মুসলমানদের বিজয় সম্পর্কিত একটি হাদিস

সহিহ মুসলিম :: বই ৪১ :: হাদিস ৬৯২৪

যুহায়র ইবন হারব (র)......আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষন পর্যন্ত না রোমীয় সেনাবাহিনী ‘আমাক’ অথবা ‘দাবেক’ নগরীতে অবতরণ করবে । তখন তাদের মুকাবিলায় মদীনা হতে এ পৃথিবীর সর্বোত্তম মানুষের এক দল সৈন্য বের হবে । অতঃপর উভয় দল সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মাল হবার পর রোমীয়গণ বলবে, তোমরা ঐ সমস্ত লোকদের থেকে পৃথক হয়ে যাও, যারা আমাদের লোকদেরকে বন্দী করেছে । আমরা তাদের সাথে লড়াই করবো । তখন মুসলমানগণ বলবে, আল্লাহর শপথ! আমরা আমাদের ভ্রাতাদের থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হবো না । অবশেষে তাদের পরস্পর যুদ্ধ হবে । এ যুদ্ধে মুসলমানদের এক তৃতীয়াংশ সৈন্য পালিয়ে যাবে । আল্লাহ তায়ালা কখনো তাদের তাওবা কবুল করবেন না । সৈন্যদের এক তৃতীয়াংশ নিহত হবে এবং তারা হবে আল্লাহর নিকট শহীদানের মাঝে সর্বোত্তম শহীদ । আর সৈন্যদের অপর তৃতীয়াংশ বিজিয়ী হবে । জীবনে আর কখনো তারা ফিতনায় আক্রান্ত হবে না । তারাই ইস্তাম্বুল জয় করবে । তারা নিজেদের তরবারী যায়তুন বৃক্ষে লটকিয়ে যুদ্ধ লব্ধ সম্পদ বন্টন করতে থাকবে । এমতাবস্হায় তাদের মধ্যে শয়তান চিৎকার করে বলতে থাকবে- দাজ্জাল তোমাদের পেছনে তোমাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে চলে এসেছে । এ কথা শুনে মুসলমালরা সেখান থেকে বের হবে । অথচ এটি মিথ্যা খবর । তারা যখন সিরিয়া পৌছবে তখন দাজ্জালের আবির্ভাব হবে । যখন মুসলিম বাহনী যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এবং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হতে শুরু করবে তখন সালাতের সময় হবে । অতঃপর ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন এবং সালাতে তাদের ইমামত করবেন । আল্লাহর শক্র তাকে দেখামাত্রই বিগলিত হয়ে যাবে যেমন লবণ পানিতে গলে যায় । যদি ঈসা (আঃ) কাউকে এমনিই ছেড়ে দেন তবে সেও নিজে নিজেই বিগলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে । অবশ্য আল্লাহ তাআলা ঈসা (আঃ) -এর হাতে তাকে হত্যা করবেন এবং তার রক্ত ঈসা (আঃ)-এর বর্শাতে তিনি তাদেরকে দেখিয়ে দিবেন ।

রোমানদের (খ্রিস্টিয়ানদের) সঙ্গে এই উম্মতের যে মহাযুদ্ধ হবে তার নেতৃত্ব দিবেন ইমাম মেহেদী। এই মহাযুদ্ধের বিজয়ের পর তিনি আবারও নব্যুওতের আদলে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন যার আমিরুল মুমিনিন হবেন তিনি নিজেই। আর এই মহাযুদ্ধের বিজয় কুস্তুন্তুনিয়া (ইস্তাম্বুল) বিজয়ের কারণ হবে। আর কুস্তুন্তুনিয়ার (ইস্তাম্বুলের) বিজয়, দাজ্জালের আবির্ভাবের কারণ হবে।

আরো দেখেন সহিহ মুসলিম :: বই ৪১ :: হাদিস ৬৯২৭


আবু বকর ইবন আবু শায়বা ও আলী ইবন হুজর (র)......উসায়র ইবন জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, একবার কুফা নগরীতে হলল ঝঞ্ঝা বায়ু প্রবাহিত হল । এ সময় এক ব্যক্তি কুফায় আসল । তার কথার তকিয়্যাই এ ই ছিল যে, হে আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ! কিয়ামত কায়িম হবে না, যতক্ষন না উত্তরাধিকার সস্পদ অবণ্টিত থাকবে এবং যতক্ষন না লোক গনীমতের ব্যাপারে নিরানন্দ প্রকাশ করবে । অতঃপর তিনি স্বীয় হস্ত দ্বারা সিরিয়ার প্রতি ইংগিত করে বললেন, আল্লাহর শক্ররা সমবেত হবে মুসলমানদেরসাথে লড়াই করার জন্য এবং মুসলমানগণও তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য সমবেত হবে । এ কথা শুনে আমি বললাম, আল্লাহর শক্র বলে আপনাদের উদ্দেশ্য হল রোমীয় খ্রীষ্টান সম্প্রদায় ।

তিনি বললেন, হ্যা এবং তখন ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘচিত হবে । তখন মুসলিম সম্প্রদায় একটি দল অগ্রে প্রেরণ করবে, তারা মৃত্যুর জন্য সামনে অগ্রসর হবে । জয়লাভ করা ব্যতিরেকে তারা পেছনে ফিরবে না । এরপর পরস্পর তাদের মাঝে যুদ্ধ হবে । যুদ্ধ করতে করতে রাত্র হয়ে যাবে । অতঃপর উভয় পক্ষের সৈন্য জয়লাভ করা ব্যতিরেকেই ফিরে চলে যাবে । যুদ্ধের জন্য মুসলমানদের যে দলটি অগ্রে গিইয়েছিল তারা সকলেই মরে যাবে । অতঃপর পূর্ববর্তী দিন মুসলমালগণ মৃত্যুর জন্য অপর একটি দল অগ্রে প্রেরণ করবে । তারা বিজয়ী না হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে না । এদিনও পরস্পরের মাঝে মারাত্মক যূদ্ধ হবে । অবশেষে সন্ধ্যা হয়ে যাবে । উভয় বাহিলী জয়লাভ করা ব্যতীতই নিজ নিজ শিবিরে ফিরে আসবে । যে দলটি অগ্রে ছিল তারা সরে যাবে । অতঃপর পরের দিন পূনঃরায় মূমিনগণ মৃত্যু বা বিজয়ের উদ্দেশ্যে অপর একটি বাহিনী প্রেরণ করবে । এ যুদ্ধ সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকবে ।

অবশেষে জয়লাভ করা ব্যতিরেকেই উভয় বাহিলী ফিরে যাবে । তবে মুসলিম বাহিনীর সামনের সেনাদলটি শহীদ হয়ে যাবে । এরপর যুদ্ধের চতুর্থ দিবসে অবশিষ্ট মুসলমানগণ সকলেই যুদ্ধের জন্য সন্মুখ পানে এগিয়ে যাবে । সেদিন কাফিরদের উপর আল্লাহ তায়াআলা অমঙ্গল চক্র চাপিয়ে দিবেন । অতঃপর এমন যুদ্ধ হরে যা জীবনে কেউ দেখবেনা অথবা যা জীবনে কেউ দেখেনি । অবশেষে তাদের শরীরের উপর পাখী উড়তে থাকবে । পাখী তাদেরকে অতিক্রম করবে না; এমতাবস্হায় তা মাটিতে পড়ে মরে যাবে । একশ মানুষ বিশিষ্ট পূর্ন পুরুষদের একটি গোত্র, এদের থেকে মাত্র এক ব্যক্তি বেঁচে থাকবে । এমতাবস্হায় কেমন করে গনীমতের সম্পদ নিয়ে লোকেরা আনন্দ উৎসব করবে এবং কেমন করে উত্তরাধিকার সম্পদ বন্টন করা হবে । মুসলমানগণ এ সময় আরেকটি ভয়াবহ বিপদের সংবাদ শুনতে পাবে এবং এ মর্মে একটি আওয়াজ তাদের নিকট পৌছবে যে, দাজ্জাল তাদের পেছনে তাদের পরিবার পরিজনের মধ্যে চলে এসেছে । এ সংবাদ শুনতেই তারা হাতের সমস্ত কিছু ফেলে দিয়ে রওয়ানা হয়ে যাবে এবং দশজন অশ্বারোহী ব্যক্তিকে সংবাদ সংগ্রাহক দল হিসাবে প্রেরণ করবে । রাসুলুল্লাহ (সা) বলেনঃ দাজ্জালের সংবাদ সংগ্নাহক দলের প্রতিটি ব্যক্তির নাম, তাদের বাপ-দাদার নাম এবং তাদের অশ্বের রং সম্পর্কেও আমি অবগত আছি । এ সর্বোত্তম অশ্বারোহী দল সেদিন তারাই হবে ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন