বাংলা ও হিন্দে (ইন্ডিয়া) মুসলিম শাসনের পতন ও ইংরেজদের বিজয়ের কারণ অনুসন্ধান

 

 


১৬৯৪ সালে ইংরেজদের ভারতীয় হজ্জ জাহাজ লুট, হাজী হত্যা ও নারী হাজীদের বেইজ্জত ও লুট

হেনরি এভরি বা এভোরি (২৩ আগস্ট ১৬৫৯-১৬৯৬-এর পর) ছিলেন একজন ইংরেজ জলদস্যু যিনি ১৬৯০-এর দশকের মাঝামাঝি আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরে বিচরন করতেন।
 
এভরি উত্তরে আরবীয় সাগরের দিকে যাত্রা করে। সেখানে মুঘলদের ২৫টি জাহাজের একটি বহর মক্কার দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে অবস্থান করছিল। এছাড়াও এই বহরে ধন-রত্ন বহনকারী জাহাজ গঞ্জ-ই-সাওয়াইও অবস্থান করছিল। এভরি নিজে এবং থমাস টিউসহ আরো কয়েকজন জলদস্যুর সহয়তায় মুঘলদের বহরে অভিযান পরিচালনা করেন। থমাস টিউ মুঘলদের হাতে নিহত হন ও এভরি জলদস্যুদের একটি ছোট দল নিয়ে গঞ্জ-ই-সাওয়াই-এর এসর্ক্ট জাহাজ ফাহাত মুহাম্মদ আটক করেন এবং পরবর্তীতে গঞ্জ-ই-সাওয়াই আটক করেন। গঞ্জ-ই সাওয়াই আটকের সময় জলদস্যুদের সাথে মুঘল সৈন্যদের লড়াই হয় কিন্তু অধিকাংশ জলদস্যু নিহত হওয়ার পরও লড়াইয়ে জলদস্যিরা জয় লাভ করে। জাহাজ থেকে এভরি £৬০০,০০০ সমমূল্যের ধন-রত্ন ও গহনা লুট করে। এই ধন-রত্ন তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী জলদস্যুতে পরিনত করে।
 
এই ইংরেজ সৈন্যরা যারা নিজেদের জলদস্যু পরিচয় দিত সেদিন প্রায় সব হাজীকে হত্যা করে এমনকি নারী হাজীদের অনেককে বেইজ্জত করে। এ ব্যাপারে তৎকালীন ইংরেজ সরকারের প্রতিনিধি ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও দুনিয়া সেরা তাদের নৌবাহিনী চুপ থেকে পুরোপুরি সহায়তা করে।
 
তখন ভারতীয় উপমহাদেশ তথা হিন্দুস্তানের বাদশা ছিলেন মোঘল (মঙ্গোল) সম্রাট আওরঙ্গজেব। উনার চাপে ইংরেজরা কয়েকজন জলদস্যুকে পরবর্তীতে ফাসি দেয়।
 
কিন্তু এই ঘটনা আমাদের শিখায় কিভাবে তখন মুসলিমরা নীতি আর সাহসের অভাবে নৌ শক্তি ও বাণিজ্যিক শক্তিতে ইউরোপীয়দের কাছে মাথা নত করছিল অথচ একই সময়ে মুসলিম তুর্কি শাসকদের হাতে ইউরোপ একের পর এক পরাজয় বরণ করছিল।
এই অধঃপতন এর কারণ মুসলিমরা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কষ্টকর কাজগুলো অমুসলিমদের হাতে ছেড়ে দেয়। আরব, পারস্য ও হিন্দের মোঘল দেশগুলো তাদের বাণিজ্য ও নৌবাহীনির দ্বায়িত্ব গরীব কিন্তু সাহসী ও আধুনিক ইংরেজ,ফ্রেঞ্চ, ডাচ, পুর্তগীজ, স্পেনিশ ও আর্মেনিয়ান বিভিন্ন ভাড়াটে বাহিনী ও বাণিজ্যিক কাফেলার হাতে ছেড়ে দেয়। কারণ খুব সাধারণ কারণ এরা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা না দিয়ে গোপনে রাজা-বাদশার ব্যক্তিগত ফান্ডে উপহার বা বিশাল অংকের ঘুষ দিত। আর সাদা চামড়ার নারী ও রেড ওয়াইন পেলেতো বাদশারা বিনিময়ে এদের বিভিন্ন জেলার মালিক বানিয়ে দিতেন।
 
এমনকি মোঘল ও আরব শাহীরা এদেরকে বিনা বাধায় এবং বিনা শুল্কে বাণিজ্যের অনুমতি দিতেন। অন্যদিকে মুসলিম নৌবাহিনী বাজেয়াপ্ত করা হত ও বাণিজ্যিক কাফেলার উপর বিশাল অংকের কর বসানো হত।
এইসব ইউরোপীয় দরিদ্র বাণিজ্যিক কাফেলা এত বিশাল অংকের ঘুষ বা উপহার কিভাবে দিত? কারণ সহজ। তারা তাদের দেশের সকল ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদা তুলে দিত যার ১% ও মুসলিম বণিকরা দিতে পারত না। কারণ তারা কোম্পানি ভিত্তিক ব্যবসা কি তাই জানত না।
 
 

স্বেচ্ছায় ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের হাতে বাণিজ্য হাতছাড়া 

আরব, তুর্কি ও মুসলিম বিদ্বেষ এবং বিশাল ঘুষের লোভে সামুদ্রিক বাণিজ্য ইউরোপীয়দের দিয়ে দেয়া

১৭৫৭ সালে পলাশীতে বাংলা স্বাধীনতা হারায়। কিন্তু সার্বভৌমত্ব হারায় ১৬০০ সালেই। যেদিন মুসলিম ও আরব বিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদী বাদশা আকবর ইংরেজদের "বিনা শুল্কে সমুদ্র বাণিজ্যের চিরস্থায়ী ইজারা" দেয়।

তখন হিন্দুস্তানের ৭০%+ রপ্তানি হত বাংলা থেকে। কাপড়, শস্য, জাহাজ, মসলা যের আরব ও চীনা জাহাজে সারা দুনিয়ায়।
কিন্তু ইংরেজরা বিশাল ঘুষ/উপহার দিয়ে 'আরব, তুর্কি ও মুসলিম' বিদ্বেষী বাদশা আকবর থেকে চিরস্থায়ী সমুদ্র বাণিজ্যের ইজারা নেয়। এই এক ঘোষণাই সমুদ্র বানিজ্যের উপর মুসলমান ও বাংলার ক্ষমতা চলে যায়। ফলে ইংল্যান্ড থেকে কয়েক গুন বড় অর্থনীতির দেশ বাংলা অচিরেই ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকে।
 
অবশ্য মহান মুসলিম বাদশা আওরংগজেব এই চুক্তি ভাংগার চেষ্টা করেন ও সাময়িক ভাবে বাংলার জন্য ট্যাক্স আদায় করেন। একাজে তাকে সাহায্য করেন তার মামা শায়েস্তা খান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন