জেগে থাকো মোহাম্মদ আলী

তিনি গম্ভীর হয়ে উঠলেন। চোখেমুখে কোনো ভাওতাবাজির চিহ্ন নেই। বললেন, ‘তুমি যদি (ইসলাম ত্যাগ করতে)না পার, তাহলে এ লড়াই হবে না। আমি স্থগিত রাখছি। তোমার জীবনটাই মাটি হয়ে যাবে। কিন্তু আমি জানি তুমি কাণ্ডজ্ঞানহীন নও। তুমি সারাটা জীবন ধরে যা চেয়েছ, তা মাটি করে দিতে পার না। এখনো শেষরক্ষার সময় আছে। আমি তোমাকে বলেছি, আমার গণসংযোগ বিভাগের লোক তোমাকে সাহায্য করবে। আজ সন্ধ্যায় তুমি টিভিতে যাও, তুমি বিশ্বকে জানিয়ে দাও যে তুমি কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানদের কেউ নও। কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত না। বলো, তোমার সম্পর্কে ভুল ধারণা করা হয়েছে। বলে দাও, তুমি একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক অনুগত মার্কিন নাগরিক। তুমি সব সময় তাই ছিলে এবং থাকবেও। তবে এমন হতে পারে, তুমি ভালোভাবে না জেনে কোনো কিছুতে সইটই করেছ। তবে তাতে কিছু যায় আসে না। আমরা সংবাদ সম্মেলন ডাকব, সবকিছু পরিষ্কার করে দেব। আর তাহলেই লড়াই যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে, এখনো যা জুয়াখেলার মতো হয়ে রয়েছে। কিন্তু ওই শর্তে লড়াই অনুষ্ঠিত হতে পারে।
আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম, তাঁর দিকে তাকালাম। আমি মাথা নেড়ে বললাম, না আমি তা পারব না। শিরোপা লড়াইয়ের জন্য লিস্টনের মুখোমুখি হওয়ার যে সুযোগ আপনি দিয়েছেন, তার জন্য আমি কতৃজ্ঞ। আমি জানি লিস্টনকে আমি হারাতে পারব, আর তাই আমি চাই না লড়াই বন্ধ হয়ে যাক। কিন্তু আমার বিশ্বাসের জন্য যদি আপনাকে এ লড়াই স্থগিত রাখতে হয়, তবে তাই হোক।

বালকটি সব জয় করেছিল, কারণ তার কিছুই ছিল না। বাবা ছিলেন দরিদ্র সাইনবোর্ড লিখিয়ে আর মা করতেন অন্যের ঘর পরিষ্কার। ১২ বছরের বালক প্রথম মুষ্টিযুদ্ধে নেমেছিল প্রিয় সাইকেলটা যে চুরি করেছে তাকে শায়েস্তা করতে; ওই সাইকেল দ্বিতীয়বার কেনার উপায় তার ছিল না। মানুষটি তিন-তিনবার মুষ্টিযুদ্ধের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, কারণ সে প্রমাণ করতে চেয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গ হওয়া কত গর্বের। মুষ্টিযোদ্ধা থেকে হয়ে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধা, কারণ সে চেয়েছিল বর্ণবাদমুক্ত এক পৃথিবী। পূর্বপুরুষের দাসত্বের চিহ্ন মুছতে ক্যাসিয়াস ক্লে থেকে হয়েছিল মোহাম্মদ আলী। ষাটের দশকের মার্কিন শাসকদের চোখে মোহাম্মদ আলীর সব পরিচয়ই বিপজ্জনক। তিনি বিদ্রোহী, উদ্ধত, তার্কিক, অপরাজেয়, মুসলিম, অহংকারী ও রাষ্ট্রদ্রোহী এবং দারুণ রসিক।

আর সব সাধারণ মার্কিন যুবকের মতো তাঁকেও বলা হয়েছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধে যোগ দিতে। তিনি তা মানেননি। জবাবে তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল সে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় যুদ্ধবিরোধী সংলাপ, ‘ভিয়েতকংয়ের সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা নেই, তারা কখনো আমাকে নিগার বলে গালি দেয়নি!’ শাস্তি হিসেবে তাঁকে জেল-জরিমানা করা হয়েছিল। কেড়ে নেওয়া হয়েছিল শিরোপা। যৌবনের শ্রেষ্ঠতম বয়সে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ ছিলেন খেলা থেকে। বয়স হারিয়ে তাঁরও হারিয়ে যাওয়ার কথা ছিল অথচ বিনা আক্ষেপে তিনি বলেন, ‘আমি পুরস্কার ছুড়ে ফেলিনি। আমি তা হারাইওনি। যদি আমার স্বাধীনতাই না থাকে, তাহলে শ্রেষ্ঠতম শিরোপা দিয়ে আমি কী করব?’ এক কালো তরুণ নিজের নীতি ছাড়বেন না বলে ছেড়ে দিচ্ছেন ধনসম্পদ, খ্যাতি ও প্রিয়তম খেলা। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে তিনি আবার ফিরে এসেছিলেন। এভাবে জনগণের চ্যাম্পিয়ন থেকে হয়ে উঠলেন প্রতিবাদের চ্যাম্পিয়ন।

বাধা তাঁকে আরও শক্তিশালী করে তুলত। বিশ্বাসঘাতক বলে তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। সেটাই হয়ে উঠল তাঁর মহত্তম স্বীকৃতি। শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা কেড়ে নিয়েছে তো কী, তিনি তো জনগণের মনের রাজা। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সমগ্র দুনিয়ার, কালো মানুষের। সব সময়ই আমার ঠিকানা থাকবে পাকিস্তানে, আলজেরিয়ায়, ইথিওপিয়ায়। টাকার চেয়ে এর মূল্য অনেক বেশি।’ তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পরিচিত মুখ। গিনেস বুক অব রেকর্ডস জানাচ্ছে, আর কোনো মানুষকে নিয়ে এত ভাষায় এত কথা লেখা হয়নি, যতটা হয়েছে আলীকে নিয়ে। তিনি বিশ শতকের চ্যাম্পিয়ন নায়ক।

প্রভাবিত করেছিলেন বিশ্বের শতকোটি মানুষকে। মার্কিন বর্ণবাদবিরোধী নেতা মার্টিন লুথার কিংও আলীর দেখাদেখি ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিপক্ষে দাঁড়ান। কিং বলেছিলেন, ‘মোহাম্মদ আলীর মতো আমিও বলতে চাই, যত কালো, বাদামি ও গরিব মানুষ আমরা সবাই একই শোষণব্যবস্থার শিকার।’ নেলসন ম্যান্ডেলা তখন রোবেন দ্বীপের কারাগারে বন্দী। আলীর কথা মনে হলে তিনি অনুভব করতেন কারাগারের দেয়ালগুলো যেন উবে গেছে। মেক্সিকোর অলিম্পিকে পুরস্কার নেওয়ার মঞ্চে দাঁড়িয়ে দুই খেলোয়াড় দাবি তোলেন, ‘মোহাম্মদ আলীর উপাধি ফিরিয়ে দাও।’ শ্রেষ্ঠতম খেলোয়াড় থেকে বিদ্রোহী নায়ক, সেখান থেকে বর্ণবাদবিরোধী সন্ত পুরুষের মহিমা অর্জন যেন এক দুনিয়াবি রূপকথা।

তারুণ্যের এই শক্তিমান নায়ক ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে আসেন। মানুষের ঢল নেমেছিল বিমানবন্দরে, ঢাকায় লেগে গিয়েছিল উৎসব। ছয় দিনে ঘুরে বেড়িয়েছেন নদীতে, পাহাড়ে, সুন্দরবনে, চা-বাগানে আর কক্সবাজার সৈকতে। সে সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন জিয়াউর রহমান। তাঁর উপস্থিতিতে মোহাম্মদ আলীকে দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। আলী বলেছিলেন, ‘তুমি যদি স্বর্গে যেতে চাও, তবে বাংলাদেশে আসো।’ বলেছিলেন, ‘যদি আমেরিকা আমাকে তাড়িয়ে দেয়, তাহলে বাংলাদেশ রইল আমার জন্য।’

আলীর উচ্ছ্বাস আর মাত্রাছাড়া ভালোবাসা বাঙালির মতোই। তাঁর ঢাকা সফরের খবর নিতে কলকাতা থেকে এসেছিলেন শঙ্করলাল ভট্টাচার্য। তিনি দেখছেন: হুড-খোলা গাড়িতে ওঁকে মিছিল করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কাতারে কাতারে মানুষ রাস্তার দুধারে। আমি দাঁড়িয়েছিলাম সেই ভিড়ে।
চারদিক তুমুল উল্লাসধ্বনি, আলী হাত নেড়ে অভিবাদন গ্রহণ করছেন। হঠাৎ পাশ থেকে একটা অপূর্ব চিৎকার শুনলাম। কে একজন বলে উঠলেন, ‘আলী এখন বাঙালি।’
আর অমনি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল চিৎকারটা।
বাঙালি! বাঙালি! বাঙালি!

কী ছিল তাঁর জাদু? লড়াইয়ের সময় তিনি প্রজাপতির মতো উড়তেন আর প্রতিপক্ষের চোয়ালে হুল ফোটাতেন মৌমাছির মতো। এ লড়াই শিরোপার জন্য না, কালো বীরের মিথ তৈরির জন্য। তিনি লড়তেন বৈষম্যের বিপক্ষে সাম্যের জন্য। খেলোয়াড় ও ব্যক্তি মানুষ, রিং ও রিংয়ের বাইরে দুখানেই তাঁকে লড়তে হতো। তাঁর ধর্ম ও পরিচয়ের অপমান নিতেনই না। মোহাম্মদ আলী না বলে পুরোনো নাম ক্যাসিয়াস ক্লে বলায় প্রতিপক্ষ নর্টন। নক-আউট করার আগে তাঁকে একেকটা ঘুষি মারছিলেন আর বলছিলেন, ‘হোয়াট ইজ মাই নেম?’ তিনি ঘোষণা করতেন, ‘কালোই সুন্দর’। বিশ্বের লাখোকোটি বঞ্চিত মানুষ তাঁর লড়াইকে নিজেদের লড়াই বলে ভাবত। তাঁর মধ্যে তারা দেখত আশা। ভয় কী, তা তিনি জানতেন না। কবি নজরুলের মতোই তিনি বিদ্রোহী, আর নজরুলের মতোই অকালে সক্ষমতা হারিয়েছিলেন।

ষাট থেকে সত্তর দশকের আমেরিকা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। একদল তাঁকে ভালোবাসত, আরেক দলের কাছে তিনি ছিলেন চোখের বিষ। তাঁর জীবন এমনই, শত্রুও তাঁকে একসময় ভালো না বেসে পারেনি। তিনি যেন এক নিরস্ত্র চে গুয়েভারা। প্রতিটি উপলক্ষ প্রতিটি সুযোগকে তিনি মানুষের পক্ষে কাজে লাগিয়েছেন। তাঁর মুখের জোর মুষ্টির জোরের চেয়ে কম ছিল না। অদম্য সংকল্প, প্রচণ্ড প্রাণশক্তি আর শারীরিক সৌন্দর্য তাঁকে গ্রিক দেবতাদের মতো আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। তাঁকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, লেখা হয়েছে গান ও কবিতা। তিনি ঘোষণা করেছিলেন ‘আমিই শ্রেষ্ঠ’। সেটা এমন এক যুগ, যখন টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদির জয়জয়কার ছিল না। বিশ্ব ছিল অনেক বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন। সেই পরিবেশে মুষ্টিযুদ্ধের মতো অজনপ্রিয় খেলার চ্যাম্পিয়ন, কালো ও মুসলমান এক যুবক, প্রতিকূল স্রোত উজিয়ে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের নয়নের মণি হয়ে উঠলেন, তা সত্যিই আশ্চর্যের ব্যাপার। আরও আশ্চর্য, প্রায় তিরিশ বছর খেলা থেকে মিডিয়ার আলো থেকে দূরে থাকার পরও, মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে আগের চেয়েও জোরালোভাবে জেগে উঠলেন মোহাম্মদ আলী।

মোহাম্মদ আলী যেমন মুষ্টিযুদ্ধকে জনপ্রিয় করেছেন, তেমনি লড়াইয়ের আঘাত থেকে তৈরি হওয়া রোগ দিয়ে এই খেলাটির নির্মম দিকটাও চিনিয়ে দিয়ে গেছেন। আমাদের বোধ হয় এখন খেলার নামে একে অন্যকে আঘাত করা দেখে আনন্দ পাওয়া ঠিক কি না, তা ভাবা দরকার। আলী বলেছিলেন, মুষ্টিযুদ্ধ হলো সাদাদের আনন্দের জন্য দুই কালো মানুষের পরস্পরকে পেটানোর প্রতিযোগিতা। তাহলে এই খেলাকে আর বন্দনা করা যায় কি?

বিদায়ের দিনে শোক নয়, বরং বিরাট অভিবাদন এই সাহসী সুন্দরের পাওনা। তাঁকে বলা যায় গত শতকের এক তীব্র জীবন্ত মানুষ। বিশ্বের মানুষ তাঁর মধ্যে দেখেছে মানুষেরই শ্রেষ্ঠ সম্ভাবনা। জেদি, অভিমানী ও সাহসী সেই বালকের গল্প পৃথিবীতে আরও অনেককাল বেঁচে থাকবে, যে কিনা তার সাইকেল চুরির প্রতিশোধ নিতে মুষ্টিযোদ্ধা হয়েছিল আর ঘোষণা করেছিল, ‘আমি শুধু মুক্ত মানুষ হতে চেয়েছিলাম।’

কিছু মানুষ কেবল নিজের জীবন যাপন করে শেষ হন না। তাঁরা মানুষের জন্য রেখে যান মানবতার কিছু শ্রেষ্ঠ নির্যাস। মানুষ যতকাল তারুণ্যের বিশুদ্ধ শক্তিকে ভালোবাসবে, তত দিন আলীর কথা তাদের মনে পড়বে। জেগে থাকো মোহাম্মদ আলী।
Source: Prothom Alo, 5 June 2016. 
Link: http://www.prothom-alo.com/opinion/article/878941/জেগে-থাকো-মোহাম্মদ-আলী

মোহাম্মদ আলীর কলাম

আমি চিকাগোতে একটি বাস কিনেছিলাম; সেই বাসে করে সোজাসুজি লাসভিলে যাই। সেখানে ছিলেন আমার পরিচিত একজন নকশাশিল্পী, আমার পিতা। তিনি একপাশে লিখেছিলেন কমলা-সবুজ-লাল-হলুদ এবং নীল, অবশ্য বেশির ভাগ লাল রঙে: ‘আকর্ষণীয় যোদ্ধা: কেসিয়াস ক্লে’। আর একপাশে লেখা ছিল: ‘সোনি লিস্টন সেরা যোদ্ধা, কিন্তু তিনি ধরাশায়ী হবেন অষ্টম রাউন্ডে।’ আমি একে বলেছি বিশাল লাল।
দুপাশে ঘুরেছি। ঘুরেছি সারা দেশ। আবৃত্তি করেছি কবিতার মতো, লিস্টনের পতন হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছি। খেতাবি লড়াইয়ের জন্য এমন জোরদার প্রচার অভিযান চালিয়েছি, তেমন জোরদার প্রচার অভিযান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও খুব কম প্রার্থীই করেন। প্রচার অভিযানে আমার প্রিয় স্লোগান ছিল ‘ক্লের মুষ্টি’।
গত ছয় মাসে প্রতি পদক্ষেপে আমি লিস্টনকে পরাভূত করেছি। চ্যালেঞ্জ করেছি, ভবিষ্যদ্বাণী করেছি তার (সনি লিস্টন) পতনের, অভিহিত করেছি তাকে বিকট কদাকার ভালুক বলে, যার ফলে তার কিংবা সংবাদপত্রের পক্ষে আমাকে উপেক্ষা করা অসাধ্য হয়ে ওঠে। এক কথায়, আমার সমস্ত প্রচার অভিযানে আমাকে খেতাবি লড়াই দানের জন্য প্রমোটরদের ওপর চাপ সৃষ্টির সুযোগ পেয়েছিলাম।
কেবল তা-ই নয়, এই অভিযানে নতুন কিছু পেয়েছিলাম, যার মূল্য আমার কাছে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপের মর্যাদার থেকেও বেশি ছিল। এখন আমার যে অনুভূতি হয়, তা আমার জীবনের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন। যখন ড্রেসিং রুমে অ্যাঞ্জেলো ভয়ংকর দৃষ্টি মেলে বলেছিলেন, ‘সেখানে কে আছে তুমি কি জান?’ তিনি দরজা অর্ধেক খুলে রিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যালকম এক্সের (কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম নেতা) দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন। দৃষ্টি ছিল তাঁর মুষ্টিযুদ্ধের পুরোনো পোস্টারের দিকে। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তুমি কি বুঝতে পারছ যদি সংবাদপত্র এ ঘটনা তুলে ধরে তবে কী হবে? তারা তোমাকে ধিক্কৃত করবে, তোমার নিন্দা করবে, এ লড়াইকে নস্যাৎ করে দেবে।’ ভয়ার্ত দৃষ্টি মেলে বলেছিলেন, ‘তুমি দয়া করে তাকে এখান থেকে সরিয়ে দাও। সংবাদপত্র যদি জানতে পারে তুমি ম্যালকম এক্সের মতো মুসলমানদের সঙ্গে জড়িত আছ, তবে তোমার ভবিষ্যৎ নস্যাৎ হয়ে যাবে।’ ‘তুমি কি বুঝতে পারছ?’ তার কণ্ঠে প্রশ্ন।
খেলোয়াড়ি জীবনে সংবাদমাধ্যমের মধ্যমণিই ছিলেন মোহাম্মদ আলী। ১৯৬৬ সালের মে মাসে লন্ডনে ব্রিটিশ বক্সার হেনরি কুপারের সঙ্গে লড়াইয়ের আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মোহাম্মদ আলী। ছবি: রয়টার্স।একটি লড়াইয়ের আগে প্রস্তুত হচ্ছেন মোহাম্মদ আলী। সঙ্গে তাঁর ট্রেনার অ্যাঞ্জেলো ডান্ডি। ছবিটি ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তোলা। ছবি: রয়টার্স।১৯৬৩ সালে লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ব্রিটিশ বক্সার হেনরি কুপারের মুখোমুখি হয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী। ছবি: রয়টার্স।জর্জ ফোরম্যানের বিপক্ষে ১৯৭৪ সালে কিনশাসায় অনুষ্ঠিত আলীর সেই বিখ্যাত লড়াই ‘র‍্যাম্বল ইন জঙ্গল’। ছবি: রয়টার্স।জর্জ ফোরম্যান সব সময়ই ছিলেন আলীর বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। ছবি: রয়টার্স।কেন নরটনের বিপক্ষে আলীর লড়াই। এটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ছবি: রয়টার্স।১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে কেনটাকির নিজ বাড়িতে দুই মেয়ে লায়লা ও হানার সঙ্গে বিশেষ মুহূর্তে মোহাম্মদ আলী। ছবি: রয়টার্স।মা ওডেসা গ্রেডি ক্লে’র সঙ্গে ‘সর্বকালের সেরা’ মোহাম্মদ আলী। ছবিটি ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের। ছবি: এএফপি।১৯৭৬ সালের মার্চে প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে একটি অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলী। ছবি: এএফপি।১৯৮৭ সালের জুলাইতে মেক্সিকো সফরকালে সংবাদ সম্মেলনে ক্যামেরায় এভাবেই ধরা পড়েছিলেন মোহাম্মদ আলী। ছবি: এএফপি।২০০৫ সালের জুনে মেয়ে লায়লার সঙ্গে আলী। ছবি: রয়টার্স।১৯৯৯ সালে মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে বক্সার মাইক টাইসন। ছবি: রয়টার্স।২০১২ সালে সাবেক ইংলিশ ফুটবলার ডেভিড বেকহামের সঙ্গে মোহাম্মদ আলী। ছবি: রয়টার্স।আরও ছবি
এখন পর্যন্ত আমি একজন শ্বেতাঙ্গের সঙ্গে যতখানি ঘনিষ্ঠ, ঠিক ততখানি ঘনিষ্ঠ আছি অ্যাঞ্জেলোর সঙ্গেও। তিনি কেবল জানতেন না ম্যালকম একমাত্র এক্স নয়, আমিও কেসিয়াস এক্স। আমি নিজেও মহামান্য এলিজা মোহাম্মদের (কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম নেতা) অনুসারী। অ্যাঞ্জেলো মনে করেছিলেন তিনি কোনো রেখাপাত করতে পারছেন না। আর তাই আকস্মিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্থান পরিবর্তন করলেন। আমি পরে জেনেছি, তিনি তাঁর ভাই ক্রিসকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন এবং ক্রিস সঙ্গে সঙ্গে প্রমোটর বিল ম্যাকডোনাল্ডকে খবর দিয়েছিলেন। এই ম্যাকডোনাল্ডই হাজার হাজার ডলার ব্যয় করে এই সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন, যে সমাবেশ মুষ্টিযুদ্ধের ইতিহাসের বৃহত্তম হেভিওয়েট খেতাবি লড়াই বলে পরিগণিত হয়েছে।
ক্রিস আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন: কেসিয়াস, তোমার কি এক মিনিট সময় হবে? ম্যাকডোনাল্ড তোমাকে তাঁর অফিসে যেতে বলেছেন।
কী ব্যাপার গুন্ডাজি? আমি তাকে প্রশ্ন করি। যদিও ক্রিস এবং অ্যাঞ্জেলো আমার বন্ধু ও প্রশিক্ষক, তবু আমি রসিকতা করে ক্রিসকে গুন্ডাজি বলে সম্বোধন করি। এর মূল কারণ এই যে ক্রিসের মুষ্টিযুদ্ধের সোনালি দিনগুলোতে ছিল দুর্বৃত্তদের আধিপত্য।
ক্রিস খুব আস্তে আস্তে বললেন, এক মিনিটের বেশি লাগবে না। ভাবখানা এই যে তিনি কেবল আমাকে জানাতেই এসেছিলেন।
আমি কাপড় পরে নিই এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্রিস ও আমার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ওয়াশিংটন স্ট্রিট ধরে কনভেনশন হলে ম্যাকডোনাল্ডের অফিসে হাজির হলাম। তখন ছিল সূর্যস্নাত দিন। রাস্তায় অনেকেই আমাকে থামিয়ে অটোগ্রাফ নিয়েছেন, লিস্টন সম্পর্কে উপদেশ দিয়েছেন অথবা শুভকামনা করে বলেছেন, ‘জয় হোক তোমার।’ তখন ক্রিস ঘড়ি দেখছিলেন আর বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘ম্যাকডোনাল্ড অপেক্ষা করছেন।’
অফিসে পৌঁছে আমার ভাইকে ঠেলে দিই আগে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ক্রিস তাকে থামিয়ে বললেন, ‘ম্যাকডোনাল্ড তোমাকে চায়, তোমার ভাইকে নয়।’ আমি ইতস্তত করি, ভাবতে থাকি, এমন কী ব্যাপার যা আমার ছোট ভাই শুনতে পারবে না? কিন্তু রুডি একপাশে সরে গিয়ে বিনীতভাবে বলল, ‘ঠিক আছে, আমি বাইরেই অপেক্ষা করি।’ ক্রিস ও আমি অগত্যা প্রমোটরের অফিসে প্রবেশ করলাম।
ম্যাকডোনাল্ড একজন দীর্ঘদেহী মানুষ। তার চুল বাদামি রঙের আর মুখ বড় ও লালচে আকৃতির। তিনি ক্রিসকে বললেন দরজা বন্ধ করে দিতে। তারপর আমার দিকে দৃষ্টি মেলে ক্রিসের দেওয়া একটা মোটা সিগার ধরাতে ধরাতে আমাকে বললেন, ‘কেসিয়াস, সপ্তাহ খানেক আগে কি তুমি সত্যিই নিউইয়র্কে গিয়ে নিউইয়র্ক ইসলাম জাতির মসজিদে উঠেছিলে? তোমাকে কি প্রকাশ্যে কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানদের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল? তুমি কি সারা দিন সেখানে কাটিয়েছিলে এবং সাংবাদিকদের, যাঁরা তাদের সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তখন তুমি কি তাদের পক্ষে (কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম) কথা বলেছিলে?’
‘সবকিছুই সত্যি।’ আমি জবাব দিই।
ম্যাকডোনাল্ড তাঁর চেয়ারে গিয়ে বসলেন। তখন তাঁকে গম্ভীর দেখাচ্ছিল। কণ্ঠস্বর দৃঢ়। তখন থেকে তিনি বাদীপক্ষের উকিলের মতো আসামির দণ্ডাদেশকে যেকোনো পন্থায় ন্যায়সংগত প্রমাণ করার জন্য সাক্ষ্য-প্রমাণ তুলে ধরতে লাগলেন। বাদীপক্ষের উকিলের মতোই তিনি বললেন, ‘ম্যালকম এক্স কি তোমার আমন্ত্রণেই এখানকার জিমনেসিয়ামে এসেছিলেন?’
আমি তাঁর দিকে সরাসরি তাকিয়ে বললাম, ‘হ্যাঁ।’ তাঁর চোখেমুখে আশঙ্কা ফুঠে উঠল।
ম্যাকডোনাল্ড জেরা অব্যাহত রেখে বললেন, ‘আমি এ কথাও জানতে পেরেছি, তোমার ক্যাম্পে তোমার উদ্যোক্তার পয়সায় ক্যাপ্টেন স্যামুয়েল ও একজন নিরাপত্তা প্রহরী এবং একজন মুসলমান নারী রাঁধুনি নিয়োগ করেছ, এ সবই কি সত্যি?’
‘হ্যাঁ, সত্যি।’ আমার জবাব।
ম্যাকডোনাল্ডের জেরা—‘তুমি কি জান, যখন থেকে জানাজানি হয়েছে ম্যালকম এক্স তোমার ক্যাম্পে এসেছেন, তখন থেকে রটেছে যে কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানরা তোমাকে প্রভাবিত করেছে? ইতিমধ্যে এ লড়াই বিপর্যস্ত হয়েছে। আমার মুনাফা ফিরে পাওয়ার এখনো সুযোগ আছে এবং তার একটিমাত্র উপায়। তোমাকে আজ এখনই ঘর পরিষ্কার করতে হবে। প্রথমেই তোমার মুসলিম রাঁধুনিকে বাদ দিতে হবে, বাদ দিতে হবে নিরাপত্তা প্রহরীদের, ক্যাপ্টেন স্যামুয়েল এবং অন্যদের। তারপর আজ রাতেই বেতার ও টেলিভিশনে ঘোষণা করতে হবে যে তোমার সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি তোমাকে গণসংযোগের কাজের জন্য লোক দেব। তোমাকে বলতে হবে, তোমার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। যা কিছু বলা হয়েছে সবকিছুই ভুল। তোমাকে ঘোষণা করতে হবে তুমি নির্দোষ বলে। তাহলেই আমরা কাজে এগিয়ে যেতে পারি।’ তিনি ফোন তুলে ডায়াল শুরু করলেন।
আমার প্রশ্ন—‘এবং যদি তা না করি?’
তিনি আমার দিকে চোখ তুললেন। আস্তে আস্তে ফোন রেখে দিলেন।
তিনি গম্ভীর হয়ে উঠলেন। চোখেমুখে কোনো ভাওতাবাজির চিহ্ন নেই। বললেন, ‘তুমি যদি না পার, তাহলে এ লড়াই হবে না। আমি স্থগিত রাখছি। তোমার জীবনটাই মাটি হয়ে যাবে। কিন্তু আমি জানি তুমি কাণ্ডজ্ঞানহীন নও। তুমি সারাটা জীবন ধরে যা চেয়েছ, তা মাটি করে দিতে পার না। এখনো শেষরক্ষার সময় আছে। আমি তোমাকে বলেছি, আমার গণসংযোগ বিভাগের লোক তোমাকে সাহায্য করবে। আজ সন্ধ্যায় তুমি টিভিতে যাও, তুমি বিশ্বকে জানিয়ে দাও যে তুমি কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানদের কেউ নও। কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত না। বলো, তোমার সম্পর্কে ভুল ধারণা করা হয়েছে। বলে দাও, তুমি একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক অনুগত মার্কিন নাগরিক। তুমি সব সময় তাই ছিলে এবং থাকবেও। তবে এমন হতে পারে, তুমি ভালোভাবে না জেনে কোনো কিছুতে সইটই করেছ। তবে তাতে কিছু যায় আসে না। আমরা সংবাদ সম্মেলন ডাকব, সবকিছু পরিষ্কার করে দেব। আর তাহলেই লড়াই যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে, এখনো যা জুয়াখেলার মতো হয়ে রয়েছে। কিন্তু ওই শর্তে লড়াই অনুষ্ঠিত হতে পারে।
আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম, তাঁর দিকে তাকালাম। আমি মাথা নেড়ে বললাম, না আমি তা পারব না। শিরোপা লড়াইয়ের জন্য লিস্টনের মুখোমুখি হওয়ার যে সুযোগ আপনি দিয়েছেন, তার জন্য আমি কতৃজ্ঞ। আমি জানি লিস্টনকে আমি হারাতে পারব, আর তাই আমি চাই না লড়াই বন্ধ হয়ে যাক। কিন্তু আমার বিশ্বাসের জন্য যদি আপনাকে এ লড়াই স্থগিত রাখতে হয়, তবে তাই হোক।
ক্রিস উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, ‘আমরা কেন এসব কিছু ভুলতে পারি না? লড়াইটা না হওয়া পর্যন্ত সবকিছুই ভুলতে হবে।’
ম্যাকডোনাল্ড চূড়ান্তভাবেই বললেন, ‘না, লড়াই হতে পারে না।’ তিনি ফোন তুলে রিং করলেন, বলে দিলেন, ‘এ লড়াই হবে না। সংবাদপত্রকে বলে দিন, সবাইকে জানিয়ে দিন এ লড়াই হবে না।’
তিনি ফোন ধরে থাকতে থাকতেই আমি দরজার কাছে চলে এলাম।
ক্রিস আমাকে ধরে রাখলেন। যেতে নিষেধ করলেন। আমি প্রোমোটরের মুখের দিক তাকালাম। আমি জানি তিনি কিংবা আমি কেউই মিথ্যা কথা বলছি না। আমার মাথা এমন ঝিমঝিম করছিল যে আমি আমার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সোজা জিমনেসিয়ামে চলে আসা পর্যন্ত কোনো কিছু বলতে পারিনি। আমি জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে মিয়ামিতে বাসায় চলে এলাম গাড়ি চালিয়ে।
আমি ভেঙে পড়েছিলাম। কারণ আমি জানতাম ম্যাকডোনাল্ড সত্যিই লড়াই বন্ধ করে দিতে চান। তিনি যা বলেছেন, সবকিছুই অর্থবোধক। কিন্তু আমি বাড়িতে আসতে না আসতেই ফোন বেজে উঠল। লাসভিলের একজন উদ্যোক্তা ওয়ার্থ বিংহাম ফোন করেছেন। তিনি জানতে পেরেছেন লড়াই হবে না।
‘শোন কেসিয়াস’, তিনি বললেন—‘তোমার দিককার ঘটনা আমি জানি, কিন্তু তুমি যা-ই কর না কেন, লড়াই বন্ধ হতে দিও না। ম্যাক তোমাকে কী করতে বলেন?’
আমি বলি, ‘তিনি আমাকে আমার ধর্ম অস্বীকার করতে বলেছেন এবং তার জন্য প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে।’
‘তবে তাই করো। কাজে নেমে পড়ো, তোমার তাতে ক্ষতি কী? তোমাকে এ ধরনের সুযোগ তারা আর দেবে না। ম্যাকডোনাল্ড এ লড়াই বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাকে তুমি কোনো সুযোগ দিও না।’
আমার জবাব, ‘আমি আমার ধর্মকে অস্বীকার করতে পারব না, মুষ্টিযুদ্ধের খাতিরেও নয়।’
‘তুমি আমার কথা শোনো, তোমার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠেছে। কিন্তু তুমি যদি লড়াইয়ে জিতে যাও, তবে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। তুমি আমার উপদেশ যদি চাও, আমি বলব যে ম্যাকডোনাল্ড যা বলেন তুমি তা করো। তিনি সরে যাওয়ার সুযোগ খঁুজছেন। তুমি তাঁকে সেই সুযোগ দিচ্ছ, কিন্তু তা দিও না। তাঁর পায়ের তলার মাটি তুমি কেড়ে নাও। জনসাধারণের সামনে তোমার ভাবমূর্তি তোমার ধর্ম নয়। তোমার মনে ঈশ্বর বৈ আর কী আছে তা কে জানবে? আমি তোমার আল্লাহর কথাই বলছি। তোমার ধর্মান্তর মাত্র কয়েক মাসের ঘটনা। আল্লাহ তা জানেন।’ এ কথা বলেই বিংহাম ফোন ছেড়ে দিলেন।
আমি নিঃসঙ্গ হয়ে গেলাম। কয়েক বছর পরে....আমি যখন এই মুহূর্তের কথা চিন্তা করি, আমি অনুভব করার চেষ্টা করি তখন আমার মনের অবস্থা কী ছিল। আমার মনে পড়ে, আমি স্বস্তি পেয়েছিলাম। আমার ‘কয়েক মাসের ধর্মান্তরের’ ঘটনাকে তারা যা ভাবত, মুসলমান জাতির কাছে তার তাৎপর্য ছিল তার থেকেও বেশি। আমি চেয়েছিলাম দাসত্বের নাগপাশ থেকে কৃষ্ণাঙ্গ জনসাধারণের মুক্তি, ন্যায়বিচার ও সমানাধিকার। এ কথা আমি আমার লাসভিল উদ্যোক্তা কিংবা ম্যাকডোনাল্ডকে কখনো বোঝাতে পারব না।
আমার সহযোগীদের অনেকেই ফোনে আমার কথাবার্তা শুনেছিল, তারা বুঝেছিল আমি কিসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। বান্দিনী (মহিলা রাঁধুনি) তখন দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘এখন কী করবেন, চ্যাম্পিয়ন?’
আমি বললাম, আমরা চলে যাচ্ছি। চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াই হবে না। বাক্স-প্যাটরা গোছাতে হবে।
‘বাড়ি যাওয়ার অর্থ কী?’
আমি বললাম, তোমরা কোনো টাকাপয়সা পাবে না।
সে বলল, ‘রসিকতা কর আর যাই কর, আমি টাকাপয়সা পাই আর না পাই, আমি চ্যাম্পিয়নের সঙ্গেই থাকব। স্যুটকেস গুছিয়ে নিই, রাস্তায় লড়াই দেখা যাবে।’
আমার কর্মচারীরা বাক্স-প্যাটরা গুছিয়ে বাসে গিয়ে উঠল।
আমি মাকে বললাম, লড়াই বন্ধ হয়ে গেছে। আমি বাড়ি ফিরে আসছি। আমি তার গলা শুনে বুঝলাম, তিনি ভেঙে পড়েছেন। আমাদের সবার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন যেন ভেঙে গেছে। আমার মুষ্টিযুদ্ধের জিনিসপত্র বোঝাই একটা বড় ভারী বাক্স নিয়ে যেতে আমি বান্দিনীকে সাহায্য করলাম। আমি ইঞ্জিনের কাছে বসলাম, চিন্তা করতে লাগলাম ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে হলো।

মোহাম্মদ আলী: সদ্যপ্রয়াত বিশ্ববিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা। http://www.prothom-alo.com/opinion/article/878221/আমি-আমার-ধর্মকে-অস্বীকার-করি-না

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন