প্রচলিত ভূল/ভিত্তিহীন কাহীনী/দলীল বিহীন কথা

প্রচলিত ভূল এর কিছু সোর্সঃ

একটি ভিত্তিহীন কাহিনী : ইদরীস আ. জান্নাত দেখতে গিয়ে আর বের না হওয়া

ইদরীস আ. সম্পর্কে একটি ঘটনা প্রচলিত আছে যে, তিনি জান্নাত দেখতে গিয়ে আর জান্নাত থেকে বের হননি। ঘটনাটি এরকম-

আল্লাহর নবী ইদরীস আ. ছিলেন মালাকুল মাউতের (রূহ কবযকারী ফিরিশতার) বন্ধু। ইদরীস আ. তার কাছে জান্নাত-জাহান্নাম দেখানোর আবদার জানালেন। তিনি তাঁকে জাহান্নাম দেখালেন। জাহান্নাম দেখে ইদরীস আ. এত বেশি ভয় পেলেন যে বেহুশ হওয়ার উপক্রম হলেন। তখন মালাকুল মাউত আপন ডানা দিয়ে তাঁকে আগলে নিলেন। তারপর তাঁকে জান্নাত দেখাতে নিয়ে গেলেন। জান্নাত দেখা শেষ হলে মালাকুল মাউত বললেন, দেখা হয়েছে, এবার চলুন। তিনি বললেন, কোথায় যাব। বললেন, যেখান থেকে এসেছেন। তখন ইদরীস আ. বললেন, না, জান্নাতে প্রবেশ যখন করেছি, এখান থেকে আর বের হব না। তখন মালাকুল মাউতকে বলা হল, তুমি কি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাওনি? জান্নাতে একবার যে প্রবেশ করে সে আর বের হয় না বা তাকে আর বের করা হয় না।

এ বর্ণনাটি ভিত্তিহীন।

এতে ইবরাহীম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে খালেদ আলমিস্সীসী রয়েছে। ইমাম যাহাবী রাহ. এ রাবী সম্পর্কে বলেন, هذا رجل كذاب، قال الحاكم: أحاديثه موضوعة

এ ব্যক্তি একজন চরম মিথ্যাবাদী। হাকেম রাহ. বলেছেন, তার বর্ণনাগুলো মওযূ ও বানোয়াট। (মীযানুল ইতিদাল, তরজমা নং ১২৪; লীসানুল মীযান, তরজমা নং ১৭৮)
Source: http://www.alkawsar.com/article/1294

একটি ভিত্তিহীন কথা :একটি ভাতের দানা বানাতে সত্তরজন ফিরিশতা লাগে

খাদ্য পড়ে গেলে তুলে খেতে হয়- এটা সকলেরই জানা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্য পড়ে গেলে তুলে খেতে বলেছেন। এমনকি খাদ্যে ময়লা লেগে গেলে তা পরিষ্কার করে খেতে বলেছেন। নিজেও এর উপর আমল করা উচিত এবং অন্যকেও উৎসাহ দেওয়া উচিত। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা ভাত পড়ে গেলে তুলে খাওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে বলে, ভাত নষ্ট করতে নেই; একটি ভাতের দানা বানাতে সত্তরজন ফিরিশতা লাগে।

একথার কোনো ভিত্তি নেই। একটি ভাত বা চাল তৈরি হতে কতজন ফিরিশতা লাগে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। এটি অদৃশ্য জগতের বিষয়। তবে একটি ভাতের দানা আমার পর্যন্ত আসতে যে অনেক মানুষের শ্রম আছে এবং মাটি, পানি, চন্দ্র-সূর্য ইত্যাদিকে আল্লাহ তাআলা এ উদ্দেশ্যে ও এমন অনেক উদ্দেশ্যে আমাদের খেদমতে নিয়োজিত করেছেন তা কারই বা অজানা। সুতরাং একটি ভাতের দানা হোক বা যে কোনো খাদ্যদ্রব্য হোক, নষ্ট বা অপচয় করার কোনো অবকাশ নেই। এর জন্য আল্লাহর কাছে হিসাব দিতে হবে।
খাদ্য আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত। এর শুকরিয়া আদায় করা এবং অপচয় থেকে বিরত থাকা জরুরি। কখনো যেন এমন না হয় যে, আমি খাচ্ছি, কিন্তু না খাওয়ার শুরুতে আল্লাহর নাম নিলাম, না শেষে শুকরিয়া আদায় করলাম।
Source: http://www.alkawsar.com/article/1281

একটি অমূলক ধারণা :একটি দাড়িতে সত্তরটি ফিরিশতা থাকে

দাড়ির বিষয়ে কিছু মানুষকে বলতে শোনা যায় যে, একটি দাড়িতে সত্তরটি ফিরিশতা থাকে। কারো একটি দাড়ি ঝরে গেলে বা ছিড়ে গেলে বলে, আহা! তোমার সাথ থেকে সত্তরজন ফিরিশতা চলে গেল। তাদের ধারণা, একটি দাড়ির সাথে যেহেতু সত্তরটি ফিরিশতা থাকে সুতরাং একটি দাড়ি তোমার থেকে পৃথক হওয়া মানে সত্তরজন ফিরিশতা তোমার থেকে চলে যাওয়া। এটি একেবারেই অমূলক একটি ধারণা। এর কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু দাড়ির বিষয়ে সকলেরই সঠিক ধারণা থাকা উচিত।
দাড়ি ইসলামের শিআর ও পরিচয়-চিহ্ন হিসেবে গণ্য। দাড়ি লম্বা করা এবং মোচ খাটো করা দ্বীনে তাওহীদের শিক্ষা, যা সকল নবীর শরীয়তে ছিল। দাড়ি লম্বা রাখা ওয়াজিব এবং এক মুষ্ঠি থেকে খাটো করা নাজায়েয। এ বিষয়টি সকলে জানা এবং আমলে যত্নবান হওয়া জরুরি।
http://www.alkawsar.com/article/1280

একটি ভিত্তিহীন বর্ণনা : মূসা আ.-এর পেটব্যথা ও গাছের পাতা খাওয়ার কাহিনী

মূসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে সমাজে বিভিন্ন বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনী শোনা যায়। সে রকম একটি কিচ্ছা হল- একবার মূসা আলাইহিস সালাম-এর পেটব্যথা হল। মূসা আলাইহিস সালাম পেটব্যথার কথা আল্লাহকে বললে আল্লাহ বললেন, অমুক গাছের পাতা খাও। তিনি তা খেলেন এবং সুস্থ হয়ে গেলেন। পরবর্তীতে আবার মূসা আলাইহিস সালাম-এর পেটব্যাথা হলে তিনি আল্লাহ্র হুকুম ছাড়াই সেই গাছের পাতা খেলেন, কিন্তু এবার আর ব্যথা ভাল হল না। তখন আল্লাহ বললেন, গাছের পাতার কোনো ক্ষমতা নেই। (অর্থাৎ এ গাছের পাতা খেয়ে পূর্বে তুমি ভাল হয়েছ আমার হুকুমে। আর দ্বিতীয়বার যেহেতু আমার হুকুমে খাওনি; নিজে নিজে খেয়েছ, ফলে তা তোমাকে ভাল করতে পারেনি।)

এটি একটি ভিত্তিহীন ঘটনা, যার সাথে মূসা আলাইহিস সালাম-এর কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো নির্ভরযোগ্য বর্ণনার মাধ্যমে তা প্রমাণিত নয়। তাছাড়া এ ঘটনাটি মিথ্যা হওয়ার সাথে সাথে একজন মহান নবীর সাথে বেআদবী এবং তাঁর উপর অপবাদও বটে। এ ধরনের ঘটনা বলা থেকে বিরত থাকা জরুরি।

বাস্তবে যদি তিনি প্রথমবার আল্লাহর হুকুমে গাছের পাতা খেয়ে ভালো হন, তাহলে তাঁর দ্বিতীয়বার খাওয়াটাও তো আল্লাহর পূর্বের হুকুমের অধীন। সেটা কীভাবে নিজে নিজে খাওয়া হল? আর গাছের পাতার রোগ ভালো করার নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, বরং তা আল্লাহর ইচ্ছায় ভালো করে- এ কথা কি আল্লাহর নবী মূসা আলাইহিস সালাম-এর অজানা ছিল। (নাউযুবিল্লাহ) একজন নবী সম্পর্কে এটা কত বড় অপবাদ!

একজন সাধারণ মানুষও তো একথা মনে করে না যে, অমুক গাছের পাতা খেলে অমুক রোগ ভালো হওয়ার অর্থ ঐ পাতার রোগ ভালো করার নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে। তাহলে একজন নবীর ব্যাপারে এরকম কথা কত বড় বেআদবী!
এছাড়া কোনো বস্ত্তর মাঝে কোনো ভালো গুণ বা দোষ সেটা তো আল্লাহরই দেওয়া। কোনো ওষুধের মাঝে কোনো রোগ ভালো করার গুণ তো আল্লাহরই দেওয়া। সেটা অস্বীকারের কোনো কারণ নেই। ওষুধ খাওয়াও তো আল্লাহর আদেশের অধীন এবং উক্ত ওষুধের মাধ্যমে রোগ ভালো হওয়া না হওয়াও আল্লাহর ইচ্ছার অধীন। মুমিন ওষুধ গ্রহণ করে আর আল্লাহর কাছে রোগমুক্তির প্রার্থনা করে। এর সাথে এ কথার কোনো বিরোধ নেই যে, ‘অমুক ওষুধ খেলে জ্বর ভালো হয়।’ কারণ ঐ ওষুধের মাঝে জ্বর ভালো করার গুণ আল্লাহরই দেওয়া । আর আল্লাহ চাইলে ঐ গুণ বা শক্তি কাজে লাগে, না চাইলে নয়।
http://www.alkawsar.com/article/1279

একটি ভুল ধারণা : কলা কি হাত দিয়ে ভেঙে ভেঙে খাওয়া সুন্নত বা না খাওয়া কি আদব পরিপন্থী?

কিছু মানুষ মনে করে কলা সরাসরি মুখ দিয়ে কামড়ে খেতে হয় না; এটা আদবের খেলাফ। বরং হাত দিয়ে ভেঙে ভেঙে মুখে দিতে হয়। এবং এটাকে কেউ কেউ কলা খাওয়ার সুন্নত পদ্ধতিও মনে করে।

এটি মূলত একটি ভুল ধারণা। কলা খাওয়ার বিশেষ কোনো পদ্ধতির কথা হাদীসে পাওয়া যায় না। যার যেভাবে খাওয়া সুবিধা সেভাবেই খেতে পারে। কলা বড় হওয়ার কারণে অনেক সময় ভেঙে ভেঙে খেতে সুবিধা হয়, তখন ভেঙে ভেঙে খাবে। আর চাইলে স্বাভাবিকভাবেও খেতে পারবে এতে আদবের খেলাফ বা দোষের কিছু নেই। 
http://www.alkawsar.com/article/1259

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন