তাবলীগ বা দাওয়াতের মেহনতের ৬ সিফাতের আলোচনা

ছয় সিফাতের আলোচনা 

তাবলিগ জামাতের ‘ছয় উসুল’ নতুন কিছু নয়। তা কুরআন-হাদিস থেকেই গৃহীত ছয়টি উসূল বা মূলনীতি। এ ছয়টি মূলনীতি মধ্যে কোন পরিবর্তন হয়নি। এবারও নয়। কারণ কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমিন, তাসহিহে নিয়ত ও তাবলিগ- এ উসুলগুলো শাশ্বত ও চিরন্তন। এতে রদবদল করার কোন অবকাশ নেই। তবে মূল শিরোনাম অভিন্ন রেখে যুগ চাহিদার প্রেক্ষিতে পাল্টেছে এর বর্ণনাভঙ্গি। সমকালীন ভাষায় উপস্থাপন করতে গিয়ে নানা সময়ে শব্দ চয়নে এসেছে ভিন্নতা।
আমরা এখানে তাবলিগ জামাতের বিশিষ্ট মুরব্বি মাওলানা সাদ সাহেব দা.বা.-এর উপস্থাপিত ছয় নম্বর বা উসুলগুলো তুলে ধরছি। এ উসুলগুলোর আঙ্গিক ও উপস্থাপনায় কিছুটা নতুনত্ব দৃষ্টিগোচর হতে পারে। কাজেই উসুল ছয়টি বয়ান হিসেবে নিম্নে প্রদত্ত হলো-
মেরে ভাই, আযিয ও দোস্ত! আমরা সবাই আল্লাহর দরবারে মাকবুল হতে চাই। আল্লাহর কাছে মাকবুল হওয়ার জন্য তিনি বান্দার শিক্ষাগত যোগ্যতা, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা এবং মান-সম্মান কিছুই দেখেন না। তিনি দেখেন বান্দার সিফাত বা গুণ। যার মধ্যে এসব গুণ যত পরিপূর্ণরূপে থাকবে আল্লাহর কাছে সে তত বেশি মাকবুল হবে। আর এসব গুণের মধ্যে সবচে বড় গুণ হলো ঈমানের গুণ। আভিধানিক অর্থে ঈমান বলা হয়- কারো ওপর আস্থার কারণে তাঁর কথাকে নিশ্চিতরূপে মেনে নেয়া। দ্বীনের বিশেষ পরিভাষায়- রাসূলের ওপর নাযিলকৃত বিধি-বিধানকে রাসূলের ওপর পূর্ণ আস্থার কারণে নির্দ্বিধায় মেনে নেয়া। কালিমা তথা ঈমানের বুলি হলো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।’

ঈমানের উদ্দেশ্য: ১. দিলের একিন সহী করা, ২. তরিকার একিন সহী করা, ৩. জযবার একিন সহী করা।

দিলের একিন সহী করার অর্থ হলো, গাইরুল্লাহর একিনকে দিল থেকে বের করা এবং ‘একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সত্তা থেকেই সবকিছু হয়’ এ কথার একিন অন্তরে বদ্ধমূল করা। আমরা দু’চোখে যা কিছু দেখি- সব মাখলুক, আল্লাহর সৃষ্ট। মাখলুক কিছুই করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা মাখলুক ছাড়া সবই করতে পারেন । সুতরাং আল্লাহ তায়ালার হুকুম-আহকাম নিয়ে চিন্তা করা প্রত্যেকের জন্য একান্ত কর্তব্য।
তরিকার একিন সহী করার অর্থ হলো, নবী মুহাম্মদ সা.-এর তরিকা ব্যতীত যত মত ও পথ আছে- কোনটার মধ্যে শান্তি ও কামিয়াবি নেই। শান্তি ও কামিয়াবি একমাত্র হুযুর সা.-এর তরিকায়। কেবল আখেরি নবী মুহাম্মাদ সা.-এর সুন্নাতে।
জযবার একিন সহী করার অর্থ হলো, আজ মানুষের জযবা ও প্রতিযোগিতা হলো দ্বীনবিহীন দুনিয়ার কামাই অর্থাৎ কে কত বেশি টাকা উপার্জন করতে পারে। কে কত বেশি গাড়ি-বাড়ির মালিক হতে পারে। কাজেই আমাদের এ জযবাকে সহী করতে হবে। মুসলমানের জযবা, তাদের প্রতিযোগিতা তো হবে দ্বীন ও তাকওয়ার ব্যাপারে। ঈমান ও একিনের ব্যাপারে। রাসূলের সা. আদর্শে আদর্শী হওয়ার ব্যাপারে। দেখার বিষয়, আমি কত বেশি তাকওয়া অর্জন করতে পারি, কত অধিক পরিমাণ দ্বীনের কাজ করতে পারি। এছাড়া আমার নামাজ কতসুন্দর হতে পারে। আমার আমল কত সুন্নত অনুযায়ী হতে পারে। মুসলমানের জযবা এটা হওয়া উচিত।
কালিমার লাভ: যে ব্যক্তি এই কালিমা একিন ও ইখলাসের সঙ্গে পাঠ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। মাজমাউল বাহরাইন: ১/৫৬।
যে কোন ব্যক্তি এই কালিমার প্রতি একিন রেখে মৃত্যুবরণ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। মুসনাদে আহমাদ: ৫/২২৯।
হাসিল করার তরিকা: ১. এই কালিমার বেশি বেশি দাওয়াত দেয়া, ২. আমার ও সমস্ত উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে যেন এই কালিমার হাকিকত চলে আসে সেজন্য দোয়া করা। ৩. বেশি বেশি মশ্ক করা অর্থাৎ এই কালিমার হইকিকত আমার মধ্যে কতটুকু এলো- এ নিয়ে মুহাসাবা তথা হিসাব-নিকাশ করা।

নামাজ

নামাজের উদ্দেশ্য: সরাসরি আল্লাহ তায়ালার সত্তা থেকে ফায়দা হাসিলের যোগ্যতা অর্জন করা। আল্লাহর অসীম খাযানা থেকে নিতে শেখা। আর আল্লাহর খাযানা থেকে নেয়ার মাধ্যম হলো আমল। আমলের মধ্যে সর্বোত্তম আমল হলো নামাজ। পরিপূর্ণ নামাজের জন্য পরিপূর্ণ অজু জরুরি। আর পরিপূর্ণ অজু তখনই হবে যখন তা সুন্নত অনুযায়ী হবে, পানির অপচয়মুক্ত হবে, অজুর সময় থেকেই আল্লাহ এবং তাঁর ইবাদতের জন্য দিলকে খালি করে দেয়া। আর হুজুর সা. যেভাবে নামাজ পড়েছেন, সাহাবায়ে কেরামকে যেভাবে নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবে নামাজ পড়ার চেষ্টা করা।
নামাযের ফাযায়েল: 
যে ব্যক্তিই দুনিয়ার ধ্যানমুক্ত হয়ে পূর্ণ ইখলাসসহ দুরাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কিছু চায় সে অবশ্যই তা পাবে। নামাজের বদৌলতে আল্লাহ তাকে তা দিয়ে দেন। সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে দুরাকাত নামাজ আদায় করে, কোন ভুল না করে, আল্লাহ তায়ালার প্রতি পূর্ণ মনোযোগ রাখে, তবে তার পেছনের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আবু দাউদ: হাদিস নং ৯০৫।
যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে, অতঃপর দুরাকাত এমনভাবে পড়ে যে, অন্তর নামাজের প্রতি নিবিষ্ট থাকে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও স্থির থাকে, তবে নিশ্চয় তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। আবু দাউদ: হাদিস নং ৯০৬।
হাসিল করার তরিকা: ১. নিজে ইহতিমাম ও গুরুত্বের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা। সুন্নাত ও বিতরের পাবন্দি করা, বেশি বেশি নফল পড়া, উমরি (জীবন) কাযা থাকলে আদায় করা এবং বেশি বেশি নামাজের দাওয়াত দেয়া, ২. আমি ও সমস্ত উম্মতে মুহাম্মাদী যেন উত্তমভাবে নামাজ আদায় করতে পারি আল্লাহর কাছে সে দোয়া করা, ৩. মশ্ক ও মুহাসাবা তথা হিসাব-নিকাশ করা যে, আমার নামাজ কতটুকু সুন্দর হলো। সুন্নাত অনুযায়ী হয় কি-না।

ইলম 

ইলমের উদ্দেশ্য: ইলম দ্বারা ইলমে ইলাহী উদ্দেশ্য, অন্য ইলম নয়। অর্থাৎ যে ইলম দ্বারা আল্লাহ তায়ালার মারিফাত হাসিল হয়। তাঁর হুকুম-আহকাম জানা যায় এবং হুজুর সা. -এর তরিকার ওপর চলা যায় ও কবরের সওয়াল-জওয়াব জানা যায়। উপরন্তু আল্লাহ তায়ালার কখন কী আদেশ-নিষেধ তা জানা। সর্বোপরি ‘ইলমে ইলাহীর মধ্যেই শান্তি ও কামিয়াবি’ এ কথার একিন দিলে বসানো।
ইলমের ফযীলত:
যে ব্যক্তি ইলম শেখার জন্য কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন। আবু দাউদ: হাদীস নং ৩৬৪১।
ফেরেশতারা তালিবে ইলমের সন্তুষ্টির জন্য আপন পাখা বিছিয়ে দেন। তাছাড়া আলেমের জন্য আসমান ও জমিনের সমস্ত মাখলুক ও পানির মাছ পর্যন্ত মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে।
হাসিল করার তরিকা: ১. ইলম দুই প্রকার। ফাযাইলে ইলম এবং মাসাইলে ইলম। ফাযাইলে ইলম তালিমের হালকায় বসে শেখা। আর মাসাইলে ইলম হক্কানী ওলামায়ে কেরামের কাছে শেখা এবং অন্যদেরকে ইলমের দাওয়াত দেয়া অর্থাৎ ইলম শেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। ২. আমি এবং সমস্ত উম্মতে মুহাম্মাদী যেন ইলমে ইলাহী অর্জন করতে পারি, সে জন্য দোয়া করা। ৩. মশ্ক ও মুহাসাবা করা। আমি কতটুকু ইলম শিখলাম এবং অর্জিত ইলমের ওপর সুন্নাত তরিকায় আমল হচ্ছে কি-না এ ব্যাপারে হিসাব-নিকাশ করা।

জিকির

জিকিরের উদ্দেশ্য: সর্বাবস্থায় আল্লাহ তায়ালার ধ্যান-খেয়াল দিলে পয়দা করা। অর্থাৎ আমি যে সকল ইবাদত করছি- আল্লাহ আমাকে দেখছেন- এ মনোভাব নিয়ে ইবাদত করা। আমি যে জিকির করছি- আল্লাহ পাক তা শুনছেন- এ মনোভাব নিয়ে জিকির করা।
জিকিরের ফায়দা: যে ব্যক্তি জিকির করতে করতে আপন জিহ্বা তরতাজা রাখবে, সে হাসতে হাসতে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
হুজুর সা. ইরশাদ করেন, কুরআনে কারিমের তিলাওয়াত ও আল্লাহর জিকিরের প্রতি নিবিষ্ট হও। এ আমলের দ্বারা আসমানে তোমার আলোচনা হবে। আর এ আমল জমিনে তোমার জন্য হেদায়েতের নূর হবে। বাইহাকি: ৪/২৪২।
হাসিল করার তরিকা: ১. সর্বোত্তম ইবাদত কুরআন তিলাওয়াত। উত্তম জিকির ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’ এ ছাড়া সকাল-বিকাল তিন তাসবিহ আদায় করা এবং মাসনুন দোয়াগুলো পড়া ও হক্কানি পীরের অযিফা থাকলে তা আদায় করা। জিকিরের দাওয়াত তথা অন্যদেরকেও জিকির করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, ২. আমি এবং সমস্ত উম্মতে মুহাম্মাদী যেন বেশি বেশি জিকির করতে পারি, সে জন্য দোয়া করা, ৩. মশ্ক-মুহাসাবা তথা আমার মধ্যে আল্লাহর ধ্যান-খেয়ালযুক্ত জিকির কতটুকু এলো- এ ব্যাপারে হিসাব-নিকাশ করা।

ইকরামুল মুসলিমীন 

ইকরামুল মুসলিমীনের উদ্দেশ্যে: নবী ও সাহাবাওয়ালা হুসনে আখলাক হাসিল করা। মুসলমানের মর্যাদা বুঝে কদর করা, তথা মানুষের হক আদায় করা। অর্থাৎ পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশির হক আদায় করা। কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত না হওয়া। উপরন্তু গীবত, কুধারণা এবং কুদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকা।
ইকরামুল মুসলিমীনের ফযিলত: কেউ যদি কোন মুসলমান ভাইয়ের একটি উপকারের নিয়ত করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে দশ বছর নফল ইতিকাফের সওয়াব দান করেন। আর কেউ যদি কারও একটা প্রয়োজন পুরো করে দেয়, আল্লাহ পাক তার তিয়াত্তরটা প্রয়োজন পুরো করে দেন।
হাসিল করার তরিকা: ১. আলেমের তাজিম করা, বড়কে সম্মান করা এবং ছোটকে স্নেহ করা। হুজুর সা. বলেন, যার মধ্যে এ তিন ধরনের ইকরাম নেই, সে আমার উম্মত নয়। কাজেই নিজেও ইকরাম করা এবং অন্যদেরকেও দাওয়াত দেয়া অর্থাৎ ইকরামুল মুসলিমীন করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, ২. আমি এবং সমস্ত উম্মতে মুহাম্মাদী যেন ইকরামের ওপর উঠতে পারি, সে জন্য দোয়া করা। ৩. মশ্ক-মুহাসাবা করা অর্থাৎ আমার মধ্যে ইকরাম কতটুকু এলো; আমার দ্বারা কারো হক নষ্ট হচ্ছে কি -না এ ব্যাপারে হিসাব-নিকাশ করা।

তাসহীহে নিয়ত 

তাসহীহে নিয়তের উদ্দেশ্য: সহী নিয়ত অর্থ হলো নিয়তকে খালেস করা তথা সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য করা। মানুষকে দেখানো বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে না করা। এক কথায়, আমাদের আত্মায় যত রোগ আছে, যেমন: রিয়া, অহংকার, লোভ ইত্যাদি থেকে দিলকে সাফ করা এবং উত্তম গুণাবলী তথা সবর, শোকর, তাকওয়া ইত্যাদি দ্বারা নিজের দিলকে সজ্জিত করা।
সহী নিয়তের লাভ: যে ব্যক্তি সহী নিয়ত তথা একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য কোন নেক আমল করবে, আল্লাহ তায়ালা সে নেক আমলের উত্তম জাযা দান করবেন। পক্ষান্তরে কেউ যদি রিয়ার সাথে অনেক বেশি নেক আমলও করে, আল্লাহ পাক তার সামান্য বিনিময়ও দান করবেন না। বরং আরো শাস্তি দিবেন।
কেউ যদি নাম, যশ ইত্যাদির জন্য দুনিয়া চায়, সেটা হালাল উপায়েই হোক না কেন, তাহলে আল্লাহর সামনে সে এমন অবস্থায় হাজির হবে যে, আল্লাহ তার প্রতি অত্যন্ত নারাজ থাকবেন। আর যে ব্যক্তি হালাল উপায়ে এ জন্য দুনিয়া হাসিল করে যেন অন্যের কাছে চাইতে না হয়, নিজ পরিবারের জন্য রুজি উপার্জন হয়, তবে সে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো চমকাতে থাকবে।
হাসিল করার তরীকা: ১. কোন নেক কাজ করার আগে নিয়তকে যাচাই করে নেয়া, কাজের মাঝখানে আবার পরখ করা নিয়ত ঠিক আছে কি-না। ঠিক থাকলে শোকর আদায় করা। অন্যথায় ইস্তেগফার পড়ে নিয়ত ঠিক করে নেয়া এবং অন্যদের দাওয়াত দেয়া। সকল ইবাদত ইখলাসের সঙ্গে করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, ২. আমরা সবাই যেন ইবাদতসমূহ ইখলাসের সঙ্গে করতে পারি, সেজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা, ৩. মশ্ক-মুহাসাবা করা। অর্থাৎ আমার মধ্যে কতটুকু ইখলাস এলো তার হিসাব-নিকাশ করা।

দাওয়াত ও তাবলীগ 

দাওয়াত ও তাবলিগের উদ্দেশ্যে: পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার হুকুম-আহকাম এবং রাসূল সা. এর তরিকাকে পুনঃ জিন্দা করার জন্য নিজের জান-মাল কুরবানী করা এবং নিজের একিন ও আমল সহী করা।
দাওয়াত ও তাবলিগের ফযিলত: যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে নিজ প্রয়োজনে এক টাকা খরচ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সাত লাখ টাকা দান করার সওয়াব দেবেন এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একটি নেক আমল করবে, আল্লাহ তাকে ৪৯ কোটি নেক আমলের সওয়াব দান করবেন।
১ম হাদীস
عن خريم بن فاتك : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من أنفق نفقة في سبيل الله كتبت له بسبع مائة ضعف
অনুবাদ-হযরত খুরাইম বিন ফাতেক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন কিছু খরচ করে তা তার আমলনামায় ৭ শত গুণ হিসেবে লেখা হয়।
সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৬২৫
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৬৪৭
সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৫
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯০৩৬
মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২২৭
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯৭৭০
শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২৯৪
এখালে লক্ষ্য করুন। এক টাকা খরচ করলে এখানে সাত শত গুণ সওয়াব লেখার কথা এসেছে। এবার দ্বিতীয় হাদীসটি দেখুন-
২য় হাদীস
عن سهل بن معاذ عن أبيه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال إن الذكر في سبيل الله تعالى يضعف فوق النفقة بسبع مائة ضعف قال يحيى في حديثه بسبع مائة ألف ضعف
হযরত সাহল বিন মুয়াজ রাঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহকে স্মরণ করার সওয়াব আল্লাহর রাস্তায় খরচের সওয়াবের তুলনায় ৭ লক্ষ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।
অন্য বর্ণনায় এসেছে সাত লক্ষ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৬১৩
আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৪০৫
মুসনাদুস সাহাবা ফি কুতুবিত তিসআ, হাদীস নং-১৫১৮৬
কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১০৮৭৯
জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-৬৮৫৮
হাসিল করার তরিকা: ১. ওলামায়ে কেরাম বলেন, জীবনে তিন চিল্লা দিয়ে এ কাজকে শিক্ষা করা এবং মৃত্যু পর্যন্ত এ কাজের সঙ্গে লেগে থাকা। প্রতি বছর নেসাবী এক চিল্লা, মাসে তিনদিন এবং প্রতিদিন আড়াই ঘণ্টা আল্লাহর রাস্তায় সময় দেয়া এবং অন্যদেরকেও সময় দেয়ার প্রতি দাওয়াত দেয়া, ২. আমি এবং সমস্ত উম্মতে মুহাম্মাদীকে যেন এ কাজের ওপর উঠতে পারি, সে জন্য দোয়া করা, ৩. মশ্ক-মুহাসাবা করা। অর্থাৎ আমার মধ্যে এ কাজের ফিকির কতটুকু এলো তার হিসাব-নিকাশ করা।

ইজতেমায়ী ও ইনফেরাদী ১৬ আমল

আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার পর কেউ যদি নিজেকে ইজতেমায়ী (সম্মিলিত) ও ইনফিরাদী (ব্যক্তিগত) মোট ১৬টি আমলে পুরোপুরি ইহতিমামের সঙ্গে জুড়ে রাখে। তবে তার পুরো সময়টাই কাজে লাগবে এবং ফায়দাজনক হবে। কাজেই এখানে ইজতেমায়ী ও ইনফিরাদী মোট ১৬টি আমল তুলে ধরা হলো।
ইনফিরাদী আমল ৮টি। যথা- ১. প্রতিদিন কমপক্ষে এক পারা কুরআন তিলাওয়াত করা, ২. প্রতিদিন একটি হাদিস মুখস্ত করা এবং তার অর্থের মধ্যে চিন্তা-ফিকির করা, ৩. প্রতিদিন একটি করে মাসনূন দোআ মুখস্ত করা, ৪. তাহাজ্জুদ, ইশরাকসহ বেশি বেশি নফল নামাজ পড়ার চেষ্টা করা, ৫. প্রতিদিন খুব কাকুতি মিনতি করে আল্লাহর কাছে দীর্ঘ সময় দোয়া করা, ৬. সাথী ভাইদের খেদমত করা, ৭. সকাল-বিকাল তিন তাসবিহ আদায় করা, ৮. দৈনন্দিন ২৫ বার দাওয়াত দেয়া।
ইজতেমায়ী আমল ৮টি। ১. মাশওয়ারা বা পরামর্শ, ২. সফর, ৩. পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজ, ৪. পানাহার, ৫. কিতাবের তালিম, ৬. ঘুম, ৭. উমুমি গাশত, ৮. মুজাকারা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দাওয়াত ও তাবলিগের সঙ্গে লেগে থেকে দ্বী ও ঈমানের কাজ বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন