বুনো খরগোশ বা লাফারু বা ছাগল খরগোশ/Hare: বনে পাওয়া যায়। খাওয়া হালাল।
সাদা বা শখের বা বিড়াল খরগোশ/RABBIT: শৌখিন ও খাওয়া হারাম।
আমাদের দেশে বুনো খরগোশ এর লোকাল নাম লাফারু বা ছাগল খরগোশ। লম্ফঝম্ফে ওস্তাদ বলেই বোধ হয় এই নাম। শশক, লাফা বা খয়রা নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Rufous-tailed hare, বা Indian hare। এরা কিন্তু মোটেও গৃহপালিত খরগোশের (Rabbit) বুনো রূপ নয়; বরং এরা হেয়ার (Hare)। হেয়ার আর র্যাবিটের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো, হেয়ার মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বাস করে এবং জন্মের সময় বাচ্চার দেহে লোম থাকে ও চোখ খোলা থাকে। বাচ্চাগুলো হয় ইঁচড়ে পাকা, জন্মের পরপরই লম্ফঝম্ফ করতে পারে। অন্যদিকে, র্যাবিট কখনোই গর্ত খোঁড়ে না; বরং মাটিতে ঘাস-লতা-পাতার সঙ্গে নিজের বুকের লোম মিশিয়ে বাসা তৈরি করে। অপরিণত বাচ্চার জন্ম দেয়। যশোর-বাগেরহাটসহ দেশের অনেক এলাকার মানুষ এখনো বুনো খরগোশকে ‘খুরওয়ালা খরগোশ’ নামে চেনে। তাদের মতে, এদের পায়ে ছাগলের মতো খুর থাকে। তবে তথ্যটি ঠিক নয়। কারণ, খুরওয়ালা খরগোশ একধরনের ক্ষুদ্রাকার হরিণ বা Cevrotain (ছোট ছাগল) ইঁদুরে হরিণ (Tragulidae পরিবার) এবং এ দেশে এদের অস্তিত্ব আছে বলে প্রমাণিত হয়নি। আমি মৌলভীবাজারে পরীক্ষা করে দেখেছি, তথাকথিত এই খুরওয়ালা খরগোশের পায়ে আসলে কোনো খুর নেই। যা হোক, লাফারু Leporidae পরিবারের সদস্য ও বৈজ্ঞানিক নাম Lepus nigricollis।
লাফারু লম্বা পা–যুক্ত ছোট আকারের প্রাণী। দেহের দৈর্ঘ্য ৪০-৭০ সেন্টিমিটার ও লেজ ১০ সেন্টিমিটার। ওজন ১.৩৫ থেকে ৭.০ কেজি। পুরুষ স্ত্রী থেকে লম্বা। দেহের ওপরটায় ধূসর ও বাদামির মিশেল, কখনোবা তাতে কালচে ছোপ। পা ও বুক হলদেটে, বাকি অংশ সাদা। লেজের ওপর লালচে ও ঘাড়ে কালো পট্টি। চোখ বড়, কান লম্বা ও লেজ খাটো।
এরা অত্যন্ত বিরল ও বিপন্ন প্রাণী। সুন্দরবন বাদে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এদের বসবাস। বনবাদাড়, ঘাসবন, ঘন ঝোপ-জঙ্গলে ঢাকা আবাদি জমি, চা-বাগান ইত্যাদিতে এরা বাস করে। বেশ লাজুক ও নিশাচর, ভোরবেলা ও বিকেলে সক্রিয় থাকে। এদের একাকী, জোড়ায় বা দলে দেখা যায়। ঘাস, পাতা, শিকড়, কন্দ, ফল, বীজ, শস্য ইত্যাদি এদের খাদ্য।
বছরের যেকোনো সময় এদের প্রজনন মৌসুম। তবে অক্টোবর-ফেব্রুয়ারিতে বেশি। খাদ্য পর্যাপ্ত থাকলে প্রজনন হার বাড়ে। স্ত্রী ৪১ থেকে ৪৭ দিন গর্ভধারণের পর ঘাসের মধ্যে বানানো বাসায় একসঙ্গে এক থেকে চারটি বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চাগুলো ছয় মাসেই বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। এরা পাঁচ থেকে সাত বছর পর্যন্ত বাঁচে বলে ধারণা করা হয়।