মুসলিম উত্তরাধিকার আইনঃ মীরাস

একজন মুসলমান যদি মারা যায় তবে তাঁর সম্পদ বন্টনের আগে কিছু বিষয়ে তাঁর আত্মীয় স্বজনদের বিশেষ মনোযোগ রাখতে হয় এবং ঐ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই কেবল মৃত ব্যক্তির সম্পদ ভাগ বাটোয়ারা করা যাবে।

এবার চলুন জেনে নেয়া যাক একজন মুসলমানের মৃত্যুর পর তাঁর সম্পদ ভাগের আগে যা করনীয়ঃ

মৃত্যু পরব্ররতী করনীয়ঃ 


  1. যদি মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পদ থাকে তবে তাঁর সম্পদ থেকে তাঁর দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা।
  2. মৃত ব্যক্তির কোন প্রকারের ঋণ কিংবাদ ধার দেনা থাকলে তা ঐ ব্যক্তির সম্পদ থেকে পরিশোধ করার ব্যবস্থা করা।
  3. মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর দেনমোহোর পরিশোধ হয়েছে কিনা দেখা যদি না হয়ে থাকে তা পরিশোধ করা।
  4. মৃত ব্যক্তি যদি কোন হেবা বা দান কিংবা অসিহত করে যান তবে উল্লেখিত সম্পত্তি দান করে দেয়া।


এবার যদি উপরের কাজ সমূহ করার পরে মৃত ব্যক্তির কোন সম্পদ অবশিষ্ট থাকে তবে অবশিষ্ট সম্পত্তি তাঁর উত্তরাধিকারীদের মাঝে বন্টন করতে হবে। তবে বন্টনের ক্ষেত্রে মুসলিম আইন অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ আছে।

চলুন এবার জেনে নেয়া যাক মৃত ব্যক্তির সম্পদের উপর তাঁর উত্তরাধিকারীরা কে কি পরিমাণ পাবেনঃ

স্বামীঃ স্বামী দুই ভাবে স্ত্রীর উপরে সম্পত্তি পাবে,

  1. যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান-সন্ততি থাকে তবে স্বামী পাবে এক চতুর্থাংশ।
  2. যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান-সন্ততি না থাকে তবে স্বামী পাবে অর্ধেক সম্পত্তি।

স্ত্রীঃ মৃত ব্যক্তির স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি দুইভাবে পাবেন-

  1. যদি মৃত ব্যক্তির এবং তাঁর স্ত্রীর সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকে তবে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ (১/৮) পাবেন।
  2. যদি মৃত ব্যক্তি এবং তাঁর স্ত্রীর সংসারে কোন সন্তান না থাকে তাহলে স্ত্রী মোট সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ (১/৪) পাবেন।

পুত্রঃ 

ছেলেরা মৃতের উপরে সকল ক্ষেত্রেই সম্পদ পেয়ে থাকে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির ক্ষেত্রে সকলের অংশ ভাগের পর অবশিষ্ট সকল অংশ ছেলে এবং মেয়ে পাবে। তবে এই ক্ষেত্রে ছেলে  সম্পদে যে পরিমাণ অংশ পায় মেয়েরা সম্পদের উপরে ছেলের অর্ধেক পরিমাণ পাবে। যদি মেয়ে না থাকে তবে বাকী সম্পূর্ণ অংশ ছেলে পাবে।

মেয়েঃ 

মুসলিম সম্পত্তি আইন অনুযায়ী একজন মেয়ে ৩ নিয়মে মৃতের সম্পদ পেয়ে থাকে।
  1. যদি একজন মেয়ে হয় তবে দুইভাগের একভাগ (১/২) পাবে।
  2. যদি একাধিক মেয়ে হয় তবে সবাইকে তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩) দেয়া হবে।
  3. যদি মৃত ব্যক্তির ছেলে মেয়ে উভয়েই থাকে তবে ছেলে যে পরিমাণ পাবে মেয়ে তাঁর অর্ধেক পাবে।

বাবাঃ মৃত ব্যক্তির সম্পদের উপর তাঁর বাবা ৩ প্রকারে সম্পদ পাবেন,

  1. যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের পুত্র কিংবা আরও নিচে পুত্রের পুত্রের পুত্র যত নিচেই হোক না কেন থাকে তবে মৃত ব্যক্তির পিতা পাবেন সম্পদের ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬)।
  2. যদি মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র কিংবা নিন্মগামী পুত্র না থাকে কেবল কন্যা থাকে তবে ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন এবং কন্যাদের ও অন্যান্যদের দেয়ার পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকবে তাও পাবেন।
  3. যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকে তবে বাদ বাকী অংশীদারদের দেয়ার পর সকল সম্পত্তি বাবা পাবেন। মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকলে যদি বাবাও না থাকে তবে তাঁর জীবিত ভাই পাবে, ভাই না থাকলে ভাইয়ের সন্তান পাবে।

মাতাঃ মৃত ব্যক্তির মা তিন ভাবে সম্পদ পাবেন

  1. যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নেরই হউক, থাকলে অথবা যদি পূর্ণ, বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন থাকে তবে মাতা ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন।
  2. যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকে এবং যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) পাবেন।
  3. যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকে এবং যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রী অংশ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তার তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) মাতা পাবেন।

এবার চলুন মুসলিম আইনের কিছু সাধারণ বিষয় জেনে নেয়া যাকঃ

অনেকেই ভাবেন পিতার সম্পদে সন্তানকে বঞ্চিত করতে ত্যাজ্য করা যায় অর্থাৎ ত্যাজ্য করলে সন্তান সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে, কিন্তু বিষয়টি ঠিক নয় কেউ চাইলে কাউকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে ত্যাজ্য করতে পারবেনা।

অনেক ক্ষেত্রে সৎ ছেলে মেয়ের বিষয়টি আসে, কিন্তু ইসলামে পরিষ্কার বলা আছে সৎ ছেলে মেয়ে কখনোই সৎ বাবা মায়ের সম্পদের অংশীদার হবেনা একই সাথে সৎ বাবা মাও সৎ ছেলে মেয়ের সম্পদের অংশীদার হবেনা।

ইসলামিক সরিয়া আইনে বলা আছে যদি পিতা বেঁচে থাকতে কোন বিবাহিত সন্তান স্ত্রী এবং সন্তান রেখে মারা যায় তবে ঐ পিতার মৃত্যুর পর পিতার বর্তমানে মৃত সন্তান কোন সম্পদ পাবেনা, কিন্তু ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে উত্তরাধিকার সংক্রান- বিধান সংশোধন করে মৃত ব্যক্তির সম্পদে বিবাহিত মৃত পুত্রের ওয়ারিশরা অংশ পাবে এই বিধান সংযুক্ত করা হয়।

প্রশ্নঃ মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদের সাথে কয়টি অধিকার সম্পৃক্ত হয়?

উত্তরঃ মৃত ব্যক্তির পরিত্যাক্ত সম্পদের সাথে ধারাবহিকভাবে চারটি হক/অধিকার সম্পর্কিত হয়। প্রথমত ঃ অপব্যয় ও কার্পণ্য ব্যতীত মধ্যপন্থায় তার কাফন ও দাফন কার্য সম্পাদন করা হবে। দ্বিতীয়ত ঃ তার অবশিষ্ট সমুদয় সম্পদ হতে তার ঋণসমূহ পরিশোধ করা হবে। তৃতীয়ত ঃ ঋণ পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ হতে তার অসিয়ত পূরণ করা হবে যদি সে ওসিয়ত করে থাকে। চতুর্থ ঃ তার অবশিষ্ট সম্পদকে তার ওয়ারিশগণের মধ্যে কিতাবুল্লাহ, সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইজমায়ে উম্মতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বণ্টন করা হবে। (দেখুনঃ আস্-সিরাজী)

প্রশ্নঃ কি কি কারণে একজন ওয়ারিস মিরাস থেকে বঞ্চিত হয়?

উত্তরঃ উত্তরাধিকার লাভে অন্তরায় চারটি। এক. দাসত্ব, চাই তা পূর্ণাঙ্গ কিংবা অপূর্ণাঙ্গ হোক। দুই. এমন হত্যা যার সাথে কিসাস বা কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়। তিন. ধর্মের ভিন্নতা। চার. উভয়ের রাষ্ট্রের ভিন্নতা। (তা কেবল অমুসলিমদের জন্যই পজোয্য। চাই এ রাষ্ট্রের ভিন্নতা প্রকৃত হোক, যেমন- দারুল হারবের অধিবাসী কাফির ও জিম্মি। কিংবা হুকুমের দিক বিবেচনায় হোক। যেমন- নিরাপত্তা গ্রহণকারী ও জিম্মি। আর রাষ্ট্রের ভিন্নতা সৈন্যবাহিনী ও শাসকের বিভিন্নতার দ্বারা সাব্যস্ত হয়। (দেখুনঃ আস্-সিরাজী)

প্রশ্নঃ জীবিত অবস্থায় ওয়ারিসদের মাঝে সম্পদ বন্টন করা যাবে কি না এবং তাতে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবে?

উত্তরঃ জীবিত অবস্থায় সম্পদ বন্টন করলে তা মূলত হেবা হয়। তাই এ ক্ষেত্রে সকলকে সমান সমান করে দেয়া যাবে। তবে বর্তমানে যেহেতু মৃত্যুর পরের বন্টন পূর্বে করে দেয়া হয়, তাই মিরাস অনুযায়ী বন্টন করাই শ্রেয়।  (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে মাহমূদীয়া)

প্রশ্নঃ পালকপুত্র মিরাস পাবে কি না?

উত্তরঃ শরীয়াতের দৃষ্টিতে বাবা-মায়ের শুধুমাত্র ঔরশজাত সন্তানই মিরাস পাবে। পালিত পুত্র মিরাস বা মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তির অংশীদার হয় না। (দেখুনঃ আস্-সিরাজী)
এমনকি সৎ ভাই/বোন/মা/বাবা/সন্তান কেও অংশীদারী পাবে না।

প্রশ্নঃ বিয়ে হওয়ার পর যদি স্বামী-স্ত্রী বাসর ও মিলন হওয়ার পূর্বে স্বামী মারা যায় তাহলে স্ত্রী তার সম্পদের অংশ পাবে কি না?

উত্তরঃ হ্যাঁ, বর্ণনা অনুযায়ী, উক্ত স্ত্রী তার মৃত স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পদের উত্তরাধিকারীনী হবে এবং এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পদের এক চতুর্থাংশের উত্তরাধিকারী হবে। (দেখুনঃ আস্-সিরাজী)

কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ উত্তর লিখনে, লুৎফুর রহমান ফরায়েজী,

প্রশ্ন## এক ব্যক্তির স্ত্রী, মা-বাবা, ১ ভাই, ২ বোন, ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে আছে। এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?

উত্তর## আপন ছেলে থাকায় মৃতের ভাই-বোন কিছুই পাবে না। প্রথমে পূর্ণ সম্পত্তিকে চব্বিশ ভাগে বিভক্ত করে পিতাকে চার ভাগ, মাতাকে চারভাগ আর স্ত্রীকে তিনভাগ প্রদান করা হবে। তারপর বাকি যতটুকু সম্পদ থাকবে, সেটিকে সাত ভাগ করে, তিন ভাগ তিন মেয়েকে আর বাকি চার ভাগের মাঝে দুই ভাগ এক ছেলে আর দুই ভাগ আরেক ছেলেকে দেয়া হবে।

প্রশ্ন-১## জীবিত অবস্থায় যদি কেউ তার সম্পদ ওয়ারিসদের মধ্যে শরীয়তের বিধান ব্যতিরেকে তার ইচ্ছানুযায়ী কম-বেশী বন্টন করে তবে কি সেটা শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে?

যেমন কারো কয়েকজন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সে কাউকে হয়তো একটু বেশী পছন্দ করে বা তার বাধ্যগত তাই তাকে সম্পদের অংশ কিছুটা বেশী দিল।
উত্তর-১##  প্রশ্নের জবাব ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার আগে সুস্থ্য থাকা অবস্থায় যদি আত্মীয়দের মাঝে সম্পদ বন্টন করে যায় শরীয়তের মিরাসী পদ্ধতি অনুসরণ না করে, আর তাতে তিনি কাউকে ঠকানো বা কারো ক্ষতি সাধন ইচ্ছে না করেন, তাহলে কমবেশি করে বন্টনকরলেও তা কার্যকরও হবে। সেই সাথে জায়েজও হবে।
যেমন দুই ছেলের মাঝে এক ছেলে বিত্তশালী। আরেকজন গরীব। তাই লোকটি গরীব ছেলেকে বেশি সম্পদ দিল আর ধনীকে কম দিল।
তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। এটি জায়েজ আছে।
ﻭﻓﻰ ﺍﻟﻬﻨﺪﻳﺔ - ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ ﺍﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﻘﺼﺪ ﺑﻪ ﺍﻻﺿﺮﺍﺭ ﻭﺍﻥ ﻗﺼﺪ ﺑﻪ ﺍﻻﺿﺮﺍﺭ ﺳﻮﻯﺒﻴﻨﻬﻢ ﻭﻫﻮ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ - ) ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ ﺍﻟﻬﻨﺪﻳﺔ ٤ / ٣۹۱ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺮﺩﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ - ﻟﻮ ﻭﻫﺐ ﺭﺟﻞ ﺷﻴﺄ ﻷﻭﻻﺩﻩ ﻓﻰ ﺍﻟﺼﺤﺔ ﻭﺍﺭﺍﺩ ﺑﻔﻀﻴﻞ ﺍﻟﺒﻌﺾ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺒﻌﻀﺰ .………… ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻻﺑﺄﺱ ﺑﻪ ﺍﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﺘﻔﻀﻴﻞ ﻟﺰﻳﺎﺩﺓ ﻓﻀﻞ ﻟﻪ ﻓﻰ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻭﺍﻥ ﻛﺎﻥ ﺳﻮﺍﺀ ﻳﻜﺮﻩ ) ﺭﺩﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ ( ١٢/ ٦٠٨ )
তথ্যসূত্র
১-ফাতওয়া আলমগীরী-৪/৩৯১
২-ফাতওয়া শামী-১২/৬০৮
৩-ফাতহুল বারী-৫২১৪
৪-ফাইজুল বারী-৩/৩৬৮
৫-আহসানুল ফাতওয়া ৭/২৫৬
৬-ফাতওয়া রহিমীয়া ৯/৩১৪
৭-ফাতওয়া মুফতী মাহমুদ ৯/২৪৮
৮-ইমদাদুল ফাতওয়া ৩/৪৭০
৯-কেফায়াতুল মুফতী ৭/১৮০
১০-ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৬/৪৯৬

২. এক ব্যক্তির স্ত্রী, মা- বাবা, ১ ভাই, ২ বোন, ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে আছে। এমতাবস্থায় তার সম্পদেরবন্টন কিভাবে হবে?

অথবা স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ১ বোন ও ৩ মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদেরবন্টন কিভাবে হবে??
অথবা স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ৩বোন আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে??
অথবা স্ত্রী, মা-বাবা ও ২ ছেলে- মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টনকিভাবে হবে??
অথবা স্ত্রী ও মা-বাবা আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে??
অথবা শুধু মা-বাবা, ২ ভাই-বোন ও ১ মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টনকিভাবে হবে??


উত্তর
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ  .ﻭﻋﻠﻴﻜﻢ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺮﻛﺎﺗﻪ

২ নং প্রশ্নের জবাব এ প্রশ্নের জবাব জানার জন্য প্রথমে আপনি প্রশ্নে যেসব আত্মীয়ের কথা উল্লেখ করেছেন, তারা মৃত থেকে কতটুকু পান?
খন পান? কখন বঞ্চিত হন? এ তিনটি অবস্থা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে। তাহলে আপনি নিজেই কে কতটুকু পাবে তা বের করে নিতে পারবেন। নিচে কে কতটুকু কখন পায় তা উদ্ধৃত করা হল। আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত আত্মীয় স্বজনগণ হলেন,

  1. স্ত্রী।
  2. মা।
  3. বাবা
  4. আপন ভাই
  5. আপন বোন।
  6. আপন ছেলে।
  7. আপন মেয়ে।

এবার শরীয়ত নির্ধারিত তাদের অবস্থা খেয়াল করুন স্ত্রীর অবস্থা দুটি মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকলে স্ত্রী পাবে পূর্ণ সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ। আর সন্তান থাকলে পাবে আট ভাগের এক ভাগ।
ﻭَﻟَﻬُﻦَّ ﺍﻟﺮُّﺑُﻊُ ﻣِﻤَّﺎ ﺗَﺮَﻛْﺘُﻢْ ﺇِﻥ ﻟَّﻢْ ﻳَﻜُﻦ ﻟَّﻜُﻢ ﻭَﻟَﺪٌۚ ﻓَﺈِﻥ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻜُﻢْ ﻭَﻟَﺪٌ ﻓَﻠَﻬُﻦَّ ﺍﻟﺜُّﻤُﻦُ ﻣِﻤَّﺎ ﺗَﺮَﻛْﺘُﻢۚ ﻣِّﻦ ﺑَﻌْﺪِ ﻭَﺻِﻴَّﺔٍ ﺗُﻮﺻُﻮﻥَ ﺑِﻬَﺎ ﺃَﻭْ ﺩَﻳْﻦٍۗ ] ٤ : ١٢ [
স্ত্রীদের জন্যে এক- চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ  সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর।
{সূরা নিসা-১২}

মিরাসের হকদার হওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের অবস্থা ৩টি 


  1. সম্পত্তির এক ছষ্ঠমাংশ বা ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন যদি মৃত ব্যক্তির এক বা একাধিক সন্তান বা সন্তানের সন্তান থাকে, বা মৃতের দুই বা ততোধিক ভাই/বোন থাকে।
  2. আর যদি উপরোক্ত  ব্যক্তিগণের কেউ না থাকে, তাহলে মা পাবেন পূর্ণ সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ তথা এক তৃতীয়াংশ। 
  3. আর যদি মায়ের সাথে বাবাও থাকে, আর সেই সাথে স্বামী কিংবা স্ত্রী থাকে, তাহলে স্বামী বা স্ত্রীর  অংশ দেয়ার পর বাকি সম্পত্তি থেকে তিন ভাগের এক ভাগ পাবেন মা।

ﻓﻰ ﺍﻟﺴﺮﺍﺟﻰ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﻴﺮﺍﺙ - ﻭﺍﻣﺎ ﻟﻼﻡ ﻓﺎﺣﻮﺍﻝ ﺛﻠﺚ، ﺍﻟﺴﺪﺱ ﻣﻊ ﺍﻟﻮﻟﺪ ﻭﻭﻟﺪ ﺍﻹﺑﻦ ﻭﺍﻥ ﺳﻔﻞ  ﻭ ﻣﻊ ﺍﻹﺛﻨﻴﻦ ﻣﻦ ﺍﻻﺧﻮﺓ ﻭﺍﻷﺧﻮﺍﺕ ﻓﺼﺎﻋﺪﺍ ﻣﻦ ﺍﻯ ﻭﺟﻪ ﻛﺎﻥ، ﻭﺛﻠﺚ ﺍﻟﻜﻞ ﻋﻨﺪ ﻋﺪﻡ ﻫﻮﻻﺀ ﻟﻤﺬﻛﻮﺭﻳﻦ، ﻭﺛﻠﺚ ﻣﺎ ﺑﻘﻰ ﺑﻌﺪ ﻓﺮﺽ ﺍﺣﺪ ﺍﻟﺰﻭﺟﻴﻦ، ﻭﺫﻟﻚ ﻓﻰ ﻣﺴﺌﻠﺘﻴﻦ ﺯﻭﺝ ﻭﺍﺑﻮﻳﻦ ﻭﺯﻭﺟﺔ ﻭﺍﺑﻮﻳﻦ، )ﺍﻟﺴﺮﺍﺟﻰ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﻴﺮﺍﺙ 18-17- )

বাবার অবস্থা তিনটি


  1. শুধু ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন। যদি মৃত ব্যক্তির এক বা ততোধিক ছেলে বা ছেলেদের ছেলে থাকে।
  2. যদি মৃত ব্যক্তির মেয়ে বা ছেলের মেয়ে থাকে, তাহলে পিতা সম্পত্তির প্রথমে ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন, তারপর বাকিদের মাঝে সম্পত্তি বন্টনের পর যদি কোন সম্পত্তি বেচে যায়, তাহলে উক্ত অতিরিক্ত সম্পত্তি পুরোটাই পিতা পাবেন।
  3. আর যদি মৃতের ছেলে বা মেয়ে কোন সন্তানই না থাকে, তাহলে পিতা শরীয়ত নির্ধারিত হকদারদের নির্ধারিত অংশ দেবার পরযত সম্পত্তি থাকবে, সকল সম্পত্তির মালিক হবেন।

ﺍﻣﺎ ﺍﻷﺏ ﻓﻠﻪ ﺍﺣﻮﺍﻝ ﺛﻼﺙ، ﺍﻟﻔﺮﺽ ﺍﻟﻤﻄﻠﻖ، ﻭﻫﻮ ﺍﻟﺴﺪﺱ، ﻭﺫﻟﻚ ﻣﻊ ﺍﻹﺑﻦ ﻭﺇﺑﻦ ﺍﻹﺑﻦ ﻭﺍﻥ ﺳﻔﻞ ﻭﺍﻟﻔﺮﺽ ﻭﺍﻟﺘﻌﺼﻴﺐ ﻣﻌﺎ، ﻭﺫﻟﻚ ﻣﻊ ﺍﻹﺑﻨﺔ ﺍﻭ ﺍﺑﻨﺔ ﺍﻹﺑﻦ ﻭﺍﻥ ﺳﻔﻠﺖ، ﻭﺍﻟﺘﻌﺼﻴﺐ ﺍﻟﻤﺤﺾ، ﻭﺫﻟﻚ ﻋﻨﺪ ﻋﺪﻡ ﺍﻟﻮﻟﺪ ﻭﻭﻟﺪ ﺍﻹﺑﻦ ﻭﺍﻥ ﺳﻔﻞ) ﺍﻟﺴﺮﺍﺟﻰ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﻴﺮﺍﺙ 10-9- )

আপন ভাই-বোনদের অবস্থা


  1. আপন বোন একজন হলে মৃতের সম্পত্তির অর্ধেক  পাবে যদি মিরাসের অধিকারী আর কেউ না থাকে, সে যদি শুধু একা হকদার হয়ে থাকে।
  2. আর যদি দুই বা ততোধিক বোন হয়, তাহলে পাবে তিন ভাগের দুই ভাগ। 
  3. আর যদি ভাইয়ের সাথে বোনেরা আসে, তাহলে এক ভাই দুইবোনের সমান অংশ হিসেবে সম্পদ বন্টিত হবে। অর্থাৎ এক ভাই যা পাবে, দুই বোন তা পাবে। উদাহরণতঃ এক ভাই আর দুই বোন থাকলে, সম্পদ দুই ভাগে ভাগ করে, এক ভাগ পাবে, এক ভাই, আর বাকি এক ভাগ পাবে দুই বোন।
  4. আর যদি মৃতের শুধু মেয়ে থাকে, কোন ছেলে না থাকে, তাহলে মৃতের মেয়ে তার  নির্ধারিত অংশ নেবার পর বাকি সম্পত্তি বোন পাবে।ভাই থাকলে ভাই পাবে। আর ভাই-বোন উভয়ে থাকলে এক ভাই দুই বোনের সমান হিসেবে সম্পদ বন্টন করে নিব।
  5. মৃতের ছেলে বা ছেলের ছেলে থাকলে কিংবা পিতা বা দাদা থাকলে আপন ভাই-বোন কিছুই পাবে না।

ﻳَﺴْﺘَﻔْﺘُﻮﻧَﻚَ ﻗُﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳُﻔْﺘِﻴﻜُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻜَﻠَﺎﻟَﺔِۚ ﺇِﻥِ ﺍﻣْﺮُﺅٌ ﻫَﻠَﻚَ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻪُ ﻭَﻟَﺪٌ ﻭَﻟَﻪُ ﺃُﺧْﺖٌ ﻓَﻠَﻬَﺎ ﻧِﺼْﻒُ ﻣَﺎ ﺗَﺮَﻙَۚ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﺮِﺛُﻬَﺎ ﺇِﻥ ﻟَّﻢْ ﻳَﻜُﻦ ﻟَّﻬَﺎ ﻭَﻟَﺪٌۚ ﻓَﺈِﻥ ﻛَﺎﻧَﺘَﺎ ﺍﺛْﻨَﺘَﻴْﻦِ ﻓَﻠَﻬُﻤَﺎ ﺍﻟﺜُّﻠُﺜَﺎﻥِ ﻣِﻤَّﺎ ﺗَﺮَﻙَۚ ﻭَﺇِﻥ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﺇِﺧْﻮَﺓً ﺭِّﺟَﺎﻟًﺎ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀً ﻓَﻠِﻠﺬَّﻛَﺮِ ﻣِﺜْﻞُ ﺣَﻆِّ ﺍﻟْﺄُﻧﺜَﻴَﻴْﻦِۗ ﻳُﺒَﻴِّﻦُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢْ ﺃَﻥ ﺗَﻀِﻠُّﻮﺍۗ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻜُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ] ٤ : ١٧٦ ]
মানুষ আপনার নিকট  ফতোয়া জানতে চায় অতএব, আপনি বলে দিন, আল্লাহ তোমাদিগকে কালালাহ এর মীরাস সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশ বাতলে দিচ্ছেন, যদি কোন পুরুষ মারা যায় এবং তার কোন সন্তানাদি না থাকে এবং এক বোন থাকে, তবে সে পাবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধেক অংশ এবং সে যদি নিঃসন্তান হয়, তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। তা দুই বোন থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ। পক্ষান্তরে যদি ভাই ও বোন উভয়ই থাকে, তবে একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর সমান। তোমরা বিভ্রান্ত হবে আল্লাহ তোমাদিগকে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত। {সূরা নিসা-১৭৬}

ﻭﺍﻣﺎ ﻟﻸﺧﻮﺍﺕ ﻻﺏ ﻭﺍﻡ، ﻓﺎﺣﻮﺍﻝ ﺧﻤﺲ، ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻠﻮﺍﺣﺪﺓ، ﻭﺍﻟﺜﻠﺜﺎﻥ ﻟﻼﺛﻨﺘﻴﻦ ﻓﺼﺎﻋﺪﺓ، ﻭﻣﻊ ﺍﻷﺥ ﻻﺏ ﻭﺍﻡ ﻟﻠﺬﻛﺮ ﻣﺜﻞ ﺣﻆ ﺍﻷﻧﺜﻴﻴﻦ ﻳﺼﺮﻥ ﺑﻪ ﻋﺼﺒﺔ ﻻﺳﺘﻮﺍﺋﻬﻢ ﻓﻰ ﺍﻟﻘﺮﺍﺑﺔ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﻤﻴﺖ، ﻭﻟﻬﻦ ﺍﻟﺒﺎﻗﻰ ﻣﻊ ﺍﻟﺒﻨﺎﺕ  ﻭ ﺑﻨﺎﺕ ﺍﻹﺑﻦ ﻟﻘﻮﻟﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ - ﺍﺟﻌﻠﻮﺍ ﺍﻷﺧﻮﺍﺕ ﻣﻊ ﺍﻟﺒﻨﺎﺕ ﻋﺼﺒﺔ ..…… ﻭﺑﻨﻮﺍ ﺍﻷﻋﻴﺎﻥ ﻭﺍﻟﻌﻼﺕ ﻛﻠﻬﻢ ﻳﺴﻘﻄﻮﻥ ﺑﺎﻹﺑﻦ ﻭﺍﺑﻦ ﺍﻹﺑﻦ ﻭﺍﻥ ﺳﻔﻞ ) ﺍﻟﺴﺮﺟﻰ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﻴﺮﺍﺙ 17-15- )
ছেলে ও মেয়ের মাঝে সম্পদ বন্টনের পদ্ধতি মৃত ব্যক্তির যত ছেলে আর মেয়ে রেখে মারা যাক না কেন, তাদের মাঝে সম্পদ বন্টনের সর্ববস্থায় পদ্ধতি হল, এক ছেলে সমান সমান দুই মেয়ে। অর্থাৎ দুই মেয়ে যা পাবে, এক ছেলে তা পাবে।  ﻳُﻮﺻِﻴﻜُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﺃَﻭْﻟَﺎﺩِﻛُﻢْۖ ﻟِﻠﺬَّﻛَﺮِ ﻣِﺜْﻞُ ﺣَﻆِّ ﺍﻟْﺄُﻧﺜَﻴَﻴْﻦِۚ ] ٤ : ١١ [আল্লাহ  তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। {সূরা নিসা-১১}

উপরোক্ত সূরত জানার সাথে সাথে আরেকটি মূলনীতি জানা থাকা জরুরী। সেটি হল- জরুরী মূলনীতি মিরাস বন্টনের ক্ষেত্রে দুটি পার্ট আছে। এক পার্টের মাঝে রয়েছে তিনটি সংখ্যা।
আরেকটি পার্টে রয়েছে তিনটি সংখ্যা।

প্রথম পার্ট


  1. নিসফ তথা অর্ধেক পাওয়ার দাবিদার থাকা।
  2. রুবু তথা চতুর্থাংশ পাওয়ার দাবিদার থাকা।
  3. ছুমুন তথা অষ্টমাংশ পাওয়ার দাবিদা থাকা।

দ্বিতীয় পার্ট

১- সুলুস তথা তিনভাগের একভাগ পাওয়ার দাবিদার থাকা।
২- সুলুসান তথা দুই তৃতিয়াংশ পাওয়ার দাবিদার থাকা।
৩- সুদুস তথা এক ছষ্ঠমাংশ পাওয়ার দাবিদার থাকা।

যদি প্রথম পার্টের নিসফ এর সাথে দ্বিতীয় পার্টের যে কোন একটি বা একাধিক সংখ্যার দাবিদার থাকে ওয়ারিসদের মাঝে, তাহলে বন্টন সূচনা করতে হবে ছয় দিয়ে।
আর যদি প্রথম পার্টের রুবুর দাবিদার থাকার সাথে সাথে দ্বিতীয় পার্টের এক বা একাধিক অংশ সংখ্যার দাবিদার থাকে, তাহলে বন্টন শুরু করতে হবে ১২ দিয়ে।
আর যদি প্রথম পার্টের ছুমনের হকদারের সাথে দ্বিতীয় পার্টের যে কোন এক বা একাধিক অংশিদার থাকে, তাহলে বন্টন সূচনা হবে ২৪ দিয়ে। {আসসিরাজী ফিল মীরাস-৮-৯}

উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে আপনার প্রশ্ন করা সূরতগুলোর সমাধান করতে হবে। নিচে তা উদ্ধৃত করা হল।
প্রশ্ন: এক ব্যক্তির স্ত্রী, মা-বাবা,  ১ ভাই, ২ বোন, ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে আছে। এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে।
উত্তর: আপন ছেলে থাকায় মৃতের ভাই-বোন কিছুই পাবে না। প্রথমে পূর্ণ সম্পত্তিকে চব্বিশ ভাগে বিভক্ত করে পিতাকে চার ভাগ, মাতাকে চারভাগ আর স্ত্রীকে তিনভাগ প্রদান করা হবে। তারপর বাকি যতটুকু সম্পদ থাকবে, সেটিকে সাত ভাগ করে, তিন ভাগ তিন  মেয়েকে আর বাকি চার ভাগের মাঝে দুই ভাগ এক ছেলে আর দুই ভাগ আরেক ছেলেকে দেয়া হবে।

প্রশ্ন:  স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ১ বোন ও ৩ মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে? উত্তর পিতা থাকায় আপন বোন কিছুই পাবে না। পূর্ণ সম্পত্তিকে ২৭ভাগে ভাগ করা হবে। এর মাঝে ১৬ভাগ পাবে তিন মেয়ে। পিতা পাবে চার ভাগ। মা পাবে চার ভাগ। আর স্ত্রী পাবে তিন ভাগ। উল্লেখ্যঃ এ সুরতটিকে মিরাস শাস্ত্রের পরিভাষায় মাসআলায়ে মিম্বরিয়া বলা হয়, যেহেতু মিম্বরে বসা অবস্থায় হযরত আলী রাঃ এর সমাধান করেছিলেন। {সিরাজী ফিল মীরাস-৩২}

প্রশ্ন:  স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ৩ বোন আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে??
উত্তর :  মৃতের পিতা থাকায় আপন ভাই ও বোন কিছুই পাবে না। পূর্ণ সম্পত্তিকে চার ভাগ করে এক ভাগ পাবেন স্ত্রী। বাকি তিনভাগের এক ভাগ পাবেন মা। আর বাকি দুই ভাগ পাবেন পিতা।

প্রশ্ন:  স্ত্রী, মা-বাবা ও ২ ছেলে- মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?
উত্তর:  প্রথমে পূর্ণ সম্পদকে চব্বিশ ভাগে ভাগ করে তিন ভাগ স্ত্রীকে, চার ভাগ পিতাকে আর চার ভাগ মাকে দেয়া হবে। তারপর বাকি ১৩ ভাগ সম্পদকে তিন ভাগ করা হবে। তার মাঝে একভাগ দেয়া হবে মেয়েকে, আর বাকি দুই ভাগ দেয়া হবে ছেলেকে।

প্রশ্ন: স্ত্রী ও মা-বাবা আছে ।এমতাবস্থায় তার সম্পদের  বন্টন কিভাবে হবে?
উত্তর:  পূর্ণ সম্পত্তিকে চার ভাগ করে এক ভাগ পাবেন স্ত্রী। বাকি তিনভাগের এক ভাগ পাবেন মা। আর বাকি দুই ভাগ পাবেন পিতা।

প্রশ্ন: শুধু মা-বাবা, ২ ভাই-বোন ও ১ মেয়ে আছে ।
উত্তর: পিতা থাকায় ভাইবোন কোন অংশ পাবে না। এক্ষেত্রে পূর্ণ সম্পদকে ছয়ভাগে ভাগ করে তিন ভাগ দেয়া হবে মেয়েকে, পিতাকে দেয়া হবে দুই ভাগ আর মাকে দেয়া হবে একভাগ।

প্রশ্নঃ ৩# মিরাস বন্টনের সময়কি কোন ধারাবাহিকতা অবলম্বন করতে হবে? যেমন, প্রথমে মা-বাবাকে দিতে হবে তারপরযা বাকী থাকে তা থেকে স্ত্রীকে দিতে হবে তারপরবাকী অংশ থেকে ছেলেকে বা মেয়েকে ইত্যাদি-ইত্যাদি নাকি যাকে খুশী আগে পরে দিতে পারবে?
উত্তরঃ মিরাস বা উত্তারাধিকার একটি স্বতন্ত্র বিদ্যা। শুধুমাত্র একটি দু’টি মূলনীতি বলার দ্বারা এর পূর্ণাঙ্গ কোন ধারণা আপনি অর্জন করতে পারবেন না। এরজন্য প্রয়োজন একজন বিজ্ঞ
আলেমের কাছে গিয়ে সরাসরি উক্ত বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা। মিরাসের সকল সূরতে সুনির্দিষ্ট মূলনীতির আলোকেই মাসআলার হুকুম একেক হয়, বন্টন পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়। উক্ত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ততা এবং জ্ঞানার্জন ছাড়া সহজে তা বুঝে আসার কথা নয়। তাই আপনি যদি উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত বুঝতে চান, তাহলে অবশ্যই বিজ্ঞ একজন আলেম
থেকে সরাসরি শিখে নিতে হবে।এ প্রশ্নোত্তরে মিরাসের পূণাঙ্গ অবস্থানবুঝানো প্রায় অসম্ভব।

জাযাকাল্লাহ।
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ
উত্তর লিখনে, লুৎফুর রহমান ফরায়েজী, সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল, আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা

3 মন্তব্যসমূহ

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন