্যের মসীহ, যিনি আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসূল। তিনি:

  • জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীদের আরোগ্য দিতেন 🧬
  • আল্লাহর আদেশে মৃতদের পুনরুজ্জীবিত করতেন ⚰️➡️💫
  • হিদায়াত ও রহমতের প্রতীক ছিলেন 🌿

😈 মিথ্যার মসীহ: দাজ্জাল

আল-মাসীহ আদ-দাজ্জাল হলো মিথ্যার মসীহ, যিনি:

  • মানবজাতিকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করবেন ⚠️
  • অলৌকিক ক্ষমতার মাধ্যমে মানুষকে প্রলুব্ধ করবেন, যেমন:

    • 🌧️ বৃষ্টি বর্ষণ
    • 🌱 গাছপালা জন্মানো
    • 🌍 দ্রুত পৃথিবী ভ্রমণ

তিনি বিভ্রান্তিকর নিদর্শন দেখিয়ে মানুষকে ধোঁকা দেবেন, যদিও প্রকৃতপক্ষে তিনি মিথ্যাবাদী ও প্রতারক।


তাকে কেন "মসীহ" বলা হয়?

আলেমগন বলেন, দাজ্জালকে "মসীহ" বলা হয়েছে দুটি কারণে:

1️⃣ সে নিজেকে ইসা "#মসীহ" দাবী করবে। এমনকি আল্লাহর ইচ্ছায় সে ইসা আলাইহিওয়াসসালাম এর মত সে আলৌকিক কাজ করবে। 
2️⃣ অথবা, সে অসুস্থকে সুস্থ করবে। এমনকি মৃতকে জীবিত করবে। এই ক্ষমতা তাকে আল্লাহই দিবেন। সে জিনদেরকে এসব কাজে ব্যবহার করবে। সে চল্লিশ দিনের মধ্যে পৃথিবীর সকল স্থান ভ্রমণ করবেন — "ইয়ামসাহ" অর্থে।

✅ অধিকাংশ আলেমের মতে, প্রথম কারণটিই সঠিক, কেননা সহীহ মুসলিম (হাদিস নং ৫২২১) -এ বর্ণিত আছে:

আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"দাজ্জাল এক চোখে অন্ধ হবেন এবং তাঁর কপালে 'কাফির' শব্দটি লেখা থাকবে…"


🧾 "দাজ্জাল" শব্দের উৎস ও অর্থ

"দাজ্জাল" শব্দটি এসেছে "দাজ্জালা আল-বাইর" (উটকে লেপে ঢেকে ফেলা) থেকে। এটি বোঝায় —
👉 কোনো কিছু আলকাতরা দিয়ে ঢেকে দেওয়া বা আসল সত্য গোপন করা

🔹 "দাজালা" শব্দের মূল অর্থ:
  • মিশ্রিত করা 🌀
  • বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা 😵
  • অস্পষ্টতা তৈরি করা 🌫️

📌 সুতরাং, "দাজ্জাল" হল সেই ব্যক্তি:

  • যে অস্পষ্টভাবে কথা বলে,
  • অসংখ্য মিথ্যা ছড়ায়,
  • ও বহু মানুষকে প্রতারিত করে।

📜 দাজ্জালের পরিচয় ও হাদিসসমূহ

✅ দাজ্জাল হবে আদম সন্তানের মধ্য থেকে একজন মানুষ। তার মা-বাবা ইরানী (ইস্পাহানী) ইহুদী। অথবা খুরাশানী ইহুদী।
✅ তার মায়ের স্তন হবে অনেক বড়। তার চুল হহে ঘন কোঁকড়ানো যেন পাখির বড় বাসা। তার একচোখ বুজানো থাকবে।

✅ ইসলামী হাদিসে তার বহু বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে — যেন মানুষ তাকে চিনে ফেলতে পারে ও প্রতারিত না হয়।

📚 তার বৈশিষ্ট্যগুলো এতটাই আলাদা হবে যে,
👉 শুধু অজ্ঞ বা ফিতনায় নিমজ্জিত ব্যক্তিরা-ই তার দ্বারা প্রতারিত হবে।

😈 দাজ্জালের বৈশিষ্ট্য ও হাদিসসমূহ

🔍 দাজ্জালের শারীরিক বৈশিষ্ট্য

দাজ্জালের শরীর ও চেহারার কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যেন মানুষ তাকে চিনতে পারে এবং তার ধোঁকায় না পড়ে। তার বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • 🧑‍🦱 সে হবে একজন যুবক, যার গায়ের রঙ লালচে
  • 🔁 চুল হবে ঘন, কোঁকড়ানো এবং গড়ন হবে খাটো
  • 🌐 তার কপাল ও বুক প্রশস্ত হবে।
  • 👁️‍🗨️ তার ডান চোখ অন্ধ বা ত্রুটিপূর্ণ (মামসুহ) হবে — চোখটি ডুবে যাবে না বা স্পষ্টও হবে না, বরং ভাসমান আঙুরের মতো দেখাবে।
  • 🧅 বাম চোখে ঘন মাংসের একটি টুকরো থাকবে, যা চোখের প্রান্তে জন্মাবে।
  • 🔤 তার কপালে লেখা থাকবে "ك ف ر" (কাফ-ফা-রা) — অর্থাৎ "কাফির", যা প্রতিটি মুসলিম (শিক্ষিত বা নিরক্ষর) পড়তে পারবে।
  • 🚫 সে বন্ধ্যা হবে, অর্থাৎ তার কোনো সন্তান হবে না।

📜 সহীহ হাদিসে দাজ্জালের বর্ণনা

১️) আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে:

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
‘আমি ঘুমাচ্ছিলাম, তখন কাবা শরীফের চারপাশে তাওয়াফ করতে দেখলাম। এমন সময় দেখলাম, একজন সোজা চুলওয়ালা কালো মানুষ, তার মাথা থেকে পানি ঝরছিল, তিনি দুই ব্যক্তির মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “ইনি কে?” তারা বলল, “মরিয়মের পুত্র।”
তারপর আমি একজন লালচে বর্ণের মানুষকে দেখলাম, সুগঠিত দেহ, কোঁকড়ানো চুল, ডান চোখে অন্ধ, যার চোখ দেখতে আঙুরের মতো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “ইনি কে?” তারা বলল, “ইনি দাজ্জাল।” তার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিল ছিল ইবনে কাতানের।’”

(বুখারি, হাদিস ৬৫০৮)

২️) ইবন উমর (রাঃ) হতে:

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
‘আল্লাহ একচোখা নন। বরং মিথ্যা মসীহ (দাজ্জাল) একচোখা — অন্ধ বা ডান চোখে ত্রুটিযুক্ত। তার চোখ দেখতে ভাসমান আঙুরের মতো।’”
(বুখারি, হাদিস ৩১৮৪)

৩) আল-নাওয়াস ইবনে সাম’আন (রাঃ) হতে:

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদিন সকালে দাজ্জালের কথা বললেন। কখনো তিনি তাকে তুচ্ছ মনে করালেন, আবার কখনো এত গুরুত্বপূর্ণ মনে করালেন যে, আমরা ভাবলাম, দাজ্জাল যেন খেজুর গাছের গুঁড়িতে লুকিয়ে আছে!

তিনি বলেন, ‘সে হবে কোঁকড়ানো চুলের যুবক, যার চোখ ভাসমান হবে। যেন দেখতে আব্দুল উজ্জা ইবনে কাতানের মতো।’”
(মুসলিম, হাদিস ৫২২৮)

৪️) উবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ) হতে:

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:

‘আমি দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদের এত বেশি বলেছি যে, আমি ভয় করি তোমরা বুঝতে না পারো।সে হবে খাটো, পায়রার মতো লম্বা, কোঁকড়ানো চুলের, একচোখা। তার চোখ উঁচু বা ডুবে যাওয়া নয়। যদি তোমরা বিভ্রান্ত হও, তবে মনে রেখো: তোমার রব একচোখা নন।’” (আবু দাউদ, হাদিস ৩৭৬৩; সহীহ আল-জামি’, হাদিস ২৪৫৫)

৫️) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে:

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
‘... মিথ্যা মসীহ (দাজ্জাল) একচোখা হবে, তার কপাল ও বুক প্রশস্ত হবে, এবং সে কুঁজো হবে।’”
(মুসলিম আহমদ, হাদিস ৭৫৬৪)

৬️) হুযাইফা (রাঃ) হতে:

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
‘দাজ্জাল একচোখা হবে — অন্ধ বা ত্রুটিপূর্ণ, ঘন লোমযুক্ত।

তার সাথে থাকবে জান্নাত ও জাহান্নাম, তবে তার জাহান্নাম আসলে জান্নাত এবং তার জান্নাত হবে জাহান্নাম।’”
(মুসলিম, হাদিস ৫২২২)

৭️) আনাস (রাঃ) হতে:

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
‘কোন নবী পাঠানো হয়নি যিনি তার জাতিকে একচোখা মিথ্যাবাদীর ব্যাপারে সতর্ক করেননি।

দাজ্জাল একচোখা, কিন্তু তোমার রব একচোখা নন

তার কপালে লেখা থাকবে ‘কাফির’ — এটি প্রত্যেক মুমিন মুসলিম পড়তে পারবে, হোক সে শিক্ষিত বা নিরক্ষর।’”
(বুখারি, হাদিস ৬৫৯৮; মুসলিম, হাদিস ৫২১৯ ও ৫২২৩)


🕋 দাজ্জালের আবির্ভাব কোথায় হবে?

দাজ্জাল পূর্ব দিক থেকে আবির্ভূত হবে—বিশেষ করে খোরাসান থেকে, যা বর্তমান ইরান, আফগানিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের অংশবিশেষ। সে ইসফাহানের ইহুদিদের মধ্য থেকে উঠে আসবে এবং পৃথিবীজুড়ে ভ্রমণ করবে। তবে মক্কা ও মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর কোনও শহরই বাদ যাবে না যেখানে সে প্রবেশ করবে না, কারণ ফেরেশতারা এই দুই শহরের পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত থাকবেন। 🛡️

📜 প্রমাণমূলক হাদিসসমূহ:

🧕 ফাতিমা বিনতে কায়েস (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

নবী করীম (সাঃ) বলেছেন:
“সে সিরিয়ার সমুদ্র বা ইয়েমেনি সমুদ্রের দিক থেকে আসবে... না, বরং পূর্ব দিক থেকে...” এরপর তিনি পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করলেন।
(সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৫২২৮)

🧔 আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) বলেন:

“আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন: ‘দাজ্জাল পূর্ব দিকের খোরাসান নামক এক ভূমি থেকে বের হবে।’”
(তিরমিযী, হাদিস: ২১৬৩ | সহীহ আল-জামি', হাদিস: ৩৩৯৮)

👳 আনাস (রাঃ) বলেন:

“ইসফাহানের ইহুদিদের মধ্য থেকে দাজ্জাল বের হবে এবং তার সাথে থাকবে সত্তর হাজার ইহুদি, যারা মুকুট পরিহিত থাকবে।”
(মুসলদ আহমদ, হাদিস: ১২৮৬৫)


🚫 যেসব স্থানে দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না

দাজ্জাল মক্কা, মদীনা, মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী, মসজিদুল আকসা এবং মসজিদে সিনাই-এ প্রবেশ করতে পারবে না। এই স্থানগুলো ফেরেশতাদের দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে।

📖 ফাতিমা বিনতে কায়েস (রাঃ) এর হাদিস:

“দাজ্জাল বলবে, ‘আমি প্রায় বেরিয়ে আসার অনুমতি পেয়েছি।’ এরপর সে চল্লিশ দিন ধরে দুনিয়া ঘুরবে। তবে মক্কা ও মদীনা ছাড়া অন্য শহরগুলোতে যাবে। কারণ ফেরেশতারা প্রতিটি দরজায় পাহারা দিবেন এবং খোলা তরবারি হাতে তাকে বাধা দিবেন।”
(সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৫২২৮)

📘 জুনাদাহ ইবনে উমাইয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

“সে পৃথিবীর সর্বত্র চলবে চারটি মসজিদ ছাড়া:
১. মসজিদুল হারাম (মক্কা)
২. মসজিদে নববী (মদীনা)
৩. মসজিদে সিনাই
৪. মসজিদুল আকসা (জেরুজালেম)”
(মুসনাদ আহমদ, হাদিস: ২২৫৭২)


👥 দাজ্জালের অনুসারীরা কারা হবে?

দাজ্জালের অনুসারীদের মধ্যে থাকবে:

🔹 ইহুদি
🔹 পারস্য (আজকের ইরান) ও তুর্কি জনগণ
🔹 বেদুইন ও অশিক্ষিত মানুষ
🔹 নারীরা, যারা সহজে প্রতারিত হবে

📜 হাদিসসমূহ:

🧕 আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

“ইসফাহানের ইহুদিদের মধ্যে দাজ্জালের অনুসারীদের সংখ্যা হবে সত্তর হাজার, যারা ভারী, ডোরাকাটা পোশাক পরবে।”
(সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৫২৩৭)

🕵️ আবু বকর (রাঃ) থেকে:

“তার (দাজ্জালের) পেছনে থাকবে এমন লোক যাদের মুখ হবে পোড়া ঢালের মতো।”
(তিরমিযী, হাদিস: ২১৩৬)

🧕 ইবনে উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন:

“মদীনার একটি উপত্যকায় দাজ্জাল অবস্থান করবে, এবং তার কাছে যারা যাবে তাদের অধিকাংশই হবে নারী। এক পুরুষ তার মা, বোন, স্ত্রী এবং মেয়েকে বেঁধে রাখবে এই আশঙ্কায় যে, তারা দাজ্জালের ফাঁদে পড়ে যাবে।”

(মুসনাদ আহমদ, হাদিস: ৫০৯৯) 

🌪 দাজ্জালের ভয়াবহ ফিতনা

আদম (আঃ) এর সময় থেকে কিয়ামত পর্যন্ত দাজ্জালের ফিতনা হবে মানবজাতির উপর সবচেয়ে বড় ও ভয়ঙ্কর ফিতনা। এটি এমন এক মহা পরীক্ষার নাম, যেখানে আল্লাহ তাআলা তাকে কিছু অলৌকিক ক্ষমতা দিবেন, যা মানুষের বিবেককে চমকে দেবে এবং অনেককে বিভ্রান্ত করবে। 🤯

🔥 তার অলৌকিক শক্তি

হাদীসে এসেছে, দাজ্জালের সাথে থাকবে একটি জান্নাত ও একটি জাহান্নাম, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার জান্নাত হবে জাহান্নাম এবং তার জাহান্নাম হবে জান্নাত। সে মানুষের সামনে উপস্থাপন করবে পানির নদীরুটির পাহাড়। সে আকাশকে বৃষ্টি বর্ষণের নির্দেশ দিবে, এবং আকাশ বৃষ্টি দিবে। সে পৃথিবীকে উদ্ভিদ উৎপাদনের আদেশ দিবে, এবং জমিনে ফলফলাদি জন্মাবে। 🌧🌾

সে এমনভাবে পৃথিবী ভ্রমণ করবে যেন বাতাসে চালিত মেঘের মতো – এক শহর থেকে আরেক শহরে ছুটে বেড়াবে। 💨☁️

👁 দাজ্জালের আকৃতি

হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

“দাজ্জাল একচোখা হবে। তার বাম চোখ অন্ধ থাকবে এবং তার চুল ঘন হবে। তার সাথে থাকবে একটি জান্নাত ও একটি জাহান্নাম। তবে তার জান্নাত আসলে হবে জাহান্নাম, আর তার জাহান্নাম হবে জান্নাত।”
(মুসলিম, হাদীস: ৫২২২)

🔥 পানি ও আগুনের পরীক্ষা

হুযাইফা (রাঃ) আরও বর্ণনা করেন:

“দাজ্জালের সাথে দুটি নদী থাকবে – একটি দেখাবে পরিষ্কার পানি আর অপরটি আগুনের মতো জ্বলন্ত। যদি কেউ তা দেখে, তাহলে সে যেন আগুনের মতো নদীটি বেছে নেয় এবং চোখ বন্ধ করে তা পান করে, কারণ সেটিই হবে ঠান্ডা পানি।”
(মুসলিম, হাদীস: ৫২২২–৫২৩৩)

🕰 সে কতদিন থাকবে?

আল-নাওয়াস ইবনে সাম’আন (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! দাজ্জাল কতদিন পৃথিবীতে অবস্থান করবে?”
তিনি বললেন, “চল্লিশ দিন – প্রথম দিন হবে এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান, তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান, আর বাকিগুলো হবে সাধারণ দিনের মতো।”

তারা বললেন, “সে কত দ্রুত চলাফেরা করবে?”
তিনি বললেন, “সে হবে এমন, যেন বাতাস মেঘকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়।” ☁️💨

সে এক জাতির কাছে এসে তাদের ঈমানের আহ্বান জানাবে। তারা ঈমান আনবে, তখন সে তাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং জমি থেকে ফলফলাদি বের হবে। পশুগুলো দুধে ভরে যাবে, সুস্থ ও সবল হয়ে ফিরবে।

অন্যদিকে যারা তার ডাকে সাড়া দেবে না, তাদের উপর নামবে দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্য।

🧲 ধন-সম্পদের ফাঁদ

সে ধ্বংসপ্রাপ্ত কোনো স্থানের পাশ দিয়ে গেলে বলবে, “তোমার ধনসম্পদ বেরিয়ে আসো”, আর সেগুলো মৌমাছির মতো উড়ে তার দিকে ছুটে আসবে। 🐝💰

🗡 মুমিন যুবকের ঘটনা

একজন সাহসী যুবক তার সামনে আসবে। দাজ্জাল তাকে তরবারি দিয়ে দুই টুকরো করে ফেলবে, তারপর আবার জীবিত করবে।
তখন যুবক বলবে:

“আল্লাহর কসম! আমি এখন তোমার সম্পর্কে আরও বেশি নিশ্চিত, যে তুমি দাজ্জাল!”

এরপর দাজ্জাল তাকে আবার হত্যা করতে চাইবে, কিন্তু সে তা আর পারবে না।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫২২৮; বুখারী, হাদীস: ৬৫৯৯)

👹 শয়তানের সাহায্যে বিভ্রান্তি

উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

দাজ্জাল একজন বেদুইনকে বলবে, “যদি আমি তোমার মা-বাবাকে জীবিত করে দেই, তুমি কি বিশ্বাস করবে যে আমি তোমার রব?”
সে বলবে, “হ্যাঁ।”

তখন দু’জন শয়তান তার সামনে তার মা-বাবার আকৃতিতে এসে বলবে, “হে আমার ছেলে, তাকে অনুসরণ করো! সে-ই তোমার রব।”
(ইবনে মাজাহ, হাদীস: ৪০৬৭; সহীহ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ – হাদীস ৭৭৫২)

⚔️ দাজ্জালকে কে হত্যা করবে?

দাজ্জালকে হত্যা করবেন মসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ), যেমনটি বহু সহীহ হাদীসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। 🌟

দাজ্জালের ফিতনা এত ভয়াবহ হবে যে, তা দুনিয়ার প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়বে। তার অসংখ্য অনুসারী তৈরি হবে, আর কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় মুমিনগণই তার এই মহাফিতনা থেকে রক্ষা পাবে। তখনই আল্লাহ তাআলা ঈসা (আঃ)-কে আকাশ থেকে অবতরণ করাবেন


🕌 ঈসা (আঃ)-এর আগমন

ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) দামেস্ক শহরের পূর্ব দিকের একটি সাদা মিনারে অবতরণ করবেন। তার সাথে থাকবে দুইজন ফেরেশতা, যাদের কাঁধে হাত রেখে তিনি নামবেন। তখন মুমিন মুসলমানরা তাঁর চারপাশে একত্রিত হবে এবং তাঁর নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে রওনা দিবে। 🚶‍♂️🚶‍♀️


🛡️ দাজ্জালের সঙ্গে মুখোমুখি

ঈসা (আঃ) যখন দাজ্জালের দিকে অগ্রসর হবেন, তখন দাজ্জাল বাইতুল মাকদিসের (জেরুজালেম) দিকে রওনা হবে। ঈসা (আঃ) তাকে ফিলিস্তিনের লুদ (লোদ) নামক স্থানে ধরে ফেলবেন।

➡️ যখন দাজ্জাল ঈসা (আঃ)-কে দেখবে, তখন সে এমন ভয়ে গলে যেতে শুরু করবে, যেমন পানিতে লবণ গলে যায়।

ঈসা (আঃ) তখন বলবেন:

“তোমার সাথে আমার কিছু কাজ আছে — তুমি আমার কাছ থেকে পালাতে পারবে না!”

তারপর তিনি নিজের বর্শা দিয়ে তাকে হত্যা করবেন


🏃‍♂️ অনুসারীদের পরিণতি

দাজ্জাল নিহত হওয়ার পর তার অনুসারীরা ছুটে পালাবে। মুসলিমরা তাদের ধাওয়া করবে এবং একে একে হত্যা করবে। এমনকি গাছ ও পাথর বলবে:

“হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দা! আমার পেছনে একটি ইহুদি লুকিয়ে আছে — এসো এবং তাকে হত্যা করো।”

– শুধু গারকদ গাছ (বাক্সের কাঁটা) এই কথা বলবে না, কারণ এটি ইহুদিদের গাছ।

🌳🪨


📚 সহীহ হাদীসসমূহ

✒️ হাদীস ১ – মুসলিম (নং ৫২৩৩)

‘আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন:

“আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন:
‘দাজ্জাল আমার উম্মতের মধ্যে আবির্ভূত হবে এবং চল্লিশ বছর অবস্থান করবে... তারপর আল্লাহ ঈসা ইবনে মারইয়ামকে পাঠাবেন, যিনি দেখতে ‘উরওয়া ইবনে মাসউদের মতো। তিনি তাকে তাড়া করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন।’”


✒️ হাদীস ২ – আহমাদ (নং ১৪৯২০), তিরমিযী (নং ২১৭০)

মাজমা ইবনে জারিয়াহ আল-আনসারী (রাঃ) বলেন:

“আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি:
‘মারিয়ামের পুত্র দাজ্জালকে লুদ্দের দরজায় হত্যা করবে।’”


✒️ হাদীস ৩ – মুসলিম (নং ৫২২৮)

আল-নাওয়াস ইবনে সাম'আন (রাঃ) থেকে বর্ণিত দাজ্জাল সংক্রান্ত দীর্ঘ হাদীসে এসেছে:

“ঈসা (আঃ)-এর সুগন্ধ যেখানে পৌঁছাবে, সেখানে যে কাফির থাকবে, সে মারা যাবে। ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে লুদ্দের দরজায় খুঁজে পাবেন এবং সেখানেই তাকে হত্যা করবেন।” 

আমাদের জিজ্ঞাসা?

দাজ্জালের ফিতনা: ইসলাম মতে শেষ যমানার সবচেয়ে ভয়ানক পরীক্ষার বিস্তারিত বিবরণ

কে হত্যা করবে দাজ্জালকে? সহীহ হাদীসের আলোকে বিশদ বিশ্লেষণ

দাজ্জাল কবে আসবে? কীভাবে বাঁচবেন তার ফিতনা থেকে?
ঈসা (আঃ) ও দাজ্জালের মুখোমুখি: ইসলামের ভবিষ্যদ্বাণীতে যা বলা হয়েছে

দাজ্জাল ও লুদ্দ শহরে তার মৃত্যু – শেষ যামানার এক বাস্তবতা


🤲 আমাদের করণীয়

আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন তিনি আমাদের, আমাদের পরিবার ও উম্মাহকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে হেফাজত করেন।

"আল্লাহুম্মা ইন্না নাআ'উযু বিকা মিন ফিত্নাতিল মসীহি দাজ্জাল..."
(হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে আশ্রয় চাই দাজ্জালের ফিতনা থেকে)

🤲 উপসংহার ও দোয়া

দাজ্জালের ফিতনা ভয়াবহ। ইসলামের প্রতিটি নবী তার উম্মতকে এই মিথ্যাবাদী সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তার বাহ্যিক অলৌকিক শক্তির পেছনে রয়েছে ধোঁকা, কুফর ও ধ্বংস।

🛡️ আমাদের করণীয় হলো:

  • ঈমান মজবুত রাখা
  • হাদিস ও কুরআনের আলোকে দাজ্জালের বৈশিষ্ট্য জানা
  • নিয়মিত সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা
  • আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেন তিনি আমাদের রক্ষা করেন

"আল্লাহুম্মা ইন্না নাআ’উযু বিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহি দাজ্জাল..."
(হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে আশ্রয় চাই মসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে)


 


📖 ইলম অর্জন করুন, ঈমান মজবুত করুন, আর দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচতে প্রতিদিন সূরা কাহফ পড়ুন ও হাদিস অধ্যয়ন করুন।

#দাজ্জাল #ইসলামিকজ্ঞান #শেষযামানারচিহ্ন #ফিতনা #ইসাআলাইহিসসালাম #সহীহহাদীস #দাজ্জালেরমৃত্যু #ইসলামিকশিক্ষা #আখিরুজ্জমান #MuslimBelief #EndTimes #Dajjal #SignsOfQiyamah #Hadith #IslamicContent


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন