কান্ধালার সুবিশাল গ্রন্থাগার, পৃথিবীর দুর্লভ
এক সংগ্রহশালা (তথ্য ও ছবিসহ)
মাওলানা
সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ। তাবলীগের বিশ্ব আমীর, শায়খুল ইসলাম হযরতজী সাদ কান্ধলভীর পৈতৃক বাড়ী ভারতের
কান্ধালায় তাদের নিজ ভিটায় দুনিয়া বিখ্যাত এই গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠিত। কেবল ভারত
উপমহাদেশ নয়, গোটা দুনিয়াতে দুর্লভ ও দুস্প্রাপ্য কিতাবের
লাইব্রেরি আর দ্বিতীয় আরেকটি নেই।
তিন তলা বাড়ির
পুরোটি জুড়ে সুবিশাল কান্ধালার কুতুবখানার কথাশুনে আপনি চমকে উঠবেন।
প্রাচীন
দুনিয়ার দুর্লোভ ও দুষ্প্রাপ্য অগণিত পাণ্ডলিপির সমাহার। যার অস্তিত্ব দুনিয়ার আর
কোথাও নেই।
দুনিয়া বিখ্যাত ভারতীয় শায়েখ আলী মিয়া নদভী থেকে শুরু করে আরব শায়েখ
মিশরের সুপন্ডিত ড. আল্লামা ইউসুফ কারযাভীর লেখায় এই গ্রন্থাগারের কথা এসেছে।
আজকের শায়খুল ইসলাম মুফতী ত্বকী উসমানী থেকে শুরু করে সৌদির বিখ্যাত আলেম হামিদ
বিন আকরামসহ মুসলিম দুনিয়ার কে না এসেছেন এই কান্ধালার কুতুবখানায়?
শায়েখ আরিফী থেকে কাতারের পন্ডিত আদনান এয়ামিনীর পা-ও পড়েছে এই
পাঠাগারে।
আর কেনই বা
দুনিয়ার এলেম পিপাসুরা এখানে ছুটে আসেন? একদিকে মাশায়েখে
কান্ধালারা সারা দুনিয়ার মুসলমানের ঈমান ও এলেমের পিপাসা মিটিয়েছেন দাপটের সাথে
নেতৃত্ব দিয়ে। অপরদিকে সমগ্র পৃথিবী দাওয়াতের মেহনত নিয়ে ঘুরে সকল দুর্লভ এলেম
তারা জমা করে নিয়ে এসেছেন কান্দালায়। এখানে হাতে লেখা এমন সব প্রচীন দুস্পাপ্য
কিতাব রয়েছে যার দ্বিতীয় কপি দুনিয়াতে আর কোন এলেমওয়ালার কাছে নেই। এখানে ইসলামের
ইতিহাসের দুর্লভ এমন কিছু দলীল, রেফারেন্স ও উৎস আছে,
যা গোটা দুনিয়ার আর কারো কাছে নেই।
এমনকি খোদ ভারতীয় উপমহাদেশের এলমি মারকাজ দেওবন্দ এই কুতুবখানার কাছে এলমি যোগ্যতা প্রমাণে অসহায়। দারুল উলুম
দেওবন্দের সকল রেজুলেশন ও দলীল তাদের কাছে নেই কিন্তু কান্ধালার এই লাইব্রেরিতে
আছে। শাহ ওয়ালী উল্লাহর খান্দানের, ও মাদরাসায়ে
রহিমীয়ার সকল দলীল এখানে বিদ্যমান।
১৮৫৭সালের
আযাদী আন্দোলন ও তার পরবর্তী ইংরেজ আমলের সকল দলীল ও গ্রন্থ এখানে আছে। মোগল
পরিবারের বাদশাহদের সকল দ্বীনী কিতাব, দলীল দস্তাবেদ
এখানে সংগ্রহিত। ফলে ভারতবর্ষের সকল ইতিহাসবিদ ও পুরাতত্বের গবেষক এই কান্ধালায়
আসতে বাধ্য।
দুনিয়াবিখ্যাত দুর্লোভ কিতাবের অনন্য সমাহার
কান্ধালায়
মাওলানা ইলিয়াছ রহ. এর ভিটায় এই লাইব্রেরিতে আছে ৭০হাজারের বেশি কিতাব এবং ১১০০০
এর বেশি বিভিন্ন কিতাবের মূল হাতে লেখা একমাত্র পান্ডুলিপি । এই দুর্লভ
গ্রন্থাশালা দেখার জন্যই পূর্বে বেশ কয়েকবার ভারতে আসার নিয়ত করেছিলাম। উপমহাদেশে
ব্যাক্তিগত উদ্দ্যোগে এত বড় লাইব্রেরী দ্বীতিয় আরেকটি নেই। মন চাচ্ছিল, এই কিতাবগুলো হাতানোর জন্য যদি এখানে পড়ে থাকার সৌভাগ্য হত।
এই লাইবেরীর
মূল পরিচালক মাওলানা নূরুল হাসান রাশেদ কান্ধালভী নিজেও লেখক। তার লেখা বিখ্যাত
কিতাবের মধ্যে ‘আহলে রেওয়াতে বুখারি’,’আহলে
উলামায়ে হানাফিয়্যা অন্যতম, লিখেছেন ৩৫টি আরবী কিতাবডহ
১শতাধিক গ্রন্থ। মাওলানা ইদ্রিস কান্ধলভী থেকে শুরু করে দুর্লভ হায়াতুস সাহাবার
লেখক মাওলানা ইউসুফ কান্ধালভীর লেখালেখি ও এলমি দলীলের উৎস এই লাইব্রেরী।
আজকের হযরতজী মাওলানা সাদ কান্ধলভীর
গভীর এলেমের দলীলগুলো এখান থেকেই নেয়া। তারা যেসব কিতাব নিয়মিত পড়েন, দুনিয়ার বড়বড় আলেম এমনকি আরব অনেক পন্ডিতও এসবের নামই কখনো শুনেন নি।
তাদের না জানাটি কখনো জমহুরিয়তের খেলাফ বলার দলীল হতে পারে না। আজকের অনেক
জ্ঞানপাপীদের অজ্ঞতার মূলে এটিই সমস্যা।
ইমাম বুখারীর হাতে লেখা বুখারী শরীফের পাণ্ডলিপি
কান্ধালার এই
কুতুবখানায় ইমাম বোখারীর লেখা সহী বোখারীর মূল হাতে লেখা পান্ডুলিপি সহ ৬ষ্ট
শতাব্দী থেকে সারা দুনিয়ার বহু ইতিহাসবিদ, হাদীস বিশারদ ও
ফকীহদের হাতে লেখা পান্ডুলিপি এখানে আছে। ফেকাহের বহু কিতাবের একমাত্র মূল কপি
এখানে আছে। যেসব কিতাবের দ্বিতীয় কপি পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এমন কিছু তাফসিরুল
কুরআানুল কারিম আছে যার নাম আজকের দুনিয়ায় তাফসিরের তালিকায় নেই। নামও শুনেন নি
অনেক বড়বড় বাহরুল উলুমগন।
স্বয়ং মুফতী
তাক্বী উসমানী সাহেব হাফিযাহুল্লাহ তাঁর পান্ডিত্য ও মাকতাবা দেখে নিজ সফর নামায়
লিখেছিলেন
“হিন্দুস্তান সফরে উনার মাকতাবার মত দুর্লভ কিতাবের দ্বারা সমৃদ্ধশীল এমন মাকতাবা আমি পৃথিবীতে আর কোথাও দেখি নাই”।
আরব আজম, ইউরোপ, রাশিয়া’র
পন্ডিত গবেষকরা তাদের নিজেদের এলেমের চার্চ দিতে বহুপথ পাড়ি দিয়ে এখানে আাসেন।
দারুল উলুৃম দেওবন্দের বর্তমান শায়খুল হাদীস সাঈদ আহমদ পালনপুরী ছাত্রদেরকে ক্লাসে
প্রায়ই বলেন, তোমরা এই জামানায় যদি কোন আহলে এলেমকে দেখতে
চাও তাহলে নুরুল হাসান রাশেদ কান্ধালভী ও তার মাকতাবায় দেখে আসবে।
প্রায় প্রতি
শুক্রবার জুমআর পর থেকে মাওলানা সাদ কান্ধলভী এই মাকতাবায় আসেন। এখান থেকেই এলেমে
ওহীর মধু আহরণ করে উম্মতের মাঝে ছড়িয়ে দেন।