মাওলানা সা'দ সাহেবের বয়ানঃ টঙ্গী ইজতেমা ২০১০


আম বয়ান, টঙ্গী ইজতেমা। 
কুরআনের আয়াতঃ ১) ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম কথা/দ্বীন আর কার হইতে পারে যে মানুষ কে আল্লহ তায়া’লার দিকে ডাকে। ২) তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত তোমাদের পাঠানো হয়েছে মানুষের কল্যান কামনার জন্য। তোমর সৎ কাজের আহবান করবে অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। ৩) সময়ের কসম, নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ কেবল তারা বাদে যারা ঈমান এনেছে, নেক আমাল করেছে, হকের দিকে দাওয়াত দিয়েছে ও সবর করেছে।
হাদীসঃ ১) আল্লহ তায়া’লার হুকুমের সামনে মানুষের উদাহরণ হল নাকে লাগানো উটের মত। ২) যে ব্যক্তি এখলাসের সাথে কালেমা পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেহ জিজ্ঞাসা করল, এখলাস কি? ফরইমালেন, যা হারাম থেকে ফিরিয়ে রাখে।
মুহতারাম দোস্ত, বুজুর্গ, আজিজ, দাওয়াত ইলাল্লহ উম্মতের (ফরজে মুন্তাবী) গুরুত্বপুর্ণ ফরয/বিষয়, উম্মতের কোন সময়ে কোন ব্যক্তি এই ফরয হইতে মুক্ত নয়। এটা জরুরী কথা উম্মত নিজের দায়িত্ব, কর্তব্য ও জিম্মাদারী আদায়ের ক্ষেত্রে উদাসীন। ঐ মেহনত, ঐ কাজ প্রত্যেক জামানায় প্রত্যেক উম্মতের ক্ষতিগ্রস্থতা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য শর্ত এবং যে তরীকায় মেহনত উম্মতকে দ্বীনের উপর অটল থাকার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে, ঐ তরীকায় মেহনত, ঐ যুহদ উম্মতের চিন্তা ফিকির থেকেও বের হয়ে গেছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যতদিন উম্মত দাওয়াতের উপর কায়েম থাকবে উম্মত আপন দ্বীনের উপর কায়েম থাকবে, আর যখন উম্মত নিজেদের দ্বীনের দাওয়াত ছেড়ে দিবে উম্মত নিজেদের দ্বীন ছেড়ে দিয়ে অপরের দ্বীনের দিকে ঝুকে পড়বে, তখন অন্যান্য ধর্মাবলম্বনকারিরা নিজ নিজ দ্বীনের দিকে আহবান করবে। ইতিহাস পুরাপুরিই সাক্ষী যতদিন পর্যন্ত উম্মতের মধ্যে দাওয়াত ইল্লাল্লহ এর ব্যপকতা ছিল তত দিন পর্যন্ত উম্মত পথভ্রষ্ট হয়নি, দ্বীন ছেড়ে দেয়ার নমুনা পাওয়া যায়নি। উম্মত তার দ্বীন ছেড়ে দেয়া এবং দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীনতার যে মূল কারণ তা হল দ্বীনের দাওয়াত ছেড়ে দেয়া। এটাই কারণ।
আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত কুরআনের বিভিন্ন অধ্যায়ে পরিষ্কার ভাষায়, সুন্দর ভাবে উল্লেখ করেছেন, যে ব্যক্তি দাওয়াত ও আমাল/ইবাদাত দুটোকে নিজের জিন্দেগী একত্রিত করবে তার দ্বীনদারীর ক্ষেত্রে কোন ক্ষতি দেখা যাবে না। যেন দাওয়াত ইলাল্লহ দ্বীনের হক এবং দ্বীনের উপর অটল থাকার এবং দ্বীন কে হেফাজ়ত করার যোগ্যতা পয়দা জন্য। আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত কুরআনের পরিষ্কার ভাষায় উল্লেখ করেছেন, ومنْ احْسن قولا مّمّن -الاية আল্লহ তায়া’লা বলতেছেন “ঐ ব্যক্তির দ্বীন থেকে আর কার দ্বীন উত্তম হতে পারে যে দাওয়াত দিতে দিতে আমাল করে।” এ বাক্যটি এস্তেফহামে এনকারী (প্রশ্নবাচক কিন্তু অস্বীকৃতিমূলক), ওলামাকেরাম লিখেছেন, এস্তেফহামে এনকারী কোন বাক্যকে শক্তিশালী করার জন্য, বাক্যের ভাবকে মজবুত জন্য ব্যবহার হয়। আল্লহ তায়া’লা এখানে বলছেন ঐ ব্যক্তির দ্বীনই সবচেয়ে উত্তম। আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত এস্তেমায়ী ভাবে সমস্ত মুসলমানদেরকে নিজের দ্বীনের মধ্যে হুসন/ভালাই/উত্তম রূপ পয়দার জন্য আহবান করতঃ এক কথাই বলতেছেন কোন ব্যক্তির দ্বীন উত্তম হতে পারে না যে পর্যন্ত সে দাওয়াত ও আমাল একত্রিত না করে। এভাবে মানুষের মাঝে নিজের দ্বীন অন্যের কাছে প্রকাশ করার যোগ্যতা পয়াদা হবে। যে নিজের দ্বীনের দাওয়াত ছেড়ে দিবে তার দিলের মধ্যে দ্বীনের সাথে আল্লহ তায়া’লার যে ওয়াদাসমূহ আছে তার উপর ইয়াকীন কমজোর হয়ে যাবে। যা তাকে দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। মুফাসসিরিনে কেরাম হেদায়াতের তাফসীরের ক্ষেত্রে উল্লেখ করেছেন দ্বীনের মধ্যে উত্তম পন্থা ও মজবুতি ধরে রাখার জন্য এবং দ্বীনের কোন এক হুকুমের মোকাবেলায় যদি কোন প্রতিবন্ধকতা আসেও সেই প্রতিবন্ধকতা থেকে বাঁচার জন্য জরুরী হল আমাল করুক বা ছাড়ুক প্রত্যেক ঈমানওয়ালা দাওয়াত ইলাল্লহকে নিজের দ্বীনের হেফাজতের জরিয়া মনে করে আমাল করতে থাকে তখন তার মধ্যে নিজেকে মুসলমান দাবী করার যোগ্যতা পয়দা হবে। আ’ব্দুল্লহ ইবনে হুজাফা রদিয়াল্লহু আ’নহু নিজের জামাতের সাথে রোমে কাজ করতেছিলেন। রোমের বাদশাহ ছিল খৃষ্টান। রোমের বাদশাহ আ’ব্দুল্লহ ইবনে হুজাফা রদিয়াল্লহু আ’নহুকে এই বলে দাওয়াত দিল যে তুমি খৃষ্টান হয়ে যাও। যদি তুমি খৃষ্টান হয়ে যাও তাহলে আমি তোমাকে আমার অর্ধেক রাজত্ব দিয়ে দিব। দুনিয়ার মধ্যে ঐ কি শক্তি এবং নিজের দ্বীনের উপর এস্তেকামাতের যে বড় বড় হিম্মত পেশ করেছেন, এত বড় রাজত্ব অতঃপর নিজের জান চলে যাওয়া সত্ত্বেও নিজ দ্বীন ছেড়ে দেয়াতো দুরের কথা, দ্বীনের কোন আমাল এবং দ্বীনের অংশসমূহ থেকে কোন একটি অংশ, এমনকি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের এক সুন্নত, হোক তা অভ্যাসগত অথবা এবাদাতগত, কোন আশা বা ভয়ের কারণে ছেড়ে দিতে তৈরি হননি। তার কারণ হল নিজের দ্বীনের জন্য নকল হরকত/চলাফিরা বা মুজাহাদার দ্বারা দ্বীনের গুরুত্ব ও আজমত দিলের মধ্যে মজবুত হয়ে গেছে। রোমের বাদশাহের খৃষ্টান হওয়ার দাওয়াতের উত্তরে আ’ব্দুল্লহ ইবনে হুজাফা রদিয়াল্লহু আ’নহু বললেন তোমার পুরা বাদশাহীও যদি আমি পেয়ে যাই তবুও আমি চোখের পলকের জন্যও মুহাম্মাদের (সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বীন ছাড়তে রাজি নই। বাদশা এতে হতাশ হয়ে গেল এবং বলল যে, আমি তোমাকে কতল করব। আব্দুল্লহ বিন হুজাফা রদিয়াল্লহু আ’নহু বললেন انْت وذاك তোমার দিল যা চায় করগে। বাদশা এক ডেগে পানি গরম কর নিয়ে আসল। এক সাথীকে তাঁর সামনেই শেষ করে দেয়ার জন্য পানি ঢেলে দিল। আ’ব্দুল্লহ ইবনে হুজাফা রদিয়াল্লহু আ’নহু বিষয়টা দেখতে ছিলেন। বাদশার পক্ষ থেকে তাঁকে বলা হল এখন তোমাকেও এখানে ফেলে দেয়া হবে। এই কথা বলে ফেলতে শুরু করলে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। বাদশা বলল, কি হল? খৃষ্টান হয়ে যাও। তিনি অস্বীকার করলেন। বাদশা বলল, তাহলে কাঁদছ কেন? বললেন, আমি তো জীবন চলে যাবার ভয়ে কাঁদছি না। বরং আমি আল্লহ তায়া’লার রাস্তায় হাকীর/তুচ্ছ একটি মাত্র জীবন দিতে পারছি বলে কাঁদছি। আমার দিলের তামান্না/আশাতো এই ছিল যে, শরীরের যতগুলো লোমকুপ আছে, প্রত্যেক লোমকুপের গোড়ায় যদি একটি করে জীবন থাকত তবে আমি এক এক করে প্রত্যেকটা জীবনই আমি আল্লহর রাস্তায় কোরবান/উৎসর্গ করে দিতাম। ভাই দোস্ত, যে মেহনত গারীক/মজবুত হবে উম্মতের দিলের মধ্যেও ঐ মেহনতের আছরও গারীক/মজবুত হবে। এটা প্রত্যেক ব্যক্তির দিলের চাহিদা ও কাইফিয়াত/অবস্থা অনুযায়ী হবে। যে লাইনে মেহনত হবে ঐ লাইনে ইয়াকিন পয়দা হবে। হযরত (ইউসুফ রহমাতুল্লহ আ’লাইহি) বলতেন, মানুষের বৈশিষ্ট্যই হল, যে ব্যক্তি যে জিনিসের ইয়াকীন করবে সে ঐ জিনিসকেই প্রাধান্য দিবে। মৌলিক ভাবে কথাগুলো স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, মেহনতের রুখ/গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। নিজ দ্বীন ও দ্বীনের সমস্ত আহকামাত এবং দ্বীনের উপর এস্তেকামাতের যে বুনিয়াদী ও এস্তেমায়ী অজিফা (প্রধান ও সমষ্টিগত দায়িত্ব) ছিল তা উম্মত এস্তেমায়ী/সমষ্টিগত ভাবে ছেড়ে দিয়েছে।
 দাওয়াত ইলাল্লহ উম্মতের ফরজে আইন জিম্মাদারী। ফরযে কিফায়া নয়। উলামা কেরাম লিখেছেন ফরযে কেফায়া ঐ কাজ কে বলে যে কাজ অন্যের জন্য করা হয়। ফরযে আইনতো ঐ কাজ হয় যা নিজের জন্য করার হয়। منْ جاهد فإنّما يجاهد لنفْسه প্রত্যেক ব্যক্তির কোশেশ/চেষ্টা-মেহনত স্বয়ং তার নিনের যাতের জন্য। অন্যকে দাওয়াত দিলে অন্যেরও উপকার হবে কিন্তু দাওয়াত খোদ নিজের জন্য। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তির জিম্মায় এই পরিমাণ ঈমান শিক্ষা করা ফরযে আইন যে পরিমাণ ঈমান তাকে হারাম থেকে বিরত রাখবে এবং আল্লহ তায়া’লা এতায়াতের উপর কায়েম রাখবে। এই পরিমাণ ঈমান শিক্ষা করা ফরযে আইন যে পরিমাণ ঈমান তাকে হারাম থেকে বিরত রাখবে এবং আল্লহ তায়া’লা এতায়াতের উপর কায়েম রাখবে। এই পরিমাণ ঈমান শিক্ষা করা প্রত্যেক মুমিনের জিম্মায় এবং প্রত্যেক মুমিন মহিলার জিম্মায় ফরযে আইন যে পরিমাণ ঈমান তাকে হারাম থেকে বিরত রাখবে এবং আল্লহ তায়া’লা এতায়াতের উপর কায়েম রাখবে। দাওয়াত নিজের যাতের জন্য হওয়ার দৃষ্টিকোন থেকে ফরযে আইন। যেহেতু ঈমান শেখা, কমপক্ষে এতটুকু, যতটুকু ঈমান তাকে হামার থেকে ফিরাবে এবং আল্লহ তায়া’লা এতায়াতের উপর কায়েম রাখবএই পরিমাণ ঈমান শিক্ষা করা প্রত্যেক মুমিনের জিম্মায় ফরযে আইন।  ভাই দোস্ত, দাওয়াতের বৈশিষ্ট্যই হল ইয়াকীন পয়দা করা। হযরত (ইউসুফ রহমাতুল্লহ আ’লাইহি) বলতেন যে নিজের মধ্যে পয়দা করতে চাও ঐ জিনিসের আমাল দাওয়াতের সুরতে করতে থাক। স্বয়ং সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম বলতেন, আমরা প্রথম ঈমান শিখেছি এরপর কুরআন শিখেছি। আজ উম্মতের মধ্যে আমাল শেখার জযবাতো আছে কিন্তু ঈমান শেখার ফিকির, ঈমান শেখার জযবা, ঈমান শেখার তরীকা, ঈমান শক্তিশালী করার আসবাব/মাধ্যম এস্তেমায়ী/সমষ্টিগত ভাবে উম্মত ছেড়ে দিয়েছে। খোদ সাহাবাহ কেরাম বলতেছেন আমরা প্রথম ঈমান শিখেছি এরপর কুরআন শিখেছি। আমাদের চিন্তা করা দরকার ঐ সমস্ত সাহাবাহ কেরাম, যাঁদের অন্তরে ঈমান পাহাড়ের চেয়েও বেশি মজবুত ছিল, ঐ সাহাবাহ কেরাম যাঁদের ঈমান তাঁদের অন্তরের মধ্যে হাকীকতের সাথে বিদ্যমান ছিল সেসমস্ত সাহাবাহ কেরামদেরও হু্যূর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে সভাবগত ভাবেই দাজদীদে ঈমান/ ঈমান নবায়নের নির্দেশ । বর্ণিত আছে হুযুর সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাহ কেরাম দের লক্ষ্য করে বলেছেন আপন ঈমান নবায়ন করতে থাক। সাহাবাহ কেরাম আরজ করলেন ইয়া রসুলুল্লহ, ঈমান কিভাবে নবায়ন করব। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ এর কাসরত/আধিক্য এর দ্বারা ঈমান নবায়ন কর। ভাই দোস্ত, উম্মতের মধ্যে থেকে এস্তেমায়ী ভাবে কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ এর দাওয়াত, দেখুন লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ কিসের যিকির/আলোচনা? ইহাতো দাওয়াত এবং আল্লহ তায়া’লা সিফতে আ’লিয়া/উচ্চ গুনাবলীর আলোচনা। লা-ইলাহা ইল্লাল্লহের যিকির অবশ্যই ফাওয়া পৌঁছাবে কিন্তু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আলোচনা উদ্দেশ্য। হুকুমত, জমিজমা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি যেগুলো আলোচনা হবে সেগুলি ইয়াকীন বসবে। আর যে জিনিসের ইয়াকীন হবে সেই জিনিসেরই এতায়াত/অনূসরণ হবে। বুনিয়াদী/মৌলিক কথা হল সাহাবাহ কেরামের কালিমার লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ এর কাসরত/বেশিবেশি যিকিরের দ্বারা ঈমানের নবায়নের এবং ঈমানের মাজবুতির যে উদ্দেশ্য উহা হল এই সাহাবাহ কেরাম মাসজিদের মধ্যে ঈমানী মজলিস কায়েম করতেন, সেখানে তাঁরা গুরুত্বের আল্লহ রব্বুল ইজ্জাতের আলোচনা করতেন। স্বয়ং মুয়ায বিন জাবাল, আ’ব্দুল্লহ বিন রওয়াহা রদিয়াল্লহু আ’নহুমা তাদের মা’মূল/অভ্যাস ছিল মানুষের সাথে মোলাকাত/সাক্ষাত করে এলান/বলতেন আস এখানে বস কিছু ক্ষনের জন্য আপন আপন ঈমান নিয়ে আছ। ভাই দোস্ত, উম্মতের মধ্যে থেকে ব্যাপক ভাবে এই আমাল ছুটে গেছে। মাওলানা ইলিয়াস সাহেব রহমাতুল্লহ আ’লাইহি বলতেন, আমি যদি এই মেহনতের কোন নাম রাখতাম তবে তাহরীক-ই-ঈমান রাখতাম। আমি এই কথাটা সুস্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করতে চাই আমাদের মেহনত এবং মানুষদের সাথে সাক্ষাতের মৌলিক উদ্দেশ্য হল প্রত্যেক ঈমানওয়ালা কে দাওয়াতের মাধ্যমে তার নিজ মাদী নকশা/সামাজিক ও পারিপার্শিক পরিস্থিতি থেকে বের করে মাসজিদের পরিবেশে ঈমানের মজলিসে, ঈমানের পরিবেশে ইয়াকীন শিখানো। আমাদের মোলাকাত/সাক্ষাতে মৌলিক উদ্দেশ্য। যে ব্যক্তি যে পরিমাণ সামজিকতা/পারিপার্শিকতায় জড়িত, ঐ পরিমাণ দাওয়াতের দ্বারা, গাস্তের দ্বারা পারিপার্শিকতা থেকে বের করে ঈমানী মজলিসে জুড়িয়ে আল্লহর তাকত/শক্তিকে, আল্লহর কুদরতকে, আল্লহর আজমতকে, আল্লহর গায়েবী নেজামকে বুঝানো, অতঃপর তাদের প্রত্যেকের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দাওয়াত দেওয়ানো। সমষ্টিগত ভাবে এই চলন/অভ্যাসটা উম্মতের মধ্যে থেকে খতম/শেষ হয়ে গেছে। এর গুরুত্ব এত বেশি ছিল যে, সাহাবাহ কেরাম যাদের ঈমান তাঁদের অন্তরে পাহাড়ের মত দৃঢ় ছিল, যেমন উসমান রদিয়াল্লহু আ’নহু এর ঈমানের ব্যাপারে হযরত উ’মার রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেছিলেন, তিনি এমন ব্যক্তিত্ব, যদি তাঁর ঈমানকে একটি বড় সৈন্য দলের মধ্যেও বন্টন করে দেওয়া হয় তবে তা সকলের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে, এই ধরণের ইয়াকীনওয়ালা সাহাবাহ কেরাম যাদের ঈমান আমাদের সকলের  জন্য নমুনা বানানো হয়েছে, পবিত্র কুরআনের ইরশাদ, امنوْا كما امن النّاس তোমরা ঈমান আন যেমন সাহাবাহ কেরাম ঈমান এনেছিলেন, স্বয়ং এমন সাহাবাহ কেরামদের ঈমান নবায়নের জন্য হুকুম করা হয়েছে। হুযুর সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের কায়েনাতের (সৃষ্টি জগত) মধ্যে পরে ঘটবে এমন জিনিসের দ্বারাও ঈমান শিখিয়েছেন। এর উদাহরণ, সময়ের স্বল্পতার কারণে সংক্ষিপ্ত করছি, এর বহু উদাহরণ হাদিসে পাওয়া যায়। যেমন, এক রাতে বৃষ্টি হল। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাহ কেরামদের বললেন, সকালে তোমাদের মধ্যে কাফির অবস্থায় উঠবে, কেউ ঈমানদার অবস্থায় উঠবে। কায়েনাতের মধ্যে (সৃষ্টি জগতে) পরিবর্তনশীল জিনিসের সম্পর্ক আল্লহ তায়া’লার সাথে করার মধ্যমেই ঈমান শিখিছেন। হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাহাবাহ কেরাম দের বললেন, তোমাদের মধ্যে সকালে কেউ কাফের অবস্থায় উঠবে আর কেউ ঈমান নিয়ে উঠবে, একথা শুনে সাহাবাহ কেরাম ঘাবড়ে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তা কিভাবে হবে? হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন, এই যে বৃষ্টি হল, যে ব্যক্তি একথা বলবে অমুক নক্ষত্রের কারনে বৃষ্টি হয়েছে যে আল্লহ তায়া’লাকে অস্বীকারকারী এবং নক্ষত্রে বিশ্বাসী। আর যে একথা বলবে, এই বৃষ্টি আল্লহ তায়া’লার হুকুমেই হয়েছে সে আল্লহ তায়া’লার উপর ঈমান গ্রহণ কারী এবং নক্ষত্রের অস্বীকারকারী। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ সাহাবাহদের এভাবেই ঈমান শিখিয়েছেন। আল্লহ তায়া’লার আহকামাতের (বিধান) উপর উঠিয়েছেন বস্তুর মোকাবেলায় এবং সৃষ্টি জগতের পরিবর্তনশীল জিনিস সমূহকে কায়েনাতের সাথে সম্পৃক্ত করার বিপরীতে কায়েনাতের সৃষ্টিকর্তার (অর্থাৎ আল্লহ তায়া’লার) সাথে জুড়িয়ে ইয়াকীনের চর্চা করিয়েছেন। সমষ্টিগত ভাবে উম্মতের মধ্য থেকে এই তরীকার মেহনত খতম হয়ে গেছে। ভাই দোস্ত, আমি কিভাবে উপস্থাপন করব, উপস্থিত সকলে বিষয়টি সরাসরি বুঝতে পারবে না। সকাল থেকে সন্ধ্যা সর্বক্ষনই আমরা মাখলুকের আলোচনায় ব্যস্ত। তাহলে ইবাদাত, তেলাওয়াত, যিকির এগুলোর মধ্যে কিভাবে আল্লহ তায়া’লার ধ্যান পয়দা হবে? কারণ সমস্ত দিল ও দেমাগ পুরোটাই আল্লহ তায়া’লার গায়েরের দ্বারা প্রভাবিত। যদি দাওয়াতের মাধ্যমে ভিতরগত/আত্মিক অন্ধকারকে দূর করা না হয় তাহলে ঐসব আমালের মধ্যে কিভাবে আল্লহ তায়া’লার ধ্যান পয়দা হবে? এইজন্য ভাই দোস্ত, আমাদেরকে সমষ্টিগত ভাবে কাজটি রুটিন করে নিতে হবে যে আমাদের মধ্যে প্রত্যেক ঈমানওয়ালা ব্যক্তিই সাহাবাহ কেরামদের মত দৈনন্দিন ঈমানের মাজলিস কায়েম করবে। আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা, মুয়ায ইবনে জাবাল রদিয়াল্লহ আ’নহুমা মানুষের সঙ্গে মোলাকাত/সাক্ষাত করে করে লোকজন জড়ো করে বলতেন, আস ভাই, বস, অল্প সময়ের জন্য ঈমানের আলোচনা করে যাও। এইজন্য ভাই দোস্ত, আমি এ কথাই বলতে চাই যে, ঈমান মজবুত করার মাধ্যম গুলোকে চিন্তা করতে থাকুন। ঈমান মজবুত করার চারটি মাধ্যম। প্রথমতঃ আল্লহ তায়া’লার কুদরত, আল্লহ তায়া’লার আজমাত, আল্লহ তায়া’লার বড়ত্বকে খুব বেশি বয়ান/আলোচনা করুন।  যতবেশি মাখলুকের বড়ত্ব আলোচনা করা হয় পুরোটাকেই অস্বীকার করুন। নবী সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর এই কথারই নির্দেশ ছিল। হে নবী, আপনি আমারই বড়ত্ব বর্ণনা করুন। এবং আপনার সকল ইচ্ছাকেই আমার যাতের উপর সমর্পণ করে লোকদেরকে শিখান যে করনেওয়ালা যাত একমাত্র আল্লহ তায়া’লা। এই বিষটি হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে শিক্ষা দেয়ার জন্যই আল্লহ তায়া’লা বলেছেন যে, আজ একথার দাওয়াত দেন যে করনেওয়ালা যাত একমাত্র আল্লহ তায়া’লা। একদা হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, আগামীকাল বলব, আসহাবে কাহাফ কারা ছিল। বিষয়টি একথারই উদাহরণ যে, নিজের সমস্ত ইচ্ছাকে স্বয়ং আল্লহ তায়া’লার উপর সমর্পণ করার গুরুত্ব কতটুকু। হুযুর সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, আমি আগামীকাল বলব, আসহাফে কাহাফ কারা ছিল। কিন্তু তিনি ইনশাআল্লহ বলতে ভুলে গেলেন। উলামা কেরাম লিখেন যে, এরপর প্রায় পনের দিন যাবত ওহী আসা বন্ধ ছিল। অহী অবতীর্ণ হওয়ার মধ্যে এতদিনের ব্যবধান কখনও ছিল না। কারণ তিনি কেন বলেছিলেন যে, আমি কাল বলব, তিনি একথা কেন বলে নাই যে, যদি আল্লহ তায়া’লা চান তাহলে কাল বলব। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম অস্থির হয়ে গেলেন, চিন্তিত হয়ে পড়লেন। লোকজন বিভিন্ন ভাবে কটুক্তি করতে শুরু করল, হে মুহাম্মাদ (সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) আকাশ থেকে অহী কেন আসে না যে আপনি আল্লহ তায়া’লার কাছ থেকে জেনে আমাদেরকে বলবেন, আসহাফে কাহাফের ঘটনা কি ছিল? দীর্ঘ ১৫ দিন পর এই অহী আসল যে হে নবী, কখনও এই কথা বলবেন না যে, আমি আগামীকাল কাজটি করব। যতক্ষন না নিজের কোন কাজের ইচ্ছার সাথে ইনশাআল্লহ (যদি আল্লহ তায়া’লা চান) না বলবেন, ততক্ষন কোন কাজ করবেন না। (وَاذْكُر رَّبَّكَ إِذَا نَسِيتَ) (সূরা কাহফঃ ২৪) এখানে ইনশাআল্লহ বলারও কথা বলা হয়েছে। যখনই নিজের কোন কাজকে আল্লহ তায়া’লার ইচ্ছার উপর সমর্পণ করা ভুলে যাবেন সাথে সাথে ইনশাআল্লহ বলে নিবেন। ১৫ দিন পর্যন্ত এই কারণেই অহী আসা বন্ধ ছিল যে, আপনি কেন বলেছিলেন, আমি আগামীকাল বলব, কেন এই  কথা বলেন নি যে, যদি আল্লহ তায়া’লা চান তাহলে আগামী কাল বলব। ভাই দোস্ত, ঈমান মজবুত করার মাধ্যম গুলোর প্রথমটি হল এটিই। আল্লহ তায়া’লার কুদরত, আল্লহ তায়া’লার আজমাত, আল্লহ তায়া’লার বড়ত্বকে বয়ান/আলোচনা করা। খুব বেশি করে একথা আলোচনা করুন, কুদরত আল্লহ তায়া’লার যাতের মধ্যেই, কায়েনাতের মধ্যে, ফেরেশতাদের মধ্যে কারও মধ্যেই কোন ক্ষমতা নাই।  ক্ষমতা একমাত্র আল্লহ তায়া’লার। কায়েনাতের মধ্যে যা কিছু আমরা দেখি সব কিছু আল্লহ তায়া’লার কুদরত থেকে সৃষ্টি হয়ে আল্লহ তায়া’লার কুদরতেরই অধীন। এমনও নয় যে, আল্লহ তায়া’লা সব কিছু সৃষ্টি করে মানুষের কাছে সোপর্দ করে দিয়াছেন। এক সওয়ারীর হাতে সওয়ারের লাগাম রয়েছে। সে আল্লহ তায়া’লা কে বলছে, হে আল্লহ তায়া’লা, এটি আমার কাবুতে/কন্ট্রোলে ছিল না, তুমিই তাকে অধীন করে দিয়েছ। মানুষের হাতে কিছুই নেই করনেওয়ালা যাত/সত্ত্বা একমাত্র আল্লহ তায়া’লা। আসলে একথার ইয়াকীন একথার দাওয়াতের মাধ্যমে দিলের মধ্যে আসে। হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম দের বিভিন্ন সময় সুযোগে এভাবেই শিখাতেন।
ঈমান মজবুত করার দ্বিতীয় মাধ্যম হল, নবী আ’লাইহিস সালাম দের সাথে আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত যে সব গায়েবী সাহায্য সহযোগীতা করেছেন তা বর্ণনা করা। কেননা নবীদের ঘটনাবলী অন্তরে স্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য বর্ণনা করা হয়। ভাই দোস্ত, এখন বর্তমান অবস্থার পরিপেক্ষিতে এমনিতেই মানুষের মধ্য থেকে দ্বীন ছুটে যাবে এবং এই অবস্থায় মানুষ এমনিতেই আসবাবকে পথ গ্রহন করবে। আল্লহ তায়া’লার যাতে আ’লীর হুকুমের উপর দিলের স্থিরতা তখনই সৃষ্টি হবে যখন নবী আ’লাইহিস সালামদের ঘটনাবলীর দ্বারা ইয়াকীন শেখা হবে। যে সমস্ত ঘটনাবলী নবীদের সাথে হয়েছে তা কিয়ামাত পর্যন্ত আল্লহ তায়া’লার সহযোগীতার একটি নীতিমালা। ভাই দোস্ত, কায়েনাত কোন নীতিমালা নয়। বরং আল্লহ তায়া’লা আহকামাতই হল আল্লহ তায়া’লার নীতিমালা। আল্লহ তায়া’লার কুদরত ওয়াদার সাথে আর ওয়াদা হুকুমের সাথে। নবীদের ঘটনাবলীর দ্বারা অন্তরের স্থিরতা সৃষ্টি হয়। এই জন্যই আল্লহ তায়া’লা হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আম্বিয়া আ’লাইহিমুস সালামদের ঘটনাবলী ওহীর মাধ্যমে পাঠিয়েছেন যেন এর দ্বারা তাঁর অন্তরে স্থিরতা পয়দা হয়। আমাদের জন্য ইয়াকীন মজবুত করার মৌলিক মাধ্যম হল নবীদের ঘটনাবলী এবং সাহায্য সহযোগীতাগুলো এই ইয়াকীনের সাথে বর্ণনা করা যে, আজও আল্লহ তায়া’লা এই দ্বীনের মধ্যে ঐরূপ সাহায্য সহযোগীতা করবেন যেরূপ অতীতে এই দ্বীনের মধ্যে নবীদেরকে সাহায্য সহযোগীতা করেছেন। নতুবা, দিলের মধ্যে এই সন্দেহ সৃষ্টি হবে যে, যে সকল নুসরত মদদ অতীতে হয়েছিল তা এখন আর হবে না। অথচ আল্লহ তায়া’লা নিজের দ্বীনের মধ্যে কিয়ামাত পর্যন্ত সকল মুমিনদের সাথে নবীদের মত  সাহায্য সহযোগীতা করবেন। স্বয়ং আল্লহ তায়া’লা পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেছেন (إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الْأَشْهَادُ) (সুরাঃ হা-মীম সিজদাহঃ ৫১) অর্থাৎ আমি সাহায্য করব নবীদেরকে এবং তাঁদের উপর ঈমান আনয়নকারীদেরকে। এবং কিয়ামাত পর্যন্ত এভাবেই সাহায্য সহযোগীতা করব। ভাই দোস্ত বুজুর্গ এটাই হল ইয়াকীন মজবুত করার মাধ্যম যার দ্বারা অন্তরের মধ্যে ঈমান সুদৃঢ় হয়। আল্লহ তায়া’লার ওয়াদাগুলোর উপর ইয়াকীনের দ্বারা আল্লহ তায়া’লার হুকুম আহকামের উপর যায়।
Tags: আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা, আসহাফে কাহাফ, ইস্তেমা, টঙ্গী, টঙ্গী ইস্তেমা, বয়ান, মুয়াজ, সুরা কাহাফ, boyan, istima, saad, tongi, Tongi Istima মন্তব্য দিন
হেদায়েত টঙ্গী ইজতেমা ২০১০
Filed under: টঙ্গী ইজতেমা, হেদায়েতের কথা — ১ টি মন্তব্য এপ্রিল 14, 2010
দাওয়াত সমস্ত আম্বিয়া কেরাম আ’লাইহিমুস সালামদের এস্তেমায়ী অজিফা, এস্তেমায়ী মেহনত। সকল নবীদের শরিয়াত ভিন্ন ভিন্ন ছিল কিন্তু দাওয়াত একই ছিল। বিভিন্ন জামানায়, বিভিন্ন কওমের মধ্যে যে নবী এসেছেন তার দাওয়াত ওই সময়ে কওমের মধ্যে প্রচলিত নকশার বিরুদ্ধে আল্লহ থেকে সবকিছু হওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন। উম্মতের জন্য প্রত্যেক নবীই দাওয়াত ছিল কওমের প্রচলিত নকশার মোকাবেলায় আল্লহ জাতে আ’লী থেকে হওয়ার দাওয়াত। প্রত্যেক জামানায় আম্বিয়া কেরাম আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত থেকে এই দাওয়াত নিয়ে এসেছেন, কওম আল্লহর গায়ের বিভিন্ন আসবাব এবং সেকেলের উপর সমস্যা সমাধান হবার ইয়াকীন রাখনেওয়ালা ছিল, আম্বিয়া আ’লাইহিমুস সালাম আল্লহর তরফ থেকে প্রেরিত হয়েছিলেন নিজের কওমকে সকল আসবাবের মোকাবেলায় নিজেদের কামিয়াবীর ইয়াকীন শিখানোর জন্য। আসল কথা হল, দাওয়াতে বৈশিষ্ট্যই হল ইয়াকীন পয়দা করা। আল্লহ তাকিদের সাথে এই কথাই বলেছেন, যে আমার রাস্তায় মেহনত করবে আমি তাকে অবশ্যই হেদায়েত দিব। এই মেহনতের মাধ্যমে নিজের ইয়াকীন পরিবর্তন করা এই কাজের মাকসাদ। সবচেয়ে পয়লা যেই দাওয়াত তা হল কালেমার উপর মেহনত, নিজের ইয়াকীন বদলানোর মশক করা এই কালেমার মেহনতের মাধ্যমে। নিজের ইয়াকীন বদলানোর মশক করা এটা কালেমার মেহনত। আসলে এ মেহনত হল ইয়াকীনের পরিবর্তনের জন্য। প্রত্যেক কওমের মধ্যে কিছু না কিছু নবীদের আমাল বাকি ছিল, কিন্তু প্রত্যেক নবীদের মেহনত তার কওমের ইয়াকীন এবং আকীদা আল্লহর উপর আনার জন্য ছিল। ওলামা কেরাম লিখেন ২ লাখের উপরে যে আম্বিয়া কেরাম পাঠানো হয়ে ছিল তাদের বেশির ভাগ মুসলমানদের উপরে পাঠানো হয়েছিল। তারা দাওয়াতের মাধ্যমে কওমকে আল্লাহর গায়ের থেকে আল্লহর দিকে ফিরানোর জন্য মেহনত করেছেন।
দাওয়াতের বৈশিষ্ট্যই হল ইয়াকীন পয়দা করা। যে লাইনে মেহনত হবে ওই লাইনে দীলের ভিতর ইয়াকীন হবে। আমার সবচেয়ে বড় জিম্মাদারী হল এস্তেমায়ী ভাবে পুরা উম্মতকে ওই মেহনতের উপর উঠানো যে মেহনতের দ্বারা আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত হেদায়েতের, তরবিয়তের, তাজকিয়ার এবং নৈকট্য পয়দা করার তাকিদের সাথে ওয়াদা করছেন। দাওয়াত এবং আমাল জমা করানেওয়ালার দ্বীন সব চেয়ে সুন্দর হয়। আমরাতো মেহনতের ময়দান দুনিয়াকেই বানিয়ে নিয়েছি। আমরা চাইতেছি হেদায়েত দোয়ার মাধ্যমে হাসিল হয়ে যাবে। অথচ যে লাইনে মেহনত হবে ওই লাইনেই ইয়াকীন পয়দা হবে। আমার সবার আগে জরুরী নিজের মেহনতের রুখ/দিক পরিবর্তন করা। মেহনতের রখ পরিবর্তন করা মানে হল আজ থেকে এই নিয়ত করে নিই কালেমার দাওয়াত কালেমার এখলাস হাসিল করার জন্য দিব, আল্লহর গায়েরের এনকার/অস্বীকার, আর আল্লহ থেকে হওয়ার একরার দ্বারা কালেমার হাকিকত অন্তরের ভিতরে আনব। কালেমার এখলাস হল এই কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ তার পড়নেওয়ালা কে হারাম থেকে ফিরাবে। এটাই হল কালেমার এখলাস। এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসুলুল্লহ, কালেমার এখলাস কি জিনিস? রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমান, কালেমার এখলাস হল এই, এই কালেমা তার পড়নেওয়ালাকে হারাম থেকে ফিরায়। যা ব্যক্তির কালেমা তাকে হারাম থেকে ফিরাবে, সুনিশ্চিত সে জান্নাতে দাখিল হবে। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে এখলাসের সাথে কালেমা পড়বে সে জান্নাতে দাখিল হবে। সাহাবাহ কেরাম আরজ করেন ইয়া রসুলুল্লহ, কালেমার এখলাস কি? রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমান, এই কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ তার পড়নেওয়ালাকে হারাম থেকে ফিরায়। আমি দাওয়াতের দ্বারা কালেমার এখলাস চাই। এটাই সবচেয়ে পয়লা কাজ, এই কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ কে দাওয়াতের মধ্যে নিয়ে আসা। এর দাওয়াত দ্বারা এর ইয়াকীন হাসিল হবে। ব্যবসা, চাকরী, হুকুমতের মেহনত দ্বারা ওই জিনিসের ইয়াকীন হয়েছে। একই ভাবে কালেমার মেহনত দ্বারা কালেমার ইয়াকীন হাসিল হবে। কালেমার তাকাদা পুরা করার মধ্যে কামিয়াবীর ইয়াকীন দিলের ভিতরে পয়দা হওয়া এবং কালেমার তাকাদা ছুটার দ্বারা দুনিয়া আখেরাতের নাকামিয়াবীর ইয়াকীন দিলের ভিতরে পয়দা হওয়া এই কাইফিয়ত/অবস্থা এই মেহনতের দ্বারা এটাই চাওয়া হচ্ছে।
ইয়াকীনের তরক্কীর জন্য, ঈমান শেখার জন্য ওই মেহনত, ওই তরীকায় মেহনত দরকার যে তরীকায় মেহনত খোদ সাহাবাহ কেরাম মেহনত তাদের জামানায় করেছেন। মাসজিদের মধ্যে ঈমানের মাজলিস কায়েম করেছেন ইয়াকীনের তরক্কীর জন্য। সেখানে আল্লহর মহত্ব/আজমাত, আল্লহর কুদরত, আল্লহর তৌহিদের আলোচনা হত। মাসজিদের মধ্যে তারা ঈমান শিখতেন এবং ঈমানকে নিয়ে মাসজিদের বাইরে সকল মহল/পরিবেশের মধ্যে ঈমানের দাওয়াত নিয়ে ফিরতেন। এর দ্বারা ইয়াকীন আল্লহর গায়ের থেকে আল্লহর জাতের দিকে ফিরছে। এরপর উম্মতের মধ্য হতে এস্তেমায়ী ভাবে ঈমান শেখার দাওয়াই এবং কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ এর দাওয়াত ঈমানওয়ালাদের মধ্য হতে বিদায় নিল। বিরাট এক গলদ ধারনা পয়দা হয়ে গেছে যে, দাওয়াত তো গায়ের/অমুসলিম কওমদের জন্য। না! বরং যত্নের সাথে মনে রাখুন আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত ঈমানওয়ালাদের ঈমান আনার হুকুম করেছেন। ইয়া আইয়ু হাল লাজিনা আমানু আমিনু। ও ঈমানওয়ালা তুমি ঈমান আনো। ঈমানওয়ালা আনুগত্যশীল জীবন যাপন কর। খোদ ঈমানওয়ালাকেই ঈমান আনার জন্য হুকুম করা হয়েছে। খোদ ঈমানওয়ালাই কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ এর, এর মেহনতের, এর দাওয়াতের, এর তাকাদা পুরা করার সবচেয়ে বেশি হকদার। এই জন্য ভাই, আমরা মাসজিদ গুলোতে ঈমানের মাজলিসের দ্বারা, গায়েবের আলোচনার দ্বারা মাসজিদ গুলো আবাদ করব, এটা মাসজিদ আবাদীর সবচেয়ে পয়লা আমাল। এটা মাসজিদ আবাদীর সবচেয়ে পয়লা আমাল যে, মাসজিদের মধ্যে ঈমানের হালকা কায়েম করা। মায়াজ ইবন জাবাল, আব্দুল্লহ ইবন রওয়াহা রদিয়াল্লহু আ’নহুমা তারা লোকদের ডাকতেন মাসজিদের মধ্যে এই বলে যে, আস কিছু সময় আমরা ঈমান আনি। আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত এই জিম্মাদারী সকল ঈমানওয়ালার উপরেই রেখেছেন। ইন্নামা ইয়া’মুরু মাসাজিদাল্লহি মান আ’মানা বিল্লাহ। আল্লাহ রব্বুল ইজ্জাত ফরমান শতভাগ ঈমানওয়ালাই মাসজিদ আবাদ করনেওয়ালা হবে। এইজন্য সব ঈমানওয়ালারই এটা একটা তাকাদা যে, নিজের মাদী নকশা থেকে ফারেগ হয়ে আসবে এবং মাসজিদে ঈমানী মাজলিসে বসে গায়েবের আলোচনা ইয়াকীনের সাথে শুনে যাতে তার ইয়াকীন দাওয়াতের জরিয়ায় আল্লহর গায়ের থেকে সকল মাদী নকশা থেকে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। ভাই দোস্ত, কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ ছয় নম্বরের মধ্যে পয়লা সিফাত। আমি, মাসজিদে, পয়লা সিফাতের মাধ্যমে মাসজিদের মেহনতের সাথে তায়াল্লুক/সম্পর্ক, এটা হল সব ঈমানওয়ালা কে দাওয়াতের জরিয়ায় তাদের মাহল থেকে বের করে মাসজিদের মাহলে জড়ো করার দ্বারা ইয়াকীন এবং ঈমানের মশক করানো। এক এক জন ঈমানওয়ালা মাসজিদ থেকে ঈমানের দাওয়াত নিয়ে দুনিয়ার সব শোবার/শ্রেণীর লোকদের কাছে যাবে। সে ইয়াকীনের বুনিয়াদের উপরে এবং আমালের কামিয়াবীর বুনিয়াদের উপরে তাকে ওই মাহল থেকে বের করে মাসজিদের মাহলে নিয়ে আসবে। আমাদের গাস্ত, মোলাকাত/দেখা সাক্ষাতের মাকসাদ হল মাসজিদের মাহলে নিয়ে আসা এবং ঈমানের মাজলিসে বসানোর দ্বারা ইয়াকীনের মশক করানো।
যখন ইয়াকীনের মেহনতের সাথে সমস্ত বাতিলের মোকাবেলায় আমালের দিকে দাওয়াত দেয়া হবে তখন আমাল ইয়াকীনী বনবে/হবে। নামাজ নষ্ট হবার মুল কারন হল, নিজের এবং আল্লহর মধ্যে আসবাবকে মাধ্যম মনে করে বসা এবং আসবাবকে মাধ্যম বানিয়ে আল্লহর জাত থেকে ফায়দা পাবার চেষ্টা করা। আমি বলতেছি, আমাদের এবং আল্লহর মধ্যে আমরা বিভিন্ন আসবাবকে যে মাধ্যম মনে করে বসে আছি এটাই আমাল নষ্ট হবার, আমাল ছুটে যাবার কারন। আমাদের এবং আল্লহর মাঝে আমালই জরিয়া/মাধ্যম। আল্লহর কুদরত আল্লহর ওয়াদার সাথে আর ওয়াদা হুকুমের সাথে। আল্লহ জাতে আ’লী থেকে সরাসরি ফায়দা হাসিলের রাস্তা হল আহকামাত/হুকুম সমুহ। আমাদের ইয়াকীন দাওয়াতের জরিয়ার সেকেল/আসবাব থেকে আমালের দিকে ফিরানোর জন্য। যতক্ষন পর্যন্ত আমালের উপর ইয়াকীন না হবে, ততক্ষন আমাল ইয়াকীনের সাথে হবে না। ইসলামের সবচেয়ে বড় রুকন এবং আল্লহর জাতে আ’লীর সাথে সবচেয়ে নিকতবর্তী হবার আমাল হল নামাজ। কুফর এবং ইসলামের মধ্যে স্রেফ/কেবল নামাজই পার্থক্য। হাদিসে এসেছে কুফর আর ইসলামের মধ্যে শুধু এতটুকুই পার্থক্য যে নামাজ ছেড়ে দেয়া। ভাই দোস্ত, এই ফরজ ততক্ষন পর্যন্ত কায়েম হবে না যতক্ষন না এর মোকাবেলায় সমস্ত কায়েনাতের নকশা থেকে বেআছর হয়ে এই ইয়াকীন দিলের মধ্যে আসে যে আল্লহ জাতে আ’লী থেকে ফায়দা হাসিলের মাধ্যম হল আহকামাত। নিজেদের ইয়াকীন সকল সেকেল/ব্যবস্থপনা থেকে আল্লহ আহকামাতের দিকে ফিরাতে হবে। এজন্য সবার আগে এই মশক হবে, নামাজের মতই, আল্লাহর আহকামাতের মতই, সমস্ত কায়েনাতের মোকাবেলায়, সমস্ত আসবাবের মোকাবেলায় দাওয়াত দিতে হবে। ইয়াকীন যখন সেকেল/ব্যবস্থাপনার থেকে আহকামতের দিকে ফিরবে তখন আমাল কায়েম হবে। নামাজ ছেড়ে দেয়া, এমন কি এক রুকন ছেড়ে দেয়া এটাও কুফর ও ইসলামের মধ্যে ফারাক করনেওয়ালা।
বিশেষ ভাবে আল্লহর রাস্তা বের হয়ে চমৎকার সুযোগ নিজের নামাজের উপর মশক করা। নামাজের উপরে সবচেয়ে পয়লা মশক, প্রত্যেক মুমিনের জিম্মায়, নামাজের জাহের ঠিক করা। হাদিসে এসেছে যে নামাজের মধ্যে রুকুর পরে কোমর সোজা করে না, আল্লহ তার নামাজের দিকে তাকিয়েও দেখেন না। পুরা দ্বীন কায়েম হওয়া নামাজের উপর নির্ভরশীল। নামাজের জাহের যদি বিগড়ে যায় দ্বীনের কোন শোবা/অংশই, দ্বীনের কোন হুকুমই কায়েম হবে না। এই জন্য নামাজের সবচেয়ে প্রথম মশক হল নামাজের জাহের দুরস্ত করা, নামজের প্রত্যেক আরকান এতমিনানের সাথে/ধীরস্থীর ভাবে আদায় করা। হুজাইফা রদিয়াল্লহু আ’নহু দামেস্কের মাসজিদে এক লোককে নামাজ পড়তে দেখলেন। সে নামাজের মধ্যে তাড়াহুড়া করতে ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এই নামাজ তুমি কতদিন যাবত পড়তেছ? সে বলল ৪০ বছর যাবত। হুজাইফা রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেন তুমি যদি এই নামাজের উপর মারা যেতে যে নামাজে এতমিনান পয়দা করা হয় নাই, কেয়ামতের দিন মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের আনিত দ্বীনের উপরে তোমাকে উঠানো হত না। কেননা রসুল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীন হল সল্লু কামা রআইতুমুনি উসল্লি, এই ভাবে নামাজ পড় যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখ। ভাই দোস্ত বড় ফিকিরের কথা, এমন না হয় আমরা আজীবন যে নামাযে অভ্যস্ত হলাম তা দ্বীন কায়েমের বদলে দ্বীনের লোকসান হয়। দ্বীনের মধ্যে পরিপুর্ণতা আসা এটা নির্ভর করে নামাজের মধ্যে পরিপুর্ণতা আসার মধ্যে। দেখুন, আমি সবার প্রথম মশক করি, নামাজের জাহের ঠিক করার জন্য। কেননা যে নামাজি নামাজকে নষ্ট করে ওই নামাজ খোদ তাকে বদদোয়া করে, হে আল্লহ তুমি তাকে এই রকম নষ্ট কর যেমন সে আমাকে নষ্ট করছে। হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সব ঈমানওয়ালাকে নিজের মত নামাজ পড়ার জন্য হুকুম দিয়েছেন সল্লু কামা রআইতুমুনি উসল্লি। এই হুকুম কেয়ামত পর্যন্ত সকল ঈমানওয়ালাদের জন্য। আমি আমার নামাজের জাহেরের উপর খুব মশক করতে চাই। রুকুর মধ্যে, সিজদার মধ্যে, কওমার মধ্যে, কায়দার মধ্যে, জলসার মধ্যে। নামাজের পয়লা মশক হল নামাজের জাহের ঠিক করা। দুসরা মশক হল নামাজের মধ্যে আল্লহর ধ্যান আনয়নের জন্য। এই জন্য নামাজের মধ্যে সবার প্রথম সিফাতে এহসান পয়দা করা। নামাজের মধ্যে যেন আল্লাহকে দেখতেছি, এমন নামাজের আছর সমস্ত আমালের উপরেই পরে। নামাজের মধ্যে যে পরিমাণ ধ্যান হবে ওই পরিমাণ আসর, ওই পরিমাণ আল্লহর ধ্যান, আল্লহর নৈকট্য ওই নামাজ দ্বারা হাসিল হবে যার আছর অন্যান্য সকল আমালের উপরে পড়বে। যে ব্যক্তি নামাজের মধ্যে আল্লহ থেকে গাফেল সে তার মেরাজের মধ্যে আল্লহ থেকে গাফেল। যখন সে আল্লহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়েও সে আল্লহ থেকে গাফেল, সে তখন বাকি অন্যান্য আমালের মধ্যে কিভাবে আল্লহর নৈকট্য হাসিল করবে আর কিভাবে ধ্যান পয়দা করবে। এই কারনে আমি নামাজের মধ্যে আল্লহর ধ্যান ও সিফাতে এহসানের মশক করব। এইজন্য নামাজের মধ্যে প্রতিটি রুকনে কমছে কম তিন তিন বার আল্লহর ধ্যান ইচ্ছাকৃত ভাবে হলেও নিয়ে আসা চাই। আল্লহর ধ্যানের সাথে যখন নামাজের মশক হবে, এর দ্বারা আমার ইয়াকীন নামাজের উপর আসবে এবং আল্লহর ধ্যানের দ্বারা আল্লহর নৈকট্য পয়দা হবে। তাই এক মশক হল নামাজের জাহের ঠিক করার জন্য, আর দুই নম্বর মশক হল নামাজের মধ্যে আল্লহর ধ্যান পয়দা করার জন্য। আর তিন নম্বর মশক যেটা নেহায়তই জরুরী, যা দ্বারা সব আমালের জাহের ঠিক করার পরপরই প্রয়োজন তা হল আমি যেন আমার নামাযের দ্বারা আমার সমস্যা সমাধান করনেওয়ালা হয়ে যাই। যখনই কোন হাজত এসে হাজির হয়, আমার কদম যেন প্রথমে নামাজের দিকে উঠে। যখনই কোন হাজত এসে হাজির হয়, আমার কদম যেন প্রথমে আমালের জন্য উঠে, পয়লা খেয়াল আমালের দিকে আসে। এক সাহাবী আরজ করলেন ইয়া রসুলুল্লহ আমি ব্যবসার জন্য বাহরাইন যেতে চাই। রসুলুল্লহ বলেন তুমি শুরুতেই দুই রাকাত নামাজ পরে নাও। হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ সাহাবাদের আমালের উপর কামিয়াবীর ইয়াকীনের উপর উঠাতেন। যেকোন সাহাবাহদের শানে যেকোন গায়েবী মদদের ওয়াকেয়াতের কথা শুনা যায় তার সবগুলোরই আসবাব ছিল এই যে তারা আমালকে ইয়াকীনের উপর নিয়ে এসেছিলেন। উনারা আল্লহর খাজানার সাথে এই পরিমান সম্পর্ক পয়দা করেছিলেন যে, আল্লহ তাদেরকে আসবাব থেকে মুস্তাগনী/বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন আবার আসবাব অনেক বেশি দিয়েছিলেন। ভাই দোস্ত, আমি সবার প্রথম নিজের আমালের দ্বারা কামিয়াবীর মশক করতে চাই। হাজাত হলে আসবাব মুয়াখখার/পিছনে করব, আমালকে মুকাদ্দাম/অগ্রাধিকার করব। কোন হাজাতের সমুক্ষীন হলে সাথে সাথে সবার প্রথমতো আসবাবের খেয়ালই আসে। এই রোগের কি দাওয়া, এই মুকাদ্দমার জন্য কোন উকিল, এই জরুরতের জন্য কোন আসবাব। আমরাতো হাজাতের জন্য আসবাবকেই নির্ধারণ করে নিয়েছি। এই জন্যই কোন হাজাত আসলে আমার খেয়াল আসবাবের দিকে যায়। আমি এতে অভ্যস্ত হয়ে যাব যে হাজাতের মোকাবেলায় আমার খেয়াল আমালের দিকে যায়, আমার ভরসা আল্লহর দিকে যায়। এই পরিমাণ মশক করা দরকার যাতে আমাল ইয়াকীনের পর্যায়ে পৌছে। এই তিন লাইনের মশকের দ্বারা আমি নামাজের মধ্যে এখলাস হাসিল করতে চাই। নামাজের এখলাস হল এই, নামাজ তাকে খারাপ কাজ থেকে ফিরায়। ওলামাকেরাম লিখেন ওই নামাজ কায়েম নামাজ, যে নামাজ তাকে সমস্ত খারাপি থেকে ফিরায়। যে ব্যক্তির নামাজ তাকে খারাপ কাজ থেক ফিরায় না ইবনে আব্বাস, ইবনে মাসউদ রদিয়াল্লহু আ’নহুমা দুইও সাহাবী বর্ণনা করেন এই নামাজ তাকে আল্লহ থেকে দুরবর্তী করে দেয়। অথচ নামাজ ছিল আল্লহ তায়ালার নৈকট্য হাসিলের জন্য। ভাই দোস্ত, নামাজের এখলাস হল নামাজ খারাপী থেকে ফিরায়, যেমন কালেমার এখলাস হল এই কালেমা হারাম থেকে ফিরায়। আমাদের এইদিকে খুবই মনযোগ দেয়া দরকার যেন এটা না হয় যে কাজের তাকাদা, দুনিয়াবী তাকাদা আমাদের নামাজের মধ্যে অস্থিরতা, তাড়াহুড়া পয়দা করে দিল। খুব মনযোগ দেয়া দরকার যে আমাদের নামাজের এতমিনান/সুস্থিরতা আছে নাকি নাই। এটা বড় শক্ত কথা যে, যে ব্যক্তির নামাজের মধ্যে রুকুর থেকে উঠার পর কোমর সোজা না করা হয় আল্লাহ তার নামাজের দিকে ফিরেও তাকান না। যে নামাজ খারাপ ভাবে পড়ে ওই নামাজ কে তার মুখের উপর পুরানো কাপড়ের মত মারা হয়। এই জন্য এই কথার উপর বহুত মনযোগ দেয়া চাই, আমি ছয় নম্বরের মধ্যে একেকটা সিফাতের উপর এর তরিকার উপর মশক করি কিনা যেভাবে এই সিফাতগুলো রসুল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসের মধ্যে বর্ণনা করেছেন।
ভাই দোস্ত, কোন আমালই আমাল হিসেবে গন্য হবেনা যতক্ষন পর্যন্ত না আল্লাহওয়ালা ইলমের উপর কামিয়াবী ইয়াকীন পয়দা না হয়। এই জামানার সবচেয়ে জিহালত হল সব জিনিসকেই ইলম হিসেবে ধরে নেয়া। ইলম স্রেফ ইহাই যে আমার কাছে আমার রব মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের তরিকার উপর কি চাইতেছেন। কেবল মাত্র ইহাই ইলম। এছাড়া যা কিছু আছে সব ফুনুন/বিদ্যা/শাস্ত্র। আল্লহওয়ালা ইলমের মধ্যে কামিয়াবীর ইয়াকীন পয়দা করা চাই। আল্লহর সব ওয়াদা আল্লহওয়ালা ইলমের সাথে। দুনিয়াবী ফুনুনের সাথে আল্লহতায়’লার কোন ওয়াদাই নাই। মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের তরিকার উপর আল্লাহ যা চান কেবল ওইটাই ইলম। কেবল ইহাকেই ইলম বলে। সব জিনিসকেই ইলম মনে করার কারনে মানুষ আজ দুনিয়া শিখতেছে ইলম মনে করে, শাস্ত্রীয় বিদ্যা শিখতেছে ইলম মনে করে। ইলম কেবল এটাই যে আমার কাছে আমার রব মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের তরিকার উপর কি চাইতেছেন। আমি দাওয়াতের মধ্যমে ইলমের মধ্যেও এখলাস চাইতেছি। হাদিসে এসেছে ইলম দুই রকম, জবানের ইলম আর দিলের ইলম। জবানের ইলম মানুষের জন্য মুসিবত হয়ে দাঁড়াবে, সে জানত আল্লহ কি চাতেছেন কিন্তু ওর উপর আমাল করত না। আরেক হল দিলের ইলম। দিলের ইলম আদামের সন্তানদের ফায়দা পৌছাবে। এই ইলম তার দিলের মধ্যে আল্লহর ভয়, আগ্রহ এবং সম্পর্ক পয়দা করে। তাই হাদিসে এসেছে ইলম দুই রকম, জবানের এবং দিলের। ভাই দোস্ত আমি দিলের ইলম চাই। যাতে আমার দিলে আল্লহর ভয় ও আশা পয়দা হয়। অথচ এই জামানায় বড় জিহালত এইটা যে আমরা সব শেখার জিনিসকেই ইলম মনে করে হাসিল করা শুরু করেছি। ইলম শুধু মাত্র উহাই যা আল্লহ রব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কেয়ামত পর্যন্ত আনেওয়ালা মানুষের কামিয়াবীর জন্য যে আহকামাত নিয়ে এসেছিলেন। কেবল মাত্র এই শিক্ষাই ইলম। গায়েরের ফুনুনের উপর ফকর করা এটা কুফুরী মেজাজ। আম্বিয়া কেরাম আল্লহ থেকে যে আহকামাতের ইলম নিয়ে এসেছিলেন, কওম ওই ইলম থেকে ফায়দা কুড়াইছে। ভাই দোস্ত, আজ মুসল্মান দুনিয়াবী ফুনুনের উপর ফকর করতে লেগে গেছে। অথচ দুনিয়াবী ফুনুনের উপর ফকর করা এটা কুফুরী মেজাজ। এটা কুফুরী মেজাজ যে দুনিয়াবী ফুনুনের উপরে ফকর করা। মুসলমানের ফকর করার জিনিস হল আল্লহর ইলম যা মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লহর তরফ থেকে নিয়ে এসেছিলেন কামিয়াবীর জন্য। আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত পরিষ্কার ভাবে কুরআন এবং হাদিসে মধ্যে বলে দিয়েছেন ইলম স্রেফ ওইটাই যা আল্লাহ আমার কাছে রসুলুল্লহের তরিকার উপর চাইতেছেন। হযরত বলতেন (ইউসুফ রহিমাহুল্লহ) এই কথা যাচাই করতে লাগা যে আমার রব এই মুহুর্তে আমার কাছে কি চাইতেছেন এটাকেই ইলমের মধ্যে লাগা বুঝায়। আল্লহর চাওয়া পুরা করা, হুকুম পুরা করার তাহকিক করা এটাই ইলমের মধ্যে লাগা। দুনিয়াতে আজ এই জিহালত আম হয়ে গেছে, ইলম মনে করে আজ মানুষ দুমিয়া শিখতেছে, আরও আফসোসের কথা হল, কেউ কেউ দুনিয়াবী ফুনুনের উপর এই পরিমান এহতেসাব/নেকীর আগ্রহ/পাওয়ার ইয়াকীন করে যে এহতেসাব কিনা আল্লহর ইলমের জন্য চাওয়া হইতেছিল। কিন্তু আল্লহ তায়’লা যত ওয়াদা করছেন, ওই সকল ওয়াদাই কেবল ওই ইলমের সাথে করেছেন যা দিয়ে মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে পাঠানো হয়ে ছিল। উমার রদিয়াল্লহু আ’নহু তাওরাতে ইলম হাসিল করেছিলেন। অথচ উনি ছিলেন ওই ব্যক্তি যিনি কিনা সকল ইলম হাসিল করনেওয়ালা ছিলেন, শারিয়াতে, সুন্নতের, কুরআনের। বড় উচু দরজার আলেম। রসুলুল্লহ বলেন, আমার পরে যদি কেউ নবী হত তবে উমার হত। এত উচু মাপের লোক। শারিয়াতে, সুন্নতের সকল উলুম হাসিল করা শেষ করে, তাওরাত পড়লেন নিজের ইলম বাড়ানোর জন্য। হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পরবর্তীতে হাযির হয়েছেন হাতে তাওরাতের কয়েকটি পৃষ্ঠা হাতে নিয়ে। উনি জিজ্ঞেস করলেন উমার তোমার হাতে কি ওইটা। উমার রদিয়াল্লহু আ’নহু বললেন ইয়া রসুলুল্লহ আমি আমার ইলম বাড়ানোর জন্য তাওরাত পড়েছি। এই কথার উপর রসুলসল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এতো রাগ করলেন, এতো রাগ কলেন যে, মিম্বরের উপর তাশরীফ রাখলেন। সমস্ত সাহাবাহ কেরাম জড়ো হয়ে গেলেন। আনসাররা তো রসুল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের রাগ দেখে তলোয়ার নিয়েই চলে আসছেন। কে রসুল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে রাগালো। কোন জিনিস রসুল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দিয়েছিল, রসুল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সব রাগ ছিল উমার রদিয়াল্লহু আ’নহুর উপরে। আমি যে ইলম নিয়ে এসেছি, এটা হাসিল করার পরও উমার তাওরাত পড়েছে, কেন আমি যা নিয়ে আসেছি তা কি যথেষ্ট নয়? রসুল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন আজ যদি মুসা আ’লাইহি ওয়া সাল্লামও যদি চলে আসেন, উনার জন্যও কোন রাস্তা নেই আমার শারিয়াত ছাড়া। তোমরা যদি তার শারিয়াতের উপর আমাল কর তবে গোমড়া হয়ে যাবে। আন্দাজ করুন ভাই, উমার রদিয়াল্লহু আ’নহুয়ের মত সাহাবী, দ্বীনের সকল উলুম হাসিল করার পরে উনি তাওরাত পড়েছেন, তার উপরেই আল্লাহর রসুল এত রাগ করেছেন। ভাই দোস্ত, সেখানে আমরা দুনিয়াবী ফুনুন সমুহ ইলম মনে করে খুব হাসিল করতেছি অথচ আসল ইলমের ব্যপারে একে বারেই জাহেল রইলাম, আমাদের উপর আল্লহর রসুল সাল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কি পরিমান রাগ করবেন কিয়ামতের দিন! এই জন্য খোদ নিজে এবং নিজের বাচ্চাদেরকে ইলমে দ্বীন পড়ান। ইলমে দ্বীন ফরজ, দুনিয়াবী ফুনুন ফরজ নয়। আমি ইহা রুখতেছি তাও নয়। তবে ইহা হাসিল করার সম্পর্কতো কেবল মাত্র দুনিয়াবী জরুরতের সাথে। এর সাথে আল্লহতায়’লার কোন ওয়াদা নেই। দুনিয়াবী ফুনুনের কোন ওয়াদা নেই। আল্লাহ ত্য’লার সব ওয়াদা আল্লহওয়ালা ইলমের উপর। দুই রকমের ইলম আছে। এক ইলম মাসায়েলের আরেক ইলম ফাযায়েলের। দুই ধরনের ইলমই হাসিল করতে হবে। ফাযায়েলে ইলম ছাড়া আমালের আজর মিলবে না, এহতেসাব পয়দা হবে না, আমালের আগ্রহও পয়দা হবে না। এবং মাসায়েলের ইলম ছাড়া আমাল কাবিল হবেনা, আমাল কায়েম হবে না, আমাল কবুলও হবে না। দুইও ইলম, ফাযায়েল ও মাসায়েল, দুইও ইলম হাসিল করা লাজিম/আবশ্যক। এছাড়া কোন আমাল কবুল হবে না। আমালের যে আজর মিলবে তা কেবল আমালের উপর এহতেসাবের ভিত্তিতেই মিলবে। সব আমালকে ওয়াদার ইয়াকীনের উপরে উঠানো এবং সব আমালকে মাসায়েলের তরিকার উপর উঠানো। আমালের কবুলিয়াতের জন্য যেমন এখলাস শর্ত, ফাযায়েল শর্ত, একই রকম ভাবে আমালকে মাসায়েলের তরিকার উপরে উঠানোও শর্ত। প্রত্যেক আমালকে মাসায়েলের উপরে নিয়ে আসা, প্রত্যেক আমালকে তার তরিকার উপরে নিয়ে আসা।
ফাযায়েলের ইলম, আল্লাহর ফাযায়েলই আল্লাহর ওয়াদা। সব আমালকে ওয়াদার ইয়াকীনের উপরে নিয়ে আসার জন্যই ফাযায়েলের তালীম। ভাই দোস্ত, তালীমের সময় সুন্নতের তরিকার উপরে আমাল করুন। মাসনুন তরিকা হল হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন কথা বলতেন তিন বার বলতেন, যাতে কিনা লোকজন কথা বুঝতে পারে। তালীম করনেওয়ালা তালীমের মাঝে মাঝে মজমাকে মুতাওয়াজ্জু/মযোগী করবেন, মজমার দিকে খেয়াল করবেন। এবং এক এক হাদিস তিন তিন বার পড়বেন। আমি আরজ করতেছি যদি তালীম করনেওয়ালা আলীম হন তবে আরাবী এবারত অবশ্যই একবার পড়বেন। হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের আলফাজ/শব্দের মধ্যে যে নূর আছে তা আর কোন আলফাজের মধ্যে থাকা সম্ভব নয়। সাহাবাহ কেরাম যখন হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কোন হাদিস নকল করতেন তখন আলফাজ সহ নকল করার ব্যপারে এহতেমাম/গুরুত্বের সাথে করতেন। হাদিসের আলফাজ সমুহ খুবই মনযোগের সাথে, ধ্যানের সাথে, আদাবের সাথে অযুর সাথে তালীমে বসে শোনার এহতেমাম করুন। হযরত বলতেন (সা’দ সাব দামাত বারাকাতুহুম সাধরণতঃ হযরত বলতে মাওলানা ইউসুফ রহিমাহুল্লহ কে বুঝান) যে পরিমান আদাবের অনুসরণ হবে ওই পরিমাণ আমালের যোগ্যতা পয়দা হবে। যে পরিমাণ ইলমের নূর হাসিল হবে ওই পরিমাণ আমালের যোগ্যতা পয়দা হবে। এজন্য তালীমের মধ্যে অযু সহকারে বসুন, টেক লাগিয়ে বসবেন না, নিজেরা কথা বলবেন না। এবং খুবই মনযোগের সাথে, এই কথা যে, আল্লাহর রসুল হাজির নেই কিন্তু, সেই ওয়াদা, সেই উম্মত, সেই আমাল। এবং আল্লাহ রব্বুল ইজ্জাত ওয়াদা পুরা করনেওয়ালা। আমাদের ফাযায়েলের তালীমের বুনিয়াদী মাকসাদ হল প্রত্যেক আমালের সময় তার ফজিলত স্মরণ করা যে ফযিলত আমরা তালীমে শুনি। যেকোন আমাল করুন, ছোট বা বড়, ২৪ ঘন্টার মধ্যে যে কোন আমাল, ওই আমালের সময় ধ্যান করুন এই আমালের কি ফজিলত আছে। ফাযায়েলের এস্তেহজারের সাথে আমাল করার মশক করুন। (এস্তেহজার হল কোন আমাল করার সময় ওই আমালের সাথে আল্লহ তায়’লার যে ওয়াদা আছে তা স্মরণ করা এবং এই ইয়াকীন করা যে এই ওয়াদা পুরা হবেই) ফাযায়েলের এস্তেহজারের সাথে আমালের মশক করার এইটাই মতলব/উদ্দেশ্য। তালীম শুধু তবলীগের একটি আমাল হিসেবে নয়। তালীম এইজন্য যে, ঈমানওয়ালা যে কোন আমাল করে ওই আমালের সাথে আল্লহ কি দেয়ার ওয়াদা করেছেন, ওই ওয়াদার উপর ইয়াকীনের সাথে আমাল যাতে হয়। এইজন্য ফাযায়েলের তালীমের এই মাকসাদ, আমাল, হযরত বলতেন, যদি মাসজিদে একা একা বসে অপেক্ষা কর, ফাযায়েলের মুরাকাবা কর যে, সকালের তালীমে নামাজের জন্য অপেক্ষা করার কি হাদিস শুনেছি, সকালের তালীমে তাকবীরে উলা সম্পর্কে কি হাদিস শুনেছি, সকালের তালীমে ইমামের আমিনের সাথে, ফিরিশতাদের আমিনের সাথে আমার আমিন মিলে গেলে মাগফিরাতের কি ওয়াদা শুনেছি। এক এক অবস্থায়, প্রতি কদমে ফাযায়েলের উপর যেন আমি এস্তেহযার ও ধ্যান রাখনেওয়ালা হয়ে যাই। ইহাই তালীমের বুনিয়াদী মাকসাদ। তালীমের সাথে এক মেহনতও হওয়া চাই। মাসজিদের মধ্যে তালীমে জারী থাকবে, আর মাসজিদের বাইরে মোলাকাতের মাধ্যমে প্রত্যেক ঈমানওয়ালা কে মাসজিদে নিয়ে আসতে থাকা। এ তালীমী গাস্ত আল্লহর রাস্তা বের হয়ে করতে হবে, এমন কি নিজ মাকামে/মহল্লায়ও হবে। দেখুন ভাই, খুব ধ্যানের সাথে শুনে নেন, মাসজিদওয়ার জামাতের কাজই এইটা যে মাসজিদের মধ্যে দাওয়াতের আমাল করতে থাকবে, দেখা সাক্ষাতের মাধ্যমে প্রত্যেক ঈমানওয়ালাকে তার নকশা থেকে বের করে নগদ মাসজিদের মাহলের/পরিবেশের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য নরমিয়াতের সাথে, তরগীবের সাথে চেষ্টা করতে থাকবে। যে মাসজিদে আসার জন্য তৈরি হয় তার কাছ থেকে সময় জেনে নেয়া কতক্ষনের জন্য আস্তে পারবে। প্রত্যেক ঈমানওয়ালার কাছেই মাসজিদের জন্য সময় চেয়ে নিই। কেননা আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত শতভাগ ঈমানওয়ালাকেই মাসজিদ আবাদকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আমি দাওয়াত প্রত্যেক ঈমানদিব, প্রত্যেক তবকাকে প্রত্যেক মানুষকে। সবাই কে দাওয়াত দিয়ে মাসজিদের মাহলে নিয়ে আসুন। দেখুন মাসজিদে নববীতে তালীম চলতে থাকত আর আবু হুরাইরাহ রদিয়াল্লহু আ’নহু মদিনার বাজারে গাস্ত করতে চলে যেতেন। সকল মুহাদ্দিসিনের ইমাম এক এক জন লোকের কাছে যেতেন, এক এক জন দোকানদারের কাছে যেতেন। আর বলতেন ভাই দোকানদার কিসে তোমাকে অক্ষম করে দিল, যে আল্লহর নবীর মিরাস বন্টন হইতেছে মাসজিদে, ইলম শিখানো হইতেছে আর তুমি বাজারে? এই ভাবে আমি গাস্তের মাধ্যমে, হ্যা, আমার গাস্ত এইজন্যই, তালীমী গাস্ত, আমার গাস্ত আমার দিলে আল্লহর ওয়াদার ইয়াকীন পয়দা করে। গাস্ততো আমি অন্যের উপর করি, মোলাকাত করি মাসজিদে নিয়ে আসার জন্য, কিন্তু আমার এই গাস্ত খোদ নিজের দিলের মধ্যে আল্লহর ওয়াদার ইয়াকীন পয়দা করার জন্য যা মাসজিদে ফাযায়েলের তালীমে শুনেছি। এইভাবে আল্লহর রাস্তায় বের হয়ে আমরা সকাল বিকাল দুইও ওয়াক্ত ফাযায়েলের তালীম করব। দেখুন ভাই ছয় নম্বরের সিফাত বুঝার জন্য, এই জাতীয় হাদিস সমুহ শেখার জন্য, মুন্তাখাব থেকে পড়া করা নেহায়তই জরুরী। এই দুইও কিতাব আমরা পুরা পুরি এহতেমাম করব। যাতে আমার মধ্যে ছয় নম্বরের হাকিকত ও আহমিয়াত/গুরুত্ব পয়দা হয়ে যায়। হযরত (ইউসুফ রহিমাহুল্লহ) এই জন্যই হাদিসগুলোকে জমা করেছিলেন যাতে এই সিফাত সমুহের আহমিয়াত, এর হাকিকত আমাদের মধ্যে বসে। ছয় নম্বর, এতো এক হাকিকত। এটাতো কারো বাতানো বাণী নয়। আমরাতো ছয় নম্বর হাদিসের রোশনীর মাধ্যমে বয়ান করব। যতে প্রত্যেক সিফাতের হাকিকত বুঝে এসে যায়। হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমান থেকে দ্বীনের মেহনত পর্যন্ত সকল সিফাতের হাকিকত হাদিসের মধ্যে বয়ান করেছেন। এই জন্য আমরা খুব মশক করব, যাতে প্রত্যেকটা নম্বর আমাদের বুঝে আসে, হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমানে কামেল কোনটাকে বলেছেন, কোন নামাজকে কামেল নামাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, ইলম ও জিকির কোন জিনিস বলেছেন। এই ভাবে আমরা এহতেমাম করব তালীমের। তালীমের সাথে তালীমী গাস্ত করুন, নিজের মধ্যে আল্লহর ওয়াদার ইয়াকীন পয়দা করার জন্য। ঘরের মধ্যে, প্রতি ঘরে তালীমের এহতেমাম হওয়া চাই। মহিলারাও তালীমের এহতেমাম করবে। তালীমের সাথে ছয় সিফাতের মুজাকারা করা ইহা প্রতিদিনকার ঘরের তালীমের অবিচ্ছেদ্য ও অত্যাবশ্যকীয় অংশ। দাওয়াত ও তালীম দুইটাই একসাথে আবশ্যক। তালীম হবে এবং তালীমের পরে ঘরে প্রতিদিন এক এক জন মহিলা ছয় সিফাতের দাওয়াত দিবে ভিতরের জযবাকে ইয়াকীনে রূপ দেয়ার জন্য এবং ছয় সিফাতের দাওয়াতের জরিয়ার সব মহিলা ঘরকে তৈরি করা আল্লাহর রাস্তায় বের হবার জন্য। এই ভাবে আল্লহর রাস্তায় বের হয়ে এবং নিজের মাকামে মাসজিদের মধ্যে তালীমের এহতেমাম করা। সাথে সাথে মোলাকাতের জন্য বের হয়ে লোকজনকে নগদ নগদ মাসজিদে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করা। আমি আরজ করেছিলাম হযরত আবু হুরাইরাহ রদিয়াল্লহু আ’নহু মাদিনার বাজারে গিয়ে তালীমী গাস্ত করতেন এবং বাজারওয়ালাদের নগদ মাসজিদে তালীমের হালকায় বসাতেন। মাসজিদের জন্য জরুরী এক এক মাসজিদে মাসজিদওয়ার জামাত বানানো। কমছে কম আটজন সাথি যদি মাসজিদে থাকে তবে মাসজিদের মধ্যে তালীম ও ঈমানের হালকা কায়েম করবেন আর কিছু সাথি মোলাকাতের মাধ্যমে প্রত্যেক ঈমানওয়ালাকে নগদ মাসজিদে আনার চেষ্টা করবেন। দেখুন ভাই, কথাটা স্মরন রাখবেন, আমাদের মোলাকাতের আসল মাকসাদ মাসজিদের মাহলের মধ্যে নিয়ে আসা। আমরা মাসজিদের বাইরে অনেকেই দাওয়াত দিব কিন্তু এই দাওয়াত মাসজিদে নিয়ে আসার জন্য। প্রাথমিক চেষ্টা ইহাই থাকবে যে, যার সাথে দেখা করি তিনি যেন কিছু না কিছু সময় মাসজিদে দেন। আন্দাজ করুন, মাসজিদের মাহল আর বাজারের মাহল। আল্লহর কাছে সব চেয়ে পছন্দের পরিবেশ হল মাসজিদের মাহল। ফিরিশতাদের মাহল, ইবাদতের মাহল, এস্তেমায়ী তাশকীলের মাহল, ঈমানের হালকা এবং তালীমের হালকার মাধ্যমে আল্লহর ওয়াদা সমুহ আলোচনার মাহল, এই জন্য মোলাকাত করে করে মাসজিদের মাহলে নিয়ে আসা চাই। আমাদের মোলাকাতের জ্রিয়ার যে কেউ মাসজিদের দিকে কদম উঠাবে তার দিকে আল্লহর রহমত দৌড়ে আসবে তার দিকে। মাওলানা ইলিয়াস রহমাতুল্লহ বলতেন যে কদম তোমার উঠবে তাতো আল্লহর দিকেই উঠবে। আল্লাহ নিজেই ফরমান হাদিসে কুদসীতে যে আমার দিকে হেটে আসে আমার রহমত তার দিকে দৌড়ে যায়। দেখুন আমাদের মোলাকাতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার মাহলে থেকে দাওয়াতের জরিয়ায় নরমিয়াতের সাথে, মুহব্বাতের সাথে তার মাহল থেকে বের করে এনে আমাদের মাহলে নিয়ে আসা চাই। এরকম মেজাজ না হয় যে দোকানদারতো দোকানের মধ্যে রেখে আসি। চেষ্টা করুন তাকে তার পরিবেশ থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য নগদ আসেতো খুবই ভাল যদি আসতে না চায় মুখতাসার/অল্প কথায় কিছু আলাপ করুন আর জিজ্ঞেস করুন কখন মাসজিদে সময় দিবে। দেখুন মাসজিদের জন্য সব ঈমানওয়ালার কাছে থেকেই সময় চাওয়া দরকার চাই আল্লহর রাস্তায় বের হয়ে মেহনত করি বা নিজের মাকামে মেহনত করি। প্রত্যেক ঈমানওয়ালার কাছে থেকেই সময় চাওয়া দরকার চাই। যদি ঈমানওয়ালা মাসজিদে সময় দেন তবে তার মধ্যে তবলীগের সিফাত পয়দা হয়ে যাবে। তার মধ্যে সিফাতে ঈমানিয়াত পয়দা হয়ে যাবে। আল্লহ নিজেই ফরমান, হাদিসে আছে, যাকে মাসজিদে যেতে দেখ তার ঈমানদারীর ব্যপারে সাক্ষ্য দাও। খুব ফাযায়েল শুনান মাসজিদ আবাদীর। মাসজিদ আবাদকারী ব্যপারে পাচ ওয়াদা হাদিসে এসেছে — আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত তার উপর নিজ রহমত নাজিল করেন, আল্লাহ তার আরাম পৌছাবেন, আল্লহ তার উপর রাজি হয়ে যাবেন, আল্লহ মাসজিদ আবাদকারীকে পুলসিরাত বিজলীর মত পার করে দিবেন, আল্লহ মাসজিদ আবাদকারীকে জান্নাতে দাখিল করবেন। এই পাচ ওয়াদা হাদিসে আছে। আর তিন ওয়াদার কথা কুরআনে এসেছে — আল্লাহ রব্বুল ইজ্জাত তার দিল থেকে আল্লহর গায়েরের ভয় বের করে দিবেন। এই ওয়াদা মাসজিদ আবাদকারির ব্যপারে। আল্লাহ এমন লোকদের হেদায়েত দিবেন। কোন মাসজিদ আবাদকারী যদি দুনিয়াবী কোন তাকাদায় মাসজিদ থেকে বের হন তবে ফিরিশতারা তার দুনিয়াবী কাজে সাহায্য করেন। ভাই দোস্ত আমাদের মোলাকাতের আসল হল, ঘরের মাহলের মধ্যে যে তাশকীল হয় না, এই তাশকীল আসবাবের ও গাফলতের মাহলে হয়। যদি ওই মাহল থেকে বের করে তাশকীল করা হয়, কেউ যদি চার মাসের জন্য খাড়া হয় সকল মহল্লা বাসি দেখবে যে আমাদের মহল্লা থেকে এক লোক চার মাসের জন্য খাড়া হয়েছে। এতে অন্যের জযবাও বনবে। তাশকীল এস্তেমায়ী মাহল চায়। এই জন্যপি আমি আরজ করতেছি যে কোন জায়গায়, মহল্লায় বা আল্লাহর রাস্তায়, আমরা যে মোলাকাত করি এর দ্বারা মাসজিদে নিয়ে আসা চাই। ঈমানওয়ালাদের তার নিজ মাহল থেকে বের করুন দাওয়াতের জরিয়ায় এবং মাসজিদের পরিবেশে নিয়ে আছে ঈমানী হালকাতে বসিয়ে গায়েবের কথা খুব আলোচনা করুন এবং তালীমের হালকায় বসিয়ে খুব আল্লহর ওয়াদার কথা শুনান এবং মাসজিদের মাহলে নিয়ে এসে তাকে জিন্দেগীর রুখ বদলানোর জন্য তাশকীল করুন। চার মাসের জন্য তৈরী করুন, কমছে কম চিল্লার জন্য তৈরি করুন অন্তত রোজানার আমালের জন্য তৈরি করুন। এটাতো খুবই জরুরী, যে মাসজিদে আসে তাকে আমাদের মাসজিদের সাথীদের সাথে পরিচিত করাই, কিছু দাওয়াত দেয়াই। নতুন নতুন সাথী দাওয়াত দিবে নতুন নতুন সাথী আল্লাহর রাস্তায় বের করবে এটা প্রতি মাসজিদওয়ার জামাতের কাজ। নিজের মধ্যে দাওয়াতের আগ্রহ পয়দা করুন। দেখুন ভাই, রসুল সল্লাল্লহু আ’লাইহি সাল্লাম কাউকেই ছোট মর্যাদার মনে করেননি। আমাদের দাওয়াত উমুমী ভাবে হবে। মাসজিদওয়ার জামাত শুধু জামাতের সাথীদের কাছে যাবে তা নয় বরং সকল তবকার মধ্যে নিজের সাথে নতুন নতুন সাথী তৈরি করবে রোজানা মেহনতের জন্য। এই জন্য প্রত্যেক ঈমানওয়ালাকেই আমাদের দাওয়াতের আওতাভুক্ত করব। এজন্য আমাদের মোলাকাত আমাদের গাস্তের মাকসাদ হল মাসজিদের মাহলে নিয়ে আসা যাতে তাশকীলের এস্তেমায়ী মাহল কায়েম হয়।
আসল যিকির হল আল্লাহর ধ্যান। আসলে ভিতরের গাফলত দূর করার জন্য আল্লাহর যিকির। যত গুনাহ বা খারাপ কাজ মানুষের থেকে বের হয় ওগুলো স্রেফ ভিতরের গাফলতের কারনেই হয়। একই ভাবে যত নেক আমাল মানুষ করে ওগুলো ভিতরে আল্লাহর ধ্যান আছে বলেই করে। আল্লাহর যিকির ভিতরের গাফলত দূর করার জন্যই। দেখুন যিকির ওযু সহকারে করতে হয়। যিকিরের জন্য ওযু করতে হয়, চুপে চুপে স্মরন করার কোনা তালাশ করা। আল্লাহর ধ্যান সহকারে এক তাসবীহ এই কালেমা সুবহানাল্লহ আলহামদুলিল্লাহ ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লহু আল্লহু আকবার ওয়া লা-হাওলা ওয়ালা-কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহিল আ’লিয়্যিল আযিম, এক তাসবীহ দুরুদ শরীফ ও এক তাসবীহ এস্তেগফার। সকাল বিকাল আল্লাহর ধ্যান জমা করার জন্য সব কিছুর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তানহাইয়ের কোনা (এমন নির্জন জায়গা যেখানে আল্লহকে চুপে চুপে স্মরন করা যায়) খুজে নিয়ে আল্লহ যিকির তাবাচ্ছুল/খুবই করা চাই। আল্লাহর ধ্যানের সাথেই যিকির করা চাই। আমরাতো কথা বলতে বলতে তাসবীহ পুরা করে নিই, চলতে চলতে তাসবিহ পুরা করে নিই। ভাই দোস্ত, অভ্যাস পুরা করা আসল নয়, আল্লাহর ধ্যান পয়দা করাই আসল। আল্লাহর ধ্যানের সাথে দুইবার তিসরা কালেমা/কালেমা সুওম এবং মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লামের যে এহসানাত/উপকার সমুহ আমাদের উপর আছে তা স্মরন করে দুরুদ শরীফ পড়া যে, হে আল্লাহ তুমি মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এই পরিমান রহমত নাযিল কর যে পরিমান রহমত তার উপর নাযিল হওয়া তার হক এবং নিজের গুনাহের উপর অনুতাপ, তওবা এবং আল্লহর সামনে লজ্জিত হয়ে এস্তেগফার করার এহতেমাম করা। যিকিরতো নিজের গুনাহের উপর অনুতপ্ত হয়ে এস্তেগফার। এসময় আল্লহ যে গফফার এটা খুব স্মরন রাখা। এইজন্য ভাই দোস্ত দেখুন, আল্লহর ধ্যানের সাথে যিকিরের মশক করা। ঈসা আলাইহি ওয়া সালাম বলতেন যখন যিকির কর তখন দিল কে জবানের অনুগত কর। মাওলানা ইলিয়াস রহমাতুল্লাহ আ’লাইহি বলতেন আল্লহর ধ্যান ব্যতিত যিকির করা গাফলত পয়দা করে, অলসতা পয়দা করে। আল্লহর ধ্যান ব্যতিত যিকির করা ভিতরে অলসতা পয়দা করে। কারণ আল্লহর ধ্যান তো ছিল ভিতরের গাফলত দূর করার জন্য। কিন্তু আল্লাহর যিকির যদি আল্লহর ধ্যান ছাড়া হয় তাহলে অন্তরের গাফলত তো দূর হবে না। আমরা এই রকম গাফলতের সাথে যিকির করাকেই যথেষ্ট মনে করতেছি। যিকিরতো আল্লহর ধ্যান হাসিল করার মাধ্যমে আল্লহর সাথে সম্পর্ক পয়দা করার জন্য। এই জন্য আমরা যিকির অযুর সাথে করে তানহাইএর কোনা তালাশ করে করব। সব কিছু থেকে বিছিন্ন হয়ে আল্লহর স্মরণে যিকির করা।  অসকু রিসমা রব্বিকা অতা বাত্তাল ইলাহি তাবতীলা। আল্লহর যিকির কর আল্লহর গায়ের সব কিছু থেকে বিছিন্ন হয়ে। আসলে যিকির দ্বারা ২৪ ঘন্টা আল্লহর ধ্যান জমানোই যিকিরের মাকসাদ। এইজন্য হযরত উমার রদিয়াল্লাহু আ’নহু বলতেন যে আল্লহর এতায়াত করে সেই যাকের। প্রত্যেক এতায়াত করনেওয়ালাই যাকের। সব ধরনের নেক আল্লহর ধ্যানের কারনের হয়, সব ধরণের গুনাহ আল্লহ থেকে গাফলতির কারণেই হয়। আল্লহকে স্মরণের মধ্যে রাখাই আসল। আমরা আল্লহকে স্মরণের মধ্যে রাখার জন্য নিজেদের মাকামে এবং আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে আল্লহর যিকির আল্লহর ধ্যানে করার জন্য খুব মশক করব।
লা-হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ। ইহা আল্লহর খাস খাজানা থেকে বের হওয়া এক কালেমা। এটা বাকেহাতে সলেহাত/নেক লোকদের তরিকা। এক হাদিসে এসেছে লা-হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ পড়া এটা মানুষের ৯৯টা লোকসানের দরজা বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে সব চেয়ে নিচু দরজার লোকসান বা রোগ হল, কষ্ট ও দুশ্চিন্তা। এইজন্য ভাই দোস্ত, লা-হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ আল্লহর খাস খাজানা থেকে বের হওয়া এক কালেমা। এইজন্য আমরা এইভাবে যিকিরের মশক করব যে, কোন যিকিরের উপর আল্লহর কি ওয়াদা তার ইয়াকীনের সাথে যিকির করব। আল্লহর যাতের সাথে যে পরিমান তায়াল্লুক/সম্পর্ক পয়দা হবে ওই পরিমান আমার সাথে আল্লহ তায়’লার মাখলুকদের সাথে মোয়ামেলাত ঠিক হবে। যে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ঠিক করবে, আল্লহ তার সাথে অন্য মাখলুকের সম্পর্ক ঠিক করে দিবেন। যে আল্লহর হকই নষ্ট করে সে আল্লহ তায়’লাত এতায়াতের ক্ষেত্রে মাখলুকের হক কিভাবে আদায় করবে? ভাই দোস্ত, আমরা একরামের জরিয়ায় আল্লাহর মাখলুক, আল্লহর বান্দার হুকুক আদায়ের মশক করব। আল্লহর রাস্তায় বের হয়ে এই মশক কিভাবে হবে? আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে এই মশক খেদমতের মাধ্যমে হবে। নিজেই নেজেকে খেদমতে লাগাই। নিজে থেকেই বিভিন্ন কাজে জিম্মায় লই, ভারি পাত্র বহন করব, পায়খানা সাফ করব। (?) আবু বকর সিদ্দিক রদিয়াল্লহু আ’নহু মাদিনার মধ্যে এক অন্ধ বৃদ্ধার নোংরা কাপড় নিজে সাফ করে দিতেন। উমার রদিয়াল্লহু আ’নহু তার খেলাফত জামানায় এক অসুস্থ বৃদ্ধার খেদমত করতেন। হযরত তলহা রদিয়াল্লহু আ’নহু দেখলেন উমার এক ঘরে যাচ্ছেন। চিন্তা করলেন উমার রাতে এই ঘরে কি করে? তিনি পরে গিয়ে দেখলেন ঘরের মধ্যে এক বৃদ্ধা, অন্ধ, আসুস্থ, অচল অবস্থায় পরে আছে। জিজ্ঞেস করলেন উমার তোমার ঘরে কি করে? বৃদ্ধা বললেন উমার তো অনেক দিন আগে থেকেই আসে আমার এখানে। আমার সব ময়লা কাপড় চোপড় পরিষ্কার করে দিয়ে যায়। হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের সাথে খেদমতের এই ভাবে লেগে থাকতেন যে কোন পার্থক্য করা যেত না। আগন্তুক কেউ আসলে জিজ্ঞেস করতে হত আয়্যুকুম কুম মুহাম্মাদ তোমাদের নবী কোনজন? রসুল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই ভাবেই খেদমতে মশগুল থাকতেন, নতুন কেউ বার বার জিজ্ঞেস করতেন আয়্যুকুম মুহাম্মাদ, আয়্যুকুম ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, তোমাদের মধ্যে কে মুহাম্মাদ, কে তোমাদের নবী। ভাই দোস্ত আমরাতো খদমতের নিজেদের তরবিয়ত/উন্নতি জন্যই লাগব। আমাদের খেদমত জরুরত পুরা করার জন্য নয়, নিজেদের তরবিয়তের জন্য। হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাহ কেরামদের সাথে এক সফরে চলতে ছিলেন। সব কাজ বন্টন হয়ে গেল সাহাবাহ কেরামদের মাঝে। কে বকরী জবাই করবে, কে গোস্ত কাটবে, কে খানা পাকাবে। রসুল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন আমি জঙ্গল থেকে লাকড়ী কেটে নিয়ে আসব। রসুল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক ব্যক্তিত্ব! তিনি কিনা জঙ্গল থেকে লাকড়ী কেটে আনতে গেলেন জ্বালানীর জন্য। এতো আসলে এস্তেমায়ী কাজ। নিজেকে এই কাজে লাগানো নিজের তরবিয়তের জন্য জরুরী। আমরা এই কাজে অন্যদের থেকে খেদমত নিব না। নিজের জরুরত নিজেই পুরা করব। খেদমতের জামাতকে সাহায্য করব। এক জামাতকে পাঠানো হয়ে ছিল। ফিরে আসার পর হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কারগুজারি শুনলেন। সব সাথী একসাথীর ব্যাপারে বললেন সে সবচেয়ে বেশি মেহনত করেছে। সব ওয়াক্তে যিকিরে, নামাজে, তেলাওয়াতে, ইবাদতে সবার আগে। সওয়ারীতে ছিল তো তেলাওয়াত করত, সওয়ারী থেকেই নেমেই নামাজ পড়ত। রসুল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন এর জরুরত কে পুরা করত, এর খানা কে দিত, এর সওয়ারীর দেখভাল কে করত, এর সওয়ারীর সামান কে খুলত? একেকটা জিনিস এভাবে জিজ্ঞেস করলেন। সাহাবাহ কেরাম বললেন এই সব কাজ আমরাই করে দিতাম, এ শুধু এবাদত করত। রসুল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমাইলেন তোমরা সবাইই তার থেকে উত্তম। এর খেদমত করার দ্বারা একে এবাদতে লাগিয়ে রেখেছ। রসুল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এক গাযওয়ায় ছিলেন। আল্লহর রাস্তার মেহমানদের খিদমতের কারণে কিছু সাথী রোযা ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। রসুল সল্লাল্লহু আ’লাহি ওয়া সাল্লাম বললেন আজ যারা রোযা ভেঙ্গেছে তারা রোযাদারদের চেয়ে আগে বেড়ে গেছে। তারা রোযাদারদের খিদমতের জন্য রোযা ভেঙ্গে ছিলেন। আল্লহর রসুল বলেন আজ যারা রোযা রাখেনি তারা সওয়াবের ক্ষেত্রেরোযাদারদের থেকে আগে বেড়ে গেছে। দেখুন ভাই, খেদমত আমাদের তরবিয়তের জন্য। অন্যের জরুরতের জন্য নয় বরং নিজের তরবিয়তের জন্য। অন্যের জরুরততো পুরা হয়েই যাবে কিন্তু খিদমতে লাগব নিজের তরবিয়তের জন্য। এই জন্য আমরা প্রত্যেক সাথীই চেষ্টা করব যে, এই কাজ আমি করব, টয়লেট আমি পরিষ্কার করব, মাসজিদ ঝাড় আমি দেব। আমাদের জামাত যে মাসজিদে যাবে সে মাসজিদে গিয়ে আমরা নিজেরাই মাসজিদ সাফাই করব, মাসজিদে পানির ব্যবস্থা আমরা নিজেরাই করব।(?) যারা মাসজিদে আসবে তারা বলবে আপনাদের জামাত বেশ কাজ করেছে।(?) মাসজিদতো আল্লহর ঘর। যেনতেন কিছু নয়।(?) আমরা ওইখানে গিয়ে নিজেরাই সাফাই করব। (?) উমার রদিয়াল্লহু আ’নহু তার খিলাফতের জামানায় মাসজিদ ঝাড়ু দেয়ার জন্য মদিনা থেকে কুবায় যেতেন। এইজন্য আমরা জামাতের সবাই আল্লহর রাস্তায় গিয়ে খুব আগ্রহের সাথে নিজেই নিজেকে খিদমতে লাগাব। এটা আল্লহর রসুলের সুন্নত, সাহাবাহ কেরামদের সুন্নত, এটা নিজের তরবিয়তের জন্য। আল্লহর রাস্তায় বের হয়ে মিম্বর থেকে শুরু করে পায়খানা পর্যন্ত সাফাই করে, সব কাজই এস্তেমায়ী। সব কাজের দ্বারাই আল্লহর তরফ থেকে আজর, তরবিয়ত, গুনাহ মাফীর এবং মর্যাদা বৃদ্ধির ওয়াদা আছে।
ভাই দোস্ত, আমরা এইজন্যই আল্লাহর রাস্তায় বের হই যাতে এই জিনিস গুলো আমাদের মাঝে আসে। দেখুন সবার প্রথম আমাদের আল্লাহর রাস্তায় নিজের তরবিয়ত ও তাজকিয়ার ইয়াকীন করতে হবে। আল্লহর রাস্তায় একত্রে চলতে হবে। আল্লহর রাস্তার এক সকাল বা এক বিকাল দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার সব কিছু থেকে উত্তম। আমাদের যদি কোন দুনিয়াবী তাকাজা আসেও উহাকে পিছনে রাখব।(?) হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবাদের এই রাস্তার নকল হরকতের এই ফাযায়েলের উপর উঠিয়ে ছিলেন। যদি সকালে কোন জামাত তৈরি হত তা বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করত না, বিকালে কোন জামাত তৈরি হলে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করত না। এক জামাত বিকালে তৈরি হল। সাথীরা বলল ইয়া রসুল্লুল্লাহ আমরা সকালে রওয়ানা করব। রসুলুল্লাহ বললেন, তোমাদের রাত জান্নাতের বাগানে কাটুক তোমরা কি এটা চাওনা। আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে একটা রাত কাটানো অবশ্যই জান্নাতের বাগানে একটা রাত কাটানো। আমরা আল্লহর রাস্তায় একত্রে বের হব। আমরা আল্লহর রাস্তায় এর সকল ফাযায়েলের ইয়াকীনের সাথে বের হব যে ফাযায়েল সাহাবাহ কেরামদের নকল হরকতের সাথে ছিল। দেখুন ভাই খুবই জরুরী একটা কথা আরজ করতেছি, আমাদের নকল হরকতের ম্ফহ্যে সাহাবাহ কেরামদের নকল হরকতের ফাযায়েল, তাই আমাদের নকল হরকতের মধ্যে সাহাবাদের নকল হরকতের নমুনা জিন্দা হওয়া চাই। আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত ওনাদের হেদায়েত, ওনাদের তরবিয়াত, আমালের মধ্যে ওনাদের রুহানিয়াত এবং নুরানিয়াত পয়দা করে দিবেন। আমাদের বের হবার ওই বুনিয়াদ এবং ওই ফাযায়েল যা সাহাবাহ কেরামদের নকল হরকতের ফাযায়েল। এই জন্য আল্লহর রাস্তায় বের হবার যে ফাযায়েল, ওই ফাযায়েলের ধ্যান করে করে বের হব। হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা রদিয়াল্লহু আ’নহু কে বললেন তুমি আমার পিছনে নামাজের ফাযায়েলের জন্য ফিরে থাকলে, আর জামাত রওয়ানা হয়ে গেল। তুমি যদি সারা দুনিয়ার সকল মাল সম্পদও দান করে দাও তবুও সকালে রওয়ানা হওয়া জামাতের সমান ফযিলত হাসিল করতে পারবে না। ভাই দোস্ত, আমরা আল্লহর রাস্তায় আগ্রহের সাথে বের হব, জলদি করে বের হব। দেখুন আল্লহর রাস্তায় দাওয়াত দিতে দিতে যাব। ট্রেন হোক, বাস হোক, পায়দল হোক। আল্লহর রাস্তায় বেশির থেকে বেশি পায়দল চলুন। আল্লহর রাস্তায় পায়দল চলা সব চেয়ে বেশী আল্লহর গজব ঠান্ডা করার আমাল। দুই ধরনের লোকের জন্য আল্লহ আজাব উঠিয়ে নেন, এক হল আল্লহর রাস্তায় পায়দল চলনেওয়ালা, আরেক হল মাসজিদ আবাদ করনেওয়ালা। এই দুই শ্রেণীর মানুষের জন্য আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত নিজ আজাব কে উঠিয়ে নেন। দুনিয়াতে যে হালাত যার কোন সমাধান নাই তার জন্য আল্লহর রাস্তায় পায়দল চলা, আর আল্লহর ঘর আবাদ করা। এই জন্য ভাই দোস্ত, আল্লহর রাস্তায় পায়দল চলার খুব ফাযায়েল বয়ান করুন। আল্লহর রাস্তায় পায়দল চলার কারনে জমিন থেকে যে ধুলাবালি উড়বে তা জান্নাতে জান্নাতিদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করার কাজে ব্যবহার হবে। আল্লহর রাস্তায় পায়দল চলার কারনে যে ধুলাবালি কদমের কারনে উড়ে তা আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত জান্নাতিদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করার কাজে ব্যবহার করবেন – হাদিসে এসেছে। পায়দল চলার এমনই রহবত(?) যা কিনা সাহাবাহ কেরামদের পায়দল চলার রহবত। এক সাহাবী নিজের সওয়ারী নিয়ে পায়দল চলতে ছিলেন। জাবের রদিয়াল্লহু আনহু। অন্য এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন তোমার সওয়ারী থাকা সত্ত্বেও তুমি কেন পায়দল চলতেছ। তিনি বললেন আমার কাছে সওয়ারী আছে এবং আমার সওয়ারী অসুস্থ নয়। আমার অন্যের কারও সওয়ারীও প্রয়োজন নাই। আমিতো এইজন্যই পায়দল চলতেছি যে, আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এই হাদিস শুনেছি, এই রাস্তায় পায়দল চলা জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেয়। আমি এইজন্যই পায়দল চলতেছি। ওই সাহাবী আসলে, সাহাবাহ কেরামদের নকল হরকত তালীমের ইলমের সাথে এমনই। ওই সাহাবী দূর চলে গিয়ে উচ্চস্বরে আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন পায়দল চলতেছ তোমার কাছে সওয়ারী থাকা সত্ত্বেও। উনি বুঝলেন কেন তিনি দূরে গিয়ে আবারও জিজ্ঞেস করছে যে, তিনি চাচ্ছেন উচু আওয়াজের মধ্যমে সবার কাছে ফজিলতটা বয়ান করতে। তাই উনিও জোরে আওয়াজ দিয়ে বললেন, আমার সওয়ারী অসুস্থ নয়, সওয়ারী থাকার পরও আমি এইজন্যই পায়দল চলতেছি যে, আমি মুহাম্মদসল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে শুনেছি, যে আল্লহর রাস্তায় পায়দল চলে তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায়। সাহাবাহ কেরাম বলেন আমরা ওই সফরের মত পায়দল চলা আর কখনও দেখিনি। ভাই দোস্ত, আমাদের জন্য সওয়ারীতে চলা আসল নয় বরং পায়দল চলাই আসল আল্লহর রাস্তায়। আল্লহর গজব ঠান্ডার করার আমাল। যখন আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু উসামা রদিয়াল্লহু আ’নহু এর জামাতকে রওয়ানা করিয়ে দিতে গিয়ে পায়দল চলতে ছিলেন। উসামা রদিয়াল্লহু আ’নহু বললেন আপনি সওয়ারী চড়ুন আমি নিচে নামি। আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু বললেন আবু বকরের কি ক্ষতি যদি পায়দল চলার কারনে জাহান্নামের আগুন আবু বকরের জন্য হারাম হয়ে যায়?
যেখানেই আমাদের রুখ হয়, জামাত নিয়ে আমরা রাস্তায় কাজ করতে করতে যাব, দাওয়াত দিতে দিতে যাব। সওয়ারে প্রত্যেক সওয়ারীকেই দাওয়াত দিব। পায়দলে প্রত্যেক ঈমানওয়ালাকে দাওয়াত দিব। প্রতেক ব্যক্তি ব্যক্তিকে দাওয়াত দিতে দিতে চলব, যার সাথে আলাপ করব তাকে দাঈ’ বানিয়ে রাখব। যাকে দাওয়াত দিব তাকে দাঈ’ বানিয়ে ছাড়ব, তাকে দাওয়াত দেয়ার জন্য তৈরি করব। সবাইকেই বলি যে দাওয়াত ইল্লাল্লহ উম্মতের ইস্তেমায়ী মাকসাদে হায়াত। সবাইকেই দাওয়াত দিব। আমরা এই নকল হরকতের জরিয়ায় সব উম্মতকে দাওয়াতের উপর উঠানো চেষ্টা করব। আল্লহর কাছে কান্নাকাটি করে চাওয়া। যেখানে রুখ দেয়া হয় জামাতের সাথে যাব। আমরা সবার প্রথম মাসজিদের দিকেই যাব। মাসজিদে গিয়ে আমাদের সামানা জমা করার পর সবার প্রথম কাজ এটাই যে, যদি মাকরুহ ওয়াক্ত না হয় দুই রাকাত তাহইয়াতুল মাসজিদ অবশ্যই পড়ব। মাসওয়ারার জন্য সাথীদের মুতাওয়াজ্জু করব। মাসওয়ারার গুরুত্ব অনেক বেশি। কোন কাজই যেন মাসওয়ারা ছাড়া না হয়। মাসওয়ারা কুরআনে নামাযের সাথে উল্ল্যেখ করা হয়েছে। এর গুরুত্ব, এস্তেমায়্যিয়াত এবং আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে। মাসওয়ারা নামাযের সাথে উল্ল্যেখ করা হয়েছে কুরআনে। যাকাত, রোযা, জিহাদ, হাজ্জ ইত্যাদির কোন আলোচনা নেই। নামায ও রোযা — নামায ও মাসওয়ারা দুটোই একত্রে বলা হয়েছে। নামায কায়েম করে এবং মাসওয়ারা করে … আমাদের সব কাজ মাসওয়ারার সাথে যাতে হয়। যত বড় বড় মদদ নুসরত হয়েছে সাহাবাহ কেরামদের সাথে, আল্লহর রসুলের জামানায় বা তার পরে, সব কিছুর বুনিয়াদ ছিল মাসওয়ারা। সাথীদের রায় নিন। মাওলানা ইলয়াস রহমাতুল্লহ বলেছেন এই কাজের সাথে যে খায়ের আছে আল্লহ তাই দিবেন (?) আমাদের উপর আল্লহর মদদ নাযিল হবে যদি আমরা এস্তেমায়ী কাজগুলো এস্তেমায়ী মাসওয়ারার মধ্যমে করব। প্রত্যেক সাথীর রায় নিন। মাকামী সাথীরা যদি মাসওয়ারায় শরিক হয়তো খুবই ভালো। যদি নাহয় তাহলে মাসওয়ারায় দেরি না করা বরং মাসওয়ারা করে নেয়া। পরবর্তী ওয়াক্তে মাকামী লোকদের মাসওয়ারায় শরিক করা। তার কাছে জিজ্ঞেস করা কোন তরতীবে কাজ করা হবে, কোন লোক ঘরে ঘরে নিয়ে যাবেন। এভাবে আমরা মাকামী সাথীদের সাথে মাসওয়ারা করে মোলাকাতের তরতীব বানিয়ে নিব। এক এক জন করে দাওয়াত দিব এবং সবাই কে মাসজিদের মাহলে জুড়ানোর জন্য মেহনত করব। ২৪ ঘন্টার আমাল সাথীদের সাথে মাসওয়ারা করে নিব। আর ভাই একটা জরুরী কথা হল নিজেদের খানার পুরা এন্তেজাম করে নিব। যাতে মহল্লাবাসি আমাদের জরুরতমান্দ/অভাবী মনে না করে। আমাদের সেকেল/ব্যবস্থাপনা থেকে যেন সওয়াল প্রকাশ না পায়। নিজ থেকেতো সওয়াল করবই না। কেননা এই মেহনত আল্লহর গায়ের থেকে মুস্তগ্নী/বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লহ থেকে হওয়ার ধারনা পয়দা করার জন্য। এইজন্য আমরা আমাদের জরুরতের এন্তেজাম নিজেরাই করে নিব যাতে আমাদের দ্বারা সওয়াল জাহির না হয়। কোন কিছুই চেয়ে নিব না (?) নিজেদের জরুরতের সামান নিজের সাথে নিয়ে চলব। গিয়েই নিজেদের খানার নজম করে নিব। যাতে মহল্লাবাসীরা জিজ্ঞেস করলেই বলতে পারি যে খানা আমরা তৈরি করে ফেলেছি। আমরা যে মাকসাদ নিয়ে এসেছি ওই মাকসাদে আমাদের সাথে সঙ্গ দিন। এইভাবে আমরা মাকামী সাথীদের সাথে নিয়ে মোলাকাতের তরতীব ঠিক করে ফেলব। তালীমী গাস্ত করব, খুসুসী গাস্ত করব, আবার যদি কোন বড় ওলামা হযরত থাকেন তার জিয়ারতে হাজির হব, উনার কাছে দুআর আবেদন করব মওকা দেখে কাজের কিছু কারগুজারী শুনিয়ে দিব। দেখুন ভাই, হযরত বলতেন ওলামাদের জিয়ারত ইবাদাত ইয়াকীন করুন। ওলামাদের সাথে সম্পর্ক ও মহাব্বাত কায়েম করুন। এছাড়া জিহালত খতম হবে না। কদমে কদমে ওলামাদের জিজ্ঞেস করে নিন। নিজের ব্যবসা বানিজ্য, আচার ব্যবহারে এক এক জিনিস করে ওলামা কেরামদের জিজ্ঞেস করে করে নিন। আল্লহর বহুত বড় ফযল করম আমাদের উপর আল্লহ এই দেশ উলামা এবং মাদ্রাসা দেশ বানিয়ে দিয়েছেন। এমন বহু দেশ আছে যেখানে পুরা দেশে কোন আলিম, কোন মাদ্রাসা, দ্বীনের তালীম দেয়ার মত কেউ নেই। নিজ বাচ্চাদের দ্বীনী মাদ্রাসায় ভর্তি করুন। উলামাদের মুহাব্বাত ও সম্পর্ক কায়েম করুন। কদমে কদমে উলামাদের জিজ্ঞেস করে করে চলুন। যতক্ষন পর্যন্ত উলামাদের সাথে সম্পর্ক না হবে ততক্ষন আমাদের জিন্দেগীর মধ্যে দ্বীন আসবে না। দ্বীন ইলম ছাড়া আসবে না। দেখুন বুনিয়াদী মাকসাদ এই মেহনতের, আওয়ামদের ও উলামা মাঝে সম্পর্ক ও মুহাব্বাত কায়েম করা এবং সব ঈমানওয়ালাদের মাঝে উলামাদের থেকে ইলম হাসিল করার আগ্রহ পয়দা করা। বড় রহমত তাই আপনাদের দেশের উপরে। উলামাদের জিয়ারত ইবাদাত ইয়াকীন করুন। মাওলানা ইউসুফ রহমাতুল্লাহ আ’লাইহি হেদায়েতের মধ্যে লেখা হয়েছে উলামাদের জিয়ারত ইবাদাত ইয়াকীন করুন। এইজন্য আমরা যেখানে যাব খাওয়াসদের সাথে মোলাকাত করব। ওলামাদের সাথেও মোলাকাত করব। তাশকীল না করি সুযোগ পেলে কিছু কাজের কারগুজারী অবশ্যই শুনিয়ে দিই। তার কাছে কিছু নসিহতের আবেদন করুন। (?) এইভাবে সব জায়গায় খসুসী গাস্ত, উমুমী গাস্ত, তালীমের সময় তালীমী গাস্ত, যে তৈরি হয় তার জন্য উসুলী গাস্ত। মসজিদে জমা করে জেহেন বানান যে তৈরী হয়ে যায় তাদের নিয়ে জামাত বানিয়ে পুরানো সাথীদের জিম্মাদার বানিয়ে আল্লহর রাস্তায় রওয়ানা করিয়ে দিন। প্রত্যেক মাসজিদ থেকে চার চার মাসের জন্য জামাত রওয়ানা করিয়ে দেয়া, প্রত্যেক মাসজিদে তালীম, মাসওয়ারা, প্রত্যেক মাসজিদে দুই গাস্ত, প্রত্যেক মাসজিদের অধীনের ঘরগুলোতে তালীম এবং দাওয়াতের মাহল কায়েম করতে করতে আমরা নকল হরকত চালাব। যেখানে আমাল জিন্দা হবে যাবে সেখান থেকে সামনে যাব। যতক্ষন পর্যন্ত এই আমালগুলো জিন্দা হবার ব্যপারে দিল এতমিনান না হয় ততক্ষন পর্যন্ত সামনে বাড়ব না। আমাদের কাজ ছেড়ে আসা নয় বরং কাজ জমানোর জন্য এবং আমালে দাওয়াতের মাধ্যমে দ্বীনের মাহল কায়েম করার জন্য।
এক আখেরী দরখাস্ত পুরা মজমার সামনে। এক আমরা এস্তেগফার ও তওবা করি যে আমরা এখন পর্যন্ত ঐ কাজকে মাকসাদ বানাতে পারিনি যে কাজের উপর পুরা দ্বীন কায়েম থাকা নির্ভর করে। যে সাথীরা আল্লাহর রাস্তায় বের হবেন তারাতো আল্লহর রাস্তায় বের হবেন, যারা বের হচ্ছেন না তারা নিজেরদের অঞ্চল, এলাকাতে কাজ করতে করে যাই। গ্রাম গ্রাম, জনপদ জনপদ আমালের দাওয়াত করতে করতে, সমস্ত লোক আমরা যারা বিদায় নিব, নিজেদের যাওয়ার পথে কাজ করতে করতে যাব, আমালে দাওয়াত করতে করতে সব মহল্লা সব মাসজিদ সব গ্রামে আমালে দাওয়াত জিন্দা করতে করতে যাব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন