মাজহাব কি?

আজকাল অনেক ভাইকে দেখা যায় মাযহাব শব্দটি নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভুগে থাকেন।

আবার অনেকে এই শব্দটির সঠিক অর্থ জানা সত্ত্বেও এই শব্দটি নিয়ে সাধারন মুসলমানদের ভিতরে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন।
যারা জেনে শুনে মাঝহাব নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন তাদের জন্য এই পোষ্ট নয়।
কারন ঘুমন্ত মানুষকে জাগানো আমার সম্ভব কিন্তু জাগ্রত ব্যক্তিকে সম্ভব নয়।

যারা সত্যিকার অর্থেই মাযহাব নিয়ে জানতে চান তাদের জন্য আমার এই পোষ্ট।
............................................................................................................


বর্তমান পৃথিবীতে প্রসিদ্ধ চারটি মাযহাব আছে। (১) হানাফী মাযহাব, (২) মালেকী মাযহাব (৩) শাফেয়ী মাযহাব, (৪) হাম্বলী মাযহাব। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ হানাফী মাযহাব অনুসরন করে। ইমাম আবূ হানিফা (রহ.) দ্বীনের কিভাবে সঠিক পথে চলার যায় তার জন্য আমাদেরকে নিখুঁতভাবে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তিনি একজন তাবেয়ী ছিলেন। স্বচক্ষে সাহাবাদেরকে দেখেছেন। এই বৈশিষ্ট্য অন্য কোন ইমামের মধ্যে নেই। দ্বিতীয় ইমাম হলেন, ইমাম মালেক (রহ.)। তিনি ইমাম আবূ হানিফা (রহ.) এর ছাত্রতুল্য। তৃতীয় ইমাম হলেন,ইমাম শাফেয়ী (রহ.)। তিনি ইমাম আবূ হানিফা (রহ.)-এর প্রথম স্তরের শীর্ষস্থানীয় ছাত্রদ্বয়ের তথা ইমাম আবূ ইউসূফ (রহ.) ও ইমাম মুহাম্মদ বিন হাসান শায়বানী (রহ.) এর ছাত্র, অর্থাৎ ইমাম আবূ হানিফা (রহ.) এর নাতি ছাত্র। চতুর্থ ইমাম হলেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.)। তিনিও ইমাম আবূ হানিফা (রহ.) এর নাতি ছাত্র।


মাজহাব মানে মতামত, বিশ্বাস, ধর্ম, আদর্শ, পন্থা, মতবাদ, উৎস।
মিসবাহুল লুগাত (থানবী লাইব্রেরী-২৬২ পৃষ্ঠা)

মাজহাব শব্দের অনেক অর্থ আছে। তার ভিতরে একটি হল মতামত।

আসুন এবার মাজহাব শব্দের উৎস কোথায় দেখি.....

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর ও আবু হুরায়রা রা. হুজুরের হাদীস বর্ণনা করেছেন, যখন কোন হাকীম (বিচারক ও মুফতী) কোন বিষয়ে ইজতিহাদ করে এবং তা সঠিক হয়, তবে সে দ্বিগুন সওয়াব পাবে। আর ইজতিহাদে যদি ভুল করে, তবুও সে একগুন সওয়াব পাবে। -বুখারী 2/109, মুসলিম 2/72, তিরমিজী 193
ইজতিহাদের শাব্দিক অর্থ, উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথাসাধ্য পরিশ্রম করা। ইসলামী ফেকাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় ইজতিহাদ অর্থ,কোরআন ও সুন্নায় যে সকল আহকাম ও বিধান প্রচ্ছন্ন রয়েছে সেগুলো চিন্তা-গবেষণার মাধ্যেমে আহরণ করা। যিনি এটা করেন তিনি হলেন মুজতাহিদ। মুজতাহিদ কুরআন ও সুন্নাহ থেকে যে সকল আহকাম ও বিধান আহরণ করেন সেগুলোই হলো মাযহাব। অথাৎ কুরআন ও সুন্নাহ থেকে যে সকল আহকাম ও বিধান আহরণ করে মুজতাহিদগণ যে সকল মতামত পেশ করেছেন তাকে মাযহাব বলে।যাদের কোরআন ও সুন্নাহ থেকে চিন্তা গবেষণার মাধ্যমে আহকাম ও বিধান আহরণের যোগ্যতা নেই তাদের কাজ হল মুজতাহিদদের আহরিত আহকাম অনুসরনের মাধ্যমে শরীয়তের উপর আমল করা।

কুরআন ও সুন্নাহ থেকে যে সকল আহকাম ও বিধান আহরণ করার জন্য কি কি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে ?


১. কোরআনের কোন আয়াত কখন নাজিল হয়, কোন আয়াত নাছেখ (রহিতকারী), কোন আয়াত মানছুখ (রহিত), কোন আয়াত মুজমাল (সংক্ষিপ্ত), কোন আয়াত মুতাশাবেহ ইত্যাদি বিষয়গুলো সবিস্তারে জানার সাথে সাথে কোরআনের নিগুঢ় তথ্যগুলোর সঠিক মর্মগুলি বুঝার পূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে।

২. হুজুর স. কর্তৃক ত্রিশ পারা কোরআনের ব্যাখ্যায় রেখে যাওয়া দশ লক্ষ হাদীস সনদের ভিন্নতাসহ জানা আবশ্যক। আর হাদীসের এ বিশাল ভান্ডার থেকে কমপক্ষে যেসব হাদীস দ্বারা শরীয়তের বিধি-বিধান সাব্যস্ত হয়, সেসব হাদীস সনদ (বর্ণনাকরী), মতন (মূল বিষয়) এবং উক্ত হাদীস সমূহের বর্ণনাকারীদের জীবন ইতিহাস (সাহাবা ও তাবেয়ীনদের জীবনাচার)সহ কন্ঠস্থ থাকতে হবে। তারই সাথে হাদীসের নিগুড় তথ্যগুলি, সঠিক মর্মগুলি বুঝার পূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে। যাতে করে মতবিরোধ বিশিষ্ট মাসআলাসমূহে কোরআন, হাদীস,সাহাবা ও তাবেয়ীনদের নির্দেশিত সীমা অতিক্রম না করা হয়।

৩. মুজতাহিদ আরবী ভাষা সম্পর্কে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হতে হবে। কেননা কোরআন ও হাদীস উভয়টি আরবী। তাই আরবী ভাষা সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা ছাড়া ইজতিহাদ তো দূরের কথা শুধু কোরআন-হাদীসের অর্থ বুঝাও সম্ভবপর নয়। আরবী ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য আরবী আভিধানিক অর্থ ও পারিভাষিক অর্থ, নাহু-ছরফ, উসূল, আলাগাতের পূর্ণ দক্ষতা অপরিহার্য।

৪. মুজতাহিদ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বুদ্ধিমত্তা ও অন্তদৃর্ষ্টি দ্বারা বিশেষভাবে ভূষিত হয়ে অত্যাধিক স্মরণশক্তি ও জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। মুজতাহিদের জন্য কেবল সাধারণ বুদ্ধিমত্তাই যথেষ্ট নয়। সাধারণ বুদ্ধিমত্তাতো সকল আলেমেরই থাকে। এতে মুজতাদিরে বিশেষ গুরুত্ব আর রইল কোথায়? মুজতাদি তাক্ব ওয়া ও খোদাভীতি সম্পন্ন হতে হবে। তাকে কখনও মনপূজারী হওয়া চলবে না।

৫. ইজতিহাদ ও মাসআলা চয়নের প্রক্রিয়া সমূহের উপর পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখতে হবে।
 

 সূত্র :- তাফসীরে আহমদী, পৃষ্ঠা- ১০১


হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. ইমাম বাগাবী রহ. সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইজতিহাদের জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে। যার মধ্যে এ পাঁচটি হতে একটিও কম পাওয়া যাবে, তার জন্য তাক্বলীদ ছাড়া কোন পথ নেই।
- কাঞ্জুল উসূল ইলা মা’রিফাতিল উসূল- ২৭০, উসূলে ফিক্বাহ লি আবি হুরায়রা- ২৩৬, আল মালাল ওয়ান নাহাল- ১/২০০ মিশরী ছাপা।


হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. কে জিজ্ঞাসা করা হল, যার এক লক্ষ হাদীস স্মরণ থাকে, সে কি ফক্বীহ বা মুজতাহিদ হতে পারেবে, তদুত্তরে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বললেন, না। পুনারায় জিজ্ঞাসা করা হলো, যদি পাঁচ লক্ষ হাদীস স্মরণ থাকে, তদুত্তরে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বললেন, সে সময় তাকে ফক্বীহ হবে আশা করা যেতে পারে।
- এমদাদুল ফতোয়া ৪/৮৭


হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর পর শুধুমাত্র হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী উক্ত চার মাযহাবেই (কুরআন ও হাদীসের বিশ্লেষন) তাক্বলীদ (অনুসরন) সীমাবদ্ধ হয়েছে। কেননা, চার মাযহাব ছাড়া অন্যান্য মুজতাহিদদের মাযহাব তেমন সংরক্ষিত হয়নি। ফলে আস্তে আস্তে সেসব মাযহাব বিলুপ্ত হয়ে পড়ে।
- আহসানুল ফতোয়া ১/৪৪১, তাফসীরে আহমদী- ২৯৭, আল ইনসাফ- ৫২।

যারা এই বিষয়ে খুব বেশি প্রশ্ন করে থাকেন তাদের বলছি.............যদি বুঝার জন্য প্রশ্ন করে থাকেন তবে ধন্যবাদ।

আর যদি মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি অথবা আটকানোর জন্য প্রশ্ন করে থাকেন তবে আপনারা প্রশ্ন করতে থাকুন,
আল্লাহ তায়ালা যতক্ষন তৌফিক দেন উত্তর দিয়ে যাব।

তবে হিদায়াত তো আল্লাহ তা’য়ালার হাতে।

যারা মাঝহাব নিয়ে বিস্তারিত জানতে চান তারা এই বই দুটি পড়ে দেখতে পারেন.........

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন