ক্রুসেড এর ইতিহাস-১

☪ ক্রুসেডঃ ☨                                  লেখকঃ মিশুক মশিউর। 

সোর্সঃ ইন্টারনেট। গ্রহনযোগ্যতাঃ ক্রুসেড এর ইতিহাস সঠিক ভাবে সম্ভবত ইমাম ইবন কাছির এর "আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া" তে দেয়া আছে। কিন্তু আরবী না জানা থাকায় ও ইংরেজী অনুবাদ অনেক সময় সাপেক্ষ বলে দিতে পারছি না।
ক্রুসেড অর্থ ধর্মযুদ্ধ ।মূলতঃ পবিত্রভূমি জেরুজালেমের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে ইউরোপের খ্রিষ্টান ও প্রাচ্যের মুসলমানদের মধ্যে এগার শতক হতে তের শতক (১০৯৬-১২৯২ খ্রিঃ) পর্যন্ত সুদীর্ঘ প্রায় দুইশত বছর ব্যাপি যে ভয়াবহ যুদ্ধ সংগঠিত হয় তা-ই ইতিহাসে ক্রুসেড নামে পরিচিত ।এ সময় দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের(☪ ☨) মধ্যে সংগঠিত এ যুদ্ধ মধ্যযুগীয় ইউরোপ ও এশিয়ার ইতিহাসে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ।ইউরোপিয় খ্রিষ্টানগণ তাঁদের ধর্মীয় নেতা পোপের নির্দেশে বুকে ক্রুস চিহ্ন(☨) নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল এবং ক্রুসকেই যুদ্ধের পতাকা হিসেবে ব্যবহার করেছিল বলেও এ যুদ্ধ ইতিহাসে ক্রুসেড নামে পরিচিত।
তবে মুসলমান গবেষকগণ Grousset সহ অধিকাংশ ইউরোপীয় ঐতিহাসিক ও লেখক কতৃক মুসলিম জাতির সাথে খ্রিষ্টানদের প্রতিটি সংঘর্ষকে ক্রুসেড নামে আখ্যায়িৎ করার সমালোচনা করেছেন ।এশিয়ার মুসলমান এবং ইউরোপের খ্রিষ্টানদের মধ্যে বিরাজিত সুদীর্ঘকালের ঘৃণা,বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব কলহের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই ক্রুসেড বা ধর্ম যুদ্ধে ।তাই এই ক্রুসেডের কারণ ছিল যেমন বহুবিদ তেমনি এর ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী ।

☪ ক্রুসেডঃ ☨

ক্রুসেড অর্থ ধর্মযুদ্ধ ।মূলতঃ পবিত্রভূমি জেরুজালেমের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে ইউরোপের খ্রিষ্টান ও প্রাচ্যের মুসলমানদের মধ্যে এগার শতক হতে তের শতক (১০৯৬-১২৯২ খ্রিঃ) পর্যন্ত সুদীর্ঘ প্রায় দুইশত বছর ব্যাপি যে ভয়াবহ যুদ্ধ সংগঠিত হয় তা-ই ইতিহাসে ক্রুসেড নামে পরিচিত ।এ সময় দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের(☪ ☨) মধ্যে সংগঠিত এ যুদ্ধ মধ্যযুগীয় ইউরোপ ও এশিয়ার ইতিহাসে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ।ইউরোপিয় খ্রিষ্টানগণ তাঁদের ধর্মীয় নেতা পোপের নির্দেশে বুকে ক্রুস চিহ্ন(☨) নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল এবং ক্রুসকেই যুদ্ধের পতাকা হিসেবে ব্যবহার করেছিল বলেও এ যুদ্ধ ইতিহাসে ক্রুসেড নামে পরিচিত।

তবে মুসলমান গবেষকগণ Grousset সহ অধিকাংশ ইউরোপীয় ঐতিহাসিক ও লেখক কতৃক মুসলিম জাতির সাথে খ্রিষ্টানদের প্রতিটি সংঘর্ষকে ক্রুসেড নামে আখ্যায়িৎ করার সমালোচনা করেছেন ।এশিয়ার মুসলমান এবং ইউরোপের খ্রিষ্টানদের মধ্যে বিরাজিত সুদীর্ঘকালের ঘৃণা,বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব কলহের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই ক্রুসেড বা ধর্ম যুদ্ধে ।তাই এই ক্রুসেডের কারণ ছিল যেমন বহুবিদ তেমনি এর ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী ।
১০৯৫ খৃস্টাব্দ থেকে ১২৯১ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত ফিলিস্তিন ভূখণ্ড, বিষেশ করে বায়তুল মুকাদ্দাস খৃস্টানদের কর্তৃত্ব বহাল করার জন্য ইউরোপের খৃস্টানরা অনেক যুদ্ধ করে। ইতিহাসে এগুলোকে ক্রুসেড যুদ্ধ নামে আখ্যায়িত করা হয়। এসব যুদ্ধ ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার ভূখণ্ডে ক্রসের নামে চালানো হয়েছিল। ক্রুসেড যুদ্ধের এই ধারা দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকে। এ সময় নয়টি বড় যুদ্ধ হয় এবং তাতে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।
ফিলিস্তিন ও বায়তুল মাকাদ্দাস ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ফারুক রা.- এর সময়েই জয় হয়েছিল এবং তখন থেকে তা মুসলমানদের আয়ত্তে ছিল। দীর্ঘকাল পর্যন্ত খৃস্টানরা তা ফিরিয়ে নেয়ার কোনই দাবী তোলেনি। কিন্ত খৃস্টীয় একাদশ শতকের শেষদিকে সালজুকীদের পতনের পর হঠাৎ খৃস্টানদের মনে বায়তুল মাকদিস জয় করে নেয়ার চেতনা জাগে। তা থেকেই এ যুদ্ধের অবতারণা হয়। এসব যুদ্ধে ইউরোপীয়রা সঙ্কীর্ণ দৃষ্টি, পক্ষপাতিত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা, অনৈতিকতা ও বর্বরতার যে প্রকাশ ঘটায় তা তাদের কপালে অনপনীয় কলঙ্ক হিসেবে চিরকাল থেকে যায়।

কারণসমূহ

ক্রুসেড যুদ্ধসমূহের পিছনে আসল কারণ ছিল ধর্মীয়। কিন্ত এটাকে কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা হয়। আর এই ধর্মীয় করণের পিছনে রয়েছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট। যিনি এই যুদ্ধের উন্মাদনা ছড়িয়ে ছিলেন সেই পিটার রাহেবের সম্পর্ক ছিল কিছু ধনী ইহুদীর সাথেও । পিটার রাহেব ছাড়াও ইউরোপে কয়জন খৃস্টান রাজার ধারণা ছিল ইসলামী এলাকাগুলো দখল নিতে পারলে তাদের অর্থনৈতিক দুরবস্তা কেটে যেতে পারে। মোটকথা, এসব যুদ্ধেও পিছনে কোন একটি কারণ ছিল না। তবে ধর্মীয় প্রেক্ষাপট ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ধর্মীয় কারণ

ফিলিস্তিন হযরত ঈসা আ. এর জন্মস্থান। ফলে খৃস্টানদের জন্য তা পবিত্র ও বরকতময় স্থান। তাদের জন্য এটা ছিল পর্যটনের স্থান। হযরত উমর ফারুক রা.- এর খেলাফতকালে ফিলিস্তিন ভূমি ও বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের অধীনে চলে আসে। বায়তুল মুসলমানদের প্রথম কেবলা ছিল। বড় বড় অনেক নবীর কবর এখানে অবস্থিত। এ জন্য বায়তুল মাকদিস ও এ ভূমি মুসলমানদের কাছে খৃস্টানদের চেয়েও পবিত্র ও বরকতময় বলে বিবেচিত হয়। মুসলমানরা এখানকার বরকতময় জায়গাগুলো সব সময় হেফাজত করেছে। সেমতে অমুসলিম পর্যটকরা যখন তাদের পবিত্র স্থানগুলো দর্শনের উদ্দেশ্যে এখনে আসত, তখন মুসলমান প্রশাসনগুলো তাদেরকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করত। অমুসলিমদের গীর্জা ও খানকাগুলো সব ধরনের বিধিনিষেধের বইরে থাকত। প্রশাসন তাদেরকে উঁচু মর্যাদা দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু ইসলামী খেলাফতের পতন ও বিশৃঙ্খলার যুগে এসব পর্যটক স্বাদীনতার সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা চালায়। তাদের অনুদার দৃষ্টিভঙ্গি ও মতলবী আচরণের কারণে মুসলমান ও খৃস্টানদের মধ্যে ছোটখাটো দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কিন্তু এই ধান্ধাবাজ ও একচোখা পর্যটকরা এখান থেকে দেশে ফিরে মুসলমানদের দুর্ব্যবহারের বানোয়াট কাহিনী প্রচার করত এবং ইউরোপবাসীকে উস্কে দিত। ইউরোপের খৃস্টানরা তো আগে থেকেই মুসলমানদের বিরোধী ছিল। এখন এ পরিস্থিতিতে তাদের মধ্যে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ ও শত্রুতা আরো বেড়ে যায়। সেমতে খৃস্টীয় দশম শতকে ইউরোপের খৃস্টান রাষ্ট্রসমূহ ইতালী, ফ্রান্স, জার্মানী, ইংলেন্ড ইত্যাদি ফিলিস্তিন ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের একটি পরিকল্পনা তৈরি করে যাতে এটাকে আবার খৃস্টান সাম্রাজ্যের অন্তুর্ভুক্ত করে নেয়া যায়।
এ সময় গোটা ইউরোপে একটি গুজব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে, হযরত ঈসা আ. আবার নেমে এসে খৃস্টানদের সব দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। কিন্তু তাঁর অবতরণ হবে তখন, যখন জেরুজালেমের পবিত্র শহর মুসলমানদের হাত থেকে স্বাধীন করা হবে। এই গুজব খৃস্টানদের ধর্মীয় উত্তেজনা অত্যন্তু বাড়িয়ে দেয়ে।
খৃস্টান ধর্মগুরুরা ব্যাপকভাবে প্রচার করতে থাকেন যে, যদি কোন চোর, দুস্কৃতি ও পাপীও বায়তুল মাকদিস দর্শণ করে আসে, তাহলে পরকালে সে জান্নাতের উপযুক্ত হয়ে যাবে। এ জন্য বিশ্বাসের ভিত্তিতে বড় বড় দুস্কৃতিকারীও পর্যটক হিসেবে বায়তুল মাকদিস আসতে শুরু করে। এরা শহরে প্রবেশের সময় নাচ-গান ও শোরগোল করত নিজেদের প্রধান্য ও প্রসিদ্ধি প্রকাশ করার জন্য। আর শরাব পান করত খোলাখুলি। তাই পর্যটকদের এসব অশোভনীয় আচরণ এবং তাদের অনাচার, বিশৃঙ্খলা ও শান্তিু শৃঙ্খলা নষ্টকারী কার্যকলাপের কারণে তাদের প্রতি কিছু নৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। কিন্তু এসব পর্যটক দেশে ফিরে মুসলমানদের কঠোর ব্যবহারের মনগড়া কাহিনী লোকদের শোনাতে থাকে, যাতে তাদের ধর্মীয় উত্তেজনা চাঙ্গা করা যায়।
খৃস্টানজাতি তখন দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। একভগের সম্পর্ক ছিল পশ্চিম ইউরোপের গীর্জার সাথে। তাদের কেন্দ্র ছিল রোম। দ্বিতীয় ভাগের সম্পর্ক ছিল কুসতুনতুনিয়া বা কনস্টান্টিনোপল বা বর্তমানের ইস্তাম্বুল। দু’গীর্জার অনুসারীদের মধ্যে পরস্পরে বিরোধ ছিল। পশ্চিম ইউরোপ বা রোমের পোপ দীর্ঘকাল কামনা করেছিলেন- পূর্ব ইউরোপ বা বাইজেন্টাইন গীর্জার কর্তৃত্বও যদি পাওয়া যেত, তাহলে পুরো বিশ্বের খৃস্টান জাতির আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব তিনি পেয়ে যেতেন। সেমতে ইসলামের বিরোধিতা ছাড়াও তারা নিজের উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য তিনি ঘোষণা করে দিলেন, সারা দুনিয়ার খৃস্টানরা বায়তুল মাকদিস মুসলমানদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। এই যুদ্ধে যে মারা যাবে, সে জান্নাতের অধিকারী হবে, তার সব পাপ মুছে যাবে এবং বিজয়ের পর যেসব ধন দৌলত পাওয়া যাবে, তা তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হবে। পোপের এ ঘোষণার ফলে সারা পৃথিবীর খৃস্টানরা মুসলমানদের বিরোদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।
পোপ দ্বিতীয় আরবান পশ্চিম ইউরোপের গীর্জার প্রধান ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সম্মানপূজারী ও যুদ্ধবাজ ধর্মীয় নেতা। ইউরোপের শাষকদের কাছে তার মর্যাদা ও গুরুত্ব কমে গিয়েছিল। তাই তিনি নিজের মর্যাদা আবার বাড়ানোর উদ্দেশ্যে খৃস্টনদের মধ্যে ধর্মীয় যুদ্ধের উম্মাদনা ছড়াতে শুরু করেন। তিনি যুদ্ধের মাধ্যমে খৃস্টানদের প্রাধান্য ফিরিয়ে আনা ও মুসলমানদের পরাজিত করার প্রচারণা চালাতে থাকেন। তিনি গীর্জার প্রভার শক্তিশালী করার জন্য খৃস্টান বিশ্বে ধর্মীয় যুদ্ধেও আগুন জ্বলিয়ে দেয়াই উত্তম উপায় মনে করলেন। এভাবে তিনি ক্রুসেড যুদ্ধের পথ তৈরি করে দিলেন।

রাজনৈতিক কারণ

ইসলামের মুজাহিদরা তাদের উত্থানের যুগে বড় বড় সাম্রাজ্য নাস্তানাবুদ করে দিয়েছিলেন। আফ্রিকা, এশিয়া, আলজিরিয়া, ভূমধ্য সাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রসমুহ সাইপ্রাস, সিসিলি ইত্যাদি এবং স্পেন, পুর্তগাল- সবাই তাদের অধীনে চলে আসে। এভাবে সারা পৃথিবীতে মুসলমানরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু খৃস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে ইসলামী বিশ্বের পরিস্থিতি অনেক বদলে যায়। মিসওর উবায়দী সাম্রাজ্য তখন পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সিসিলিতে মুসলমানদের শক্তি কমে গিয়েছে। স্পেনে যদি ইউসুফ ইবনে তাশফীনের আবির্ভাব না হতো, তাহলে সেখানে থেকে মুনলমানদের বিতাড়ন অনেক আগেই সম্পন্ন হতো। সামগ্রিকভাবে মুসলমানদের রাজনৈতিক শক্তি যখন কমে এসেছে, তখন খৃস্টান জগত তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে।
তুরস্কের সালজুকীদের যুগ ছিল মুসলমানদের উন্নতি ও অগ্রগতির শেষ গৌরবময় অধ্যায়। তারা এশিয়া মাইনরের সব এলাকা জয় করে কুসতুনতুনিয়া জয়ের পথ খুলে দিয়েছিলেন। যদি মালিক শাহ সালজুকীর পর কোন উপযুক্ত ব্যক্তি সিংহাসনে আরোহন করতেন, তাহলে হয়ত কুসতুনতুনিয়া খৃস্টান বিশ্বের ওপর ইসলামী বাহিনীর হামলা প্রতিরোধের শেষ দুর্গ হিসেবে বিদ্যমান ছিল। তাই সালজুকীদের শক্তিতে ভীত হয়ে বাইজেন্টাইন শাসক মাইকেল ডোকাস ১০৯০ খৃস্টাব্দে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোকে তুর্কিদের এই ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির প্রতি মনোযোগী করেন এবং তাদের কছে সাহায্য চান। সারা খৃস্টান বিশ্ব তার আহবানে তৎক্ষণাত সাড়া দেয়ে এবং ময়দানে নেমে আসে। এভাবে অল্পদিনের মধ্যে খৃস্টানদের বিশাল এক বাহিনী স্রোতের বেগে ধেয়ে আসে মুসলমানদের প্রতি। নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের স্বার্থে প্রাচ্যের বাইজেন্টাইন গীর্জা ও পাশ্চাত্যের গীর্জার কধ্যে পরস্পরে সমঝোতা হয়ে যায় এবং উভয় গোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড যুদ্ধে অংশ নেয়।
এদিকে ইসলামী বিশ্বে ছিল ঐক্যের অভাব। বাগদাদের আব্বাসী ও মিসরের ফাতেমী খেলাফত এবং সালজুকী ও স্পেনের শাসকেরা অধঃপতনের শিকার ছিল। তাদের মধ্যে ঐক্যের কোন পরিস্থিতি ছিল না। সুতরাং ক্রুসেডারদের জন্য এর চেয়ে সুবর্ণ সুযোগ আর কী হতে পারত।

সামজিক কারণ

সামজিক দিক দিয়ে ইউরোপ ছিল মুসলমানদের তুলনায় পাশ্চাৎপদ। সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব এবং ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচারের যেসব নীতি মুনলমানরা নিজেদের মধ্যে চালু করেছিল, ইউরোপের খৃস্টান সমাজ তখনো তা থেকে বঞ্চিত ছিল। অভাবী ও দরিদ্র লোকেরা বিভিন্ন ধরনের বিধি-নিষেধের জালে আবদ্ধ ছিল। সামন্ততন্ত্রের ওপর ইউরোপের সমাজব্যবস্থার ভিত্তি ছিল। সামন্ত প্রভুরা দরিদ্র জনসাধারণের রক্ত চুষে নিতে। অথচ তাদের কোন অধিকার পরিশোধ করত না। ক্ষমতাসীন ও ধর্মীয় গোষ্ঠী এসব মানুষের ক্ষোভের লক্ষ্য নিজেদের পরিবর্তে মুসলমানদের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। নৈতিক অধঃপতনের কারণেও জনসাধারণের অবস্থা ছিল শোচনীয়। ইউরোপের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জনগণের দৃষ্টি অভ্যন্তরীণ সমস্যাবলী ও তাদের দুর্দশা থেকে সরানোর জন্য বাইরের সমস্যাবলীর দিকে ঘুরিয়ে দেয়। এসব লড়াইয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল তাদের নিয়ে, যারা তাদের হীন তাড়না প্রশমিত করতে গ্রীক সৌন্দর্যের নান্দনিকতা স্পর্শ করার জন্য এ সফরে শরীক হয়েছিল। ফ্রান্সের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক লেবরের বর্ণনায় সেই যুগের সামাজিক পরিস্থিতির সুন্দর প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি লিখেছেন- জান্নত লাভ ছাড়াও প্রতিটি মানুষ এটাকে সম্পদ লাভের উপায় বলে মনে করছিল। যেসব কৃষক ছিল জমিদারদের গোলাম, পরিবারের যেসব সদস্য আইনের দৃষ্টিতে উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, যেসব ধনী ব্যক্তি অল্প সম্পত্তি পেয়েছিল এবং যারা সম্পদ উপার্জনের নেশায় পড়েছিল, যেসব পাদ্রী গীর্জার কঠিন জীবনরীতিতে হাঁপিয়ে উঠেছিল- মোটকথা দুর্দশাগ্রস্থ ও বঞ্চিত লোকদের একটি সংখ্যা এই পবিত্র বাহিনীতে অংশগ্রহণ করেছিল।’ অর্থাৎ ধর্মীয় নেতারা তাদের বিলাসী জীবন লুকানোর স্বার্থে জনগণের মনোযোগ সামাজিক এসব আনাচার থেকে সরানোর চেষ্টা করেন।

অর্থনৈতিক কারণ

ইউরোপে ব্যাপকভাবে আলোচিত হতো ইসলামী বিশ্বের স্বচ্ছলতা ও প্রাচুর্যের কথ। প্রাচ্যের ইসলামী রাষ্ট্রগুলো স্বচ্ছলতা ও সমৃদ্ধির যেসব পর্যায় অতিক্রম করেছিল, ইউরোপের দেশগুলো তা করতে পারেনি। সুতরাং ইউরোপের যেসব মহল সম্পদ উপার্জনের উপায় ইউরোপে খুঁজে পাচ্ছিল না, তারা তাদের ভাগ্য পরীক্ষার জন্য এই ধর্মীয় অভিযানে অংশ নেয়। তাদের শুধু লক্ষ ছিল লুটপাট ও ধনসম্পদ অর্জন। হাঙ্গেরীর পথে অগ্রসর হওয়ার সময় সেখানকার খৃস্টন বাসিন্দাদের সাথে ক্রুসেডাররা যে আচরণ করেছিল, তা থেকেই এটা প্রমাণিত হয়।
ইউরোপের সরকার ব্যবস্থায় সামন্তপ্রতা ছিল মৌলিক বিষয়। অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সামন্ত প্রথার অনিষ্টকারিতা ও কুপ্রভাব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অর্থের সমস্ত উৎস মহাজন, গীর্জার যাজক ও জমিদারদের আয়ত্তে ছিল। জনসাধারণ ছিল দুর্দশার মধ্যে। কৃষকদের অবস্থা ছিল অবর্ণনীয়। তাই ধর্মীয় শ্রেণী ধর্মের আচরণে জনগণের প্রতিক্রিয়া রোধ করার চেষ্টা চালায়, যাতে তাদের মনোযোগ দেশের অর্থনৈতিক সমস্যাবলীর দিকে না যায়। তাছাড়া উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী যারা বঞ্চিত হয়েছিল, তারাও নিছক অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের স্বার্থে এতে বাতাস দেয়ে।
ইতালীর বাসিন্দারা চাইছিল ফিলিস্তিন ও সিরিয়া দখল করে আগের মতো নিজেদের ব্যবসায়িক উন্নতি সাধন করতে। কেননা ইসলামী বিজয়ের কারণে ইতালীর ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এজন্য তাদের ধারণা ছিল ক্রুসেড যুদ্ধের মাধ্যমে যদি ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার এলাকা সমূহ মুসলমানদের হাত থেকে আবার ছিনিয়ে নেয়া যায়, তাহলে ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হতে পারে।

তাৎক্ষণিক কারণ

তাৎক্ষণিক কারণ ছিল পোপ দ্বিতীয় আরবানের জিহাদের ফতোয়া। ফ্রান্সের পিটার যখন বায়তুল মাকদিস যিয়ারতে গেলেন, তখন তিনি বায়তুল মাকদিস ওপর মুসলমানদের কর্তৃত্ব খুব কষ্টকর মনে করলেন। ইউরোপে ফিরে গিয়ে তিনি খৃস্টানদের দুরবস্থার সত্য মিথ্যা কাহিনী বর্ণনা করলেন এবং এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি গোটা ইউরোপ সফর করলেন। পিটারের এ সফর সেখানকার লোকদের মধ্যে ধর্মীয় উম্মাদনার পরিস্থিতি সৃষ্টি করল। কিন্ত দুঃখের বিষয়, এই ধর্মযাজক বায়তুল মাকদিস দর্শন করতে আসা লোকদের দুস্কর্ম একদম চেপে গেলেন। পোপ যেহেতু পশ্চিমা গীর্জার আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন, এজন্য তিনি বিভিন্ন উপগোষ্ঠির একটি সম্মেলন ডাকলেন এবং সেখানে মুসলানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিলেন। তিনি এ মর্মে সুসংবাদ ঘোষণা করলেন যে, এ যুদ্ধে মারা গেলে সব ধরনের পাপ মোচন হয়ে যাবে এবং বেহেশতের অধিকারী হওয়া যাবে। লোকেরা দলে দলে সেন্ট পিটারের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনে হামলার জন্য রওয়ানা দেয়ে।

✪✪ক্রুসেডের প্রেক্ষাপটঃ ✪✪

ক্রুসেডের প্রেক্ষাপট ভালোবভাবে জানতে হলে এর পিছনের কাহিনী জানতে হবে। ৬৩৬ সালে মুসলিম সেনাপতি আমর ইবনুল আস জেরুজালেম অবরুদ্ধ করেন। সে সময় খলিফা ছিলেন হজরত উমর (রা.)।

চারমাস অবরোধের পর জেরুজালেমের প্রধান ধর্ম জাজক সেফ্রোনিয়াস, খলিফা উমর (রা.) স্বয়ং জেরুজালেম উপিস্থিত হয়ে চুক্তিপত্রে সাক্ষর করলে জেরুজালেম মুসলমানদের হাতে অর্পিত হয়।

খলিফার মহানুভবতায় জেরুজালেম বাসী আত্মসমর্পন করে। তারা স্বাধীনভাবে ধর্মকার্জ সম্পাদনের অধিকারের জন্য এক সন্ধিপত্রে খলিফাকে দিয়ে সাক্ষর করিয়ে নেয়।
১০৮৭ সালে পোপ তৃতীয় ভিক্টরের মৃত্যু হলে দ্বিতীয় উর্বান পোপ হন।

১০৯৫ সালে পূর্ব রোম সম্রাট এলেক্সিয়াস (Alexius) এর আহ্বানে খ্রীষ্টান সন্যাসী পিটারের (Peter the Harmit) পরামর্শে মুসলমানদের নাগপাশ হতে পবিত্র শহর জেরুজালেম উদ্ধারের জন্য দক্ষিন ফ্রান্সের ক্লেয়মেন্ট নামক জায়গায় এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।সভায় পোপের মোটিভেশনাল বক্তৃতায় উত্তেজিত হয়ে ফ্রান্স, লরেন, ইটালী, সিসিলি থেকে প্রায় দেড় লক্ষ খ্রীষ্টান সেরুজালেম যাত্রা করে।

খ্রীষ্টান সন্যাসী পিটারের চল্লিশ হাজার ধর্মযোদ্ধা এশিয়া মাইনর আক্রমণ করলে প্রথম ক্রুসেড আরাম্ভ হয় (১০৯৬)।




এই সময়ে মুসলিম জগত অভ্যন্তরীন কোন্দলে জর্জরিত ছিলো। বাগদাদের সিংহাসন নিয়ে সেলজুকী সুলতান মালেক শাহের পুত্রদের এবং দামেশক ও আলেপ্পার আধিপত্য নিয়ে মালেক শাহের ভ্রাতুস্পুত্র রেজওয়ান ও দুদাকের মধ্যে বিবাদ চলছিলো। স্পেনের আরবরা পরস্পর গৃহযুদ্ধ ও প্রতিবেশী খ্রীষ্টানদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। মিশরের খলিফা ছিলেন হীনবল এবং বিলাশ স্রোতে ভাসমান। সুতরাং এশিয়া মাইনর ও সিরিয়ার মুসলিম জনসাধারণ এই যুদ্ধে কোন সাহায্য পেল না।

ইকনিয়ামের সেলজুকী সৈন্যের আক্রমণে এবং রসদাদির অভাবে পিটারের পরিচালিত সমস্ত খ্রীষ্টান বাহিনী এশিয়া মাইনরে বিনষ্ট হয়। বলা হয়েছে, '‘They belived it to be unneccesary to take money or food, that God would supply His warriors.- All these perished on the way.’'

ক্রসেড পূর্ব জেরুজালেমঃ ইসমাইলি শীয়া (বাতিল কাফির) এর রাজত্বের অংশ

এবার একটু মিসরে দিকে আসি, কারণ ক্রুসেড যুদ্ধ বিজয়ের অন্যতম দাবিদার মিশর। খ্রীষ্টপূর্ব ৩১সালে মিসর রোম সম্রাজ্য ভুক্ত হওয়ার পর ৬১৮ সালে পারসিকরা মিসর আক্রমন করে, এবং মিসর দখল করে। যদিও ৬২২ ও ৬২৭ সালে রোমকরা আবার পারসিকদের কাছ থেকে মিসর পুণরুদ্ধান করে। ৬৪১ খ্রীষ্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি যুবাইর ইবনে আওয়াম কতৃক আরবদের মিশর জয় হয়। পরবর্তিতে খলিফা শাসন ব্যবস্থা প্রধান প্রধান মুসলিম দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন উমাইয়া বংশীয় খলিফা শাসন, শীয়া(ইসমাইলি বাতিল কাফির) বংশীয় খলিফা শাসন, আব্বাসীয়া খলিফা শাসন ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে মিশরে ক্রুসেড চলাকালীন সময়ে ১২৬১ সালের আগ পর্যন্ত  ইসমাইলি শীয়া (বাতিল কাফির) খলিফারা শাসন করত। তদানীন্তন শীয়া(ইসমাইলি বাতিল কাফির) খলিফাগণ প্রধান মন্ত্রীর হাতে রাজ্যভার আর্পন করে অন্তঃপুরে সময় কাটাত। রাজপ্রাসাদের নিকটবর্তি আল আজহার মসজিদে শুধু শুক্রবার উপস্থিত হয়ে জুম’আর নামাজ পরতেন। খলীফার প্রাসাদে চার হাজার কক্ষ ছিলো। ঐ সকল কক্ষগুলো স্বর্ণ, রৌপ, মণি-মাণিক্য খচিত দ্রব্যাদিতে পরিপূর্ণ ছিলো। খলিফার দাস-দাসী ও ভৃত্যগণের সংখ্যা আঠারো হাজার থেকে ত্রিশ হাজার ছিলো। ফলতঃ তখন প্রধান মন্ত্রীই ছিলেন রাজ্যের সর্বময় কর্তা। সতরাং রাজ্যে তো অরাজকতা বিরাজ করবেই।

প্রথম ক্রুসেড যুদ্ধ ১০৯৭-১১৪৫ খৃ.

পোপের যুদ্ধ ঘোষণার পর একে একে চারটি বিশাল সেনাবাহিনী বায়তুল মাকদিস জয়ের সঙ্কল্প নিয়ে রওয়ানা হয়। পাদ্রী পিটারের অধীনে লাখ এর মত খৃস্টানের এক বিশাল বাহিনী কনস্টান্টিনোপলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথে তারা নিজেদের ধর্মের লোকদের ওপরেই হত্যা, রাহাজানি ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করে। বুলগেরিয়া হয়ে তারা যখন কনস্টান্টিনোপল পৌছে, তখন এখানকার রোমান সম্রাট তাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে তাদের গতি এশিয়া মাইনরের দিকে ফিরিয়ে দেন। তারা যখন ইসলামী এলাকায় প্রবেশ করে, তখন সালজুকী শাসক কালাজ আরসালান এ বাহিনীটিকে নাস্তানাবুদ করে দেন। তাদের প্রচুর সৈন্য নিহত হয়। ক্রুসেডারদের এ অভিযান একেবারেই ব্যর্থ হয়ে যায়।

ক্রুসেডারদের দ্বিতীয় বাহিনী একজন জার্মান পাদ্রী গাউসফেল- এর নেতৃত্বে রওয়ানা হয়। তারা যখন হাঙ্গেরী অতিক্রম করে, তখন তাদের অনাচারে হাঙ্গেরীর লোকেরা নিরুপায় হয়ে পড়ে এবং তাদেরকে সেখান খেকে বের করে দেয়। এ বাহিনীটিও এভাবে অপকর্মের প্রয়াশ্চিত্ত ভোগ করে।

ক্রুসেডারদের তৃতীয় বাহিনীতে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও ফিনল্যান্ডের স্বেচ্ছাসেবকরা ছিল। এ বাহিনী যখন পবিত্র যুদ্ধের জন্য রওয়ানা হয়, তখন এই স্বেচ্ছাসেবকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শিকার হয় রাইন নদীর তীরবর্তী মসুল সহ কয়েকটি শহরের ইহুদী বাসিন্দারা। এরা যখন হঙ্গেরী অতিক্রম করতে থকে, তখন হাঙ্গেরীর বাসিন্দারা তাদের কচুকাটা করে হাঙ্গেরীর মাটিকে তাদের কবরস্তান বানায়।
সবচেয়ে সুশৃঙ্খল ও বিশাল বাহিনী ছিল দশ লাখ সৈন্যের। ১০৯৭-এ তারা রওয়ানা হয়। এ বাহিনীতে ইংল্যাণ্ড, ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালী ও সিসিলির রাজপুত্ররা ছিলেন। এ সম্মিলিত বাহিনির কমাণ্ড ছিল ফ্রান্সের গডফ্রের হাতে। বিশাল এই বহিনী এশিয়া মাইনরের দিকে রওয়ানা হয় এবং প্রসিদ্ধ কুনিয়া শহর অবরোধ করে। কালাজ আরসালান পরাজিত হলেন। বিজয়ী খৃস্টানরা অগ্রসর হতে হতে ইন্তাকিয়া পৌছে যায়। নয় মাস পরে ইন্তাকিয়াও তাদের দখলে চলে যায়। সেখানকার সমস্ত মুসলমানকে তারা হত্যা করে। মুসলমানদের ওপর ক্রুসেডারদের নির্যাতন ছিল বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জাজনক অধ্যায়গুলোর একটি। শিশু, যুবক, বৃদ্ধ কেউ তাদের হাত থেকে বাঁচতে পারল না। প্রায় এক লাখ মুসলমান নিহত হয়। ইন্তাকিয়ার পর বিজয়ী বাহিনী সিরিয়ার কয়েকটি শহর দখল করতে করতে হিমস পৌছে।


১০৯৭ সালে গডফ্রের (Godfrey of Bouillon) নেতৃত্বে পরিচালিত সাত লক্ষ খ্রীষ্টান ধর্মযোদ্ধা কন্সটান্টিনপোলের পথে এশিয়া মাইনর আক্রমণ করেন। ইকনিয়ামের সেলজুকী সুলতান কিলিজ আর্সালান দাউদ খ্রীষ্টান বাহীনির গতিরোধ করতে গিয়ে পরাজিত হন। খ্রীষ্টানগণ পথের মাঝে যে সমস্থ নগর ও গ্রামাদি পেয়েছে সমস্থ পুড়িয়ে ফেলে ও অধিবাসীদের হত্যা করে। যেহেতু যুদ্ধ, তাই হত্যা গুলো হয়েছে নির্দয় ভাবেই। এরপর খ্রীষ্টানগণ এন্টিয়ক (ইন্তাকিয়া ) নগর আবরোধ করে ২১ অক্টোবর।

নয় মাস অবরোধের পর খ্রীষ্টান ক্রুসেডারগণ এন্টিয়ক/ইন্তাকিয়া নগর অধিকার করে ১০৯৮ সালের ৩রা জুন। নগরের অধিবাসীদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা এবং ভক্ষন করে। কারন খ্রীষ্টান ধর্মজাজকগণ প্রচার করেছিলো যে, যারা মুসলমানের মাংশ ভক্ষন করবে তারা নিস্পাপ অবস্থায় সর্গে আরোহন করতে পারবে। খ্রীষ্টান দলপতি বোহিমন্ড এন্টিয়কের রাজা ঘোষিত হন।

জানুয়ারী, ১০৯৯ সালে ফরাসী কাউন্ট রেমন্ড (Raymond of Toulouse) এর নেতৃত্বে পরিচালিত খ্রষ্টান যোদ্ধাগণ সিরিয়ার মেরাতুন্নোমান নগর ভস্মিভূত ও এর এক লক্ষ অধিবাসীকে হত্যা করে।

ক্রুসেডার দলপতি গডফ্রে মিসরের ফাতেমিয় খলিফা মোস্তা আলী বিল্লার সেনাপতি ইফতেখার উদ্দৌলাকে পরাজিত করে জেরুজালেম নগর দখল করে। এবং সেখানকার প্রায় সত্তর হাজার অধিবাসিকে হত্যা করে (জুলাই, ১০৯৯)।

গডফ্রে জেরুজালেমের রাজা বলে ঘোষিত হন। তার আদেশে জেরুজালেমের প্রসিদ্ধ মসজিদ (Mosque of Omar) গির্জায় পরিনত হয়। এ খবর শুনে বাগদাদের খলিফা মোস্তাজহের কোন মৌখিক সহনুভূতি প্রকাশ করলেন মাত্র। কিন্তু সেলজুকী সুলতান মদ্যপায়ী বর্কইয়ারুকের মুখে সহানুভূতির বাক্যও উচ্চারিত হল না।

জেরুজালেম পতনের সংবাদ শুনে মিশরের শীয়া(ইসমাইলি বাতিল কাফির) খলিফা পুনঃ একদল সৈন্য প্রেরণ করেন। কিন্তু ঐ সৈন্যদল আস্কালন নগরের কাছেই খ্রীষ্টানদের হাতে পরাজিত হয়।

খ্রীষ্টান ধর্মযোদ্ধাগণ সিরিয়ার সুমদ্র উপকূলবর্তি হাইফা জাফ্‌ফা, কাইসারিইয়া, আক্কা, তারসুস প্রভৃতি নগর দখল পুর্বক নগরসমুহের মুসলমান ও ইহুদী আধিবাসীগণকে হত্যা করে। অন্যদিকে জেরুজালেমের রাজা গডফ্রের মৃত্যু হয়। তার ভাই বল্ডউইন (Boldwin) রাজপদে অধিষ্ঠিত হন (১১০০)।

এন্টয়াক রাজ বোহিমন্ড সেলজুক সেনাপতি গোমিস্তিগিন কতৃক পরাজিত ও বন্দি হন। ক্রুসেডার দলপতি রেমন্ড সিরিয়ার ত্রিপোলী বন্দর অবরোধ করেন। অন্যদিকে বিভিন্ন দলপতির নেতৃত্বে পরিচালিত চার লক্ষাধিক খ্রীষ্টান যোদ্ধা এশিয়া মাইনরের আনাতোলিয়া প্রদেশে খাদ্যাভাব, মহামারী ও তুর্কি সৈন্যদের হাতে প্রাণ বিসর্জন করে। মিসরের ফাতেমিইয়া খলিফা মোস্তা আ’লীর মৃত্যু হয়। তার পাঁচ বছর বয়সী সন্তান আমীর বি-আহকামেল্লাহ্ রাজ্য লাভ করে ১১০১ সালে।

এ্যকুইটাইনের ডিউক উইলিয়াম সসৈন্য জেরুজালেমের পথে কন্সটান্টিনোপলের নিকট নহত হন।

বাগদাদের সেলজুকী সুলতান বর্কইয়ারুকের মৃত্যুর পরে তার ভাই মুহাম্মদ শাহ সিংহাসনে বসেন।

এর মধ্যে ১১০৯ সালের জুলাই মাসে অনেক সময় অবরোধের পর খ্রীষ্টান ধর্মযোদ্ধাগণ সিরিয়ার ত্রিপোলী বন্দর অধিকার করে অধিবাসিদের হত্যা করে খ্রীষ্টান ক্রুসেডারদের ত্রিপোলী ও আলেপ্পা নগর ধ্বংসের খবরে বাগদাদের খলিফা মোস্তাজহির বিল্লা জামে মসজিদে প্রার্থনা করেই চুপ থাকলেন। সেলজুকী সুলাতান মুহাম্মদ শাহও কিছু করা থেকে বিরত থাকেন। সেই শহরে বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থাগার খ্রীষ্টান ধর্মযোদ্ধারা পুড়িয়ে ফেলে। ঐ গ্রন্থাগারে ত্রিশ লক্ষ বই ছিলো। নগর দখলের পর রেমন্ডের আদেশে এই গ্রন্থাগারের কি গতি করা যায় এর সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য কাউন্ট সেন্ট জিন্ নামক প্রবীন পাদ্রী গ্রন্থাগার পরিদর্শণ করেন। পাদ্রী মশায় প্রথম রুমে প্রবেশ করেন, সেখানে কুরানের অনুলিপি সাজানো ছিলো। তিনি ক্রমে বিশটি বই খুলে দেখেন সবগুলোই কুরান। তিনি তক্ষুনি ঘোষনা করলেন- এই গ্রন্থাগারের সমস্থ বই খ্রীষ্টধর্মের বিরুদ্ধে। তার আদেশে ঐ গ্রন্থাগার পুড়ানো হল।

মৌস্পল ও দামেশকের সেলজুকী শাসকর্তাদের দ্বারা খ্রীষ্টান ক্রুসেডারদণ তিবরিয়া হ্রদের (Sea of Gallilee) তীরে পরাভূত হয় (১১১৩)।

এই সময়ের মাঝে পোপ ছিলেন জিলেসিয়াস, দ্বিতীয় কেলিটাস্, হনোরিয়াস, দ্বিতীয় ইনোসেন্ট, দ্বিতীয় চেলেস্টাইন(১০??-১১৩০ সাল)

খ্রীষ্টান ক্রুসেডাররা সিরিয়ার বিভিন্ন যুদ্ধে তুর্কিদের কাছে পরাজিত হয়। মুসলমানদের করুন পরিনতি দেখে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ তুমরাই নামক জৈনক তাপস পশ্চিম আফ্রিকায় নিজেকে প্রতিশ্রুত ইমাম মেহেদী বলে ঘোষনা করে। যাযাবর আরব বেদুইনরা তার সাথে যোগ দেয় (১১২০ সাল)।

এই যখন অবস্থা ১১৩৭ সালে ক্রুসেড বিজয়ী মহাবীর সুলতান সালাহ্‌উদ্দিন ইবনে আইয়ূব (Saladin) ইরাক প্রদেশের তাকরিৎ নামক স্থানে জন্মগ্রহন করেন।

মৌসলের স্বাধীন আমীর আতাবুক ইমাদউদ্দিন জঙ্গী ক্রুসেডার ডিউক জসেলিনকে পরাজিত করে সিরিয়ার এডেসা দখল করেন।

জার্মান সম্রাট তৃতীয় কনরোড (Conrod III) ও ফ্রান্সরাজ সপ্তম লুঁই (Louis VII) নেতৃত্বে নয় লক্ষ খ্রীষ্টান ক্রুসেডার সিরিয়া আক্রমন করে। ফরাসী রানী ইলিয়ানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে হজার হজার নারীও এই যুদ্ধে যোগ দেন। এই বিরাট বাহিনী সিরিয়ায় উপস্থিত হলে দ্বিতীয় ক্রুসেড আরাম্ভ হয় (১১৪৭ সাল)। খ্রীষ্টান ক্রুসেডারগণ এন্টিয়ক নগর পুনঃদখল করে।


আলেপ্পার আমীর নুরউদ্দিন জঙ্গী ও তার ভাই মৌসলপতি সয়ফউদ্দিন জঙ্গী ছাড়া অন্য কোন মুসলিম রাজশক্তি ঐ দুর্দিনে সিরিয়াবাসীর সাহায্যে আসে নাই। দামেস্ক নগরের নিকট ক্রুসেডারগণ জঙ্গী ভাতৃদ্বয়ের কাছে পরাজিত হয়। আলেপ্পা রাজ নুরউদ্দিন জঙ্গীর সাথে এডেসার ডিউক দ্বিতীয় জোসেলিনের বিবাদ শুরু হয়। নুরউদ্দিন জোসেলিনকে বন্দি করেন। জেরুজালেম রাজা তৃতীয় বল্ডউইন মিসরীয় বাহীনিকে পরাজিত করে ভুমধ্যসাগরের উপকূলবর্তি আস্কালন বন্দর দখল করেন (১১৫১-১১৫৩)।

১১৫৯ সালে ভীষন ভুমিকম্পে সিরিয়া বধ্বস্ত হলে খ্রীষ্টানগণ সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে।

মরক্কোর সুলতান আব্দুল মো’মেন খ্রীষ্টানদেরকে পরাভূত করে সমগ্র ত্রিপোলী স্বরাজ্যভুক্ত করেন।

আলেপ্পার আমীর নুরউদ্দিন জঙ্গী ক্রুসেডের খ্রীষ্টান যোদ্ধাগণকে হারিম শহরের নিকটবর্তি কোন এক স্থানে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধে অধিকাংশ খ্রীষ্টান নেতা, এন্টিয়ক রাজা তৃতীয় বোহিমন্ড ও ত্রিপোলীর ডিউক তৃতীয় রেমন্ড নিহত অথবা বন্দি হন।


জানুয়ারী, ১০৯৯ সালে ফরাসী কাউন্ট রেমন্ড (Raymond of Toulouse) এর নেতৃত্বে পরিচালিত খ্রষ্টান যোদ্ধাগণ সিরিয়ার মেরাতুন্নোমান নগর ভস্মিভূত ও এর এক লক্ষ অধিবাসীকে হত্যা করে

জেরুজালেমের পতনঃ

ক্রুসেডার দলপতি গডফ্রে মিসরের শিয়া শাসক মোস্তাআলী বিল্লার সেনাপতি ইফতেখার উদ্দৌলাকে পরাজিত করে জেরুজালেম নগর দখল করে। এবং সেখানকার প্রায় সত্তর হাজার অধিবাসিকে হত্যা করে (জুলাই, ১০৯৯)।

গডফ্রে জেরুজালেমের রাজা বলে ঘোষিত হন। তার আদেশে জেরুজালেমের প্রসিদ্ধ মসজিদ (Mosque of Omar) গির্জায় পরিনত হয়। এ খবর শুনে বাগদাদের খলিফা মোস্তাজহের কোন মৌখিক সহনুভূতি প্রকাশ করলেন মাত্র। কিন্তু সেলজুকী সুলতান মদ্যপায়ী বর্কইয়ারুকের মুখে সহানুভূতির বাক্যও উচ্চারিত হল না।

জেরুজালেম পতনের সংবাদ শুনে মিশরের শিয়ারা পুনঃ একদল সৈন্য প্রেরণ করেন। কিন্তু ঐ সৈন্যদল আস্কালন নগরের কাছেই খ্রীষ্টানদের হাতে পরাজিত হয়।

খ্রীষ্টান ধর্মযোদ্ধাগণ সিরিয়ার সুমদ্র উপকূলবর্তি হাইফা জাফ্‌ফা, কাইসারিইয়া, আক্কা, তারসুস প্রভৃতি নগর দখল পুর্বক নগরসমুহের মুসলমান ও ইহুদী আধিবাসীগণকে হত্যা করে। অন্যদিকে জেরুজালেমের রাজা গডফ্রের মৃত্যু হয়। তার ভাই বল্ডউইন (Boldwin) রাজপদে অধিষ্ঠিত হন (১১০০)।

শিয়া শাসকের মৃত্যু

এন্টয়াক রাজ বোহিমন্ড সেলজুক সেনাপতি গোমিস্তিগিন কতৃক পরাজিত ও বন্দি হন। ক্রুসেডার দলপতি রেমন্ড সিরিয়ার ত্রিপোলী বন্দর অবরোধ করেন। অন্যদিকে বিভিন্ন দলপতির নেতৃত্বে পরিচালিত চার লক্ষাধিক খ্রীষ্টান যোদ্ধা এশিয়া মাইনরের আনাতোলিয়া প্রদেশে খাদ্যাভাব, মহামারী ও তুর্কি সৈন্যদের হাতে প্রাণ বিসর্জন করে। মিসরের শিয়া শাসক মোস্তাআ’লীর মৃত্যু হয়। তার পাঁচ বছর বয়সী সন্তান আমীর বি-আহকামেল্লাহ্ রাজ্য লাভ করে ১১০১ সালে।

এ্যকুইটাইনের ডিউক উইলিয়াম সসৈন্য জেরুজালেমের পথে কন্সটান্টিনোপলের নিকট নহত হন।

বাগদাদের সেলজুকী সুলতান বর্কইয়ারুকের মৃত্যুর পরে তার ভাই মুহাম্মদ শাহ সিংহাসনে বসেন।

আলেপ্পোর কিতাব খানা পুড়ানোঃ

এর মধ্যে ১১০৯ সালের জুলাই মাসে অনেক সময় অবরোধের পর খ্রীষ্টান ধর্মযোদ্ধাগণ সিরিয়ার ত্রিপোলী বন্দর অধিকার করে অধিবাসিদের হত্যা করে খ্রীষ্টান ক্রুসেডারদের ত্রিপোলী ও আলেপ্পা নগর ধ্বংসের খবরে বাগদাদের খলিফা মোস্তাজহির বিল্লা জামে মসজিদে প্রার্থনা করেই চুপ থাকলেন। সেলজুকী সুলাতান মুহাম্মদ শাহও কিছু করা থেকে বিরত থাকেন। সেই শহরে বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থাগার খ্রীষ্টান ধর্মযোদ্ধারা পুড়িয়ে ফেলে। ঐ গ্রন্থাগারে ত্রিশ লক্ষ বই ছিলো। নগর দখলের পর রেমন্ডের আদেশে এই গ্রন্থাগারের কি গতি করা যায় এর সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য কাউন্ট সেন্ট জিন্ নামক প্রবীন পাদ্রী গ্রন্থাগার পরিদর্শণ করেন। পাদ্রী মশায় প্রথম রুমে প্রবেশ করেন, সেখানে কুরানের অনুলিপি সাজানো ছিলো। তিনি ক্রমে বিশটি বই খুলে দেখেন সবগুলোই কুরান। তিনি তক্ষুনি ঘোষনা করলেন- এই গ্রন্থাগারের সমস্থ বই খ্রীষ্টধর্মের বিরুদ্ধে। তার আদেশে ঐ গ্রন্থাগার পুড়ানো হল।
(সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ না করে এবং দাওয়াতের মেহনত ও আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া এড়িয়ে যারা শুধু কিতাব খানায় সময় দেয়াকেই যথেস্ট মনে করেন তাদের উচিত এগুলা থেকে শিক্কা নেয়া)
মৌস্পল ও দামেশকের সেলজুকী শাসকর্তাদের দ্বারা খ্রীষ্টান ক্রুসেডারদণ তিবরিয়া হ্রদের (Sea of Gallilee) তীরে পরাভূত হয় (১১১৩)।

এই সময়ের মাঝে পোপ ছিলেন জিলেসিয়াস, দ্বিতীয় কেলিটাস্, হনোরিয়াস, দ্বিতীয় ইনোসেন্ট, দ্বিতীয় চেলেস্টাইন(১০??-১১৩০ সাল)

খ্রীষ্টান ক্রুসেডাররা সিরিয়ার বিভিন্ন যুদ্ধে তুর্কিদের কাছে পরাজিত হয়। মুসলমানদের করুন পরিনতি দেখে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ তুমরাই নামক জৈনক শীয়া তাপস পশ্চিম আফ্রিকায় নিজেকে প্রতিশ্রুত ইমাম মেহেদী বলে ঘোষনা করে। যাযাবর আরব বেদুইনরা তার সাথে যোগ দেয় (১১২০ সাল)।

এই যখন অবস্থা ১১৩৭ সালে ক্রুসেড বিজয়ী মহাবীর সুলতান সালাহ্‌উদ্দিন ইবনে আইয়ূব (Saladin) ইরাক প্রদেশের তাকরিৎ নামক স্থানে জন্মগ্রহন করেন।

ইমামুদ্দীন জঙ্গীর উত্থানঃ

মৌসলের স্বাধীন আমীর আতাবুক ইমাদউদ্দিন জঙ্গী ক্রুসেডার ডিউক জসেলিনকে পরাজিত করে সিরিয়ার এডেসা দখল করেন।

দ্বিতীয় ক্রুসেড যুদ্ধ ১১৪৪-১১৮৭ খৃ.

সিরিয়া আক্রমন

জার্মান সম্রাট তৃতীয় কনরোড (Conrod III) ও ফ্রান্সরাজ সপ্তম লুঁই (Louis VII) নেতৃত্বে নয় লক্ষ খ্রীষ্টান ক্রুসেডার সিরিয়া আক্রমন করে। ফরাসী রানী ইলিয়ানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে হজার হজার নারীও এই যুদ্ধে যোগ দেন। এই বিরাট বাহিনী সিরিয়ায় উপস্থিত হলে দ্বিতীয় ক্রুসেড আরাম্ভ হয় (১১৪৭ সাল)। খ্রীষ্টান ক্রুসেডারগণ এন্টিয়ক নগর পুনঃদখল করে।

আলেপ্পার আমীর নুরউদ্দিন জঙ্গী ও তার ভাই মৌসলপতি সয়ফউদ্দিন জঙ্গী ছাড়া অন্য কোন মুসলিম রাজশক্তি ঐ দুর্দিনে সিরিয়াবাসীর সাহায্যে আসে নাই। দামেস্ক নগরের নিকট ক্রুসেডারগণ জঙ্গী ভাতৃদ্বয়ের কাছে পরাজিত হয়। আলেপ্পা রাজ নুরউদ্দিন জঙ্গীর সাথে এডেসার ডিউক দ্বিতীয় জোসেলিনের বিবাদ শুরু হয়। নুরউদ্দিন জোসেলিনকে বন্দি করেন। জেরুজালেম রাজা তৃতীয় বল্ডউইন মিসরীয় বাহীনিকে পরাজিত করে ভুমধ্যসাগরের উপকূলবর্তি আস্কালন বন্দর দখল করেন (১১৫১-১১৫৩)।

১১৫৯ সালে ভীষন ভুমিকম্পে সিরিয়া বধ্বস্ত হলে খ্রীষ্টানগণ সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে।

মরক্কোর সুলতান আব্দুল মোমেন খ্রীষ্টানদেরকে পরাভূত করে সমগ্র ত্রিপোলী স্বরাজ্যভুক্ত করেন।

আলেপ্পার আমীর নুরউদ্দিন জঙ্গী ক্রুসেডের খ্রীষ্টান যোদ্ধাগণকে হারিম শহরের নিকটবর্তি কোন এক স্থানে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধে অধিকাংশ খ্রীষ্টান নেতা, এন্টিয়ক রাজা তৃতীয় বোহিমন্ড ও ত্রিপোলীর ডিউক তৃতীয় রেমন্ড নিহত অথবা বন্দি হন।

ইসমাইলি শীয়া (বাতিল) শাসকের অধঃপতন

এবার একটু মিসরে দিকে আসি, কারণ ক্রুসেড যুদ্ধ বিজয়ের অন্যতম দাবিদার মিশর। খ্রীষ্টপূর্ব ৩১সালে মিসর রোম সম্রাজ্য ভুক্ত হওয়ার পর ৬১৮ সালে পারসিকরা মিসর আক্রমন করে, এবং মিসর দখল করে। যদিও ৬২২ ও ৬২৭ সালে রোমকরা আবার পারসিকদের কাছ থেকে মিসর পুণরুদ্ধান করে। ৬৪১ খ্রীষ্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি যুবাইর ইবনে আওয়াম কতৃক আরবদের মিশর জয় হয়। পরবর্তিতে খলিফা শাসন ব্যবস্থা প্রধান প্রধান মুসলিম দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন উমাইয়া বংশীয় খলিফা শাসন, শিয়া বংশীয় খলিফা শাসন, আব্বাসীয়া খলিফা শাসন ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে মিশরে ক্রুসেড চলাকালীন সময়ে ১২৬১ সালের আগ পর্যন্ত শিয়া খলিফারা শাসন করত। তদানীন্তন শিয়ায়া খলিফাগণ প্রধান মন্ত্রীর হাতে রাজ্যভার আর্পন করে অন্তঃপুরে সময় কাটাত। রাজপ্রাসাদের নিকটবর্তি আল আজহার মসজিদে শুধু শুক্রবার উপস্থিত হয়ে জুম’আর নামাজ পরতেন। খলীফার প্রাসাদে চার হাজার কক্ষ ছিলো। ঐ সকল কক্ষগুলো স্বর্ণ, রৌপ, মণি-মাণিক্য খচিত দ্রব্যাদিতে পরিপূর্ণ ছিলো। খলিফার দাস-দাসী ও ভৃত্যগণের সংখ্যা আঠারো হাজার থেকে ত্রিশ হাজার ছিলো। ফলতঃ তখন প্রধান মন্ত্রীই ছিলেন রাজ্যের সর্বময় কর্তা। সতরাং রাজ্যে তো অরাজকতা বিরাজ করবেই।

শিয়াদের খ্রিস্টান সন্ধি

১১৬৯ সালে মিসরের শীয়া(ইসমাইলি বাতিল কাফির) বংশীয় শেষ খলিফা আল আজিদের বিদ্রোহী সেনাপতি দিরগামকে দমন করতে অসমর্থ হলে প্রধান মন্ত্রি শাবের আল সা’দী আলেপ্পার-রাজ নুরুদ্দিনের সেনাপতি ‘শেরকুহ’ মিশরে উপস্থিত হন এবং বিলবেজ নামক স্থানে বিদ্রহী সেনাপতি দিরগামকে নিহত করেন। শাবের আলেপ্পো ফিরে যান। এদিকে মিসর-মন্ত্রী শাবের জেরুজালেমের খ্রীষ্টান রাজা এমালরিকের সঙ্গে নুরউদ্দিনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। নুরউদ্দিন এ কথা শুনে শেরকুহ ও তার ভাতিজা সালাহ্উদ্দিন ইবনে আইয়ূবকে মিশর আক্রমনে পাঠান। জেরুজালেম রাজ এমেলরিকও মন্ত্রীর সাহায্যার্থে মিশরে উপনীত হন। রাজধানী কায়রোর নিকটবর্তি বাবেইন নামক স্থানের যুদ্ধে মন্ত্রী শাবের ও জেরুজালেম রাজের সম্মিলিত সেনাদল পরাভূত হয়। মন্ত্রী শাবের নিহত হন। শেরকুহ রাজধানী কায়রো ও সালাউদ্দিন অ্যালেক্সজেন্ড্রা বন্দর অধিকার করেন। শীয়া(ইসমাইলি বাতিল কাফির) খলিফা আল আজিদ শেরকুহকে মন্ত্রীপদে নিযুক্ত করেন। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই শেরকুহর মৃত্যু হলে সালাহ্‌উদ্দিন মিসরের মন্ত্রীত্ব লাভ করেন। এরই মধ্যে আল্ আজিদ দিনিল্লার মৃত্যু হয় ১১৭১ সালে। প্রধান মন্ত্রী মৃত খলিফার পরিবারবর্গকে প্রচুর বৃত্তি প্রদান করে স্বয়ং সিংহাসনে আরোহন করেন। ইনিই সুলাতান সালহ্‌উদ্দিন। এর পর থেকে যা যা ঘটতে থাকে তাকে ক্রুসেড ড্রামার ইন্টারভাল বলা চলে


১১৭১ সালে সালাহ্‌উদ্দিনের সুলতান হবার পর কপিতয় মিশরিয় নেতার আহ্বানে সিসিলির নর্মান রাজ দ্বিতীয় উইলিয়াম ছয়’শ যুদ্ধজাহাজ ও ত্রিশ হাজার সৈন্যসহ মিশরের অ্যালেক্সজান্ড্রিয়া বন্দর আক্রমন করেন। সালাহ্‌উদ্দিন অবিলম্বে বিদ্রোহী নায়কগণকে ধৃত ও হত্যা করেন এবং সিসিলি রাজ্যের সম্মুখীন হন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে উইলিয়াম স্বরাজ্যে প্রত্যাবর্তন করেন।

এর কয়েক বছর পরে, প্রায় ১১৭৬ সালে সিরিয়ার বালক সুলতান মালেকু শাহ ইসমাইল মন্ত্রী গুমস্তাগীনের পরামর্শে দামেশক থেকে আলেপ্পোয় রাজধানী স্থানাতরিত করেন। এই সুযোগে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী খ্রীষ্টান ক্রুসেডাররা দামেশক নগর অবরোধ করে। এই খবর শুনে সুলতান সালাহ্‌উদ্দিন মাত্র সাত’শ সৈন্য নিয়ে দামেশক উপস্থিত হন। খ্রীষ্টান ক্রুসেডাররা সালাহ্‌উদ্দিনের সাথে বিবাদে না জরিয়ে অবোরধ প্রত্যাহার করে। অপর দিকে সিরিয়ার মন্ত্রী দেখলেন তার উদ্দেশ্য চিরতার্থ হচ্ছে না। তিনি মৌসল অধিপতি সায়েফউদ্দিন জঙ্গীর ভাতিজা মালেকু সালেহের পক্ষ দামেশক আক্রমন করলে সালাহ্‌উদ্দিনের সাথে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে সালাহ্‌উদ্দিন জয়লাভ করেন। তিনি সিরিয়ার তখ্‌তে ভাই তুরান শাহকে শাসন-কতৃত্ব প্রদান করে মিশরে ফিরে আসেন।

ইসমাইলী বাতেনী সম্প্রদায়ের জৈনক ব্যাক্তি সুলতান সালাহ্‌উদ্দিনকে হত্যা করার চেষ্টা করে এবং ব্যার্থ হয়। এজন্য সুলতান বাতেনী সম্পরদায়ের বিখ্যাত দলপতি রশিদ উদ্দিন সিনান ‘শেখল জবল’-এর বাসস্থান মাসইয়াদ আবরোধ করেন। শেখল জবল উপায়ন্তুর না দেখে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং শান্তি রক্ষা করে থাকার প্রতিজ্ঞা করেন।
যদিও বাতেনী সম্প্রদায় ক্রুসেডে সেভাবে জরিত ছিলো না, কিন্তু তাদের সম্পর্কে বলার লোভটা সংবরন করতে পারছি না।


ইসমাইলি শীয়া(বাতেনী কাফির) ইতিহাস

ইমাম জাফর সাদেক  তার জৈষ্ঠপুত্র ইসমাঈল ভক্তরা বিশ্বাস করতো মদপান বা তদৃশ্য কার্জ্যে ইমাম পদে কোন ক্ষতি হয় না, এরজন্য তিনি অনুপযুক্ত বিবেচিত অথবা ইমাম পদ থেকে বিচ্যুত হতে পারেন না। তারা ইসমাঈলকে গুপ্ত ইমাম এবং তার পুত্র মুহাম্মদকে শেষ ‘প্রেরিত পুরুষ’ বা ‘আল তাম্ম’ বিবেচনা করে থাকে। তাদের মতে জগেতে আল্লাওহর পক্ষ থেকে আদম, নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা, মুহাম্মদ ও আল তাম্ম এই সাত জন প্রেরিত পুরুষ অবির্ভূত হয়েছেন। এদের প্রত্যেক দুই জনে মধ্যবর্তি সময়ে একজন ‘সামেৎ’ অর্থাৎ নিরব কর্মী এসেছেন। যেমন ইসমাঈল, হারূন, আলী প্রমুখ। তারা বিশ্বাস করে যে ইসমাঈল অচিরে ঐশী শক্তিতে শক্তিমান হয়ে মেহেদি রূপে পুনঃআগমন করবেন। তাদের এই মতবাদ কে ‘আল বাতেন’ এবং মতবাদে বিশ্বাসী ব্যাক্তিদের ‘বাতেনী’ বা ‘ইসমাঈলী’ বলা হয়। এই মতবাদ যারা প্রচার করে তাদেরকে ‘দাঈ’ বলে হয়।

আব্দুল্লাহ ইবনে ময়মুন কতৃক বাতেনী মতবাদ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি প্রথমতঃ বসরা ও পরে সিরিয়ার সালামিয়া নামক স্থান থেকে বাতেনী মতবাদ গুপ্ত অথচ দৃঢ়ভাবে প্রচার করতে থাকেন। ৮৭৪ সালে আব্দুল্লার মৃত্যুর পর হামাদান আল কারামাৎ নামক তদীয় কুফাবাসী জৈনক শিষ্য বাতেনীদের এক ভিন্ন সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। অতপর আবু সাইদ হাসান আল জান্নাবীর নেতৃত্বে কারমাতিয়া মতবাদ সুদৃঢ় হয় এবনহ তার একান্ত প্রচেষ্টায় পারস্য উপসাগর থেকে এমামা ও ওমান পর্যন্ত ভূভাগ তার শাসনাধীন হয়। ৯০৩ সালে তার পুত্র আবু তাহের সুলাইমান আল কারমাতি দক্ষিণ ইরাক উৎসন্ন ও হজ্বের রাস্তায় বিশ হাজার হজ্বযাত্রীর প্রাণনাশ এবং জম জম কূপে মানব রক্ত দিয়ে শোনিত করে। তিনি কাবার কৃষ্ণ প্রস্থর স্থানান্তরিত করেন (৯২৯-৩০ সাল)।

ইমাম গাজ্জালী (রা.)-এর সহপাঠী হাসান ইবনুল সাব্বাহ বাতেনী মতবাতে দীক্ষালাভ করে ১০৯০ সালে উত্তর পারস্যের আলবুর্জ পর্বতের ১০২০০ ফুট উপরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ এক মনোরম উপত্যাকায় আলামুত (Egale’s Nest) নামক দূর্ভেদ্য দুর্গ নির্মান করে বাতেনী সম্প্রদায়ের কেন্দ্র স্থাপন করেন। ঐ দুর্গে হাসান ও পরবর্তি বাতেনী নেতৃবিন্দের যত্নে স্বর্গীয় নন্দন-কানন সদৃশ্য এক আপরূপ বাগান নির্মাণ করে ওটাকেই কুরানে বর্ণিত বেহেশত বলে ঘোষনা করা হয়। দরিঞ্জার নামক ক্ষুদ্র নদী আলবুর্জের বরফগলা জলিরাশি বহন করে দুর্গের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হত। বাতেনী মতবাদে দীক্ষিত অনুচরগণ বা ফেদায়ী দ্বারা নানা দেশ থেকে অপহৃতা সুন্দরী রমনীদের ঐ উদ্যানে রাখা হয়েছিলো। তাদেরকে স্বর্গিয় হুর বলা হত। উদ্যানের স্থানে স্থানে স্বর্ণ, রৌপ, হীরক তৈরি অট্টলিকা নির্মিত হয়েছিলো। যদিও এর বেশির ভাগই ছিলো গিল্টি। গাছে গাছে পাখি গুলো মধুর কন্ঠে কুরানের ‘সালামু আলায়কুম তিবতম ফাদখুলুহা খালিদিন’,’সালামুন কাওলাম্‌মির রাব্বির রাহীম’ ইত্যাদি বাক্য সমূহ উচ্চারণ করে নব আগন্তুকগণকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করতো। বাতেনী মতবাদে নবদিক্ষিত কয়েকজন ব্যাক্তিকে একত্রে মাদকদ্রব্য মিশ্রিত শরবত পান করিয়ে সংজ্ঞালোপ অবস্থায় গাধার পিঠে বা অন্য কোন বাহনে কাজভিন থেকে গভীর অরন্যে, দুর্গম গিরিসঙ্কট ও পার্বত্য সুরঙ্গের ভিতর দিয়ে ঐ বেহেশতে নিয়ে আসা হত। নবদিক্ষিত ফেদিয়াগণ সেখানে ঐ হুর্ব গেলমানদের সহবাসে মত্ত থাকত। তাদের পুনঃ সংজ্ঞাহীন করে কাজভিন নগরে আনা হত। ঐ বেহেশ্ত সুখের আশায় ফেদিয়াগণ দলপতির আদেশ পালন করতে বিন্দুমাত্র ইতস্তত করতো না। ফেদিয়াদের বিভিন্ন গুপ্তকর্ম এই সকল মানুষদের দ্বারায় করানো হত।

এদের হাতেই মন্ত্রী নিজামুল মুলক, নিশাপুরের নজমুদ্দিন কুবরা ও তাতার রাজ মঙ্গু খাঁ নিহত হয়েছিলেন। দীর্ঘ্যকাল পর্যন্ত তাদের আশ্রয়স্থল অক্ষুণ্ন ছিলো।
অবশেষে ১২৫৬ সালে তাতার দলপতি হালাকু খাঁ আলামুত ও পার্শ্ববর্তী দুর্গসমূহ ধ্বংশস্তুপে পরিণত করে বাতেনী সম্প্রদায়ের মূল উৎখাত করেন। অন্যান্য বাতেনীগন বিভিন্ন মুসলিম জগতে বিভিন্ন জনপদে ছত্রভঙ্গ বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়।

১২৭১-৭২ সালে ইতালিয়ান পর্যটক মার্কোপোলো ঐ দুর্গের ধ্বংসাবশেষ দেখেন এবং তা ভ্রমনবৃত্তান্তে লিখে রাখেন।
জেরুজালেমের রাজা হেনেরী একবার শেখুল জবলের সাথে একবার সাক্ষাত করেন শেখুল জবল তার অনুচরদের বিশ্বস্ততা প্রদর্শনের জন্য দুইজন অনুচরকে প্রাসাদের চূড়া থেকে লাফ দেয়ার আদেশ করেন। অনুচরেরা সাথে সাথে লাফ দিয়ে প্রান ত্যাগ করে তিনি পোষা কবিতরের মাধ্যমে দুরের অনুচরদের কাছে সংবাদ প্রেরন করতেন। (Hitti’s ‘History of the Arabs’)



১১৭৭ সালে সুলতান সাল্লহ্‌উদ্দিন প্যালেস্টাইনের মার্জিয়ান নামক স্থানের যুদ্ধে ক্রুসেডার খ্রীষ্টানগণকে পরাজিত করেন। এর পরপরই সুলতান সালহ্‌উদ্দিনের আহ্বানে সান্‌জা নদীর তীরে পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম রাজন্যবর্গের এক সম্নেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইকনিয়াম, আর্মেনি, মৌসল, জর্জিয়া, আরবাল, কায়ফা মার্দিন প্রভৃতি স্থানের নরপতিরা ঐ সন্মেলনে উপস্থিত হয়ে (২রা অক্টোবর, ১১৮০সাল), দুই বছর পর্যন্ত পরস্পর বিবাদ থেকে নিবৃত্ত থাকার প্রতিশ্রুত হন।

খ্রীষ্টান ক্রুসেডারদের সঙ্গে যুদ্ধে মসুল বাদশাহ আতাবুক সয়েফউদ্দিন নিহত হন। তার ভাই আয়েজউদ্দিন মসুদ মসৌলের রাজপদে অধিষ্ঠত হন। আলেপ্পো-রাজ মালেক সালেহ ইসমাঈলের মৃত্যু হলে(ডিসেম্বর, ১১৮১ সাল) তার অন্তিম ইচ্ছানুসারে তার পিতৃব্য পুত্র মৌসলপতি আয়েজউদ্দিন মসউদ আলেপ্পো রাজ্যলাভ করেন। আয়েজদ্দিন মসউদ সুলতান সালাহ্‌উদ্দিনের বিরুদ্ধবাদী হন।

পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম রাজ্যবর্গের সন্মেলনের দুই বছর পর সুলতান সালহ্‌উদ্দিন আরব,সিরিয়া, মিশর ও নিউবিয়ার স্বাধীন সুলতান বলে ঘোষিত হন। ওদিকে প্যালাস্টাইনের খ্রীষ্টান ক্রুসেডারগণ পূর্ব সন্ধি লঙ্ঘন করায় সুলতান সালহ্‌উদ্দিন মিসর থেকে সিরিয়া উপস্থিত হন। এই যুদ্ধে তার ভায়ের ছেলে ফররুখ শাহ তাকে সাহায্য করেন। তাদের সন্মিলিত যুদ্ধে খ্রীষ্টান ধর্মযোদ্ধানগণ পরাজিত হয়। এরপর সুলতান সাল্লহ্উদ্দিন ইরাকের ইর্ষাপরায়ণ মুসলিম নেতাগণদের দমন করার জন্যে অগ্রসর হন। ক্রমেই তিনি এডেসা, রাক্কা, কারকিসিয়া, নসিবিন প্রভৃতি শহর অধিকার করেন এবং সবশেষে তিনি মৌসল অবরোধ করেন ১১৮২ খ্রীষ্টাব্দে। মৌসলরাজ আয়েজউদ্দিন মসউদ আলেপ্পো শহর সুলতানকে প্রদান করে সন্ধি স্থাপন করেন।

ক্রুসেডার খ্রীষ্টান সেনাপতি রেজিনাল্ড (Reginald of Chatillon) (আরবরা রেজিনাল্ডকে ‘আরনাত’ বলে ডাকতো) সুয়েজের দক্ষিনে অবস্থিত আকাবা উপসাগরের তীরবর্তি আইলা বন্দর অবরোধ করে সেখানে আরব-বণিকদের বারোটি জাহাজ লুটপাট করার পর পুড়িয়ে ফেলে এবং আরব বণিকদের হত্যা করে। অতঃপর রেজিনাল্ড মদীনায় অবস্থিত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সমাধি উৎখাত করতে মদিনা যাত্রা করেন।

সুলতান সালাহ্‌উদ্দিনের নৌ সেনাপতি এই সংবাদ শুনে অবিলম্বে হেজায যাত্রা করেন। লোহিত সাগরের তীরবর্তী রাবেগ বন্দরের নিকটবর্তী পার্বত্য পথে ১১৮৪ সালে মিসরীয় বাহিনী ক্রুসেডার খ্রীষ্টানদের গতিরোধ করে। রেজিনাল্ড পরাজিত হয়ে প্যালেস্টাইনে পালিয়ে যান। অধিকাংশ সৈন্য নিহত অথবা বন্দিভাবে মিসরে আনিত হয়। সুলতান সালাহ্‌উদ্দিন প্রতিজ্ঞা করেন স্বহস্তে তিনি রেজিনাল্ডকে হত্যা করবেন।

সুলতান সালহ্‌উদ্দিন আশি হাজার আশ্বারোহী সৈন্যসহ তিবরিয়া হৃদের (Sea of Gallile) তীরবর্তী হিত্তিন প্রান্তরে খ্রীষ্টান ক্রুসেডারদের সাথে যুদ্ধ করেন এবং যুদ্ধে জয় লাভ করেন(৩-৪ঠা জুলাই, ১১৮৭ খ্রীষ্টাব্দ)। এই যুদ্ধে ত্রিশ হাজার খ্রীষ্টানযোদ্ধা নিহত হয় এবনহ জেরুজালেমের রাজা গুই (Guy de Lusignau)। রেজিনাল্ড ও অন্যান্য প্রধান প্রধান খ্রীষ্টান সেনানায়করা সুলতানের হাতে বন্দী হয়। সুলতান সালাহ্‌উদ্দিন পূর্ব প্রতিজ্ঞানুযায়ী রেজিনাল্ডকে হত্যা করেন। সুলতানের বিজয়ী সেনাদল ক্রমে আক্কা, নাজারেথ, হাইফা, সিজারিয়া, জাফ্‌ফা, সিডন, বৈরুত প্রভৃতি নগর অধিকার করে। সুলতান স্বয়ং জেরুজালেম আবরোধ করেন (২৩ সেপ্টেম্বর, ১১৮৭ খ্রীষ্টাব্দ) কয়েকদিন পরেই নগরবাসী সুলতানের কাছে আত্নসমর্পন করে (২রা অক্টোবর, ১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দ)।

Kingdom of Heaven চলচিত্রটিতে যে কাহীনি উপস্থাপন করা হয়েছে তা মনগড়া মাত্র। আসলে খ্রীষ্টানগন কোন প্রতিরোধই গঠন করতে পারে নাই। সুলতানের সমস্ত মহানুভবতা কল্পিত নায়কের গলায় দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। 
সুলতানের আদেশে প্রত্যেক খ্রীষ্টান দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করে স্ব-স্ব ধনসম্পদসহ নগর পরিত্যাগের অনুমতি লাভ করে। মুক্তিপণ প্রদানের সময়ে দুইজন স্ত্রীলোক ও দশজন শিশু একজন পুরুষ সমান বিবেচিত হয়েছিল (Hitti’s History of Arabs)। চল্লিশ দিন পর্যন্ত খ্রীষ্টানরা এইভাবে মুক্তিপণ দিয়ে অন্যত্র প্রস্থান করতে থাকে। খ্রীষ্টানদের শহর পরিত্যাগের পর সুলতান সাল্লহ্‌উদ্দিন মহাসমারহে জেরুজালেম শহরে প্রবেশ করেন(২৭শে রজব, ৫৮৩ হিজরি)।

প্রিয় পাঠক, ১০৯৯ খ্রীষ্টাব্দে গডফ্রে কতৃক জেরুজালেম অধিকার সময়ের ঘটনা এবং সুলতান সালহ্‌উদ্দিনের ঐ শহর বিজয় কালের ঘটনার ভেতরে পার্থক্য বিচার করুন।

তৃতীয় ক্রুসেড

বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের হাতে চলে যাওয়া ক্রুসেডারদের জন্য মৃত্যুর পয়গামের চেয়ে কম ছিল না। মুসলমানদের এ বিজয়ের খবরে সারা ইউরোপে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফলে তৃতীয় ক্রুসেডের আয়োজন শুরো হয়। পুরো ইউরোপ এতে যোগ দেয়। জার্মান সম্রাট ফ্রেডারিক বারব্রোসা, ফ্রান্সের সম্রাট ফিলিপ অগাস্টাস ও ইংল্যাণ্ডর রাজা রিচার্ডশেরদিল নিজেরাই এ যুদ্ধে অংশ নেন। পাদ্রী ও ধর্মযাজকরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে খৃস্টানদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেন।
পৃথিবীর অপরপ্রান্তে ইংল্যান্ড সম্রাট দ্বিতীয় হেনেরীর মৃত্যু হয়। তার ছেলে সিংহ হৃদয় রিচার্ড (Richard the Lion-hearted) সিংহাসনে আরোহণ করেন ১১৮৯ খ্রীষ্টাব্দে। সম্রাট রিচার্ডের আদেশে ক্রুসেড যুদ্ধের ব্যায় স্বরূপ প্রত্যেক ইংল্যান্ড বাসীর আয়ের দশমাংশ ‘Saladin Tax’ নামে সংগ্রহীত হত।

এই সময়ে পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের পতন ও সিরিয়া-প্যালেস্টাইনে খ্রিষ্টানদের শোচনীয় পরাজয়-বার্তা শুনে ইংল্যান্ড রাজ সিংহ হৃদয় রিচার্ড, ফরাসী-সম্রাট দ্বিতীয় ফিলিপ্‌স ও জার্মান রাজ ফ্রেডারিক বার্বারোসা অগনিত সৈন্যসহ জেরুজালেম উদ্ধারার্থে যাত্রা করেন। পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ও ঘৃনিত তৃতীয় ক্রুসেড শুরু হয়।

খ্রীষ্টান ধর্মযোদ্ধাগণ দলে দলে সিরিয়ার সুমদ্রকূলবর্তী টায়র ও আক্কা নগরে সমবত হতে থাকে। এই যোদ্ধাদের ভেতরে বহু যুবতি সৈনিক বেশে সিরিয়ায় আগমন করেছিল। তাদের শিবিরে পুরুষ ও নারী সৈন্যরা একত্রে সমাবেশে ব্যাভিচার স্রোত অবাধে চলতে লাগলো। ইংল্যান্ডের আর্চবিশপ বল্ডউইন ঐ বিভৎস ব্যাভিচার ও মদপানের প্রাবল্য দেখে হতাশ হলেন এবং এক রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভবের মায়া ত্যাগ করলেন।

সুলতান সালাহ্‌উদ্দিন স্বয়ং আক্কা নগর আক্রমন করেন (২৭শে আগস্ট, ১১৮৯)

ভীষন যুদ্ধে খ্রীষ্টানরা পরাজিত হয় সেই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর। এই যুদ্ধে ৪ হাজার খ্রীষ্টান ক্রুসেডার নিহত হয়। এই সময় সম্রাট রিচার্ড ও ফিলিপ সসৈন্য আক্কার নিকটবর্তি হলে খ্রীষ্টান ক্রুসেডাররা বিপুল উৎসাহে পুনঃ আক্কা অবোরধ করে।

জার্মান রাজ ফ্রেডারিক নিজ সৈন্যসহ ঈজিয়ান সাগরে সলিল সমাধি হন। সিরিয়ার বিভিন্ন যুদ্ধে খ্রীষ্টানরা বার-বার পরাজিত হতে থাকলেও ইউরোপ থেকে নতুন নতুন যোদ্ধা সিরিয়ায় আসতে থাকলে ক্রুসেডারদের সাহস ও উৎসাহ বারতে থাকে। দুই বছর আক্কা শহরের অবরোধ ধরে রাখার পর সুলতান সালাহ্‌উদ্দিন পিছু হটতে থাকেন। এরই মধ্যে সম্রাট রিচার্ড আক্কা উপস্থিত হন।

(September 7, 1191 – Richard the Lionheart defeats Saladin at Battle of Arsuf
This engraving, imagined by distinguished book illustrator Gustave Dore in the mid-1800s, depicts Richard the Lionheart’s leading of a third and final charge against the forces of famed Arab leader Saladin at the Battle of Arsuf, 820 years ago today.
The success of the crusader army in the battle, and Richard’s remarkable hands-on leadership style in war, both shocked and awed Saladin and the Saracen army, creating a sense of mutual respect that set the basis for the treaty between the two men that established a Christian presence in the holy land and ended the Third Crusade, a little over a year after the battle.)

১১৯১ সালে আক্কা নগর বাসী নিরুপায় হয়ে আত্মসমর্পণ করে। সিংহ হৃদয় রিচার্ড প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে নগরের সাতাশ হাজার ইহুদী ও মুসলমান নাগরিকদের হত্যা করে খ্রীষ্ট ধর্মের আদর্শ প্রদর্শন করেন। আক্কা আবরোধের সময় দুই বছর বছরের খন্ড যুদ্ধে খ্রীষ্টানপক্ষের প্রায় এক লক্ষ সৈন্য নিহত হয়েছিলো। ধর্মোৎসাহের আগুন এমন প্রচন্ডভাবে আর কোথাও জ্বলে উঠে নাই। মোট কথা এই ক্ষুদ্র স্থানে ইউরোপ ও এশিয়ার সমস্ত শক্তি প্রায় ক্ষয়ে গিয়েছিলো।

এই সময়ে সম্রাট রিচার্ড ও ফ্রান্স রাজ ফিলিপের মধ্যে মনোমানিল্য সৃষ্টি হয় এবং ফিলিপ স্বসৈন্য ফ্রান্স যাত্রা করেন। কিছুদিন পর সম্রাট রিচার্ড খবর পান ফিলিপ রিচার্ডের ভাই জনকে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসানোর পায়তারা করছে। সম্রাট রিচার্ড দেশে দেশে ফিরে যাবার চিন্তা করতে থাকলেন, ফলে সুলতান সালহ্‌উদ্দিনের সাথে তার সন্ধি করা একান্ত জরুরী হয়ে পড়লো। কিন্তু সুলতান সালাহ্‌উদ্দিন সন্ধী প্রস্তাবকে সন্তর্পনে পাশ কাটিয়ে গেলেন। কিন্তু সম্রাট রিচার্ডকে সিংহাসন বাঁচান আতি জরুরী হয়ে পরেছিলো কারন তিনি যদি রাজ সিংহাসন হারান তবে তাকে চিরকাল এই এশিয়া মাইনরে পড়ে থাকতে হবে। যা কোন মানুষের জন্য কখনই কাম্য নয়। শেষ পর্যন্ত সুলতান সালাহ্‌উদ্দিন সন্ধি করতে রাজি হন। কিন্তু সন্ধি সম্রাট রিচার্ডের মনপুত না তাই তিনি জেরুজালেম আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেন। অপরদিকে যখন তিনি আক্কা জয় করেন তখন খ্রীষ্টান বাহীনিতে তিন লক্ষ সৈন্য ছিলো। তিনি উপকূল পথে জেরুজালেম যাত্রা করতে চাইলে মাত্র এক লক্ষ খ্রীষ্টান সৈন্য তার সাথে আসে। কারন খ্রীষ্টান ক্রুসেডারদের ব্যাভিচারের ঘটনা তার কানে গেলে তিনি আদেশ করেন ধোপিনী ছারা কোন স্ত্রীলোক সৈন্যদের সঙ্গে যেতে পারবে না। এতে অধিকাংশ খ্রীষ্টান যোদ্ধা নিরুৎসাহিত হয়ে রিচার্ডের শিবির ত্যাগ করে।

সম্রাট রিচার্ড ১১৯২ খ্রীষ্টাব্দে সিরিয়ার সিরিয়ার উপকূলবর্তী জাফ্‌ফা বন্দর অবরোধ করেন। যুদ্ধ স্থগিত করে রিচার্ড ইংল্যান্ড প্রত্যাবর্তনের জন্য সুলতান সালহ্‌উদ্দিনকে বার বার প্রস্তাব করেও অকৃতকার্য হন। ইতোমধ্যে সম্রাট রিচার্ড আসুস্থ হয়ে শয্যাগত হন। রিচার্ডের কাতর সংবাদ শুনে সুলতান যুদ্ধ স্থগিত রাখেন এবং তার চিকিৎসার জন্য এক প্রবীন চিকিৎসক ও পথ্যের জন্য নানাবিধ উপাদেয় ফল ও বরফ প্রেরণ করেন।
রিচার্ড সুস্থ হলে সুলতান সালাহ্উদ্দিন ও সম্রাট রিচার্ড সন্ধি প্রস্তাবে বসার জন্য একে অপরকে আহ্বান করেন। এই দুই বান্দার কি ভীমরতি ধরলো কে জানে সন্ধিতে দুজনে বসে রিচার্ডের বোন জোয়ানের (Joan) সাথে সালাহ্‌উদ্দিনের ভাই মালেকুল আব্দুল সয়েফউদ্দিনের বিয়ে প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন। এবং রিচার্ডের প্রস্তাবনুসারে জেরুজালেম নগর নব-দম্পতিকে বিয়ের উপহার স্বরূপ প্রদান করা হল। (Hitti’s History of Arabs. P.651)।
উইকিপিডিয়া থেকে বিস্তারিত তুলে দেওয়া হলঃ
(The Third Crusade (1189–1192), also known as the Kings' Crusade, was an attempt by European leaders to reconquer the Holy Land from Saladin (Salāh ad-Dīn Yūsuf ibn Ayyūb). It was partially successful, but fell short of its ultimate goal—the reconquest of Jerusalem.
After the failure of the Second Crusade, the Zengid dynasty controlled a unified Syria and engaged in a conflict with the Fatimid rulers of Egypt, which ultimately resulted in the unification of Egyptian and Syrian forces under the command of Saladin, who employed them to reduce the Christian states and to recapture Jerusalem in 1187. )

আজকে মুসলমানেরা অনেক পিছিয়ে আছে; আরব, পার্সিয়ান, তুর্কি জাতি এখনো ইসলামের নামে অনেক পশ্চাৎপদ প্রথা চালু রেখেছে স্বীকার করি। কিন্তু তীব্র আপত্তি জানাই, যখন বলা হয় ১৪০০ বছর পূর্বে আরব এবং মুসলমানেরা ছিল অসভ্য, বর্বর। রাগ উঠে যখন নাস্তিক হনুগুলো মহানবীর দেখানো পথকে অশান্তিময় বলে আখ্যা দেয়। মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তারের সময় দু’এক জায়গায় বিশৃঙ্খলা, হত্যাযজ্ঞ হয়েছে কিন্তু তা কখনোই হনুদের পশ্চিমা প্রভুদের মতো এতো বর্বর ছিলনা। বরং সুযোগ্য মুসলিম শাসকেরাই সকল বিভেদ ভুলিয়ে সংঘাতময় স্থানকে সকলের জন্য শান্তিময় করে তুলেছে; যার প্রমাণ স্পেন, জেরুজালেম, ভারতবর্ষ।

মুসলমানেরা কখনো মৃতদের মাংস খায়নি, ইহুদীদেরও কোন হলোকাস্ট উপহার দেয়নি। ইহুদীদের সাথে মুসলমানদের দ্বন্দ্ব সেই প্রথম ক্রুসেড পরবর্তী রোমান ক্যাথোলিকদের সুদীর্ঘ চক্রান্তের ফসল। আজকে খ্রিস্টান-ইহুদীরা একজোট হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একের পর এক অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর অজ্ঞতা এবং আবেগের বশবর্তী হয়ে মুসলমানেরা সেই ফাঁদে পা দিয়ে ঘটাচ্ছে লিবিয়ার মত ঘটনা।

(সংশোধিত ও পরিমার্জিত সংকলন। সম্পুর্ন ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ)

চতুর্থ ক্রুসেড (১১৯৫ খৃ.)

আইয়ূবী সুলতান আল মালিকুল আদেলের হাতে খৃস্টানরা দৃষ্টান্তমূলক পরাজয় বরণ করে এবং ইয়াফা শহর মুসলমানদের আয়ত্তে চলে আসে।

পঞ্চম ক্রুসেড (১২০৩ খৃ.)

ক্রুসেডাররা কনস্টান্টিনোপলে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংস সাধন করে।

ষষ্ঠ ক্রুসেড (১২২৭ খৃ.)

পোপ এনভিসেন্টের নেতৃত্বে আড়াই লাখ জার্মান সৈন্যের বিশাল বাহিনী সিরিয়ার উপকূলে আক্রমন করে। আইয়ূবী শাষক আল আদল নীলনদের মোহনায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। খৃস্টান বাহিনী নিরাশ হয়ে ফিরে যায়।

সপ্তম ক্রুসেড

আল মালিকুল কামেল ও তার ভাইদের মধ্যে বিরোধের কারণে বায়তুল মুকাদ্দাস শহর ক্রুসেডারদের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু কামেলের উত্তরসূরী সালেহ তা আবার ক্রুসেডারদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেন। বায়তুল মুকাদ্দাস যথারীতি মুসলমানদের আয়ত্তে থেকে যায়।

অষ্টম ক্রুসেড

ফ্রান্সের সম্রাট নবম লুই মিসরে হামলা চালান। কিন্তু সালাহুদ্দীন আইয়ূবীর কাছে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান।

নবম ক্রুসেড

ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম এডওয়ার্ড ও ফ্রান্সের রাজা যৌথভাবে সিরিয়র হামলা চালান। মুসলমানরা ইংরেজ ফরাসী যৌথবাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে দেয়। এ যুদ্ধের ফলে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন থেকে ক্রুসেডারদের অস্তিত্ব নিশ্চিন্ন হয়ে যায়। ক্রুসেডারদের মধ্যে আর যুদ্ধের সাহস রইল না। এদিকে মুসলমানরা নিজেদের এলাকা রক্ষায় সচেতন হয়ে যায়।

নিজেদের দীর্ঘ যুদ্ধের ধারা শেষ হয় এবং খৃস্টানরা ধ্বংস ও পরাজয় ছাড়া আর কিছু অর্জন করতে না পারায় তাদের যুদ্ধের উম্মাদনা থিতিয়ে যায়। ক্রুসেড যুদ্ধসমূহের অবসান ঘটে।

...

১০ ম ক্রসেডঃ (১৮৩০-১৯৬০খৃ)

সোর্সঃ http://www.coldwarstudies.com/2013/01/11/history-of-colonization-in-the-middle-east-and-north-africa-mena-precursor-to-cold-war-conflict/

THE HEAVILY COLONIZED COUNTRIES OF NORTH AFRICA

Egypt: British colony from 1882. British protectorate 1914. Constitutional monarchy under British tutelage from 1922 onward. More “autonomy” from 1936 onward. Last British troops depart from the Suez Canal Zone in 1956.

Sudan:  From 1899 onward, under British control as part of Egyptian-Sudanese condominium. Independent after 1956.

Tunisia: French colony from 1881. Independent 1956.

Algeria:  French conquest began in 1830. Won war of independence from France in 1963.

Morocco: French protectorate imposed in 1912. Became independent in 1956.

Libya:  Italian colony from 1911. When Italy lost in World War II, she also “lost” Libya. A monarchy was established in 1951. Overthrown in 1969.

THE LIGHTLY COLONIZED COUNTRIES OF THE FERTILE CRESCENT

These countries had been part of the Ottoman Empire until World War I. The Sykes-Picot Agreement partitioned the area between Britain and France.

Syria: Colonized by France in 1918, became independent in 1946.

Iraq: Occupied by Britain in World War I. Nominally independent after 1932.

Jordan:  British Mandate territory after 1918. Decolonized in 1946.

Palestine:  British Mandate territory after 1918. Lost to Israel 1948-1967.

Lebanon: French Mandate after 1918. Decolonized in 1943 with National Pact. (Before 1918, Jordan, Palestine, and Lebanon were all part of Greater Syria.)

THE NEW STATES OF THE GULF AND THE ARABIAN PENINSULA

Saudi Arabia, Kuwait, Qatar, Bahrain, United Arab Emirates:  With the exception of Saudi Arabia, these are mostly “new States” that came into existence in the 1960s and 1970s, carved out of a region that had been under British military and naval “protection” from the 1830s onward. Present Saudi Arabia dates from the 1930s. Kuwait dates from the 1950s when it emerged from under Iraqi-British tutelage. Colonization was not important for these states because they had no resources that anyone wanted. This changed with the discovery of oil.

THE POOR COUNTRIES OF THE ARABIAN PENINSULA

South Yemen:  Results from the ex-British colony at Aden and a Marxist-Leninist revolution.

North Yemen: Results from a “loyalist” hold-out. Region is now almost a subsidiary of Saudi Arabia. The two Yemens merged in 1990, but the legacy of divisions remains, resulting in reoccurring crisis situations and instability.

This post is drawn from material provided by Janet Abu-Lughod.

১১তম ক্রসেডঃ শেষ ক্রুসেড/ আর্মাগার্ডেন/ ফাইনাল ফাইট (২০০১-২০০৭)

শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু শেষ অনেক বাকি। 

শিশু ক্রুসেড :হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা (পাচ্যাত্যের নিষ্ঠুরতার বলী)

Source: http://www.manobkantha.com/2013/05/23/122060.html
ইতিহাসের পাতায় এ সম্পর্কে কমই লেখা আছে। কারণ অনেক পশ্চিমা ইতিহাসবিদই ওই ঘটনাকে স্বীকার করতে চান না। তাদের মতে, এ রকম কোনো ঘটনা  কখনো ঘটেইনি। কারো কারো মতে, শিভালরি ক্রুসেডের বর্ণময় যুগ গ্রামীণ লোকগাথা হিসেবেই প্রচলিত। যখন ক্রুসেডারদের একের পর এক পরাজয়ের খবরে হতাশ তখন সাধারণ মানুষের মনে ধর্মীয় উদ্দীপনা আর আশার সঞ্চারের জন্য এই গল্পগাথাগুলো রচিত হয়েছিল। শিশু ক্রুসেড নিয়ে লিখেছেন ওবায়দুল গনি চন্দন
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ক্রুসেডে ভেনিসীয় বনিকদের চরম বিশ্বাসঘাতকতা আর ক্রুসেডারদের ব্যর্থতার পর ইউরোপজুড়ে যখন সামাজিক অস্থিরতা আর হতাশা বিরাজ করছিল তখন ইউরোপের কিছু ধর্মান্ধ মানুষ শিশু ক্রুসেডের পরিকল্পনা করে। ১২১২ সালের দিকে তারা ইউরোপের বিভিন স্থান থেকে এই দরিদ্র এতিম শিশুদের সংগ্রহ করে এদের মানব ঢাল হিসেবে যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ক্রুসেডে প্রেরণ করে। যুদ্ধে চাইল্ড সোলজার ব্যবহারের ইতিহাস শুরু সম্ভবত এখান থেকেই। সেই সময়ের একের পর এক ক্রুসেডের ব্যর্থতা, সম্পদহানি আর বীরযোদ্ধাদের হারিয়ে ইউরোপে চরম সামাজিক জীবনে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছিল। এসব ব্যর্থতার জন্য মানুষ গির্জা আর নাইটদের দায়ী করে আঙ্গুল তোলার সাহস করছিল। এ অবস্থায় পোপতন্ত্রের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়ার ভয়ে দিশাহারা পোপ তৃতীয় ইননোসেন্ট ইউরোপের দিকে যাজক আর প্রিস্টদের পাঠালেন পঞ্চম ক্রুসেডের জন্য লোকবল সংগ্রহের জন্য। জেরুজালেম নগরীকে ‘বন্দি রানী’ আখ্যা দিয়ে একে উদ্ধারের আহ্বান জানালেন পোপ। যিশুর বাণীর দোহাই দিয়ে পোপ পুনরায় জেরুজালেম যাত্রার জন্য সাধারণ মানুষের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু টানা ব্যর্থতার পর ইউরোপের মানুষ যখন পোপের ধর্ম যুদ্ধের আহ্বান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তখন ফ্রান্স আর জার্মানির কিছু ধর্মান্ধ মানুষ ছয় থেকে তেরো বছরের বালকদের সংগ্রহ করে তাদের পবিত্র ভূমি স্বপ্ন দেখিয়ে ক্রুসেডের জন্য প্রেরণ করল।
ঘটনার শুরু ফান্সের অর্লিয়েন্স প্রদেশে। ২৫ সেপ্টেম্বর সেন্ট মার্ক্স ডে’র দিনে এক রাখাল বালক দাবি করে বসল প্রভুযিশু স্বপ্নে তাকে দেখা দিয়েছেন ও তাকে একজন নবী হিসেবে নির্বাচিত করে আর একটি ক্রুসেডের নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তার নেতৃত্বে শিশুদের এক বাহিনী জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করবে ও তাদের পূর্বসূরিদের ব্যর্থতা ঘোচাবে এবং পবিত্র ভূমি উদ্ধার করবে। পরে তিনি ফ্রান্সের রাজায় পরিণত হবে। যা ছিল একেবারেই নিছক একটি শিশুতোষ কল্পনা।
কিন্তু কিছু খারাপ চিন্তার মানুষ এই সুযোগকে কাজে লাগাল। শিশু স্টিফেনকে ‘নির্বাচিত একজন’ আখ্যা দিয়ে চারদিকে ধর্মীয় উন্মাদনা প্রচার করতে লাগল। এরপর জার্মানির এক প্রত্যন্ত গ্রাম কোলোজের এক বালক নিকোলাস একই দাবি করে এবং সহসাই কিছুদিনের মধ্যে জার্মানি আর ফ্রান্স থেকে ষাট হাজারের বেশি হতদরিদ্র বালক-বালিকা ধর্মগুরুদের উন্মাদনায় প্ররোচিত হয়ে জার্মানির কোলঞ্জ গ্রামে মিলিত হয় এবং বারো বছরের বালক নিকোলাসের নেতৃত্বে পবিত্র ভূমি জেরুজালেম উদ্ধারের স্বর্গীয় স্বপ্নেবিভোর হয়ে জেরুজালেম যাত্রার জন্য তৈরি হতে থাকে। চারদিক থেকে দলে দলে ভাগ্য বদলানোর লোভে কিংবা স্বর্গ লাভের আশায় সেই বাহিনীতে যোগ শুরু করল। পোপ সরাসরি এদের উদ্দেশে আশীর্বাদ না করলেও একদল প্রিস্ট আর কিছু সুযোগসন্ধানী লোক এদের ধর্মীয় উন্মাদনাকে উসকে দিয়ে  পুরোপুরি পাগলামিতে রূপ দেয়ার কাজ সম্পন্ন করল। শুরু হয় ইউরোপের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন