সিঙ্গা লাগানো /হিজামা/ Cupping চিকিৎসা

 সিঙ্গা লাগানো /হিজামা/ Cupping চিকিৎসাঃ একটি আজব চিকিৎসা ব্যাবস্থা। এ সম্পর্কে আমি খুব কমই জানি। এক জায়গায় কিছু লেখা পেলাম তাই পোস্ট করলাম।

 সিঙ্গা লাগানো (হিজামা) – ডক্টর ইব্রাহিম দ্রেমালি (একটি ইসলামিক চিকিৎসা ব্যবস্থা)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন “ জীব্রাইল আলাইসাল্লাম পুনরায় আমাকে ব্যাপক ভাবে সিঙ্গা লাগানোর ব্যাপারে তাগিত দিলেন এটা আমার উপর ফরজ করা হয়। (জামুল ওয়ারসাই, পৃঃ ১৭৯)

রাসুল্লুল্লাহ (সাঃ) একজন ব্যাক্তিকে উৎসাহ দিলেন যিনি সিঙ্গা লাগান, বললেন এটা রক্ত বদল করে, পিঠ আলোকিত করে এবং চোখের জ্যোতি বাড়ায়। (জামুল ওয়ারসাই, পৃঃ ১৭৯)।


আরোগ্যতার সবচেয়ে ভালো উপায় হল সিঙ্গা লাগানো।

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মাঝে প্রতিকারের সবচেয়ে ভালো উপায় হল সিঙ্গা লাগানো ।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যদি আর কিছু থাকে যা প্রতিকারের জন্য উত্তম ভাবে ব্যবহৃত তা হল সিঙ্গা লাগানো। (আবু দাউদঃ ৩৮৫৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৭৬)

ফেরেস্তারাও সিঙ্গা লাগানোর জন্য বলতেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসুল্লুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “রাত্রি ভ্রমনে আমি কোন ফেরেস্তাকে অন্য ফেরেস্তা হতে যেতে দেখেনি যে তারা আমাকে বলেনি হে মুহাম্মদ(সাঃ) আপনি সিঙ্গা লাগান”। (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৭৭)।

বর্ণনাটি বর্নিত হয়েছে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসু’দ (রাঃ) হতে, ফেরেস্তারা বললেন “ ওহে মুহম্মদ (সাঃ) আপনার উম্মতকে সিঙ্গা লাগাতে আদেশ দিন। (সুনানে তিরমিজীঃ ৩৪৭৮)।

সিঙ্গা লাগানোতেই আছে শেফাঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আরোগ্যতা আছে তিনটি জিনিসেঃ কাটা জায়গায় সিঙ্গা লাগানো, মধু পান, উত্তপ্ত লোহা দারা ছেকা দেওয়া, কিন্তু আমি আমার উম্মাহকে উত্তপ্ত লোহা দ্বারা ছেকা দিতে নিষেধ করেছি। (সাহিহ বুখারিঃ ৫৬৮১, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৯১)

যাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বর্ননা করেছন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “বস্তুত, সিঙ্গা লাগানোতেই আছে শেফা”। (সাহিহ মুসলিমঃ ৫৭০৬)

সিং লাগানো একই সময়ে সর্ব রোগের ঔষধঃ

আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ননা করেছন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ১৭তম, ১৯তম, ২১তম দিনে সিঙ্গা লাগাবে(ইসলামিক মাস) তারপর ইহা হবে সর্ব রোগের ঔষধ”। ( সুনদে ইবনে দাউদঃ ৩৮৬১)

সিঙ্গা লাগানো যায়ঃ

মাথা ব্যথায়ঃ সালমা (রাঃ) বর্ননা করেছন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যখন কেউ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এসে মাথা ব্যথার কথা বলত, তিনি (সাঃ) তাদের সিঙ্গা লাগানোর কথা বলতেন”। (সুনানে আবি দাউদঃ ৩৮৫৮)

যাদুঃ ইবনুল কাইয়্যূম (রঃ) মন্তব্য করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন যাদু দ্বারা পীড়িত হন তখন তিনি মাথায় সিঙ্গা লাগান এবং এটাই সবচেয়ে উত্তম ঔষধ যদি সঠিকভাবে করা হয়।( যাদ আল মায়’দঃ ৪/১২৫-১২৬)

বিষঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ননা করেছেন যে এক ঈহুদী মহিলা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বিষ যুক্ত গোস্ত খেতে দিয়েছিল, তাই তিনি তাকে সংবাদ পাঠিয়ে বললেন “কেন তুমি তা করলে?” মহিলাটি উত্তরে বলল, “যদি তুমি সত্যিই আল্লাহর বার্তা বাহক হও তবে আল্লাহ তোমাকে জানিয়ে দিবেন এবং তুমি যদি তাঁর বার্তা বাহক না হও তবে আমি মানুষকে তোমার থেকে নিরাপদ রাখতাম”! যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর যন্ত্রনা আনুভব করতে লাগলেন, তিনি সিঙ্গা ব্যবহার করলেন। একদা ইহরাম আবস্তায় তিনি ভ্রমনে বের হলেন এবং ঐ বিষের যন্ত্রনা বোধ করলেন তখন তিনি সিঙ্গা ব্যবহার করলেন। ( আহমেদ ১/৩০৫, হাদিসটি হাসানা পর্যায়ের।)

জ্ঞান এবং সৃতি বর্ধকঃ ইবনে উমার (রাঃ) বর্ননা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “খালি পেটে সিঙ্গা লাগানো উত্তম। ইহাতে আছে শেফা এবং আশীর্বাদ স্বরূপ। ইহা জ্ঞান এবং সৃতি শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা বৃহস্পতিবার সিঙ্গালাগাও। বুধবার - শুক্রবার সিঙ্গালাগানো থেকে বিরত থাক। তবে শনিবার ও রবিবার এটা নিরাপদ। সোমবার এবং মঙ্গলবার সিঙ্গা লাগাও এই জন্যে যে, এই দিনে আল্লাহ আইয়্যূব (আঃ) কে পরীক্ষা থেকে নিরাপদ করেছিলেন। আর তিনি পরীক্ষায় পতিত হন বুধবারে। তুমি কোন কুষ্ঠ রোগীকে পাবেনা তারা ছাড়া যারা বুধবার অথবা বুধবার রাতে সিঙ্গা লাগায়। (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৪৮৭)

সিংগা লাগানোর সবচেয়ে ভাল দিন

১৭তম, ১৯তম, ২১তম দিনে(আরবী মাস) যা সোমবার, মঙ্গলবার অথবা বৃহস্পতিবারের সাথে একই থাকে। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সিঙ্গালাগাতে চায়, সে যেন ১৭,১৯,২১তম দিনের জন্য অপেক্ষা করে।(সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৮৬)

ইবনে উমার (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “খালি পেটে সিঙ্গা লাগানো সবচেয়ে উত্তম, এটা জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং সৃতি শক্তি বাড়ায়। তাই কেউ যদি সিঙ্গা লাগাতে যায় সে যেনো আল্লাহর নামে তা বৃহস্পতিবার করে। শুক্র, শনি, রবিবার সিঙ্গা লাগানো থেকে বিরত থাকো। সোমবার বা মঙ্গলবার সিঙ্গালাগাও। বুধবার সিঙ্গালাগাইওনা এই জন্যে যে, এই দিনে আল্লাহ আইয়্যূব (আঃ) পরীক্ষায় পতিত হন। তুমি কোন কুষ্ঠ রোগীকে পাবেনা তারা ছাড়া যারা বুধবার অথবা বুধবার রাতে সিঙ্গা লাগায়। (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৮৮)

ইসলামি দিবস ও রাতের ব্যাপার হল, রাত শুরু হয় দিনের আগে। তাই মঙ্গলবারের সূর্য ডুবলেই বুধবার রাত শুরু হয়। সিঙ্গা লাগানোর ভালো সময় হল দিনের বেলা; সূর্য উঠা ও ডুবার মধ্যবর্তি সময়। কেউ যদি ১৭,১৯,২১ তম(যা সোম, মঙ্গল, বৃহস্পতিবারের সাথে মিলে যায়) দিনে সিঙ্গালাগাতে না পারে তবে তা যেন করে নেয় ঐ মাসের যেকোন সোম, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার।

সিয়াম অথবা ইহরাম বাধা অবস্থায় সিঙ্গা লাগানোঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন ইহরাম অবস্থা, তখন একগুঁইয়ে মাথা ব্যাথার জন্য সিঙ্গা ব্যবহার করেন। (আল-বুখারীঃ ৫৭০১)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সিয়াম অবস্থায় সিঙ্গা লাগিয়াছিলেন। ( আল-বুখারীঃ ৫৬৯৪)

সিঙ্গা করার স্থান

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হাটুর পাশের ও সর্ব নিচের অংশের শিরায় তিন বার সিঙ্গা লাগিয়েছিলেন। (সুনানে ইবনে দাউদঃ ৩৮৬০, ইবনে মাজাহঃ ৩৪৮৩)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর মাথায় সিঙ্গা লাগিয়েছিলেন। (আল-বুখারীঃ ৫৬৯৯)

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর মাথায় সিঙ্গা লাগাতেন এবং ইহাকে বলতেন ( মাথার উপরের স্থান) উম মুঘীত। ( সাহীহ আল-জামিঃ ৪৮০৪)

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কোমরের নিচের অংশে ব্যাথার কারনে সিঙ্গা লাগাতেন।(সুনানে আবি দাউদঃ ৩৮৬৩)

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইহরাম বাধা অবস্থায় পায়ের তলার সবচেয়ে সামনে ব্যাথার কারনে সিঙ্গা লাগাতেন। (সুনানে আবি দাউদঃ ১৮৩৬)

ইবনে আল কাইয়্যূম (রঃ) বলেছেন, “ দাঁতে, মুখে এবং গলায় ব্যাথা হলে থুতুনির নিচে সিঙ্গা লাগালে উপকার পাওয়া যায় যদি তা সঠিক সময়ে করা হয়। ইহা মাথা ও চোয়াল শোধন করে।

পায়ের সাফিনায় (যা গোরালির বড় শিরা) পাংচারিং করার পরিবর্তে পায়ের পাতার সম্মুখে সিঙ্গা লাগানো যেতে পারে। থাই এবং পায়ের পিছনের মাংসের আলসারের চিকিৎসায় ইহা উপকারি। তা ছাড়া রজঃস্রাবে বাধা ও অন্ড কোষের চামড়ায় ক্ষয়ে তা ব্যবহার যোগ্য।

উরুতে ব্যাথা, চুলকানী ও খোঁসপাঁচরার চিকিৎসা হিসেবে বুকের নিচে সিঙ্গা লাগানো উপকারী। ইহা পিঠের গেঁটে বাত, অর্শ, গোদ রোগ, খোসপাঁচড়ার বিরুদ্ধে সাহায্য করে”। (যাদ আল- মা’দ ৪/৫৮)

মহিলাদের জন্য সিঙ্গাঃ

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বর্ননা করেছেন, উম্মে সালামা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে সিঙ্গা করার জন্য অনুমতি চাইলেন। তাই রাসুল (সাঃ) আবু তীবা (রাঃ)কে আদেশ দিলেন তাকে(উম্মে সালামা রাঃ) সিঙ্গা লাগাতে। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন, “আমি মনে করি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এটা বলেছেন যে আবু তীবা হলো তার(উম্মে সালামা) দুধ ভাই অথবা একজন ছুটো বালক যে এখনো বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেনি। (সাহীহ মুসলিমঃ ৫৭০৮, আবু দাউদঃ ৪১০২, সাহীহ ইবনে মাজাহঃ ৩৪৮০)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন