মাওলানা সাদ এর উপর আরোপিত তোহমতের জবাব ১-২

তোহমত নং ১ঃ যেহেতু সাদ সাহেব বলেছেন “ইলম এর বিনিময় লেনেওয়ালাদের আগে বেশ্যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন”।  (তাই উনি ও উনার জামাত বাতিল)


উত্তরঃ  বয়ানের মূল বিষয় ছিল সিফাত নং পাঁচ বা তাসহিয়ে নিয়্যত(নিয়্যতের বিশুদ্বিকরন)

আগে শুনি কি বলেছেন। তাহলেই বিজ্ঞরা বুঝবেন উনি কি বুঝাতে চেয়েছেন আর আমরা কি বুঝেছি। এখানে আমরা সংগ্রহ করেছি উনার সেই বিখ্যাত মূল বয়ান। কাটপিস ছাড়া। যা ফেসবুক থেকে নাজিল হওনা নয়।

মূল বয়ানঃ

  • ইলম শিখিয়ে উবাই ইবনে কাব (রাঃ) কিছু হাদিয়া গ্রহন করলেন। হুজুর(সাঃ) তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হে উবাই! এটা নিয়ে যদি জাহান্নামে যেতে চাও তবে গ্রহন কর, নয়তো ফেরত দিয়ে দাও।“
  • যদিও হাদিয়া থেকে প্রাপ্ত সম্পদ সবচেয়ে পবিত্র। আর সেখানে কোন চুক্তিও হয় নি যে আপনি ইলম শিখাবেন বিনিময়ে আপনাকে উবাদা(রাঃ) এত এত সম্পদ দিবেন।
  • কেননা কোন বস্তু বা আমল যদি কোন বিনিময়ের সাথে শর্তসাপেক্ষ হয়ে যায় তবে তার ব্যাপকতাও শেষ হয়ে যায়।
  • হুজুর সাঃ প্রত্যেক উম্মতকে শিখানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। হুজুর সাঃ বলেছেন, “যদি একটা আয়াতও তুমি জান তবে সেটা অপরকে পৌছে দাও”।
  • হুজুর সাঃ এর ঘরে সাহাবা (রাঃ) বসা ছিলেন। হুজুর সাঃ কিছু কথা বললেন আর বললেন “যারা ঘরের ভিতরে আছ তারা ঘরের ভিতরে যারা আসতে পারেনি তাদের পৌঁছে দিও”। যদি একটা আয়াতও তুমি জানো তবে সেতা অপরকে পৌঁছে দিও”।
  • এজন্য ভাই ও দোস্ত, এলেমকে সার্বজনীন করার জন্য ও উম্মতের মধ্যে থেকে অজ্ঞতা দূর করার জন্য হুজুর সাঃ সাবারা রাঃ দের মানসিকতা এমন ভাবে তৈরি করেছিলেন যে “তোমরা উম্মতকে ইলম পৌছাও নিজের আগ্রহে কিন্তু বিনিময় ছাড়া”।
  • আল্লাহু আকবার! হুযুর সাঃ এর কাছে দ্বীন শেখার জন্য যারা আসতো হুযুর সাঃ তাদেরকে নিজের সাথে নিয়ে নিতেন মেহমানদারীর জন্য। সাহাবা রাঃ ও নিতেন।
  • এর চাইতেও বড়ো বিষয় হল, হুজুর সাঃ এর যত শিক্ষার্থী ছিলেন তারা বন থেকে কাঠ কেটে সেগুলো বিক্রি করে ছাগল কিনে, জবাই করে গোস্ত হুজুর সাঃ ও সাহাবা রাঃ এর ঘরে পৌঁছে দিতেন।
  • এমন শিক্ষার্থী ছিলেন তারা! যারা হুজুর সাঃ এর ঘরের যাবতীয় খরচ নিজেদের দ্বায়িত্বে নিয়ে ছিলেন। তবে সেখানে আবু হুরাইরা রাঃ এর মত মুহাদ্দিস কেন তৈরী হবে না! মুয়াজ ইবন জাবাল রাঃ এর মত মুফতি কেন তৈরী হবে না!
  • তারা বন থেকে কাঠ কেটে সেগুলো বিক্রি করে ছাগল কিনে, জবাই করে গোস্ত হুজুর সাঃ ও সাহাবা রাঃ এর ঘরে পৌঁছে দিতেন।
  • হজরত উমার রাঃ বলতেন, “হে কুরয়ান শিখানেওয়ালা, হে দ্বীন শিকানেওয়ালা তোমরা এর (কুরয়ান শিখানোর) বিনিময়ে মূল গ্রহন করো না, অন্যথায় নীচ ব্যাক্তিরা তোমাদের আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে”
  • “এখানে উনি কামিনা(বাংলা=নীচ লোক) বলেছেন। রেন্ডি(বাংলা বেশ্যা) বলেন নাই। “
  • এজন্য আমার ভাই ও দোস্ত, মনে রেখ, এই যে কুরাআন পড়ানোর (মাদ্রাসা) পদ্বতিতে পাওয়া যে বেতন, এটা ইলমের বিনিময় নয়, এটাতো শিক্ষকের সময়ের বিনিময়।
  • নয়ত আল্লাহর কসম! দ্বীনের তালিমের জন্য তো জান্নাত ব্যাতীত কোন বিনিময়ই যথেস্ট নয়। মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন তো সময়ের বিনিময়।
  • কেননা তারা দুনিয়াবী অন্য সকল কাজ থেকে পৃথক হয়ে দ্বীন শিখানোর জন্য আলাদা হয়ে গিয়েছেন। 
  • নয়ত হজরত আবু বকর রাঃ খিলাফত পেতেই চাদর নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে বের হয়ে ছিলেন।
    লোকেরা প্রশ্ন করল “আমিরুল মুমিনিন কোথায় যাচ্ছেন?উত্তরঃ “বাচ্চাদের জন্য কিছু উপার্জন করতে যাচ্ছি”।
    লোকেরা বলল “ না। আপনি খিলাফত সামলান। বিনিময় আমরা দিব”।
    জবাব দিলেন “না। খিলাফত এর দ্বায়িত্ব পালন শুধু আখিরাতের জন্য। আমি উপার্জনের উদ্দেশ্যে বের হব”।
    লোকেরা বলল “আমিরুল মুমিনিন! ব্যাবসায় সময় দেবার কারনে খিলাফতের দ্বায়িত্ব পালনে সমস্যা হবে। আপনি বাইতুল মাল থেকে সময়ের বিনিময়ে কিছু পরিমান ভাতা গ্রহন করুন”।
  • আল্লাহু আকবার! উমার রাঃ বলতেন, “আবু বকর রাঃ তার পরবর্তীদের চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। সময়ের বিনিময় হিসেবে ততটুকু ভাতা সে গ্রহনও করেনি যতটুকু সে পুনরায় ফেরত দিয়েছিলেন”।
  • হজরত উমার রাঃ খিলাফতের দ্বায়িত্বে থেকেও ব্যাবসা করতেন। সন্তানদের বলে দিয়েছিলেন “পিতা খলিফা, তাই বেশি আশা করো না। নিজে উপার্জন করে পরিবারের জন্য খরচ কর”।
  • আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃ কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “উপার্জন  করে খরচ কর। ভেবোনা পিতা আমিরুল মুমিনিন তাই মুসলমানদের সম্পদ থেকে তোমাদেরও কিছু দিবেন। এগুলাতো মুসলমানদের সম্পদ। আমি চাইনা আমার সন্তানরা মুসলমানদের সম্পদ থেকে লাভবান হউক। “
ভিডিও সোর্সঃ https://www.youtube.com/watch?v=Uq0M8C5w9P8

তোহমত সম্পর্কে কুরাআন-হাদিসের শিক্ষাঃ

সুরা হুজুরাতঃ আয়াত-১২

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ
 أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা বহুবিধ ধারণা হতে দূরে থাক; কারণ কোন কোন ধারণা পাপ[1] এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা (গীবত) করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভায়ের গোশত ভক্ষণ করতে চাইবে? বস্তুতঃ তোমরা তো এটাকে ঘৃণ্যই মনে কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু। (হুজুরাত-১২)

ব্যাখ্যাঃ  ظَنٌّ এর অর্থ ধারণা করা। অর্থাৎ, সৎ ও আল্লাহভীরু ভালো লোকদের ব্যাপারে এমন ধারণা পোষণ করা, যা মন্দ অথচ ভিত্তিহীন এবং যা মিথ্যা অপবাদের আওতায় পড়ে। তাই এর অনুবাদ করা হয়, কুধারণা। হাদীসে এটাকে أَكْذَبُ الْحَدِيْثِ (সব চাইতে বড় মিথ্যা) গণ্য করে এ থেকে বিরত থাকার প্রতি তাকীদ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, (إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ) অর্থাৎ, তোমরা কুধারণা থেকে দূরে থাক। (বুখারী, মুসলিম)।
গীবতের অর্থ হল, অন্য লোকের কাছে কোন ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা (নিন্দা বা সমালোচনা করা), যা সে অপছন্দ করে। আর যদি তার প্রতি এমন দোষের কথা সম্পৃক্ত করা হয়, যা তার মধ্যে নেই, তাহলে তা মিথ্যা অপবাদ হবে। স্ব-স্ব স্থানে দু’টোই বড় অপরাধ ও মহাপাপ।

অর্থাৎ, অপরের কাছে কোন মুসলিম ভাইয়ের নিন্দা গাওয়া ঐ রকমই, যেমন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া। মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে তো কেউ পছন্দ করে না, কিন্তু গীবত হল মানুষের অতি প্রিয় খাদ্য।

সুরা নূর(আয়াত ১১-১৮): আইশা রাঃ এর তোহমত আমাদের জন্য শিক্ষা। 

  • ১১। যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। তোমরা একে নিজেদের জন্যে খারাপ মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। তাদের প্রত্যেকের জন্যে ততটুকু আছে যতটুকু সে গোনাহ করেছে এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্যে রয়েছে বিরাট শাস্তি।
  • ১২। তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ? 
  • ১৩। তারা কেন এ ব্যাপারে চার জন সাক্ষী উপস্থিত করেনি; অতঃপর যখন তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, তখন তারাই আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী। 
  • ১৪। যদি ইহকালে ও পরকালে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত, তবে তোমরা যা চর্চা করছিলে, তজ্জন্যে তোমাদেরকে গুরুতর আযাব স্পর্শ করত। 
  • ১৫। যখন তোমরা একে মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে এবং মুখে এমন বিষয় উচ্চারণ করছিলে, যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না। তোমরা একে তুচ্ছ মনে করছিলে, অথচ এটা আল্লাহর কাছে গুরুতর ব্যাপার ছিল।
  • ১৬। তোমরা যখন এ কথা শুনলে তখন কেন বললে না যে, এ বিষয়ে কথা বলা আমাদের উচিত নয়। আল্লাহ তো পবিত্র, মহান। এটা তো এক গুরুতর অপবাদ। 
  • ১৭। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, তোমরা যদি ঈমানদার হও, তবে তখনও পুনরায় এ ধরণের আচরণের পুনরাবৃত্তি করো না। 
  • ১৮। আল্লাহ তোমাদের জন্যে কাজের কথা স্পষ্ট করে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।     
এই আয়াতসমূহ তখন নাযিল হয়েছিল যখন আয়েশা(রা: )কে চরিত্রহীনার অপবাদ দেয়া হচ্ছিল।  কিছু মুনাফিক এই তোহমত দেয়া শুরু করে। এতে একদল মুসলিম এমনকি বদরী সাহাবীও জড়িয়ে যায়। আইশা রাঃ ঘরে পালিত বদরী সাহাবীও এর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়।  এমনকি রাসূল(সা: )ও উনার স্ত্রীর ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। এর পরীক্ষা স্বরুপ প্রায় একমাস ওহী নাযিলও বন্ধ ছিল। অপবাদ দেয়া যে কত বড় অপরাধ, এই আয়াতগুলো  পড়লে এবং তৎকালীন মদীনা সমাজে এ নিয়ে যেসব ঘটনা ঘটে গিয়েছিল সেসব পড়লেই বোঝা যায়। আশা করি ঈমানদারগণ কুৎসা রটনা থেকে নিজেদের বিরত রাখার চেষ্টা করবেন। এই আয়াত গুলাতে স্পস্ট বলা হয় কুৎসা কারীকে অবশ্যই চার জন সাক্ষী উপস্থিত করতে হবে। অন্যথায় জেনার সমতুল্য শাস্তি তাদের উপরই পড়বে।  যার কারনে বদরী সাহাবীরাও ৮০ বেত্রাঘাত শাস্তি পান অবশ্য তারা তওবাও করেছিলেন।

তোহমত নং-২ঃ  যেহেতু তাবলীগ ওয়ালারা ও তাদের আমীর বলে "উহুদের পরাজয় এর কারন রসুলের ইতাহাত এর অভাব"। (তাই উনি ও উনার জামাত বাতিল)

উত্তরঃ তথাকথিত কিছু দেওবন্দীদের দৃষ্টিতে এটা ভ্রান্ত আকিদা। অথচ এটাই হুবুহু কুরানেরই কথা। এখানে মূল উদ্দেশ্য সাহাবা রাঃ দের ভূল প্রকাশ করা নয়। বরং রসুলের আনুগত্য না করার ফল বলাই উদ্দেশ্য যা কুরয়ানেই আল্লাহ সুবহানুওয়াতায়ালা নিজেই বলেছেন।

সুরা আল-ইমরান "১৫০-১৫৫নং আয়াত" এর তাফসির "ইবনে কাছির" 

দুনিয়ার সবচেয়ে বিশুদ্ব ও গ্রহনযোগ্য উম্মুল তাফসির তাফসির ইবন কাছির থেকে পড়লেই সব বুঝা যাবে। অবশ্য আপনার এলাকার কোন পীরের কিচ্ছা কাহিনী সম্বলিত তাফসির পড়ে বুঝা নাও যেতে পারে। 
                 অথবা’ নিচের তাফসিরটিই পড়ূন। তাহলেও বুঝা যাবে।

সুরা আল-ইমরানঃ ১৫০-১৫৫ (তাফসিরঃ বয়ানুল কুরআন)

আয়াত-১৫০# আল্লাহই তোমাদের অভিভাবক এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী। [1]


  • [1] পূর্বেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এখানে আবারও তার পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে। কারণ, উহুদ যুদ্ধের পরাজয়ের সুযোগ গ্রহণ করে কোন কোন কাফের অথবা মুনাফিক মুসলিমদেরকে পরামর্শ দিচ্ছিল যে, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের ধর্মে ফিরে এস। সুতরাং মুসলিমদেরকে বলা হল যে, কাফেরদের আনুগত্য করা হল ধ্বংস ও অনিষ্টের কারণ। সফলতা তো আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে এবং তাঁর চেয়ে উত্তম কোন সাহায্যকারী নেই।


سَنُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُوا الرُّعْبَ بِمَا أَشْرَكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا ۖ وَمَأْوَاهُمُ النَّارُ ۚ وَبِئْسَ مَثْوَى الظَّالِمِينَ 3:151
আয়াত-১৫১# যারা অবিশ্বাস করে, তাদের হৃদয়ে আমি ভীতির সঞ্চার করব, যেহেতু তারা আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করেছে; যার স্বপক্ষে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। [1] জাহান্নাম হবে তাদের নিবাস। আর অনাচারীদের আবাসস্থল অতি নিকৃষ্ট!


  • [1] মুসলিমদের পরাজয় দেখে কোন কোন কাফেরের অন্তরে এই খেয়াল জন্মালো যে, মুসলিমদেরকে একেবারে নিঃশেষ করে দেওয়ার এটা অতি উত্তম সুযোগ। ঠিক এই মুহূর্তে মহান আল্লাহ তাদের অন্তরে মুসলিমদের ভয় ঢুকিয়ে দিলেন। ফলে তারা নিজেদের পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার সাহস করতে পারেনি। (ফাতহুল ক্বাদীর) বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আমাকে পাঁচটি এমন জিনিস দেওয়া হয়েছে, যা আমার পূর্বে কোন নবীকে দেওয়া হয়নি। তার মধ্যে একটি হল, এক মাসের দূরত্বে অবস্থিত শত্রুর অন্তরে আমার ত্রাস (ভয়) ঢুকিয়ে দিয়ে আমার সাহায্য করা হয়েছে।’’ এই হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, রসূল (সাঃ)-এর ভয় স্থায়ীভাবে শত্রুর অন্তরে ভরে দেওয়া হয়েছিল। আর এই আয়াত দ্বারা জানা যায় যে, রসূল (সাঃ)-এর সাথে তাঁর উম্মত অর্থাৎ, মুসলিমদের ভয়ও মুশরিকদের অন্তরে ভরে দেওয়া হয়েছে এবং তার কারণ হল, তাদের শিরক। অর্থাৎ, শিরককারীদের অন্তর সব সময় অন্যের ত্রাস ও ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। আর সম্ভবতঃ এই কারণেই মুসলিমদের এক বিরাট সংখ্যা শিরকী আকীদা ও আমলে জড়িয়ে পড়ার ফলে শত্রুরা তাদেরকে ভয় করে না, বরং তারাই শত্রুদের ভয় ও ত্রাসে ভীত-সন্ত্রস্ত।


وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللَّهُ وَعْدَهُ إِذْ تَحُسُّونَهُمْ بِإِذْنِهِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِي الْأَمْرِ وَعَصَيْتُمْ مِنْ بَعْدِ مَا أَرَاكُمْ مَا تُحِبُّونَ ۚ مِنْكُمْ مَنْ يُرِيدُ الدُّنْيَا وَمِنْكُمْ مَنْ يُرِيدُ الْآخِرَةَ ۚ ثُمَّ صَرَفَكُمْ عَنْهُمْ لِيَبْتَلِيَكُمْ ۖ وَلَقَدْ عَفَا عَنْكُمْ ۗ وَاللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ 3:152
আয়াত-১৫২# আর আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছিলেন, যখন তোমরা তাদেরকে আল্লাহর নির্দেশক্রমে হত্যা করছিলে। [1] অবশেষে যখন তোমরা সাহস হারিয়েছিলে এবং (রসূলের) নির্দেশ সম্বন্ধে মতভেদ সৃষ্টি করেছিলে এবং যা তোমরা পছন্দ কর, তা[2] (বিজয়) তোমাদেরকে দেখানোর পরে তোমরা অবাধ্য হয়েছিলে[3] (তখন বিজয় রহিত হল)। তোমাদের কতক লোক ইহকাল কামনা করেছিল[4] এবং কতক লোক পরকাল কামনা করেছিল। [5] অতঃপর তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য তিনি তোমাদেরকে তাদের উপর থেকে সরিয়ে দিলেন।[6] তবুও (কিন্তু) তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন। বস্তুতঃ আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতি অনুগ্রহশীল। [7]


  • [1] এই প্রতিশ্রুতির অর্থ কোন কোন মুফাসসিরের মতে তিন হাজার এবং চার হাজার ফিরিশতার অবতরণ। কিন্তু এই মত একেবারে ভুল। কারণ ফিরিশতাদের অবতরণ তো বদর যুদ্ধের সাথে নির্দিষ্ট। সুতরাং এই আয়াতে উল্লিখিত প্রতিশ্রুতির অর্থ হল, বিজয় ও সাহায্যের সেই সাধারণ প্রতিশ্রুতি, যা মুসলিমদের সাথে রসূল (সাঃ)-এর মাধ্যমে করা হয়েছিল। এমন কি কিছু আয়াত তো পূর্বে মক্কাতেই নাযিল হয়েছিল। আর এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী (উহুদ) যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে মুসলিমরা জয়যুক্তই ছিলেন। [اِذْ تَحُسُّوْنَهُمْ باِذْنِهِ] (যখন তোমরা তাদেরকে আল্লাহর নির্দেশক্রমে হত্যা করছিলে।) এই আয়াতে তারই প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
  • [2] এর অর্থঃ সেই বিজয়, যা প্রাথমিক পর্যায়ে মুসলিমরা অর্জন করেছিলেন।
  • [3] মতভেদ সৃষ্টি করেছিলে এবং অবাধ্য হয়েছিলে বলতে, ৫০ জন তীরন্দাজের মধ্যে আপোসে মতভেদ সৃষ্টি হওয়াকে বুঝানো হয়েছে; যাতে তাঁরা সফলতা ও বিজয় দেখার পর লিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন। আর এরই কারণে কাফেররা পাল্টা আক্রমণ করার সুযোগ পেয়েছিল।
  • [4] অর্থাৎ, গনীমতের মাল (যুদ্ধ-ময়দানে শত্রুপক্ষের ফেলে যাওয়া সম্পদ)। এরই কারণে তাঁরা পাহাড়ের সেই ঘাঁটি ছেড়ে চলে এসেছিলেন, যেখান থেকে নড়তে তাঁদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল।
  • [5] সেই লোক, যাঁরা ঘাঁটি ছাড়তে নিষেধ করেন এবং নবী করীম (সাঃ)-এর নির্দেশ মত সেখানে অনড় থাকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
  • [6] অর্থাৎ, বিজয় দান করার পর পুনরায় পরাজয় দিয়ে তোমাদেরকে ঐ কাফেরদের উপর থেকে সরিয়ে দিলেন কেবল তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য।
  • 7] সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-দের কর্মে ত্রুটি ও অবহেলা সত্ত্বেও মহান আল্লাহ তাঁদেরকে যে মর্যাদা-সম্মান দান করেছেন, সে কথাই এখানে তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ, তাঁরা যাতে ভবিষ্যতে আর ভুল না করেন। তাই মহান আল্লাহ তাঁদের ভুলের কথা উল্লেখ করে তাঁদের ক্ষমা ঘোষণা করে দিয়েছেন। যাতে মন্দ অন্তরের লোকেরা তাঁদের ব্যাপারে কোন কটূক্তি না করতে পারে। কারণ, মহান আল্লাহই যখন কুরআনে কারীমে তাঁদের ক্ষমা ঘোষণা করেছেন, তখন অন্যের কি এ ব্যাপারে আর কোন নিন্দাপূর্ণ বাক্য ব্যবহার ও কটূক্তি করার অবকাশ থাকে? সহীহ বুখারীতে একটি ঘটনা উল্লেখ আছে যে, কোন এক হজ্জের সময় এক ব্যক্তি উষমান (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ উত্থাপন করল। যেমন, তিনি বদর যুদ্ধে এবং বায়আতে রিযওয়ানে শরীক হননি এবং উহুদের যুদ্ধে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ইবনে উমার (রাঃ) (এই অভিযোগ খন্ডন করে) বললেন, বদর যুদ্ধের সময় তাঁর স্ত্রী (রসূল (সাঃ)-এর কন্যা) অসুস্থ ছিলেন। বায়আতে রিযওয়ানে তিনি রসূল (সাঃ)-এর দূত হয়ে মক্কায় গিয়েছিলেন এবং উহুদের দিনে পালিয়ে যাওয়াকে তো আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। (বুখারী, উহুদের যুদ্ধ পরিচ্ছেদ)


إِذْ تُصْعِدُونَ وَلَا تَلْوُونَ عَلَىٰ أَحَدٍ وَالرَّسُولُ يَدْعُوكُمْ فِي أُخْرَاكُمْ فَأَثَابَكُمْ غَمًّا بِغَمٍّ لِكَيْلَا تَحْزَنُوا عَلَىٰ مَا فَاتَكُمْ وَلَا مَا أَصَابَكُمْ ۗ وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ 3:153
আয়াত-১৫৩# (স্মরণ কর) তোমরা যখন (পাহাড়ের) উপরে চড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলে[1] এবং পিছনে কারো প্রতি লক্ষ্য করছিলে না; অথচ রসূল তোমাদেরকে পিছন থেকে আহবান করছিল।[2] ফলে তিনি তোমাদেরকে দুঃখের উপর দুঃখ দিলেন;[3] যাতে তোমরা যা হারিয়েছ অথবা যে বিপদ তোমাদের উপর এসেছে, তার জন্য তোমার দুঃখিত না হও।[4] আর তোমরা যা কর, আল্লাহ তা বিশেষভাবে অবহিত।


  • [1] কাফেরদের একাধারে হঠাৎ আক্রমণের ফলে মুসলিমদের মধ্যে যে ছত্রভঙ্গ অবস্থা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং তাঁদের অনেকেই যে ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যান, এখানে সেই চিত্রই তুলে ধরা হচ্ছে। تُصْعِدُوْنَ ক্রিয়াপদ إِصْعَادٌ ক্রিয়ামূল থেকে গঠিত। যার অর্থ হল, উপত্যকা বেয়ে (পাহাড়ে) চড়া কিংবা পালিয়ে যাওয়া।
  • [2] নবী করীম (সাঃ) তাঁর কিছু সাথী সহ পিছনে ছিলেন। তিনি তাঁদেরকে ডাক দিয়ে বলছিলেন, ‘‘আল্লাহর বান্দারা! আমার দিকে ফিরে এসো। আল্লাহর বান্দারা! আমার দিকে ফিরে এসো।’’ কিন্তু সেই চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতিতে তাঁর এই ডাক কে শোনে?
  • [3] সামান্য ত্রুটির কারণে তোমাদের উপর নেমে এল দুঃখের উপর দুঃখ। ইবনে জারীর এবং ইবনে কাসীরের নিকট প্রাধান্য প্রাপ্ত উক্তি অনুযায়ী প্রথম ‘গাম্ম’ (দুঃখ)এর অর্থ, গনীমতের মাল এবং কাফেরদের উপর বিজয় লাভ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ‘গাম্ম’ (দুঃখ)। আর দ্বিতীয় ‘গাম্ম’ (দুঃখ)এর অর্থ, মুসলিমদের শহীদ ও আহত হওয়ার ‘গাম্ম’ (দুঃখ) এবং নবী করীম (সাঃ)-এর নির্দেশের বিরোধিতা ও তাঁর শহীদ হওয়ার মিথ্যা খবর থেকে সৃষ্ট দুঃখ।
  • [4] অর্থাৎ, তোমাদের উপর দুঃখের উপর দুঃখ আপতিত হওয়ার কারণ হল, যাতে তোমাদের মধ্যে দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার শক্তি এবং দৃঢ়সংকল্প ও উৎসাহ সৃষ্টি হয়।


ثُمَّ أَنْزَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ بَعْدِ الْغَمِّ أَمَنَةً نُعَاسًا يَغْشَىٰ طَائِفَةً مِنْكُمْ ۖ وَطَائِفَةٌ قَدْ أَهَمَّتْهُمْ أَنْفُسُهُمْ يَظُنُّونَ بِاللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ ظَنَّ الْجَاهِلِيَّةِ ۖ يَقُولُونَ هَلْ لَنَا مِنَ الْأَمْرِ مِنْ شَيْءٍ ۗ قُلْ إِنَّ الْأَمْرَ كُلَّهُ لِلَّهِ ۗ يُخْفُونَ فِي أَنْفُسِهِمْ مَا لَا يُبْدُونَ لَكَ ۖ يَقُولُونَ لَوْ كَانَ لَنَا مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ مَا قُتِلْنَا هَاهُنَا ۗ قُلْ لَوْ كُنْتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِينَ كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقَتْلُ إِلَىٰ مَضَاجِعِهِمْ ۖ وَلِيَبْتَلِيَ اللَّهُ مَا فِي صُدُورِكُمْ وَلِيُمَحِّصَ مَا فِي قُلُوبِكُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ 3:154
আয়াত-১৫৪# অতঃপর তিনি তোমাদেরকে দুঃখের পর তন্দ্রারূপে নিরাপত্তা (ও শান্তি) প্রদান করলেন, যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করেছিল। [1] আর একদল ছিল যারা নিজেদের জান নিয়েই ব্যস্ত ছিল। [2] প্রাগ্-ইসলামী অজ্ঞদের ন্যায় আল্লাহ সম্বন্ধে কুধারণা পোষণ করেছিল। [3] তারা বলেছিল যে, ‘এ বিষয়ে আমাদের কি কোন এখতিয়ার আছে?’[4] বল, ‘সমস্ত বিষয় আল্লাহরই এখতিয়ারভুক্ত।’[5] তারা তাদের অন্তরে এমন কিছু গোপন রাখে, যা তোমার নিকট প্রকাশ করে না।[6] তারা বলে, ‘যদি এ ব্যাপারে আমাদের কোন এখতিয়ার থাকত, তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না।’[7] বল, ‘যদি তোমরা তোমাদের গৃহে অবস্থান করতে তবুও নিহত হওয়া যাদের ভাগ্যে অবধারিত ছিল, তারা নিজেদের বধ্যভূমিতে এসে উপস্থিত হত।’[8] তা এ জন্য যে, যাতে আল্লাহ তোমাদের অন্তরে যা আছে, তা পরীক্ষা করেন ও তোমাদের হৃদয়ে যা (কালিমা) আছে, তা পরিশুদ্ধ করেন।[9] আর অন্তরে যা আছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ বিশেষভাবে অবহিত।[10]

  • [1] উল্লিখিত চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির পর আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের উপর পুনরায় অনুগ্রহ করলেন এবং তাঁদের মধ্যে যাঁরা যুদ্ধের ময়দানে অবশিষ্ট ছিলেন, তাঁদের উপর তন্দ্রার ভাব সৃষ্টি করে দিলেন। আর এই তন্দ্রা (ঢুল) ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে প্রশান্তি এবং সাহায্যের দলীল। আবূ ত্বালহা (রাঃ) বলেন, আমিও তাঁদের একজন, যাঁদের উপর উহুদের দিন তন্দ্রার ভাব সৃষ্টি হয়েছিল। এমন কি আমার তরবারি কয়েকবার আমার হাত থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, আর আমি ধরে নিয়েছিলাম। (সহীহ বুখারী) نُعَاسًا হল أَمَنَةً শব্দের বদল (পরিবর্ত শব্দ)। طَائِفَةٌ একবচন এবং বহুবচন উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর)
  • [2] এ থেকে মুসলমানদের সাথে অবস্থানকারী কারো কারো অন্তরের নেফাক(ইমানের ত্রুটি)  বুঝানো হয়েছে। প্রকাশ থাকে যে, এ রকম কঠিন পরিস্থিতিতে তারা কেবল নিজেদের প্রাণ নিয়েই চিন্তিত ছিল।
  • [3] যেমন ভাবত যে, নবী করীম (সাঃ)-এর সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই মিথ্যা। তিনি যে দ্বীনের প্রতি আহবান করেন, তার ভবিষ্যৎ আশঙ্কাজনক। তিনি তো আল্লাহর সহযোগিতা থেকেই বঞ্চিত ইত্যাদি ইত্যাদি।
  • [4] অর্থাৎ, আমাদের জন্য কি আল্লাহর পক্ষ হতে আর কোন বিজয় ও সহযোগিতার সম্ভাবনা আছে? অথবা আমাদের কি কোন কথা চলতে পারে এবং মেনে নেওয়া যেতে পারে?
  • [5] তোমাদের কিংবা শত্রুদের এখতিয়ারে কিছুই নেই। সাহায্য-সহযোগিতা তাঁর পক্ষ থেকেই আসবে, সফলতা তিনিই দান করবেন এবং আদেশ-নিষেধ কেবল তাঁরই চলবে।
  • [6] নিজেদের অন্তরে মুনাফিক্বী গোপন রেখে ভাব এমন দেখাত যে, তারা পথ নির্দেশের মুখাপেক্ষী।
  • [7] এটা তারা আপোসে বলাবলি করত অথবা মনে মনে বলত।
  • [8] মহান আল্লাহ বললেন, এই ধরনের কথার লাভ কি? যেভাবেই হোক না কেন, মৃত্যু তো আসবেই এবং তা সেই স্থানেই আসবে, যেখানে আল্লাহর পক্ষ হতে লিখে দেওয়া হয়েছে। যদি তোমরা নিজেদের বাড়িতে অবস্থান কর, আর তোমাদের মৃত্যু কোন যুদ্ধের ময়দানে লিখা থাকে, তাহলে আল্লাহ কর্তৃক এই ফায়সালা তোমাদেরকে সেখানেই টেনে নিয়ে যাবে।
  • [9] (যুদ্ধের ময়দানে) যা কিছু ঘটেছে তার পিছনে একটি উদ্দেশ্য ছিল, তোমাদের অন্তরে বিদ্যমান ঈমানকে পরীক্ষা করা (যাতে মুনাফিকরা তোমাদের থেকে পৃথক হয়ে যায়) এবং তোমাদের অন্তঃকরণকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে পবিত্র করা।
  • [10] অর্থাৎ, খাঁটি মুসলিম কে এবং মুনাফিক হয়ে বাহ্যিকভাবে ইসলামের পোশাক কে পরে আছে, তা তো তিনি জানেন। জিহাদের বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে এটাও একটি কৌশল যে, এতে মু’মিন ও মুনাফিকের প্রকৃত রূপ বিকশিত হয়ে সামনে চলে আসে; ফলে সাধারণ মানুষও তাদেরকে দেখে ও চিনে নিতে পারে।


إِنَّ الَّذِينَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا ۖ وَلَقَدْ عَفَا اللَّهُ عَنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ 3:155
আয়াত-১৫৫# যেদিন দু’দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল, সেদিন যারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল, তাদের কোন কৃতকর্মের জন্য শয়তানই তাদের পদস্খলন ঘটিয়েছিল। [1] নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করেছেন।[2] আল্লাহ অবশ্যই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

  • [1] অর্থাৎ, উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের দ্বারা যে ভুল-ত্রুটি ঘটেছিল, তার কারণ ছিল তাঁদের পূর্বের কিছু দুর্বলতা। এই দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করে শয়তান এই দিন তাদের পদস্খলন ঘটাতে সফলকাম হয়েছিল। যেমন কোন কোন সলফের উক্তি হল, ‘নেকীর প্রতিদান এটাও যে, তারপর আরো নেকী করার তাওফীক লাভ হয় এবং পাপের প্রতিফল এটাও যে, তারপর আরো পাপের পথ খুলে যায় এবং সুগম হয়।’
  • [2] আল্লাহ তাআলা সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-দের ভুল-ত্রুটি এবং তার পরিণাম ও কৌশলগত দিক উল্লেখ করে নিজের পক্ষ হতে তাঁদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করছেন। এ থেকে প্রথমতঃ প্রমাণ হয় যে, তাঁরা আল্লাহর অতিশয় প্রিয় ছিলেন। দ্বিতীয়তঃ সাধারণ মু’মিনদের সতর্ক করা হচ্ছে যে, সত্যবাদী সেই মু’মিনদেরকে যখন স্বয়ং আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন, তখন আর কারো জন্য এটা জায়েয নয় যে, সে তাঁদেরকে তিরস্কার করবে অথবা তাঁদের ব্যাপারে কোন অন্যায় মন্তব্য বা কটূক্তি করবে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ كَفَرُوا وَقَالُوا لِإِخْوَانِهِمْ إِذَا ضَرَبُوا فِي الْأَرْضِ أَوْ كَانُوا غُزًّى لَوْ كَانُوا عِنْدَنَا مَا مَاتُوا وَمَا قُتِلُوا لِيَجْعَلَ اللَّهُ ذَٰلِكَ حَسْرَةً فِي قُلُوبِهِمْ ۗ وَاللَّهُ يُحْيِي وَيُمِيتُ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ 3:156
আয়াত-১৫৬# হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা অবিশ্বাস করে এবং যখন তাদের ভ্রাতাগণ পৃথিবীতে বিচরণ করে অথবা যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তখন তারা তাদের সম্পর্কে বলে, ‘তারা যদি আমাদের কাছে থাকত, তাহলে তারা মরত না এবং নিহত হত না।’[1] তা এ জন্য যে, যাতে আল্লাহ এটাকে তাদের মনস্তাপে পরিণত করেন।[2] বস্তুতঃ আল্লাহই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।


  • [1] ঈমানদারদেরকে সেই বিভ্রান্তিকর আকীদা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে, যা কাফের ও মুনাফিকরা পোষণ করত। কারণ, এই বিশ্বাসই হল ভীরুতার মূল কারণ। পক্ষান্তরে যখন এই বিশ্বাস জান্মাবে যে, জীবন ও মরণ আল্লাহর হাতে এবং মৃত্যুর একটি নির্দিষ্ট সময় আছে, তখন মানুষের মধ্যে সাহসিকতা এবং আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করার উৎসাহ সৃষ্টি হবে।
  • [2] যদি তারা যুদ্ধের ময়দানে না গিয়ে বাড়িতেই বসে থাকত, তাহলে মৃত্যুর কবলে পড়া থেকে বেঁচে যেত --এ রকম ভ্রান্ত আকীদা আন্তরিক অনুতাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, মৃত্যু তো সুদৃঢ় দুর্গের ভিতরেও আসে। মহান আল্লাহ বলেন, [أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍ] ‘‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভিতরে অবস্থান কর তবুও।’’ (সূরা নিসা ৭৮ আয়াত) কাজেই এই অনুতাপ থেকে মুসলিমরাই রক্ষা পেতে পারে। কারণ, তাদের আকীদা সঠিক ও শুদ্ধ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন