কবর নিয়ে ফাজায়েলে আমলে বর্ণিত ঘটনার দলীল

একটু ভূমিকা দিয়ে আলোচনা শুরু না করলে মজা পাওয়া যাবে না . .

বেশ কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফাযায়েলে আমল কিতাবের উপর অনর্থক শিরকের ট্যাগ লাগানো হচ্ছে . .
অথচ কবরে শায়িত ব্যাক্তির সাথে কথপোকথণ খোদ নবী এবং সাহাবীদের জীবণ থেকেই পাওয়া যায় ! যারা এগুলোকে শীরক বলে প্রচার করছে সেসব ঘটণা নবী এবং সাহাবীদের জীবণেই সংঘঠিত হয়েছে . . !

ফাযায়েলে আমলের পিছে যেন কিছু মানুষ আদা-জ্বল খেয়ে লেগেছে . .
এতদিন জানতাম আল্লাহ'র সাথে কাউকে শরীক সাব্যস্ত করা শিরক . .
  • এখন এরা এসে শিরকের নিত্ত-নতুন সংজ্ঞা ও তত্ত্ব আবিষ্কার ও প্রচার শুরু করেছে. .
  • কবরে শায়িত ব্যক্তির সাথে কথা বলা নাকি শিরক ??!!
  • কোন মনুষের সন্তুষ্টি অর্জন করা নাকি শিরক !!??

শিরক আর বিদআত এর চমকদ্বার শ্লোগান দিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর চক্রান্ত বাস্তবায়ণ করতেই বোধহয় এত কিছু . .

কবরবাসী কবরের নিকটবর্তী দুনিয়ার কথা শুনতে পায়। এটা আহলে সুন্নত অয়াল জামাতের একটি আক্বিদা। (সামনের কোন Postএ এটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হবে ইনশা-আল্লাহ।) এজন্য রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহী অসাল্লাম , সাহাবী রাযিঃ সহ বিক্ষাত মুহাদ্দিসদের ক্ষেত্রে এধরণের অনেক ঘটনা বর্ণিত আছে যে তারা কবরের সামনে বা মৃত ব্যাক্তির সামনে বিভিন্ন কথা বলেছেন এবং মাঝে মাঝে
কবর থেকেও এর প্রতি উত্তর এসেছে।

ক্ষুব্ধ না হয়ে একটুধর্য্য ধরে পড়েন সব পরিস্কার হবে ইনশা-আল্লাহ।

বদর যুদ্ধে নিহত মক্কার মুশরেকদের কূপে নিক্ষেপণের পর তাদের সম্মধণ করে নবীজির কথা বলা,কবরে শায়িত তাবেইন বালকের সাথে উমর (রাঃ) এর কথপোকথণ,কবরবাসীদের সাথে উমর রাঃ এর কথপোকথণ এমন অসংখ্য-অগণীত ঘটনা হাদিসের কিতাব গুলিতে পাবেন . . (পরবর্তি Post গুলোতে বিস্তারিত আসবেই ইনশা-আল্লাহ। )

হযরত উমর (রাঃ) এর সাথে কবরে শায়িত তাবেয়ী যুবকের কথপোকথণ

হযরত উমর (রাঃ) ও মসজীদ আবাদকারী যুবকের ঘটনা -

হযরত উমর ফারুকের খেলাফতের যুগে এই তাবেয়ী যুবক হযরত উমরের অত্যন্ত স্নেহভাজন ব্যক্তি ছিল। তিনি যুবকটিকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। স্নেহের কারণও ছিল। যুবকটি ছিল খুবই ইবাদতগোযার।

প্রয়োজনীয় কাজ থেকে অবসর হলেই তাকে সর্বদা মসজিদে ইবাদত-রিয়াজত, নামায, পবিত্র কুরআনের তেলাওয়াত আর জ্ঞান চর্চায় নিমগ্ন দেখা যেত। বস্তুতঃ এমন যুবক কোন বস্তুবাদী বাদশাহের নিকট অপছন্দনীয় বা বেকার মনে হতে পারে, কিন্তু হযরত উমরের মত সাহাবী, বিশ্ব রাসূলের শ্বশুর ও আমীরুল মুমিনীনের দৃষ্টিতে এমন যুবকের কদর ও সম্মান অধিক হওয়াই স্বাভাবিক। এরূপ যুবককেই আল্লাহ পাক হাশরের ভয়াবহ দিনে আরশের নীচে ছায়া দান করে সম্মানিত করবেন বলে বুখারী শরীফের হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। এই তাবেয়ী যুবকের উপরোক্ত গুণ ব্যতীত আরেকটি গুণ এই ছিল যে, সে এশার নামায আদায় করে দৈনিক বৃদ্ধ পিতার খেদমতে নিয়োজিত হতো। পিতার সব ধরণের সেবা ও খেদমত নিজ হাতে করত। কারণ তার বিশ্বাস ছিল, মাতা-পিতার খেদমত জান্নাত লাভের অন্যতম উপায়। পক্ষান্তরে তাদের সাথে কঠোর ভাষায় কথা বলা, তাদের কষ্ট দেয়া, বেয়াদবী করা, তাদের অবাধ্য হওয়া অমার্জনীয় অপরাধ, ধ্বংসের কারণ। সূরায়ে বণী ঈসরাইলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ বিদ্যমান রয়েছে।

যুবতীর অপকর্ম

এই যুবকের প্রতি আকৃষ্ট ছিল এক যুবতী। পিতার খেদমতে যাওয়ার পথে সেই যুবতী প্রতিদিনই এই যুবক-তাবেয়ীকে বিরক্ত করত এবং তাকে পাপাচারে লিপ্ত করার অপপ্রয়াস চালাত। কিন্তু তাবেয়ী যুবক
নিজেকে অপরাধ থেকে সংযত রাখত। অবশেষে একদিন যুবতীর আহবানে সাড়া দিয়ে যুবতীর বাড়ী পর্যন্ত সে যায়। বাড়ীর দরজায় পৌঁছার পর হঠাৎ এই আয়াতটি তার মনে পড়ে যায় এবং তার সম্মুখে সেটি
ভেসে উঠে।
ان الذين اتقو اذا مسهم طائف من الشيطان تذكرو فاذاهم مبصرون

অর্থঃ যারা খোদাভীরু তাদের উপর শয়তানের আগমন ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনা শক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে।

এই আয়াতের মর্মবাণী অনুধাবনের সাথে সাথে যুবকটি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে এবং বেহুশ হয়ে পড়ে থাকে। বাড়ী ফিরতে অনেক বিলম্ব হয়ে যাওয়ায় পরিবারের লোকজন তার তালাশে বের হয় এবং যুবতীর বাড়ীর সামনে তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় দেখে ধরাধরি করে বাড়ীতে নিয়ে যায়।

অপবাদ রটনা [অপবাদ রটনা - যুবকের মৃত্যু]


কেন যুবক সংজ্ঞাহীন হলো? কেনই বা যুবতীর বাড়ীর দরজায় পড়ে থাকলো? এর সঠিক উত্তর পাওয়া সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। এমতাবস্থায় সাধারণতঃ যুবককেই দায়ী করা হয়। কিন্তু এই যুবক ছিল একান্ত আল্লাহ ভীরু, পাক-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী। সে ছিল মাতা-পিতার খেদমতগোযার। চরিত্রহীনতার লেশমাত্রও তার মধ্যে ছিল না। তাই বিষয়টি জটিল হয়ে পড়ে এবং লোকজনের মাঝে শুরু হয় বিভিন্ন ধরণের জল্পনা-কল্পনা। এ কারণে তার পরিবার-পরিজনও অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

যুবকের মৃত্যু


দীর্ঘ সংজ্ঞাহীনতার পর জ্ঞান ফিরে আসলে শ্রদ্ধেয় পিতা তাকে সংজ্ঞাহীনতার আসল কারণ জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু এদিক সেদিকের কোন উত্তর না দিয়ে উপরোক্ত আয়াতখানা তেলাওয়াত করে চিৎকার করে ওঠে এবং পুণরায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। এবার আর তার চেতনা ফিরে আসেনি, এই সংজ্ঞাহীন অবস্থায়ই সে মৃত্যুবরণ করে।

হযরত উমরের শোক

[হযরত উমরের শোক - কবর যিয়ারতে আমীরুল মুমেনীন]

এভাবে যুবকের মৃত্যু ঘটায় বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। যুবক যে একজন সৎ চরিত্রের আল্লাহভীরু যুবক, একথা আর কারও বুঝতে বাকী থাকে না। কিন্তু সে তো আর জীবিত নেই। সে যাকে ভয় করে তার দরবারে সে পৌঁছে গিয়েছে। তাই বিলম্ব না করে রাত্রেই তার কাফন-দাফন সমাধা করা হয়। সকাল বেলা আমীরুল মুমেনীনকে বিস্তারিত ঘটনা অবহিত করা হয়। হযরত উমর ফারুক যুবকটিকে স্নেহ করতেন, তাই তার মৃত্যু সংবাদে ব্যথিত হন। আরও অধিক ব্যথিত হন সংবাদের বিলম্বের কারণে। তিনি স্বয়ং যুবকের বাড়ী যান এবং তার পিতাকে শোক ও সান্ত্বনার বাণী শোনান। তিনি যুবকের পিতাকে একথা বলেন,
“তোমরা আমাকে সময়মতো সংবাদ দিলে না কেন?” পিতা বললেন, “আমীরুল মুমেনীন! রাতের অন্ধকারে আপনার কষ্ট হবে মনে করে আপনাকে খবর দেইনি।”

কবর যিয়ারতে আমীরুল মুমেনীন

আমীরুল মুমেনীন যুবকের পিতাকে বললেন, “তোমরা আমাকে তার কবরে নিয়ে চল। এরপর হযরত উমর অন্যান্য সাহাবী ও সাথীদেরকে নিয়ে যুবকের কবর যিয়ারতে যান এবং এই আয়াতটি তেলাওয়াত করেন-
ولمن خاف مقام ربه جنتان
অর্থাৎ,‘যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার ভয় রাখে তার জন্য রয়েছে দুটি জান্নাত।’

হযরত উমর (রাঃ) কবর থেকে যুবকের মুখে শুনতে পান, হে উমর! সত্যিই আল্লাহ পাক আমাকে দুটি জান্নাতের অধিকারী করেছেন। কবর থেকে যুবকের মুখে এই উত্তর হযরত উমর ফারুক দুইবার শুনতে পান।

সূত্র ও সনদের মানঃ

এভাবে কানযুল উম্মাহ এ (১/২৬৭) আছে। তাফসীরে ইবনেকাসীরে (২/২৭৯) বর্ণিত হয়েছে। ইমাম বাইহাকী রাহ হাসান সূত্রে এটি বর্ণনা করেছেন।(কানয ১/২৬৭) ।

. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .

উপরিউক্ত ঘটনা দ্বারা প্রমানীত হল কবরে শায়িত ব্যাক্তির সাথে কথা বলার বিষয়টি শিরক নয় ! বরং শরীয়তের অকাট্য দলিল দ্বারা সাব্যস্ত ! সূতরাং ফাযায়েলে আমলের উপর উত্থাপিত অযৌক্তিক অভিযোগগুলিও কোন গ্রহণযোগ্যতা রাখে না !

কবর কেন্দ্রিক আরেকটি অভিযোগ ফাযায়েলে আমলের উপর করা হয় -

#'শায়েখ আবু ইয়াকুব ছনুছি (রঃ) এর এক মুরীদ কে কবরে রাখলে সে তখন চোখ খুললো ।এবং কথা বললো !

[ফাজায়েল ছাদাকাত- জাকারিয়া সাহারানপুরি; অনুবাদক মোঃ ছাখাওয়াত উল্লাহ; ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ ২৭০; তাবলিগী কুতুবখানা ১৪২৬ হিজরি]
এখানে মৃত ব্যাক্তির কথা বলা,চোখ খোলা বা নড়া-চড়া যাই বলেন না কেন কোনটি শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক নয় !

উমর (রাঃ) ঘটণার মাধ্যমে পূর্বেই কবরে শায়িত ব্যাক্তির কথা বলার বিষয়টি সাব্যস্ত হয়েছে ! আর চোখ খোলা বা নড়া-চড়া যাই বলেন,প্রত্যেকটা বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে দলিল দিতে হবে না ,

যখন প্রতিটি বিষয় একই সাথে সম্পর্কিত !!?

কবরে মৃত যুবকটির সাথে উমর (রাঃ )কথা বলেছেন যা স্বাভাবীক অবসথায় সম্ভব নয় ! আল্লাহ সেই ব্যাবস্থা করে দিয়েছিলেন বিধায় কথোপকথন হয়েছে ! কবরে বারযাখ জীবনে যদি কথা বলার মত অসম্ভব

কাজ (আল্লাহ'র ইচ্ছায়) সম্ভব হয় তাহলে কবরে চোখ খোলা,হাত নাড়ানো, কি তার চেয়েও কঠিন কাজ !!?? আর প্রত্যেকটির জন্য আলাদা দলিল লাগে কি ?? কথা যখন বলতে সক্ষম হয়েছে তখন চোখ

খোলা কি আর তার চেয়েও কঠিন কিছু ?? বরং আল্লাহ চাইলেতো মৃত ব্যাক্তি জীবিতও হতে পারে . . !! আর আল্লাহ'র কাছে অসম্ভব বলতে কিছু নেই . . . ! (চলবে) .

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন