বিভিন্ন ধরণের ত্বকের সমস্যা ত্বকের সৌন্দর্যের হানী ঘটায়। আঁচিল বা তিল হচ্ছে সেই রকম একটি ত্বকের সমস্যা। রঞ্জক কোষ একত্রিত হয়ে ত্বকে কালো দাগ সৃষ্টি করে। আঁচিলকে মেলানোসাইটিক নেভি ও বলা হয়ে থাকে। এরা ত্বকের নীচে বা উপরের স্তরে উভয় স্থানেই হতে পারে। সাধারণত এরা মুখে, বাহুতে, ঘাড়ে এবং পায়ে হয়ে থাকে। আঁচিল সাধারণত বাদামী, কালো, লাল, গোলাপি বা একই রঙের হতে দেখা যায়। আঁচিলের আকার, আকৃতি এবং রঙ একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়।
অত্যধিক সূর্যালোকের সংস্পর্শ, শরীরে মেলানোসাইটের প্রয়োজনাতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে মেলানিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়া এবং তৈল গ্রন্থির অতিরিক্ত কার্যকারিতার ফলে আঁচিল সৃষ্টি হয়। বয়ঃসন্ধি কালে ও গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও আঁচিল হয়। বিজ্ঞানীদের মতে আঁচিলের জন্য জেনেটিক কারণ ও দায়ী।
কারো কারো ক্ষেত্রে আঁচিল মসৃণ হয় আবার কারো ক্ষেত্রে অমসৃণ হয়। কিছু ক্ষেত্রে ত্বকের সাথে চ্যাপ্টা হয়ে লাগানো থাকে আবার কিছু ক্ষেত্রে একটু উঠানো থাকে। কারো ক্ষেত্রে আঁচিলের সাথে চুল ও থাকতে পারে। সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সাথে শরীরের আঁচিলের সংখ্যা কমতে থাকে।
আনকোরা চোখে আঁচিলকে দেখতে একই রকম মনে হয়। কিন্তু গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বিভিন্ন রকম আঁচিলের মধ্যকার সূক্ষ্ম পার্থক্যটা ঠিকই বুঝা যায়। আঁচিলের সাধারণ কয়েকটি ধরণ হচ্ছে-
· ডারমাল মেলানোসাইটিক নেভি- এরা সাধারণত ত্বক থেকে উৎপন্ন হয় এবং ফ্যাকাসে রঙের হয়। এই ধরণের আঁচিলের সাথে চুল থাকতে পারে।
· জাঙ্কশনাল মেলানোসাইটিক নেভি- এরা ত্বকের সাথে লেপ্টে থাকে ও গোলাকার হয় এবং দেখতে গাড় বাদামী বা কালো বর্ণের হয়।
· কম্পাউন্ড মেলানোসাইটিক নেভি- এরাও ত্বক থেকেই উৎপন্ন হয় এবং দেখতে হালকা বাদামী বর্ণের হয় এবং এদের ও চুল থাকে।
কিছু ভিন্ন ধরণের আঁচিল হল
· ব্লু নেভি- এরা গাড় নীল রঙের হয়।
· হালো নেভি- এই ধরণের আঁচিল ফ্যাকাসে ও বৃত্তাকার বলয়ের মত হয়। কোন কারণে এই ধরণের আঁচিলের প্রান্তের দিকে কোন রঞ্জক থাকেনা।
· ডাইপ্লাস্টিক বা এটিপিকাল বা ক্লার্ক নেভি- এই ধরণের আঁচিল গুলো দেখতে বড় ও বিদঘুটে হয়। এরা চ্যাপ্টা অথবা আচমকা বড় হয়ে যেতে পারে এবং দেখতে বিভিন্ন শেডের হয়।
আঁচিলের আকার আকৃতি ও বর্ণ যদি অস্বাভাবিক মনে হয় তাহলে সেটা ক্যান্সারের নমুনা বহনকারী হতে পারে। সেক্ষেত্রে নিজে নিজে চেষ্টা না করে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া জরুরী।
আঁচিল অপসারণের উপায়
আঁচিল সাধারণত ভালো দেখায় না বলেই অপসারণ করা হয় এছাড়া এরা স্বাস্থ্যগত কোন সমস্যা সৃষ্টি করেনা। যদি ক্রমাগত এতে ঘর্ষণ লাগে তাহলে প্রদাহ হতে পারে। আঁচিল অপসারণের জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় আছে। এবার তাহলে সেগুলো জেনে নেই আসুন।
১। কলা
আঁচিল অপসারণের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে কলা। তাজা পাকা কলার খোসা ত্বকে আচিল শুঁকিয়ে যেতে সাহায্য করে। কলার খোসার ভেতরের অংশটা আঁচিলের উপর লাগিয়ে ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে দিন। প্রতিদিন ১ ঘন্টা এভাবে রাখুন। এতে আঁচিল শুকিয়ে পড়ে যাবে। এই পদ্ধতিটা অনুসরণ করা সহজ কারণ এটা ব্যথামুক্ত ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন। এক সপ্তাহের মধ্যে আঁচিল দূর হবে।
২। রসুন
আঁচিল অপসারণে রসুন অনেক কার্যকরী উপায়। কারণ রসুনে এমন একটি এনজাইম থাকে যা রঞ্জক উৎপাদক কোষের গুচ্ছকে ভেঙ্গে দিতে পারে এবং কালো রঙকে হালকা করতে সাহায্য করে।
· রসুনের একটি কোয়া ভালো করে থেঁতলে নিন।
· আঁচিলের চারপাশে পেট্রোলিয়াম জেলী লাগিয়ে নিন, কারণ রসুন ত্বকে জ্বলুনি সৃষ্টি করতে পারে।
· রসুনের পেস্ট আঁচিলের উপর লাগিয়ে সারারাত রাখুন।
· ৫ দিনের মধ্যেই আঁচিল পড়ে যাবে।
৩। আপেল সাইডার ভিনেগার
আপেল সাইডার ভিনেগারের এসিড উপাদান আঁচিল অপসারণে অনেক জনপ্রিয়।
· এরপর একটি ব্যান্ডেজ লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন
· এভাবে ১০ দিন করুন বা আঁচিল পড়ে যাওয়া পর্যন্ত করুন
· আপেল সাইডার ভিনেগার লাগানোর আগে আঁচিলের চারপাশের ত্বকে পেট্রোলিয়াম জেলী লাগিয়ে নিন।
· আপেল সাইডার ভিনেগার লাগানোর ফলে আঁচিলের অবস্থা খারাপ হতে পারে, তবে তা এক সপ্তাহের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। আঁচিল যাওয়ার পর দাগ থেকে গেলে নারিকেল তেল লাগান।
৪। বেকিং সোডা ও ক্যাস্টর অয়েল
আঁচিল অদৃশ্য হওয়ার জন্য বেকিং সোডা অনেক দ্রুত কাজ করে। এক চামচ বেকিং সোডাতে কয়েক ফোটা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে আঁচিলের উপর দিয়ে সারারাত রাখুন। নিয়মিত ১৫ দিন এভাবে করলে আঁচিল দূর হবে।
৫। ডালিমের খোসা ও লেবুর রস
আঁচিল দূর করতে লেবুর রস চমৎকার কাজ করে। ডালিমের খোসা ৩-৪ দিন রোদে শুকিয়ে নিয়ে গুড়া করে নিন। ডালিমের খোসার গুঁড়োর সাথে কয়েকফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি আঁচিলে লাগান।
আঁচিল অপসারণের জন্য আনারসের রস, অ্যালোভেরা জেল, টি ট্রি অয়েল, পেঁয়াজের রস, মধু, কাজু বাদাম, আয়োডিন, আপেল ও মুলা ইত্যাদি উপাদানগুলো ও কার্যকরী।
যদি এগুলো দিয়ে চেষ্টা করার পরও আঁচিল না যায় তাহলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন। তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, আপনি যে নিরপেক্ষ পদ্ধতিটি অনুসরণ করবেন তাতে আঁচিল চলে যাওয়ার পরেও দাগ থেকে যেতে পারে।
লিখেছেন-সাবেরা খাতুন, Priyo.com