ইমাম বুখারীর ইতিহাস

মুসান্নিফ রহ. বলেন : আমার লিখিত বুখারী শরীফের ব্যখ্যা গ্র‎েহ্নর শুরুতে ইমাম বুখারীর জীবনী বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখানে তা থেকে সমান্য কিছু আলোচনা করব। আল্লাহ তায়ালার কাছেই সাহায্য কামনা করি।

নাম ও বংশ : 

মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল ইবনে ইবরাহীম ইবনে মুগীরাহ ইবনে বারদিঝবাহ আল-জু’ফী। তার কুনিয়াত আবূ আব্দুল্লাহ আল-বুখারী। তিনি হাদীসের হাফেয ছিলেন। তার সময়ে হাদীস বিষরদদের ইমাম ছিলেন।
তিনি তার সময়ে সকলের অনুস্বরণীয় ব্যক্তি ছিলেন। তার সমসাময়িক সকলের থেকে তিনি অগ্রগামী ছিলেন। তার কিতাব সহীহ বুখারী খতম করে বৃষ্টি চাইলে ফলপ্রসূ হয়। তার এ কিতাব গ্রহনযোগ্য ও তাতে বর্ণিত সমস্ত হদীস সহীহ হওয়ার ব্যাপারে সকল ওলামায়ে কেরাম একমত।

ইমাম বুখারী ১৩ ই শাওয়াল ১৯৪ সালে জুমআর রাতে তিনি জন্ম গ্রহন করেন। ছোট বেলায় তার পিতা মারা যায়। তার মায়ের কাছেই তিনি লালিত পালিত হন।

শৈশব ও শিক্ষাকালঃ 

মক্তবে ইলেম শিক্ষা করার সময় আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অনেক হাদীস এমনিতেই মুখস্ত হয়ে যায়। ১৬ বছর বয়সে তিনি প্রশিদ্ধ কিতবসমূহ পড়ে শেষ করেন। এমনকি তার ব্যাপারে বলা হয় তিনি ছোট বেলায় সত্তর হাজার হাদীস মুখস্ত হয়ে যায়। ১৮ বছর বয়সে তিন হজ্জ করেন। এবং তিনি মক্কায় অবস্থান করে সেখানে হাদীস শিখেন। তারপর তিনি বিভিন্ন শহরের মুহাদ্দিসদের কাছে গিয়ে হাদীস সংগ্রহ করেন। তিনি এক হাজারেরও বেশি উস্তাদ থেকে হাদীস গ্রহন করেছেন। আর তার থেকে অনেক মানুষ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

ইলম শিক্ষা ও ইলম প্রচারঃ

খতীবে বাগদাদী ইমাম বুখারীর ছাত্র ফিরাবরী থেকে বর্ণনা করেন যে, ফিরাবরী বলেন : ইমাম বুখারী থেকে প্রায় নব্বই হাজার ছাত্র বুখারী শুনেছে। কিন্তু বর্তমান আমি ছাড়া আর কেউ বেচে নেই। বর্তমানে মানুষের হাতে যে বুখারী আছে তা তার এই ছাত্র ফিরাবরী থেকে বর্ণিত। তিনি ছাড়াও হাম্মাদ ইবনে শাকের, ইবরাহীম ইবনে মা’কাল, তাহের ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে মাখলাদ, আবূ তালহা মানসুর ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল-বাঝদাবী আন-নাসাফী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেন।
এই নাসাফী ৩২৯ সালে ইন্তেকাল করেন।
আমীর আবূ নাসর ইবনে মাকুলা তাকে তাওছিক করেছেন (ইলমে হাদীসের বিশেষ পরিভাষা। অর্থাৎ তিনি এমন ব্যক্তি যে তার থেকে বর্ণিত হাদীস গ্রহনযোগ্য)।

ইমাম মুসলিমও সহীহ মুসলিম ছাড়া অন্য কিতাবে তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিম রহ. তার ছাত্র ছিলেন এবং তাকে উস্তাদ হিসেবে সম্মান করতেন। ইমাম তিরমিযীও তার প্রশিদ্ধ হাদীসের কিতাব জামেউত তিরমিযীতে এবং ইমাম নাসায়ী তার সুনানে নাসায়ীতে قال بعضهم (অর্থ- কেউ কেউ বলেন) অধ্যায়ে তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

ইমাম বুখারী আট বার বাগদাদে গেছেন। প্রতিবার ইমাম আহমাদ ইবনে হামম্বালের সাথে সাক্ষাত করেছেন। ইমাম আহমাদ তাকে বাগদাদে থাকার প্রতি উৎসাহিত করতেন। খোরাসানে থাকার প্রতি নিরুৎসাহিত করতেন।

রাতে ইমাম বুখারী রহ. এর ঘুম ভেঙ্গে গেলে উঠে বাতি জ্বালাতেন। এবং ঐ সময় যে সমস্ত ইলমী বিষয়বস্তু মনে আসত সেগুলো লিখতেন। তারপর বাতি বন্ধ করে দিতেন। এরপর আবার ঘুম ভাঙ্গলে আবার এরুপ করতেন। এমনকি তিনি এক রাতে বিশ বার এমন করেছেন।

তার ছোট বেলায় কোন কারণে চোখে দেখতেন না। একদিন তার মা ইবরাহীম আ. কে সপ্নে দেখলেন। তখন ইবরাহীম আ. তাকে বললেন : হে উমুক ! তুমি বেশি বেশি দুআ করার কারণে আল্লাহ তায়ালা তোমার ছেলের চোখ ভালো করে দিছেন। (বর্ণনাকারীর সন্দেহ :) অথবা ইবরাহীম আ. বলেছেন : তুমি বেশি বেশি কান্দার কারণে আল্লাহ তায়ালা তোমার ছেলের চোখ ভালো করে দিছেন। অতঃপর সকলে দেখা গেল তার চোখ সম্পূর্ণ ভালে।

ইমাম বুখারী রহ. বলেন : একবার আমি আমার লিখিত হাদীসগুলো অনুমান করলাম তো দেখলাম সনদ বিশিষ্ট প্রায় দুই লাখ হাদীস আমি লিখেছি। সবগুলো তার মুখস্ত ছিল।

একবার ইমাম বুখারী রহ. সমরকন্দে গিছিলেন। সেখানে চারশত মুহাদ্দিস ওলামায়ে কেরাম একত্রিত হয়।

মাহমুদ ইবনে নায ও তারা অনেকে হাদীকে এলোমেলো করে ইমাম বুখারীর সামনে পেশ করলেন। এক স্থানের সনদ কে অন্য স্থানে লাগালেন। সনদে এক ব্যক্তির স্থানে অন্য ব্যক্তির নাম ঢুকিয়ে দিলেন। এক হাদীসে অন্য হাদীসের সনদ ঢুকিয়ে দিলেন। এভাবে অনেক পরিবর্তন করে ইমাম বুখারী কে পরিক্ষা করার জন্য তার সামনে পেশ করলেন। তখন তিনি কোন হাদীসে কোন সনদে বর্ণিত তা বলে দিলেন। কোন সনদে বা মূল হাদীসে কোথায় কি সমাস্য তা সঠিকভাবে বলে দিলেন।
অনুরূপ বাগদাদের একশত মুহাদ্দিস কেও এভাবে বলেছিলেন।

তার ব্যপারে বলা হত তিনি কোন কিতাব একবার দেখলে সে কিতাব তার মুখস্ত হয়ে যেত। এধরনের অনেক কথা তার ব্যপারে প্রশিদ্ধ ছিল।

তার জামানার মুরুব্বি ও তার সমবয়সী ওলামায়ে কেরাম এর প্রশংসা-

  • ইমাম আহমাদ রহ. তার সম্পর্কে বলেন : খেরাসান তার মত আর কাউকে জন্ম দিতে পারেনি।
  • আলী ইবনে মাদানী তার সম্পর্কে বলেন : ইমাম বুখারী তার নিজের মত অন্য কাউকে দেখিনি। অর্থাৎ তার সময়ে তার মত কেউ ছিল না।
  • ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ তার সম্পর্কে বলেন : যদি তিনি হাসান বসরী যুগেও আসতেন তাহলেও মানুষ হাদীস ও ফেকহের জন্য তার মুখাপেক্ষী হত।
  • আবূ বকর ইবনে আবী শাইবা ও মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে নুমাইর তার সম্পর্কে বলেন : তার মত আর কাউকে দেখিনি।
  • আলী ইবনে হুজর তার সম্পর্কে বলেন : তার মত জ্ঞানী নেই।
  • মাহমুদ ইবনে নাযর আবূ সাহল শাফিয়ী তার ব্যাপারে বলেন : আমি বসরা, শাম, হেজাজ ও কুফাতে গেছি। এ সমস্ত এলাকার ওলামাদের কে দেখেছি যে, তাদের সামনে যখন মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল বুখারীর আলোচনা করা হয় তখন সবাই তাকে নিজেদের থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন।
  • আবুল আব্বাস আদ-দাগুলী বলেন : বাগদাদবাসী ইমাম বুখারীর কাছে একটি কবিতা লিখে পাঠায়। নিম্নে কবিতাটির অর্থ দেয় হল-
  • যতক্ষন পর্যন্ত আপনি মুসমানদের মাঝে বেচে থাকবেন ততক্ষন পর্যন্ত মুসলমানরা খায়ের বরকতের মধ্যে থাকবে  ۞  আর আপনার পরে তাদের মধ্যে খায়ের বরকত থাকবে না।
  • ফাল্লাস ইমাম বুখারী সম্পর্কে বলেন : যে হাদীস ইমাম বুখারী জানে না সেটা হাদীসই না। (অর্থাৎ সেটা সহীহ সনদে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত না)
  • নুআইম ইবনে হাম্মাদ তার সম্পর্কে বলেন : তিনি এই উম্মতের ফকীহ। অনুরূপ কথা ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম আদ-দাওরাকীও বলেছেন।
  • অনেকে ইমাম বুখারী রহ. কে ফেকহ হাদীসের দিক দিয়ে ইমাম আহমাদ রহ. ও ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহের উপর প্রাধান্য দিছেন।
  • কুতাইবা ইবনে সাঈদ ইমাম বুখারী সম্পর্কে বলেন : পূর্ব পশ্চিম সব দিকে থেকে আমার কাছে অনেক লোক আসছে। কিন্তু মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল বুখারীর মত কেউ আসেনি।
  • রজা ইবনে মুরাজ্জা তার সম্পর্কে বলেন : তার যামানার ওলামাদের উপর তার শ্রেষ্ঠত্ব মহিলার উপর পুরুষের শ্রেষ্ঠত্বের মত। (তার পূর্ববর্তী সাহাবা তাবেয়ীনদের উপর তার শ্রেষ্ঠত্ব নয়।)
  • কেউ বলেন : তিনি জমিনের উপর চলা ফেরা করে এমন, আল্লাহর এক নিদর্শন।
  • আবূ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান আদ-দারেমী তার সম্পর্কে বলেন : ইমাম বুখারী আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফকীহ, বড় আলেম, ইলমের সুক্ষ সুক্ষ বিষয় বেশি জানতেন ও সবার থেকে বেশি ইলম অন্নেষণ করতেন।
  • ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ বলেন : ইমাম বুখারী আমার থেকে বেশি দূরদর্শী ছিলেন।
  • আবু হাতেম রাজী বলেন : মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল বুখারীর থেকে বড় আলেম ইরাকে আসেনি।
  • ওবাইদ ইজলী বলেন : আমি আবূ হাতেম ও আবূ ঝুরআ কে দেখেছি তারা ইমাম বুখারীর কাছে বসেন এবং তিনি যা বলেন তা শুনেন। কিন্তু ইমাম মুসলিম এই স্তরে পৌছতে পারেনি। তিনি মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াইয়া আয-যুহলী থেকে অনেক অনেক বড় আলেম ছিলেন। তিনি দ্বীনদার মহৎ ব্যক্তি ছিলেন। সবকিছু ভালো ভাবে জানতেন।
  • কেউ বলেন : আমি দেখেছি, মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াইয়া আয-যুহলী ইমাম বুখারীর কাছে আসমায়ে রিজাল, তাদের কুনিয়াত ও হাদীসের ইলাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। আর ইমাম বুখারী তিরের মত উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন। কেমন যেন তিনি সুরা ইখলাছ তেলাওয়াত করছেন।
  • আহমাদ ইবনে হমাদুন আল-কছ্ছার বলেন : আমি ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ কে দেখেছি যে, তিনি ইমাম বুখারীর কাছে এসে ইমাম বুখারীর কপালে চুমা দিছেন। অতঃপর বললেন : হে উস্তাদের উস্তাদ, হে মুহাদ্দিসদের সর্দার, হে ইলালে হাদীসের ডাক্তার ! আমাকে অনুমতি দিন, আপনার পায়ে চুমা দিই। তারপর তাকে মজলিসের কাফ্ফারার হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তখন তিনি ঐ হাদীসের সমাস্যাগুলো বললেন। তারপর যখন তার প্রয়োজন শেষ হল তখন ইমাম মুসলিম বলেন : হিংসুক ছাড়া আর কেউ আপনার সাথে শত্রুতা পোষন করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনার মত দুনিয়াতে কেহ নেই।
  • ইমাম তিরমিযি বলেন : ইলালে হাদীস, ইতিহাস এবং হাদীসের সনদের ক্ষেত্রে ইমাম বুখারীর থেকে জ্ঞানী কাউকে আমি ইরাকেও দেখিনি খেরাসানেও না। আমরা একদিন আব্দুল্লাহ ইবনে মুনিরের কাছে বসে ছিলাম। তখন তিনি ইমাম বুখারীর জন্য দুআ করেছিলেন যে, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এই উম্মতের জন্য অলংকার বানাক। তার দুআ কবুল হয়েছে।
  • ইবনে খুজাইমা বলেন : আসমানের নিচে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস সম্পর্কে বেশি জানে এবং বেশি মুখস্ত মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল বুখারীর থেকে বেশি কাউকে দেখিনি।
  • ইমাম বুখারী রহ. অনেক বেশি লজ্জাশীল, সাহসী, দানশীল, আল্লাহভীরু, ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া থেকে আত্মসংযমী ও চিরস্থায়ী আখেরাতের প্রতি আগ্রহী ছিলেন।

আমলঃ

ইমাম বুখারী বলেন : আমি আশাকরি কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার সাথে আমার এমন অবস্থায় সাক্ষাত হবে যে, আমি কারোর গিবত করেনি। তখন তাকে বলা হল, আপনি হাদীসের রাবীদের জরাহ তা’দিলের ক্ষেত্রে রাবিদের বিভিন্ন দোষ বলেছেন? তিনি বললেন : রাবীদের জরাহের জন্য যে দোষ বলা হয় তা গীবতের অন্তর্ভুক্ত না। এরপর তার জওয়াবের স্বপক্ষে একটি হাদীস বর্ণনা করেন-
“রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এক মুনাফিক দেখা করার অনুমতি চাইল। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন অনুমতি দাও। তবে লোকটি ভালো না।”
আর আমরা যা বলি তা শুধু মুহাদ্দিসদের থেকে নকল করি। নিজেদের পক্ষ থেকে কিছু বলি না।

ইমাম বুখারী রহ. প্রতিদিন রাতে তের রাকাত (তাহাজ্জুদ ও বিতির) নামায পড়তেন। এবং তিনি রমযানের প্রতি রাতে একবার কোরআন খতম করতেন। তার অনেক ধন-সম্পদ ছিল। তা তিনি প্রকাশ্যে গোপনে সবভাবে খরচ করতেন। তিনি দিনে রাতে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে অনেক ছদকা করতেন। তিনি মুসতাজাবুদ দুআ (অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যার দুআ কবুল হয়) ছিলেন। তার দিকে তির চলত না। তিনি খুব ভদ্রলোক ছিলেন।

কোন সুলতান তার কাছে খবর পাঠালেন তিনি যেন শাহী মহলে আসেন। এবং সুলতানের সন্তানদের দরস দেন। তিনি উত্তরে পাঠালেন : ইলম তার ঘরেই দেয়া হয়। যদি আপনার চান তাহলে আমার এখানে আসেন। তিনি তাদের কাছে যেতে অস্বিকার করলেন। সে সুলতান হলেন বুখারায় নিযুক্ত খলীফার প্রতি খালেদ ইবনে আহমাদ যুহলী। ইমাম বুখারী তার কাছে যেতে অস্বীকার করার কারণে তার মনে খোভ পয়দা হল। ঘটনাক্রমে নায়সাবুর থেকে মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহ ইয়া যুহলীর পক্ষ থেকে তার কাছে একটা চিঠি আসল। যাতে লেখা ছিল ‘ইমাম বুখারী কুরআনের শব্দকে মাখলুক বলেন’। [ এ সময় মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহ ইয়া যুহলী ও ইমাম বুখারীর মাঝে এ বিষয়ে ইখতেলাফ চলছিল। এ বিষয়ে ইমাম বুখারী রহ. ‘খলকু আফআলিল ইবাদ’ নামে একটা কিতাবও লিখে ছিলেন।] তখন ইমাম যুহলী চাইলেন মানুষ কে ইমাম বুখারী থেকে হাদীস শুনা থেকে বিরত রাখবেন। আর তখন মানুষ ইমাম বুখারী কে অনেক বেশি সম্মান করতেন। এমনকি যখন ইমাম বুখারী বাহির থেকে তার পরিবার পরিজনের উদ্দেশ্যে বুখারায় ফিরে যেতেন তখন মানুষ তার মাথার উপর সোন চাঁদি ছড়িয়ে দিতেন।

ইমাম বুখারীর জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গা ছিল যেখানে বসে তিনি হাদীসের দরস দিতেন আর ছাত্ররা তার থেকে হাদীস লিখে নিতেন। সুলতান লোকদের কে তার থেকে হাদীস শিখতে নিষেধ কারার পরেও লোকেরা সুলতানের কথা না মানেনি। তখন সুলতান ইমাম বুখারীকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার দির্দেশ দেন। তখন ইমাম বুখারী সেখান থেকে চলে গেলেন। আর খালেদ ইবনে আহমাদের জন্য বদদুআ করেছিলেন। ফলে এক মাস না যেতেই ইবনে তাহের নির্দেশ দিল খালেদ ইবনে আহমাদ কে গাধার উপরে উঠায়ে শহরে ঘুরাতে। এ বদদুআ ফলে তার রাজত্ব চলে গেল। তাকে বাগদাদের জেলখানায় বন্ধি করে রাখা হল। অবশেষে জেলখানাতেই তিনি মুত্যুবরণ করেন। আর খালেদ ইবনে আহমাদের সহযোগী যারা ছিল সবাই বিভিন্ন ধরনের কঠিন কঠিন মুসিবতে পড়েছিলেন।

ইমাম বুখারী তার শহর থেকে বের হয়ে খরতানকু নামক শহরে গেলেন। যে শহর সমকান্দ থেকে দুই ফারসাখ (প্রায় দশ কিলোমিটার) দুরে অবস্থিত। সেখানে তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে গেলেন। ফেতনা যখন বাড়তে লাগল তখন তিনি দুআ করতে লাগলেন, হে আল্লাহ আমাকে তোমার কাছে নিয়ে নিও। কারণ হাদীসে দুআ আছে ‘হে আল্লাহ যখন তুমি জাতিকে ফেতনাতে ফেলার ইচ্ছা কর তখন ফেতনায় পতিত হওয়ার আগে আমাকে মৃত্যু দিয়ে তোমার নিয়ে নিও।’ এরপর তিনি রোগে আক্রান্ত হলেন। তিনি ঈদুর ফিতরের রাতে ইশার নামাযের সময় ইন্তেকাল করেন। সেটি ছিল শনিবারের রাত। আর এ বছর অর্থাৎ ২৫৬ সালে ঈদুর ফিতরের দিন জোহরের পরে তার জানাযা পড়া হয়। তার অসিয়ত মোতাবেক তাকে তিনটি সাদা কাপড়ে দাফন করা হয়। যাতে জামা পাগড়ি ছিল না। তাকে দাফনের পর তার কবর থেকে খুব সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল। যা মেশকের চেয়েও বেশি সুঘ্রাণ। এ ঘ্রাণ বেশ কয়েক দিন ছিল। তারপর তার কবর বরাবর সাদা নুরের লম্বা খুটি প্রকাশ পেয়েছিল। ইমাম বুখারী রহ. ৬২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

ইমাম বুখারী রহ. সমস্ত মুসলমানে জন্য অনেক ইলমে নাফে রেখে গেছেন। এ কারণে তার মুত্যুর পরে তার আমলনামা বন্ধ হয়নি। বরং তার আমলনামায় সর্বদা নেক আমল যুক্ত হচ্ছে। এ কথা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস থেকে প্রমানিত। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘বনী আদম মারা যায় তখন তার আমালনামা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিন জিনিসের সওয়াব সে পেতে থাকে। তার মধ্যে একটা হল ইলমে নাফে।’ -মুসলিম শরীফ।

ইমাম বুখারী রহ. এর হাদীসের কিতাব সহীহ বুখারীতে হাদীস গ্রহনের শর্ত অনান্য সহীহ হাদীসের কিতাবের থেকে বেশি উচ্চতর। এমনকি সহীহ মুসলিম ও অনান্য সহীহ হাদীসের কিতাবও তার বরবর নয়।

একজন বিশুদ্ধভাষী কবি কবিতার মাধ্যমে অনেক সুন্দর বলেছেন। 

কবিতাগুলো অর্থ-
যদি মানুষ সহীহ বুখারীর সাথে ইনসাফ করত  ۞  তাহলে স্বর্ণের পানি দিয়ে ছাড়া তা লিখত না।

এ কিতাব অন্ধ ও চক্ষু বিশিষ্ঠে মাঝে পার্থক্যকারী  ۞  এ কিতাব শক্তিশালী ও দুর্বলের মাঝে প্রতিবন্ধক।

এর সনদসমূহ আসমানের নক্ষত্রের মত ۞ উজ্জল তারকার মতই এ কিতাব সমস্ত হদীসের মতনের কিতাবরে ইমামের স্তরে।

এ কিতাবের মাধ্যমে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীনের দাড়িপাল্লা কায়েম হয়েছে ۞ এ কিতাবের মাধ্যমে আরবদের পরে অনারবরাও দ্বীন পেয়েছে।

নিঃসন্দেহে এ কিতাব মানুষ কে জাহান্নাম থেকে বাচাবে ۞  এ কিতাব আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির বিষয়ের মাঝে পার্থক্য করে দেয়।

এ কিতাব রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত পৌছানোর মাঝে পাতলা পর্দা ۞ সন্দেহ দূর করার জন্য স্পষ্ট দলিল।

হে আলেমে দ্বীন ! সমস্ত আলেমগণ একমত হয়েছে ۞ এ কিতাবের মর্যাদার স্তর সমস্ত কিতাবের উপরে।

হে এ কিতাবের সংকলক ! আপনি হাদীস একত্রিত করার ক্ষেত্রে সমস্ত ইমামদের থেকে অগ্রগামী হয়েছেন  ۞  ইমামদের স্বীকারউক্তি মতে আপনি সফলতার চুড়ায় পৌছেছেন।

আপনি দুর্বল বর্ণনাকারীদের কে পৃথক করেছেন ۞ এবং যাদের ক্ষেত্রে মিথ্যার অভিযোগ আছে তাদেরকেও পৃথক করেছেন।

এ কিতাবকে অনেক সুন্দরভাবে বিন্যাস্ত করতে আপনি সফল হয়েছেন ۞ এবং অনেক সুন্দর সুন্দর শিরোনাম নির্ধারণ করেছেন যা খুব আশ্চর্যের।
দুআ করি রব্বুল আলামীন আপনার সমস্ত চাহিদা পূরণ করেন ۞ তিনি আপনাকে যে প্রতিদান দিবে তা যেন পরিপূর্ণ দেন।

ইমাম বুখারী রহ. এর হিফযে হাদীস, মজবুত ইলম, ফিকহ, খোদভিতি, পরহেযগারিতা, ইলমী বিষয়ে গভীর বুৎপত্তি ইত্যাদি বিষয়ে ইমামগণ ইমাম বুখারী সম্পর্কে যে সমস্ত প্রশংসামূলক উক্তি করেছে তা যদি লিখতে শুরু করি তাহলে এখানে আলোচনা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। আমরা এ কিতাবে বিভিন্ন যামানার ঘটানাবলি বর্ণনা করছি। এ জন্য এখানে সংক্ষেপে এটুকু বলা হল। তার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আল্লাহ তায়ালার সাহায্যে সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্র‎েহ্নর শুরুতে করা হয়েছে।

Criticism

At least one famous ahaad (solitary) hadith in Bukhari, regarding women's leadership,[14] based upon its content and its hadith narrator (Abu Bakra), is believed by some authors to be inauthentic. Shehadeh uses gender theory to critique the hadith,[15] while Farooq believes that such hadiths are inconsistent with reforming Islam.[16] Affi and Affi also apply contemporary interpretations to Shariah law in discussing the hadith.[17]

Another hadith ("Three things bring bad luck: house, woman, and horse."), reported by Abu Hurairah, has been criticized by Fatema Mernissi for being reported out of context and without any further clarification in Bukhari's collection. The clarification is given in a hadith reported by Aisha in Imam Zarkashi's (1344-1392) hadith collection: "...He [Abu Hurairah] came into our house when the Prophet was in the middle of a sentence. He only heard the end of it. What the Prophet said was: 'May God refute the Jews; they say three things bring bad luck: house, woman, and horse.'" This case raises the question of whether other hadith in Bukhari have been reported incompletely and lacking proper context.[18]

1 মন্তব্যসমূহ

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন